হাঁস পালন পদ্ধতি উন্নত জাতের হাঁসের পরিচিতি

 

হাঁস পালন করে লাভবান হতে চাইলে আপনাকে যে বিষয় গুলো লখ্য রাখতে হবে শেগুলো হলো হাঁসের জাত,হাঁসের বাচ্চা পাপ্তির জায়গা,খাদ্য জোগান,বিভিন্ন বয়সের হাঁসের খাদ্য তৈরি হাঁস পালন বিভিন্ন বিষয়ে জানা থাকলে আপনি সফল হবেন। এবং হাঁসের ঘরএমন ভাবে তৈরি করতে হবে যাতে ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো বাতাস ঢুকতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে হাঁসের ঘরের মেঝে যাতে সব সময় শুকনো থাকে।
হাঁস পালন পদ্ধতি  উন্নত জাতের হাঁসের পরিচিতি

    অনেকে এখন বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালন করছে। এবং সফল হচ্ছে আর সফল হতে গেলে একটি সঠিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে হবে। নিচে হাঁস পালন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

পেইজ সূচিপত্রঃ হাঁস পালন পদ্ধতি উন্নত জাতের হাঁসের পরিচিতি

হাঁসের জাত সমূহ

পৃথিবীতে ৩ ধরনের হাঁস পালন করা হয়।
মাংশ উৎপাদনের জাত।
ডিম উৎপাদনের জাত।
মাংশ ডিম উভয় উৎপাদনের জাত।


মাংশ উৎপাদনের জন্য হাঁস পালন
মাংশ উৎপাদনের জাত গুলো হল , পিকিং আয়েলেশবারি ,মাশকোভি এবং সুইডেন হাঁস, এইসকল হাঁসগুলো মাংশ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত . এবং মোদ্দা হাঁসের ওজন হয়৫ এবং মাদ্দি হাঁসের ওজন হয় ৪ কেজি হয়ে থাকে।

ডিম উৎপাদনের জন্য হাঁস পালন
ডিম উৎপাদনের জন্য হাঁস গুলো হল - জিনডিং জাতের হাঁস, ইন্ডিয়ান রানার হাঁস, সাদা পাঁশুটে পিঠে দাগ কাটা পেন্সিলের শিশের মত। ডিম উৎপাদনের জন্য জিনডিং জাতের হাঁস গুলো খুবই ভালো। বছরের প্রায় বারোমাসি এ হাঁস গুলো ডিম দিয়ে থাকে। 

মাংস ও ডিম উভয় উৎপাদনের জন্য হাঁস পালন
মাংস ও ডিম উৎপাদনের জন্য সবথেকে জনপ্রিয় খাকি ক্যাম্বেল। সংকর জাতের হাঁস গুলো খাকি কালারের বা ছাই বাদামী হয়ে থাকে তাই এর নাম খাকি ক্যাম্বেল হাঁস। মিসেস ক্যাম্বেল এ হাঁস টিকে রানার ও রুয়েল ক্যায়ুগা জাতের সংকরায়নের  মাধ্যমে জাত সৃষ্টি করেন।

হাঁসের বাচ্চা প্রাপ্তিস্থান

নারায়ণগঞ্জ হাঁস প্রজনন কেন্দ্র।
নওগাঁ জেলার আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামা।
খুলনা দৌলতপুর এর কেন্দ্রীয় হাঁস প্রজনন খামার।
উল্লেখিত স্থান ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় হাঁসের খামার থেকে হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ করা যায়।

হাঁসের বাচ্চা নিয়ে এসে কয়েকদিন যেভাবে রাখবেন
হাঁসের বাচ্চা পালন করতে হলে বাচ্চার কয়েকটি বিষয় গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। হাঁসের বাচ্চাকে গরমকালে ২১ দিন এবং শীতকালে ২৮ দিন বর্ডার ঘরে রাখতে হবে। বাচ্চার প্রাথমিক অবস্থায় ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত কৃত্রিম উপায়ে যে ঘরে তাপ সরবরাহ করা ভয় তাকে বর্ডার ঘর বলে। বর্ডার ঘর সাধারণত দক্ষিণমুখী হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো ও বাতাস থেকে ঘরকে রক্ষা করতে হবে। এবং কাপড় বা চটের পদ্মা লাগিয়ে সঠিকভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।


হাঁসের ঘরের ব্যবস্থাপনা
হাসএর জন্য ঘর তৈরি করার আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে সেগুলো হল, আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। একটি পূর্ণবয়স্ক হাঁসের জন্য দুই বর্গফুট করে জায়গা ব্যবস্থা করতে হবে। এবং উঠতে হাঁসের জন্য এক বর্গফুট জায়গা ব্যবস্থা করতে হবে। হাঁসের ঘর এমন জায়গায় স্থাপন করতে হবে যাতে কুকুর ও শেয়ালের হাত থেকে রক্ষা করা যায়। হাঁসের ডিম যাতে গড়িয়ে পড়ে না যায় এবং হাঁস যাতে আরামে থাকতে পারে সেজন্য পাশে থাকার মেঝে তেতুস বা বিচুলি কাঠের গুড়া বিছিয়ে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে হাঁসের ঘরের নিজের খড় গুলো যাতে ভিজে না যায় এবং প্রতিদিন সেগুলো উলটপালট করে দিতে হবে। এবং আরো খেয়াল রাখতে হবে যাতে হাঁসের ঘর রাতে অন্ধকার থাকে ইতিহাসের শরীর ও মন ভালো থাকে ফলে ডিম ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি পাই।

