টিবি রোগ কি - টিবি রোগ কেন হয়

>আসসালামু আলাইকুম আশা করি সবাই আছেন।আজকের পোষ্টের মূল বিষয় টিবি রোগ কি এবং টিবি রোগ কেন হয় এছাড়াও আজকের পোষ্ট এ টিবি রোগ কি ছোয়াচেঁ, টিবি রোগ হলে করনীয়, টিবি রোগের লক্ষণ, টিবি রোগের ঔষধের নাম ও টিবি রোগ সারানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
আশা করি আজকের পোষ্টটি পড়ার পর টিবি রোগ কি এবং টিবি রোগ কেন হয় এ সম্পর্কে জানার পর পোষ্টটি আপনার উপকারে আসবে।

পোষ্ট সূচিপত্রঃ টিবি রোগ কি - টিবি রোগ কেন হয়

টিবি রোগ কি

আপনি কি জানেন টিবি রোগ কি? টিবি রোগ হলো টিউবারকিউলোসিস এর সংক্ষিপ্ত রূপ যাকে আমরা বাংলাতে যক্ষ্মা রোগ বলি।

টিবি রোগ একটি বায়ুবাহিত সংক্রামক রোগ।টিবি রোগ মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস নামের জীবাণুর দ্বারা সৃষ্ট তাই টিবি রোগকে আপনি ব্যাকটেরিয়া বাহিত ছোয়াচেঁ রোগও বলতে পারেন।

সাধারণত যক্ষ্মা বা টিবি রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তির সংস্পর্শে বেশি আসলে ঐ রোগীর হাঁচি কাশি থেকে বের হওয়া জীবানুর ড্রপলেট বাতাসে বেসে বেড়ায় এবং যে কোনো ব্যক্তি কে টিবি রোগে আক্রান্ত করে।

আশা করি টিবি রোগ কি এ সম্পর্কে বিস্তারিত একটা ধারণা পেয়েছেন এরপর আপনি জানবেন টিবি রোগ কেন হয়।

টিবি রোগ কেন হয়

টিবি রোগ কি তা জানার পর এখন আপনি জানবেন যক্ষ্মা বা টিবি রোগ কেন হয়।টিবি একটি বায়ুবাহিত ছোয়াচেঁ রোগ।

আর এটি ছোয়াচেঁ রোগ হওয়ার কারনেই আপনি যক্ষ্মা রোগীর দ্বারা সংক্রমিত হতে পারেন আপনি যখন জনাকীর্ণ কোনো স্থানে বা যানবাহনে করে যাবেন সেখানে বিভিন্ন বয়সের ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মানুষ বসবাস করতে পারে।
আর আপনি কি জানেন সেই এলাকায় যারা বয়স্ক রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রেই বেশিরভাগ টিবি রোগে আক্রান্ত হন? কারণ বয়স বেড়ে গেলে সবার শরীরেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় আর যার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ক্ষেত্রে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।
আবার আপনি যদি পুষ্টিহীনতা রোগে ভুগে থাকেন এবং আপনি যদি অতিরিক্ত মদ্যপান এবং ধুমপান করে থাকেন তাহলে তা এখনই পরিহার করুন কারণ এক্ষেত্রে আপনার টিবি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।এবার আশা করি টিবি রোগ কেন হয় এ বিষয়ে বিস্তারিত একটা ধারণা পেয়েছেন।

টিবি রোগ কি ছোয়াচেঁ

টিবি রোগ কি এবং টিবি রোগ কেন হয় এ সম্পর্কে জানার পর এখন আপনি জানবেন টিবি রোগ কি ছোয়াচেঁ বা টিবি রোগ কিভাবে ছড়ায়।

হ্যা আপনি ঠিক ধরেছেন টিবি রোগ একটি বায়ুবাহিত ছোয়াচেঁ রোগ এবং যেটি মাইকোব্যাক্টেরিয়াম জীবাণু বহন করে থাকে এই রোগের জীবানু বা ব্যাকটেরিয়া টিবি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাশি থেকে নির্গত জীবানুর ড্রপলেট বাতাসে বেসে বেড়ায় এবং সেই বাতাসে বেসে বেড়ানো জীবানু টিবি রোগীর সংস্পর্শে আসা কোনো ব্যক্তির শরীরে শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে তার ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং এটাকেই ফুসফুস যক্ষ্মা বলে।

