কিসমিস খেলে কি হয় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

কিসমিসে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা আমাদের হাড় মজবুত করে ও হাড়ের ক্ষয় ও বাতের ব্যথা দূর করে। কিসমিস ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। কিসমিসে পটাশিয়াম আছে যা আমাদের শরীরে উচ্চমাত্রার সোডিয়াম কে নিয়ন্ত্রণ করে ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কিসমিস খেলে কি হয় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম্নে কিসমিস সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জেনে নেই। কিসমিস আমাদের শরীরের সবার জন্য উপকারী। কিসমিস খাওয়ার যেমন শরীরের পক্ষে ভালো তেমনি মাত্রা অতিরিক্ত কিসমিসে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। নিম্নে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

পেইজ সূচিপত্রঃ কিসমিস খেলে কি হয় কিসমিস এর উপকারিতা ও অপকারিতা

হাড়ের স্বাস্থ্য বর্ধনঃ কিসমিসে বরণ নামক এক মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট থাকে যা হাড় গঠন করতে সাহায্য করে। এবং শরীরে তাড়াতাড়ি ক্যালসিয়াম চুষে নিতে সাহায্য করে। কিসমিসে থাকে ক্যালসিয়াম যা হার ও দাঁতের জন্য খুব উপকারী। হাড় জয়েন্টের ক্ষেত্রে কিসমিস খুব প্রয়োজনীয়। মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট শরীরের জন্য খুব বেশি দরকার নেই বলেই মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট হিসেবে পরিচিত। কিন্তু শরীরের জন্য এর গুরুত্ব অনেক।

সেক্সে এর জন্যঃ কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে যা দেহের পুষ্টি সহায়তা করে। নিয়মিত কিসমিস খেলে যৌন দুর্বলতা দূর করে এবং যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত কিসমিস খেলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে এবং যৌন মিলন দীর্ঘক্ষণ ও তৃপ্তিময় হয়। কিসমিস নিয়মিত খেলে যৌন সমস্যা দূর করে এবং রক্ত চলাচল ঠিক থাকে। সেক্সের সমস্যা সমাধান করতে কিসমিস খান এটি আপনার সেক্স এর পাওয়ার বাড়াবে প্রাকৃতিক নিয়মে। নিয়মিত কিসমিস খাওয়া উচিত কারণ কিসমিসে শরীর ওমন দুটোই ভালো থাকে। প্রতিদিন বিকালে ৫ থেকে ৭টি কিসমিস খান এটি চিরদিনের জন্য যৌন সমস্যার বিলুপ্ত ঘটাবে।

কিসমিস খাওয়ার নিয়মঃ আপনি যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে কিসমিস খেতে পারেন। কিসমিস খাওয়ার নিয়ম তুলে ধরা হলো-আমরা সবাই জানি আঙুর ফলকে শুকিয়ে কিসমিস তৈরি করা হয়। সেমাই, পায়েস, পোলাও, কোরমা সহ বিভিন্ন খাবারের সাথে কিসমিস রান্না করা হয়। কিসমিসের গুনাগুন অনেক, কিসমিস আমরা বিভিন্নভাবে খেয়ে থাকি, কাঁচা অবস্থায় আমরা এই কিসমিস খেয়ে থাকি এবং কাঁচা অবস্থায় খাওয়ার আগে অবশ্যই ধুয়ে পরিষ্কার করে খেতে হবে।
  • আরো পড়ুনঃশশার দশটি উপকারী গুণ
কিসমিসের উপকারিতাঃ কিসমিসে এমন কিছু প্রয়োজনীয় পুষ্টি আছে যা আপনাকে শান্তির ঘুম এনে দিতে পারে। কিসমিসে পলি ফেলন যোগ ও এন্টি অক্সিডেন্ট এর পাশাপাশি ভিটামিন ও খনিজ আছে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম আছে কিসমিসে। যা উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তি দেয় এবং রক্ত নালাকে  শিথিল করে। অনেকে আছে যারা তাদের ওজন কমাতে চান না বরং বাড়াতে চান তাদের জন্য কিসমিস খুবই উপকারী। কিসমিসে আছে গ্লুকোজ যার শরীরে শক্তি যোগায় যা কোলেস্টেরল না বাড়িয়ে ওজন বাড়ায়।

কিসমিসের অপকারিতাঃ অতিরিক্ত কিসমিস খেলে এলার্জির সমস্যা বাড়তে পারে। এজন্য যাদের এলার্জি আছে তারা অতিরিক্ত কিসমিস খাবেন না। এবং যাদের ডায়াবেটিস সমস্যা আছে তারা অতিরিক্ত কিসমিস খাবেন না। তা না হলে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত কিসমিস খেলে শরীরের ওজন বাড়ে। যারা শরীরের ওজন কমাতে চান তারা অতিরিক্ত কিসমিস খেলে খাবারে বিঘ্ন ঘটবে। তাই অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

রক্তশূন্যতা দূর করেঃ শরীরে আয়রনের অভাব দূর করতে কিসমিসের ভূমিকা অত্যাধিক। রক্তশূন্যতার অন্যতম কারণ হলো আয়রনের অভাব। এই সমস্যায় শরীরের পর্যাপ্ত লোহিত রক্তকণিকা তৈরি হয় না যা শরীরে অক্সিজেন সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাই। তাই রক্তশূন্যতা দূর করতে কিসমিস আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।

