ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চুলে কালার করা যাবে কি
ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চুলে কালার করা যাবে কি। চুল কালার করার নিয়ম। কালার করা
চুলের যত্ন কিভাবে করতে হয় আপনি কি তা সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে আজকের পোস্টটি
আপনার জন্যই। আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করব ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চুলে কালার
করা যাবে কি। চুল কালার করার নিয়ম । চুল কালার করা কি গুনাহ তা নিয়ে।
তাহলে চলুন আর দেরি না করে আমরা জেনে নেই ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চুলে কালার করা
যাবে কি। চুল কালার করা কি গুনাহ।
পেজ সূচিপত্র : ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চুলে কালার করা যাবে কি
চুল কালার করার পদ্ধতি - ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চুলে কালার করা যাবে কি
আপনারা অনেকেই চুল কালার করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন তাই এখন চুল
কালার করার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। চুলে কালার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য করে
থাকি। চুল কালার করার পদ্ধতি আছে দুই ধরনের।
- পার্লারে বা হেয়ার সেলুনে গিয়ে চুল কালার করা।
- প্রাকৃতিক বা ঘরোয়া উপকরণ দিয়ে ঘরে চুল কালার করা।
চুল পার্লারে বা সেলুনে যেখানে করা হোক না কেন অবশ্যই চুলের স্বাস্থ্য
সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। পার্লারে চুল কালার করলে দেখা যায় চুলে নানারকম
সমস্যা। তাই চুল কালার করার পর চুলের যত্ন করতে হবে অনেক বেশি। এবার চলুন
কালার করার পর চুলের যত্ন কিভাবে করব তা জেনে নিই।
- সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন পর পর ভালো মানের শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালোভাবে শ্যাম্পু করতে হবে।
- সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন পর পর মাথায় যে কোন ভালো মানের তেল পুরো মাথায় ভালোভাবে ব্যবহার করতে হবে।
- চুল সফট, সিল্কি রাখতে ভালো মানের কন্ডিশন ব্যবহার করতে হবে।
- চুল ভালো রাখার জন্য ভালো মানের হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
- চুল ভালো রাখার জন্য ভালো মানের সিরাম ব্যবহার করতে হবে।
চুল কালার করার পদ্ধতি হিসেবে আপনি যাই করুন না কেন কিন্তু চুল ভালো রাখার
জন্য অবশ্যই উপরে নিয়ম গুলো মেনে চলতে হবে কারণ আমরা যখন চুল কালার করি এতে
চুল অনেকটা ড্যামেজ হয়ে যায় সুতরাং কালার করা চুলে আরো বেশি যত্ন করতে হবে
নয়তো চুল ঝরে পড়ার মতো সমস্যা, খুশকি, চুলের স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যেতে
পারে।
চুল কালার করার নিয়ম - ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চুলে কালার করা যাবে কি
যারা চুল কালার করার নিয়ম সঠিকভাবে জানেন না এখন আমরা চুল কালার করার নিয়ম
সম্পর্কে আলোচনা করব। আমরা চুলে বিভিন্ন কারণে কালার করে থাকি। কেউ চুলে
কালার করে থাকে চুলকে আরো বেশি সুন্দর করে তোলার জন্য, চেহারার লাবণ্য
ফুটিয়ে তোলার জন্য। আবার কেউ চুলে কালার করে থাকে পাকা চুল বা চুলের সমস্যা
ঢাকার জন্য।
চুল কালার করার জন্য অনেক নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম মেনে চুল কালার করতে হবে
না হলে চুলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিবে। চুল কালার করার নিয়ম রয়েছে অনেক
আমরা যারা ঘরোয়া উপকরণ দিয়ে কালার করি বা দোকানে চুল কালার করার বিভিন্ন
পণ্য কিনে এনে চুল কালার করি তারা সঠিকভাবে চুল কালার করার নিয়ম সম্পর্কে
তেমন জানিনা।
তাই এখন চুল কালার করার নিয়ম গুলো বলবো। চুলে যে কালার করবেন তা আগে
ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে। এরপর চুলের ধরন বুঝে পছন্দ মত সেড বাছাই করতে
হবে। চুল কালার করার আগে সম্পূর্ণ চুল আগা থেকে গোড়া অব্দি ভালোভাবে
শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিতে হবে।
শ্যাম্পু করার পর ভালোভাবে চুল শুকিয়ে নিতে হবে। এবার আপনি আপনার পছন্দমত
কালার নিয়ে ভালোভাবে মিক্স করুন। কিভাবে মিক্স করতে হবে তার নিয়ম কালার
করার প্যাকেটের গায়ে দেয়া থাকবে। এবার কিভাবে আমরা চুল কালার করবো তা জেনে
নেই।
চুল কালার করার পদ্ধতি সমূহ :
- প্রথমে হাতে গ্লাভস পড়ে নিতে হবে এরপর গলা, ঘাড় ভালোভাবে ঢেকে নিতে হবে যাতে করে রং বা কালার অন্য কোথাও না লাগে।
- এবার চুলকে ভাগ ভাগ করে অল্প অল্প করে চুলে কালার করা শুরু করতে হবে চাইলে ব্রাশ দিয়ে ও রং করা যাবে।
- কালার করার পর দেখতে হবে চুলের সব জায়গায় কালার পৌঁছেছে কিনা। কালার করা হয়ে গেলে অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।
- কিছুক্ষণ রাখার পর ভালোভাবে সম্পূর্ণ চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। ধুয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে কোথাও কোন কালার আছে কিনা যদি কালার থেকে থাকে তাহলে পুনরায় ভালোভাবে ধুতে হবে। তা না হলে চুলের মধ্যে খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- সবশেষে ভালো একটি কন্ডিশনার চুলে দিতে হবে। এর ফলে চুল দেখতে অনেক স্মুথ সফট ও সিল্কি দেখতে লাগবে।
কালার করা চুলের যত্ন - ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চুলে কালার করা যাবে কি
চুল দীর্ঘদিন ধরে ঠিক মত যত্ন না নিলে চুল রুক্ষ ও নির্জীব হয়ে পড়ে। আর তা
যদি হয়ে থাকে কালার করা চুল তাহলে তো চুল একেবারেই ড্যামেজ হয়ে যায়। কালার
করা চুলের যত্ন নিতে হবে আরও বেশি। তা না হলে চুলে খুশকি, চুলের আগা ফাটা,
চুল রুক্ষ ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিবে।
আপনারা অনেকে রয়েছেন যারা নিজেদের ব্যস্ততার কারণে কালার করা চুলের যত্ন
নেন না বা অনেকে কালার করা চুলের যত্ন কিভাবে করতে হয় তার সম্পর্কে সঠিকভাবে
জানেনা। তাই এখন আমরা কালার করা চুলের যত্ন সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
- চুল কালার করার আগে থেকে অন্য কোন ক্যামিকেল ট্রিটমেন্ট করা যাবে না। যদি করতে হয় তাহলে চুল কালার করার পরে করতে হবে।
- হোমমেড বা ঘরোয়া মাস্ক বানিয়ে চুলে দিয়ে চুলকে কিছুটা নরম করে নিতে হবে। এতে চুলে কালার ভালো বসবে এবং দীর্ঘস্থায়ী হবে।
- চুল ভালো রাখার জন্য নিয়মিত সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন পর পর ভালো কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।
- নিয়মিত চুলে শ্যাম্পু করতে হবে কিন্তু চুল কালার করার দুই থেকে তিন দিন পর চুলে শ্যাম্পু করা ভালো এতে করে চুলের কালারটা ভালোভাবে বসবে।
- নিয়মিত চুলে তেল দিতে হবে। চুলের রুক্ষ ভাব দূর করার জন্য চুলে তেল দিতে হবে।
- চুলের ধরন বুঝে ভালো মানের একটি সিরাম ব্যবহার করতে হবে।
উপরোক্ত নিয়ম গুলো মেনে চুল কালার করার পর থেকে থেকে নিয়মিত ভাবে চুলের
যত্ন নিতে হবে। তা না হলে চুল ড্যামেজ হয়ে যাওয়া বা চুল পড়ে যাওয়ার মত
সমস্যা তৈরি হতে পারে।
চুলে কালার করার ক্ষতি - ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চুলে কালার করা যাবে কি
আমরা চুলকে বিভিন্ন উপায়ে সাজাতে, চেহারার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার জন্য
মূলত চুলের রং বা কালার করে থাকি। চুল কালার করার ক্ষতিও রয়েছে। তাই এখন
আমরা আলোচনা করব চুল কালার করার ক্ষতি নিয়ে। চুল কালার করলে চুলে নানা রকম
সমস্যা দেখা যায় যেমন :
- চুল ঝরে পড়া।
- চুল পাতলা হয়ে যাওয়া।
- ত্বকে বিভিন্ন ধরনের এলার্জি।
- ত্বকে চুলকানি।
- ত্বক জ্বালাপোড়া করা।
- ত্বকে রেস উঠা।
- ত্বকে নানা ধরনের ইনফেকশন।
- চুলের আগা ফাটা।