হাঁসের খাদ্য ব্যবস্থাপনা

হাঁস পালনের বড় সুবিধা হলো তারা খাল-বিল পুকুর থেকে তাদের খাবার সংগ্রহ করে নেয়। হাঁসের খাবার হবে মুরগির কায়দায় কিন্তু হাঁসের খাবার সম্পূর্ণ মুরগির মত নয়। তাই মুরগির খাবার খাওয়ালে হাঁসের স্বাভাবিক উৎপাদন পাওয়া যাবে না।

যেসকল হাঁস বেশি ডিম দেয় তাকে বৈজ্ঞানিক কায়দায় সুষম খাদ্য দিতে হবে। তবে দেশকে ঘরোয়া খাবার দিতে হবে। যেমন চালের গুড়া কুশি শামুক-ঝিনুক মাছের ফেলে দেওয়া অংশ তাদের জন্য যথেষ্ট।

তবে মনে রাখতে হবে হাস প্রচুর খাদ্য গ্রহণ করে। তাই তাকে পর্যাপ্ত খাবারের যোগান দিতে হবে। সুষ্ঠুভাবে পালন করতে হলে হাঁসের খাবারের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাহলে ডিম ও মাংসের যোগান পাওয়া সম্ভব হবে।

হাঁসকে কোনভাবে শুকনো খাবার দেওয়া যাবে না। হাঁস যতোটুকু খাবার খায় তার ডাবল পানি খায়। প্রাপ্ত বয়স্ক হাঁসকে দিনে দুইবার খাবার দিতে হবে।

বিভিন্ন বয়সের হাঁসের খাদ্য তৈরি

বিভিন্ন ধরনের হাঁসের সুষম খাবার দেওয়া হল।

খাদ্য উপাদান            হাঁসের বাচ্চা০-৬ সপ্তাহ               বাড়ন্ত           ডিম পাড়া

গম ভাঙ্গা                            ৩৬.০০                                  ৩৬.০০         ৩৬.০০

ভুট্টা ভাঙ্গা                            ১৮.০০                                   ১৮.০০           ১৭.০০

চালের কুড়া                          ১৮.০০                                     ১৭.০০          ১৭.০০  

সোয়াবিন মিশ্রণ                     ২২.০০                                   ২৩.০০           ২৩.০০

প্রোটিন কন্সেন্ট                        ২.০০                                    ২.০০               ২.০০        

ঝিনুক  চুর্ন্ন                                 ২.০০                                   ২.০০                 ৩.৫০ 

ডিসিপি                                         ১.২৫                                   ১.২৫                ০.৭৫

ভিটামিন ও খনিজ মিশ্রিত          ০.২৫                                  ০.২৫                  ০.২৫     

লাইসিন                                         ০.১০                                 ০.১০                     ০.১০

 মিথিলিন                                        ০.১০                                ০.১০                      ০.১০  

লবণ                                               ০.৩০                                 ০.৩০                    ০.৩০                                                                                                                                                                                                      মোট                                           ১০০কেজি                         ১০০কেজি                  ১০০কেজি              

আরো পড়ুনঃ রূপচর্চা ও সুস্বাস্থ্যের জন্য অ্যালোভেরার উপকারিতা

হাঁসের রোগ প্রতিরোধে টিকা দান কর্মসূচি

প্রথম টিকা দিতে হবে ২১ দিন বয়সে। তারপরে ৩৬ দিন বয়সে এবং ৭০ দিন বয়সে কলেরা টিকা দিতে হবে । যে হাস আগে থেকে কোন রোগে আক্রান্ত তাকে টিকা দেওয়া যাবে না। খেয়াল রাখতে হবে সব সময় সুস্থ হাঁসকে টিকা দেওয়ার আজকে রোগমুক্ত রাখার জন্য টিকা প্রদানের বিকল্প নেই এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টিকা প্রদান করতে হবে।

হাঁসের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা
হাঁসের তেমন একটা রোগ হয় না ।তবে আপনি যদি একটু সচেতন হয়ে পরিচর্যা করেন তাহলে খামারের রোগ ব্যাধির পরিমাণ একেবারেই থাকবে না । তবে ডাক প্লেগ ও ডাক কলেরা এ দুটি রোগের টিকা আপনাকে অবশ্যই দিতে হবে। হাঁস পালন করে লাভবান হতে চাইলে আপনাকে আগে খামার রোগমুক্ত রাখতে হবে ।কারণ রোগ মুক্ত হাঁস আপনাকে লাভবান করতে পারবে।আপনি যদি একজন আদর্শ খামারি হতে চান তবে আপনার লক্ষ্য থাকবে কিভাবে অল্প খরচ করে অধিক লাভবান হওয়া যায় ।হাঁসকে রোগ মুক্ত রাখতে হলে খামারে অবাক প্রবেশ বন্ধ করতে হবে ,নিরাপদ পানি খেতে দিতে হবে, খাবার পত্র পরিষ্কার রাখতে হবে, কোন হাস অসুস্থ হলে অসুস্থ হাঁস থেকে আলাদা করতে হবে এবং চাহিদা অনুসারে হাঁসকে সুষম খাবার দিতে হবে ।এ কাজগুলো সঠিকভাবে যদি আপনি করতে পারেন তবে আপনার খামার হবে রোগ মুক্ত।

পরিশেষে আমি বলতে চাই,। আপনি যদি একজন সফল খামারি হতে চান ,তবে খামারি প্রশিক্ষণ নিয়ে হাঁস পালনের বিষয়গুলো ভালোভাবে জানতে হবে। এবং হাঁসের খামার করার নিয়ম মেনে হাঁস পালন করলে আপনি অবশ্যই সফলতার মুখ দেখবেন।                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url