হার্টের জন্য উপকারীঃ হৃদরোগ প্রতিরোধে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম। প্রকৃতপক্ষে এনসিবিআই ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফর্মেশন ওয়েবসাইট এ প্রকাশিত একটি গবেষনা অনুসারে কিসমিস খারাপ ফোলেস্টেরল অর্থাৎ এলডিএল এবং টাই গ্লিসারাইড রক্তে অবস্থিত এক ধরনের চর্বি কমাতে পারে যার হৃদ রোগের ঝুকে কমায়।

ক্যান্সার প্রতিরোধঃ ক্যান্সার প্রতিরোধে আমরা যদি নিয়মিত কিসমিস খাই তবে ক্যান্সারের মতো মরণবাদীরও কিছুটা হলেও কমিয়ে আনা যাবে। কিসমিসে ট্যাটোজীর নামক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরে ভেসে বেড়ানো ফ্রি রেডিকল গুলোকে লড়াই করে নিঃশেষ করে এই ফ্রী রেডি কলগুলি ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এবং যারা এটাতে আক্রান্ত তারা যদি কিসমিস নিজেদের প্রতিদিন খাবারের তালিকায় রাখে তবে শরীরে কেটোসিনের মতন শক্তিশালী এনডিও কিডান্ট এর মাত্রা বৃদ্ধি পায় ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধের সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধঃ ডায়াবেটিস রোধে কিসমিসের গুরুত্ব অপরিসীম। কিছু কিছু পরীক্ষায় দেখা গেছে কিসমিস লেন রে স্ট নন্সকে নামিয়ে দেয় এবং তা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কখন খিদে পেয়েছে বা কখন যথেষ্ট পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করা হয়েছে তা লেপটিন আর গ্লোলিন নামক দুটি হরমোন রিলিজ ও কিসমিস সাহায্য করে যেগুলো শরীর কে সিগন্যাল দেয়। তাই নিয়মিত কিসমিস খেলে অত্যাধিক খাওয়া রোধ করা সম্ভব। তবে পরিমাণ এর চেয়ে বেশি খেলে আবার সমস্যা হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া জরুরি। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের কারণ গ্লুকোজ ও ফ্লুকটোস ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য মারাত্মক হতে পারে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ কিসমিসে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়। কিসমিসে ভিটামিন এবং খনিজ গুলির  সাথে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পলিফেনাল গুলির মতো অন্যান্য যোগ গুলির প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে ।এগুলো আমাদের সিস্টেমে ফ্রি রেডি কল গুলির সাথে লড়াই করে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

কিসমিস খেলে কি হয়ঃ কিসমিসে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ আছে। ভেজানো কিসমিসে থাকে আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়া, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবার। তাছাড়া এতে রয়েছে প্রাকৃতিক সিমে যা শরীরে কোন ক্ষতি করে না। শরীরে আয়রনের ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি রক্তে লাল কণিকার পরিমাণ বাড়ায় কিসমিস। রোজ কিসমিস ভেজানো পানি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য এসিডিটি থেকে মুক্তি পাবেন কোন ঔষধ ছাড়াই। কিসমিস ভেজানো পানি রক্ত পরিষ্কার করতেও সাহায্য করে।

কিসমিস কত প্রকারঃ কিসমিস অনেক প্রকারের রয়েছে এর মধ্যে প্রধানত তিনটি হল-সুলতানা গোল্ডেন রেজিনা, বাদামি কিসমিস, বেদানা কালো কিসমিস, নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

সুলতানা গোল্ডেন রেজিনাঃ সুলতানা আঙ্গুর বিজহীন সবুজ গোলাকার আঙ্গুর।শুকিয়ে এই কিসমিস তৈরি করা হয়। এ ধরনের কিসমিস তৈরি করার জন্য আগে এক ধরনের তেলের মধ্যে ভিজিয়ে রাখা হয়। এই কারণে এই কিসমিসের রং সোনালী হালকা বাদামী এই কিসমিস দেখতে আকারে অন্য দুটি কিসমিসের থেকে ছোট হয় এবং অন্য দুটি কিসমিসের থেকে স্বাদেও মিষ্টি হয়।

বাদামি কিসমিসঃ বাদামি কিসমিস তৈরি করার জন্য আঙ্গুরকে তিন সপ্তাহ ধরে রোদে ভালো করে শুকাতে হয়। রোদে ভালোভাবে শুকানোর পর এগুলো বাদামী হয়ে যায় বাদামি কিসমিস তৈরি করতে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের আঙ্গুর ব্যবহার করা হয়। তাদের রং আকার এবং সাত আঙ্গুরের ধরন এর উপর নির্ভর করে আঙুর যদি ভালো মানের হয় কিসমিস ও ভালো মানের হবে তবে তিন সপ্তাহ সমানভাবে রোদে শুকাতে হবে আঙ্গুর কে।

বেদানা, কালো কিসমিসঃ ভালো মানের কালো আঙ্গুর দিয়ে তৈরি এই ধরনের আঙ্গুরকে বেদেনাও বলা হয়। এইগুলো তিন সপ্তাহ রোদে ভালোভাবে শুকাতে হয়। এর স্বাদ প্রায় টক মিষ্টি এবং আকারে ছোট অন্যান্য কিসমিসের মতো কালো কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা অনেক।

পরিশেষে আমি বলতে চাই, নিয়মিত কিসমিস খেলে আমরা অনেক রোগ প্রতিরোধ করতে পারব। এবং নিয়মিত কিসমিস খেলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url