- মাথার ত্বকে খুশকি।
- চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়া।
- চুলের সঠিক পিএইচ এর মান নষ্ট হয়ে যাওয়া।
- বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি।
চুল কালার করলে চুল যেমন সুন্দর দেখতে লাগে তার থেকে বেশি আরো চুলকে ক্ষতি করে।
কালার করার ক্ষতি রয়েছে অনেক। চুল কালার করলে আমাদের ত্বকেরও অনেক ক্ষতি হয়ে
থাকে। চলুন এখন ত্বকে চুল কালার করার ক্ষতি গুলো জেনে নিই।
ক্যান্সার : আমরা সবাই ক্যান্সার রোগটি সম্পর্কে কমবেশি জানি। এটি
একটি মরণ ব্যাধি রোগ। বিভিন্ন কারণেই মানব শরীরে ক্যান্সার হয়ে থাকে। আমরা
আমাদের চুল রং বা কালার করার জন্য যে কালার ব্যবহার করে থাকি বিভিন্ন ধরনের
ক্ষতিকর কেমিক্যাল দেয়া থাকে। যা আমাদের ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
দীর্ঘদিন ধরে চুল কালার করলে ত্বকে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। কারণ আমরা যে
কালার ব্যবহার করি চুলে তা আমাদের মাথার ত্বকের ভিতরে চলে যায়। ফলে আমাদের
নানারকম অসুখ-বিসুখ হয়।
এলার্জি : এলার্জি রোগটি খুবই অস্বস্তিকর। চুল কালার করার
রাসায়নিক উপাদান হলো প্যারাফিনাইলেনে ডিয়ামিন। চুল কালার করার প্রধান
রাসায়নিক উপাদান এটি। এর ফলে ত্বকে বিভিন্ন ধরনের এলার্জি জনিত সমস্যা দেখা
যায়। এর ফলে ত্বক চুলকায়, ত্বকে রেশ উঠে।
চোখ : চুল কালার করার উপাদানটি একপ্রকার রাসায়নিক উপাদান দিয়ে
তৈরি। যদি কোন ভাবে চুল কালার করার সময় এই কালার চোখে যায় তাহলে আমাদের চোখকে
অনেক ক্ষতিগ্রস্ত করে। চোখে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়।
ত্বক: কেরাটিনাইজেড প্রোটিন দিয়ে ত্বক তৈরি হয়। আমরা যখন চুল
কালার করি তা আমাদের ত্বকের সাথে মিশে যায় ফলে ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা দেখা
দেয়। ত্বকের পিএইচ এর মান নষ্ট করে দেয়।
চুল কালার করা কি গুনাহ - ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চুলে কালার করা যাবে কি
নারীরা চুলে কালার করে থাকে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য। অনেকেই চুল কালার করে থাকে
সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য। তবে ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চুলে কালার করা যাবে কি তা
আমরা অনেকেই সঠিক ভাবে জানিনা। তাই এখন আমরা ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চুলে কালার
করা যাবে কি তা নিয়ে আলোচনা করব।
চুল কালার করার জন্য বিভিন্ন ধরনের শর্ত রয়েছে ইসলামে। চুলে যে কোন কালার
ব্যবহার করা জায়েজ রয়েছে যেমন : সোনালী, বাদামি, লাল, বেগুনি ইত্যাদি আরো
নানা কালার। তবে ইসলাম স্পষ্ট বলা রয়েছে কালো কালার বা কলপ এ জাতীয় রং
ব্যবহার করা জায়েজ নেই। এর অর্থ চুলে কালো কালার করা হারাম।
তবে চুল কালার করার কিছু নিয়ম রয়েছে। যদি কোন নারীকে চুল কালার করতেই হয় তবে
সেই নিয়ম মেনে চুল কালার করতে হবে অন্যথায় এটি হারাম হবে বা জায়েজ নয়।
- কাউকে অনুসরণ করে বা কারো মত সাজার জন্য যদি কেউ কালার করে থাকে বা চুলের ডিজাইন করে থাকে তবে সেটি হারাম।
- পরপুরুষকে দেখানোর জন্য কালার করা হারাম।
- অন্য ধর্মের কারো সাথে মিল রেখে চুল কালার করা যাবে না।
উপরোক্ত কারণে চুল কালার করার জায়েজ নয়। তবে কেউ যদি নিজের স্বামী দৃষ্টি
আকর্ষণের জন্য চুলের বিভিন্ন ধরনের কালার করে থাকে (কালো) ব্যতীত তবে সেটি
জায়েজ অন্যথায় এটি হারাম হবে।
আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করছিলাম ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চুলে কালার করা যাবে
কি। চুল কালার করা কি গুনাহ। চুল কালার করার ক্ষতি গুলো কি কি টানে। আশা করছি
আজকের পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন। ১৭৫০৭
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url