আর টিবি রোগ ফুসফুস ছাড়াও শরীরের যেকোনো অঙ্গেই সংক্রমণ হতে পারে এর মধ্যে কিছু অভ্যন্তরীণ অঙ্গে টিবি রোগ সংক্রমিত হয় না যেমন হৃৎপিণ্ড, ঐচ্ছিক পেশি, অগ্ন্যাশয় ও থাইরয়েড গ্রন্থি প্রভৃতি।

এছাড়াও গরু বা দুগ্ধজাত প্রাণীর দুধ পাস্তরায়ণ বা জীবানুমুক্ত করণ পদ্ধতির প্রচলনের আগে অনিরাপদ বা টিবি রোগে আক্রান্ত দুগ্ধজাত প্রাণীর দুধ পান করা ফলে অনেকের অন্ত্রে বা পরিপাকতন্ত্রেও টিবি রোগ সংক্রমিত হতো।

টিবি রোগের লক্ষণ

টিবি রোগ কি, টিবি রোগ কেন হয় এবং টিবি রোগ কি ছোয়াচেঁ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পর এখন আপনি জানবেন টিবি রোগের লক্ষণ গুলো কি কি।
টিবি রোগের লক্ষণ গুলো নিম্নরুপঃ
  • সর্দিজ্বর এবং জ্বরের তাপমাত্রা অল্প হতে ক্রমে ক্রমে বেড়ে যাওয়া
  • বুকে প্রচন্ড ব্যথা
  • স্থায়ী কাশি (তিন সপ্তাহের বেশি যদি হয়)
  • কাশির সঙ্গে শ্লেষ্মা এবং রক্তপাত
  • ক্লান্তি বোধ হওয়া
  • শ্বাসকষ্ট
  • দুর্বলতা
  • নিম্ন রক্তচাপ
  • ওজন কমে যাওয়া
  • খাবারে অরুচি
  • রাত্রিকালীন শরীর ঘামানো
আপনার মধ্যেও যদি উপরে উল্লিখিত টিবি রোগের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় তাহলে টিবি রোগের সংক্রমণে আপনাকে রোগা ও শীর্ণ করে দিতে পারে যার ফলে আপনিও একসময় আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারাতে পারেন এবং আপনিও অতি সিগ্রই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়তে পারেন।
তাই টিবি রোগ হলে আপনার উচিৎ হেলাফেলা না করে যত দ্রুত সম্ভব টিবি রোগ সম্পর্কে অভিজ্ঞ একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং টিবি রোগের জীবানু নির্মুল করতে সঠিক মাত্রায় ও নিয়মিত ঔষধ সেবন করুন।

আর আপনি যদি চান আপনার শিশুর বা আপনার ছেলে মেয়ের ভবিষ্যতে যক্ষ্মা বা টিবি রোগ না হোক তাহলে জন্মের পর থেকে আপনার শিশুকে যত দ্রুত সম্ভব বিসিজি টিকার আওতায় আনুন কারণ এতে করে যক্ষ্মা রোগের প্রতিষেধক বা যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আগে থেকেই তৈরি হয়ে যায়।

টিবি রোগ সারানোর উপায়সমূহ

টিবি রোগ কি, টিবি রোগ কেন হয়, টিবি রোগ কি ছোয়াচেঁ ও টিবি রোগের লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পর এখন আপনি জানতে চলেছেন টিবি রোগ হলে করনীয় বা টিবি রোগ সারানোর উপায় তাহলে আর দেরি না করে টিবি রোগ সারানোর উপায়গুলো উল্লেখ করা যাকঃ
  • টিবি রোগ সারানোর উপায়গুলোর মধ্যে সর্বোত্তম উপায় হলো টিবি রোগ সম্পর্কে অভিজ্ঞ একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া
  • টিবি রোগ হলে করণীয় উপায় গুলোর মধ্যে আরেকটি অন্যতম উপায় হলো নিয়মিত ও সঠিক মাত্রায় ঔষধ সেবন করা এবং এটিই টিবি রোগের জীবানু নির্মুল করার সর্বোচ্চ পন্থা অবলম্বন প্রক্রিয়া
  • আপনি যেহেতু টিবি রোগে আক্রান্ত সেহেতু আপনার মধ্যে থেকে বা আপনার হাঁচি কাশির মাধ্যমে টিবি রোগ যেন অন্য কারো মধ্যে না ছড়ায় সেদিকে খেয়াল রাখুন
  • আপনি যে কয়দিন পর্যন্ত সুস্থ না হচ্ছেন সে অব্দি আলাদা কক্ষে অবস্থান করুন যাতে আপনার দ্বারা আপনার পরিবার আক্রান্ত না হয়
  • নিয়মিত বিশ্রাম নিন ও পর্যাপ্ত পানি পান করুন
  • আপনার ব্যবহৃত কাপড় ও খাবার প্লেট গুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন
  • টিবি রোগ প্রতিরোধে একজন যক্ষ্মা বা টিবি রোগীর উচিৎ যেখানে সেখানে থুতু, নাক ঝাঁটা বন্ধ করা প্রয়োজনে এগুলোর জন্য আলাদা পাত্র ব্যবহার করুন এবং হাঁচি কাশি আসলে কারো সামনাসামনি না দিয়ে কনুই ব্যবহার করতে পারেন।
  • জনাকীর্ণ কোনো স্থানে যাওয়ার আগে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করুন
  • আপনার ব্যবহৃত কোনো জিনিস আপনার পরিবারের কাউকে ব্যবহার করা হতে বিরত রাখুন
  • যেহেতু টিবি রোগ একটি ছোয়াচেঁ রোগ এবং এই রোগের জীবানুর ড্রপলেট কোনো কিছুতে যেন না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

