নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা কি - নিমের ঔষধি গুণ
নিম একটি ঔষধি গাছ। যার ডাল পাতার রস সবই কাজে লাগে। খুবই শক্ত নিমের কার্ড দিয়ে নানারকম আসবাবপত্র তৈরি করা হয়।নিম কাঠে উইপোকা খেতে পারেনা। নিমের কাঠে কখনো ঘুন ধরে না। নিম বাংলাদেশের সর্বত্র দেখা গেলেও উত্তরাঞ্চলে বেশি পাওয়া যায় এ গাছটি বাংলাদেশে, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিইয়া, মিয়ানমার ও সৌদি আরবে বেশি জন্মে।
সৌদি আরবের আরাফাত ময়দানে বাংলাদেশের নিম গাছের হাজার হাজার লাখো সংখ্যা আমাদের
গর্বিত করে। নিম গাছের পাতা ডাল বাকুল ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নিম গাছ যেমন
ঔষধি হিসেবে আমাদের উপকার করে তেমনি নিম গাছের কাঠ নানা রকম আসবাবপত্র বানানো
জন্য ব্যবহৃত হয়। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
পেইজ সূচিপত্রঃ নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা কি - নিমের ঔষধি গুণ
নিম পাতার উপকারিতা
নিম গাছের ডাল পাতা সবই কাজে লাগে। কারণ নিমের কাঠ সবই খুব শক্ত নিম কাট কখনো কোন
পোকা বাসা বাঁধতে পারে না।তাই নিম কার্ড দিয়ে আসবাবপত্র তৈরি করা যায়। নিম তেলে
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই এবং ফ্যাট থাকে যা ত্বক এবং চুলের জন্য খুবই উপকারী।
আরো পড়ুনঃ রূপচর্চা ও সুস্বাস্থ্যের জন্য অ্যালোভেরার উপকারিতা
ত্বকের জন্য
ত্বকের জন্য নিম পাতা খুবই উপকারী বহুদিন ধরে রূপসজ্জায় নিমের ব্যবহার হয়ে
থাকে। ত্বকের দাগ দূর করতে নিম খুব ভালো কাজ করে। ব্রণ দূর করতে নিম পাতা বেটে
লাগাতে পারেন নিয়মিত নিম পাতা সঙ্গে কাঁচা হলুদ পেস্ট করে লাগালে ত্বকের
উজ্জ্বলও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি ও স্কিন টোন ঠিক হয়।
চুলের খুশকি দূর করতে শ্যাম্পু করার সময় নিমপাতার সিদ্ধ পানি দিয়ে চুল মেসেজ
করে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। খুশকি দূর হয়ে যাবে। সপ্তাহে একদিন নিমপাতা বেটে চুলে
লাগিয়ে এক ঘন্টার মত রাখুন এবার এক ঘন্টা পরে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন চুল পড়া কমার
সঙ্গে সঙ্গে চুল নরম ও কোমল হবে।
শিশুদের পেটে কৃমি হলে শিশুরা রোগা হয়ে যায়। পেট বড় হয়ে যায়। চেহারা ফ্যাকাসে
হয়ে যায়। বাচ্চাদের পেটের কৃমি নির্মূল করতে নিমের পাতা খুব
প্রয়োজনীয়।
নিমের পাতা ও ছালের গুড়া কিংবা, নিমের ডাল দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত হবে মজবুত রক্ষা পাবেন দন্ত রোগ থেকেও। দাঁতের সুরক্ষায় নিমের জল দিয়ে মেসওয়াক করার প্রচলন রয়েছে।
নিম পাতার অপকারিতা
নিম পাতা সমান এর পূর্বে অবশ্যই একজন ডাক্তার এর সাথে পরামর্শ করা উচিত। যদিও নিম
পাতার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ততটা তীব্র না তাও সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
নিম্নে নিমপাতার অপকারিতা নিয়ে কিছু তুলে ধরা হলো-