যক্ষ্মা বা টিবি রোগের কিছু ঔষধের নাম

টিবি রোগ কি, টিবি রোগ কেন হয়, টিবি রোগ হলে করণীয় বা টিবি রোগ সারানোর উপায়, টিবি রোগের লক্ষণ, টিবি রোগ কি ছোয়াচেঁ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পর আশা করি টিবি রোগ সম্পর্কে আপনার ভালো একটা ধারণা হয়েছে।

তাহলে এখন আপনি জানতে চলেছেন টিবি রোগের ঔষধের নাম কি তাই চলুন এখনই জানা যাক টিবি রোগের ঔষধের নাম কি বা টিবি রোগের ঔষধের নাম গুলো।

সাধারণ টিবি রোগের জন্য ডাক্তাররা যে ঔষধ গুলোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন সেগুলো হলো যেমনঃ Rimstar 4-FDCRimactazidRifagen ইত্যাদি।

দ্বিতীয় ধাপের ঔষধ প্রতিরোধী এমডিআর টিবি রোগের জন্য চিকিৎসকরা যে ঔষধ গুলোর পরামর্শ দিতে পারেন যেমনঃ FlomoroxMoxifloxEvo ইত্যাদি।
তৃতীয় ধাপের ঔষধ প্রতিরোধী এক্সডিআর টিবি রোগের জন্য চিকিৎসকরা যে ঔষধ গুলো পরামর্শ দিতে পারেন যেমনঃ ArlinAmikinAmibac ইত্যাদি।

আমি যে ঔষধ গুলোর নাম উল্লেখ করেছি এগুলো শুধু কিছু যক্ষ্মা বা টিবি রোগের ঔষধের উদাহরণ মাত্র।এই ঔষধ গুলো আপনার শরীরের জন্য অনুপযোগী ও হতে পারে আবার নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারনে যক্ষ্মা বা টিবির পাশাপাশি আরো অনেক রোগও ডেকে আনতে পারে তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করাই সর্বোত্তম হবে বলে আমি মনে করি।

তবে আপনি যদি টিবি রোগের ভালো একজন চিকিৎসকের কাছে যান এবং উনার পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ঔষধ সেবন করেন সেটা হবে যক্ষ্মা রোগ নিরাময়ের সর্বোত্তম উপায় তাই আপনার জানা উচিৎ যক্ষ্মা রোগ নিরাময়ে অনিয়মিত ঔষধ সেবন করলে যক্ষ্মা রোগ ধাপে ধাপে ঔষধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠে।

শেষ কথা, টিবি রোগ কি, টিবি রোগ কেন হয়, টিবি রোগ কি ছোয়াচেঁ, টিবি রোগের লক্ষণ, টিবি রোগ হলে করণীয় বা টিবি রোগ সারানোর উপায়, টিবি রোগের ঔষধের নাম কি এ বিষয়ে নিজে জানার পর আজকের পোষ্টটি শেয়ার করার মাধ্যমে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ দিন এবং টিবি রোগ নিরাময় করুন, প্রতিরোধ করুন যক্ষ্মা মুক্ত পরিবেশ গড়ুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url