আরো পড়ুনঃ বাদাম খেলে কি হয় কাঁচা বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা কি
নিম মাঝে মাঝে বন্ধ্যত্বের কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাই যারা সন্তান নিতে চাচ্ছেন তারা এটি থেকে দূরে থাকুন।
যে কোন প্রকার অপারেশনের তিন সপ্তাহ আগে থেকে নিমের ব্যবহার বন্ধ করে দিতে
হবে।
যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা এটি ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন।
কারো যদি এটি খাওয়ার পর বমি বমি ভাব হয় বা কারও ডায়রিয়া মাথা ব্যথার মত
সমস্যা হয়। তবে এটি খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
নিমের ঔষধি গুন
নিম ঔষধি গাছ যার জল পাতার রস সবই কাজে লাগে। শুধু নিম দিয়ে নিরাময় হয় হাজারো
রোগ। এর মধ্যে কিছু রোগ নিম্নে তুলে ধরা হলো।
আপনি কি আপনার ওজন কমাতে চান। তাহলে নিম ফুলের জুস খান। নিম ফুল মেটা বলিজোম
বৃদ্ধি করে শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
নিম পাতা ব্যবহারে উকুনের বিনাশ হয়। নিম পাতার পেস্ট তৈরি করে মাথার তালুতে
লাগাতে হবে এবং শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন সপ্তাহে দুই তিনবার এভাবে ব্যবহার করুন
উকুন দূর হবে চিরতরে।
নিম পাতা সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে কেস পচড়া চলে যায়। পাতা ভেজে গুড়া
করে চুলকানিতে লাগালে তাড়াতাড়ি ভালো হয়। নিমপাতা বা নিম ফুলের ফুল বেটে
আক্রান্ত স্থানে লাগালে অতিসত্বর আরোগ্য হয়।
ত্বকের দাগ দূর করতে নিম পাতার জুড়ি নাই। ব্রণ দূর করতে নিম পাতা বেটে লাগাতে
পারেন। নিম পাতার সিদ্ধ জল গোসলের জলের সাথে মিশিয়ে নিন যাদের স্কিন স্টেশন এবং
চুলকানি আছে তাদের এত আরাম হবে আর গায়ের দুর্গন্ধের ব্যাপারটাও কমে যাবে আশা করা
যায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিম পাতা অতুলনীয়। নিমের পাতা রক্তের সুগার লেভেল কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া রক্ত না লিখে প্রসারিত ক... ভালো ফল পেতে নিমের কচি পাতার রস প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করন।
কৃমি নাশক
পেটে কৃমি হলে শিশুরা রোগা হয়ে যায়। বাচ্চাদের পেটে কৃমি নির্মূল করতে নিমের
পাতার জুড়ি নেই। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে চা চামচের হাফ চা
চামচ নিমপাতা বাচ্চাদের খাওয়ালে কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
নিম পাতার ডাল দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে দাঁত মজবুত হবে। এবং রক্ষা পাবে দাঁতের অসুখ
থেকে। কচি নিম ডাল দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত ভালো থাকে।
চুলের জন্য নিম পাতার অবদান ও পরিসীম। চুল খুশকি দূর করতে শ্যাম্পু করার সময়
চুলায় নিম পাতা সিদ্ধ জল দিয়ে মেসেজ করে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন চুলের জন্য
নিমপাতা খুবই প্রয়োজন।
নিয়মিত নিম পাতার রস খেলে রক্ত পরিষ্কার হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়
এছাড়া রক্ত চলাচল বাড়িয়ে হেপিন্ডের গতি স্বাভাবিক রাখে জুড়ি নেই।
অনেক সময় ঠান্ডা লেগে বুকে কফ জমে বুক ব্যথা করে এর জন্য ৩০ ফোটা নিম পাতার রস
সামান্য গরম জল দিয়ে তিন চার বার খেলে বুক ব্যথা কমবে গর্ভবতীদের জন্য
ওষুধ নিষেধ।
জন্ডিস হলে প্রতিদিন সকালে নিম পাতার রস একটু মধু দিয়ে মিশিয়ে খালি পেটে খেতে
হবে ২৫থেকে ৩০ ফোঁটা পুরোপুরি সারাতে এক সপ্তাহ খেতে হবে।
পোকামাকড় কামড়ালে বা হুল ফোটালে নিমের মূলের ছাল বা পাতা বেটে ক্ষতস্থানে
লাগালে ব্যথা উপশম হবে।
আরো পড়ুনঃ কিসমিস খেলে কি হয় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা
ভাইরাস রোগ
নিম পাতা ভাইরাস নির্মূল করে। চিকেন পক্স হাম ও অন্য চর্মরোগ হলে নিম পাতা মেটে
সেসব জায়গায় লাগান সেখানে এবং নিম পাতা সিদ্ধ করে সে জল দিয়ে গোসল করলে
তকে জ্বালাপোড়া ও চুলকানি দূর হয়।
নিম পাতা সিদ্ধ জল ঠান্ডা করে স্প্রে বোতলে রাখুন। প্রতিদিন ঘরে স্প্রে করলে
মশার উপদ্রব কমে যাবে। নিমপাতা ম্যালেরিয়া ঔষধ হিসেবে কাজ করে।
নিম পাতা বেটে মুখে লাগালে ব্রণ দূর হয় এবং ব্রনের জ্বালাপোড়া ভাব দূর করে নিমপাতা। নিয়মিত নিমপাতা ব্যবহার করলে ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
বাত
নিমপাতা নিমের বীজ বাকল নিমিত তেল বাতের ব্যথা সারাতে ঔষধ হিসেবে কাজ করে সকাল
বিকাল মেসেজ করুন এটা বেশ উপকারী।
চোখ উঠা ,চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ চুলকালে এসব লক্ষণ থাকলে নিমপাতা ১০ মিনিট
পরে তো সিদ্ধ করুন। এবং হালকা গরম পানিতে জলের ঝাপটা দিন চোখে আরাম বোধ করবেন।
আপনি কি এলার্জি সমস্যায় ভুগছেন। নিমপাতা ফুটিয়ে গোসল করলে এলার্জি থেকে মুক্তি
পাওয়া যায়। এছাড়া কাঁচা হলুদ ও নিমপাতা বেটে শরীরে লাগান এলার্জি সেরে
যাবে।
পা এর সমস্ত বাঙালিয়ানফেকশন পায়ের আঙ্গুল এর ফাঁকে ঘা অনেক ওষুধ লাগানোর পরেও
সারছে না। নিম পাতার পেস্ট বানিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগান আক্রান্ত স্থানে দিনে
২-৩ বার নিজের তেল লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায় নিম পাতায় আছে এন্টি
মাইক্রোবায়াল উপাদান কত নিরাময়ের দ্রুত কাজ করে।
অনেকদিন যাবত পেটের সমস্যায় ভুগছেন। পেটের যাবতীয় অসুখ সারাতে হলে ৩০ ফোঁটা
নিমপাতা রস এক কাপ জল এর সাথে মিশিয়ে সকাল বিকাল খেলে পেটের সমস্ত সমস্যা থেকে
মুক্তি পাওয়া যায়।
একজিমা, ফোঁড়া, ঘা, পচড়া, কেটে গেলে ক্ষতস্থানে নিম পাতা বেটে লাগিয়ে রাখলে খুব
তাড়াতাড়ি সেটা সেরে যায়। নিম পাতা দিয়ে পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে হালকা কুসুম
গরম পানি ক্ষতস্থানে ঢাললে ব্যথা উপশম হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, নিম পাতার ঔষধি গুনাগুন অনেক, নিম গাছের পাতা বাকল ফুল ফল সবকিছুই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক উপকারী।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url