প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়ার কারণ চিকিৎসা ও প্রতিকার

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সমস্যা এটি নারী ও পুরুষের মুখে খুব প্রচলিত তবে পুরুষের তুলনায় নারীর সমস্যা একটু বেশি। বিশেষ করে যারা কম পানি পান করেন তাদের এ সমস্যা বেশি। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়ার কারণ হলো জরায়ু মুখের প্রদাহ যোনিপথের ছত্রাক সংক্রমণ বা ক্ল্যামাইডিয়ার মতো জীবাণু সংক্রমণের মাধ্যমে। এছাড়াও ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, তলপেটে ব্যথা, মাসিকের ব্যাথার কারণেও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হতে পারে।

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়ার কারণ চিকিৎসা ও প্রতিকার

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া এই অসুখটা নারী-পুরুষ সকলেরই হয়ে থাকে। তবে নারীদের একটু বেশি প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কোন রোগ নয় এটি একটি উপসর্গ। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে সাধারণত প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হয়। আবার ছত্রাক বা ফাঙ্গাস দ্বারা আক্রান্ত হলেও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া সমস্যা হয়। নিম্নে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার কারণ চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

পেইজ সূচিপত্রঃ প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়ার কারণ চিকিৎসা ও প্রতিকার

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কেন হয়ঃ

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার কারণ হলো-জরায়ু মুখের প্রদাহ, যোনিপথে ছত্রাক সংক্রমণ, ক্লাম আইডিয়ার মতো জীবাণু থেকে। এছাড়াও ব্যথা, ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, পেডে এলাজি, তলপেটে ব্যথা এবং আরো অনেক কারণে প্রসাবে জ্বালাপোড়া হতে পারে। এবং বারবার প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে তা না হলে ডায়াবেটিস কিডনি বা মূত্রথলিতে পাথর এসব সমস্যা হতে পারে। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হলে ডক্টরের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খেতে হবে। আর যাদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া প্রায় হয়ে থাকে তাদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিতে হবে। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ২৫ থেকে ৪০ বছরের নারীদের বেশিরভাগ হয়ে থাকে। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং সঠিক নিয়মে ওষুধ ও প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার কারণঃ

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হয় বিভিন্ন কারণে। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার বিভিন্ন কারণ নিম্ন বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

পিরিয়ডঃ

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে পিরিয়ড। পৃথিবীতে প্রতিটি মহিলারই প্রতি মাসে এই পিরিয়ড হয়ে থাকে। এবং এই পিরিয়ডের সময় অনেকে ন্যাপকিন আবার অনেকে কাপড় ব্যবহার করে থাকে। এবং সেই কাপড় বা ন্যাপকিনের সাথে জীবাণু প্রস্রাবের দ্বার দিয়ে মূত্রনালীতে প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে সৃষ্টি হয় প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া।

আরো পড়ুনঃ চোখ উঠা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

পানিঃ

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার আরেকটি অন্যতম কারণ হলো পানি, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না পান করলে শরীরের নানা রকম রোগব্যাধি বাসা বাঁধে। আর তার মধ্যে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া একটি অন্যতম রোগ। পানি নানা রকম রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। যাদের দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির অভাব থাকে তাদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হতে পারে। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া থেকে রক্ষা পেতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করব।

মূত্রনালীঃ

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া একটি কষ্টদায়ক ব্যাধি। মেয়েদের মূত্রনালী পায়ুপথের খুব কাছেই অবস্থিত তাই পায়ুপথ দিয়ে নানা রকম রোগ ব্যাধি এবং ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীতে প্রবেশ করে এবং প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে।

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার চিকিৎসাঃ

যাদের প্রস্রাব এর সময় জ্বালাপোড়া হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটা প্রস্রাবের মুত্র তন্ত্রের প্রদাহ এর জন্য হয়ে থাকে। বুঝবেন কিভাবে? যেমন-প্রস্রাব করার পর জ্বালাপোড়া হবে, খুব ঘনঘন প্রস্রাব হবে, প্রস্রাব করার পরও মনে হবে কিছু আরও রয়ে গেছে এ ধরনের ফিলিংস থাকে। আবার সাথে তলপেট ব্যথা হতে পারে। এগুলোর সাথে কারো কারো কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। তখন বুঝবেন মুত্রনালী বা মূত্রথলিতে বা মূত্রনালীতে ইনফেকশন আছে। যদি সেই ইনফেকশন কিডনি পর্যন্ত অর্থাৎ মূত্রনালী ও কিডনির মাঝামাঝি একটা লম্বা নালী থাকে সেটাকে ইয়েট অর বলা হয়। সেই ইয়েটার যদি পার হয়ে কিডনি পর্যন্ত চলে যায় তাহলে সেটাকে বলা হয় পাই লোন এসাইটিস।

আরো পড়ুনঃ অনিয়মিত মাসিকের ওষুধ

এগুলো যখন হয় তখন দেখা যায় কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে আবার দেখা যায় ইনফেকশনের কারণে মানুষের শরীরে এক প্রকার পদার্থ থাকে যার নাম এসি এসি জিক ইউরিন যখন জ্বালাপোড়া করতে পারে ঘনত্ব বেড়ে যায় এবং জ্বালাপোড়া হয়। এমতাবস্থায় একজন ভালো ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। এবং প্রস্রাবে ইনফেকশন আছে কি নেই সেটা টেস্ট করে দেখবেন। এবং পাশাপাশি একটা কালচার করে দেখবেন কোন জীবাণু আছে কি যদি কোন জীবন থাকে অথবা পারসেন্ট বেশি থাকে অথবা জীবাণু থাকে তাহলে তো অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে সেটার চিকিৎসা করাতে হবে। আবার যদি দেখা যায় তাহলে ধরে নিতে হবে এক্ষেত্রে বেশি করে পানি খেতে হবে পানি খেলে এ সমস্ত দূর হয়ে যাবে।

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কমাতে পরিণত পানি পান করতে হবে তাহলে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া অনেকটা কমে আসবে। পানের ২০০ লিটার থেকে ২৫০ লিটার পরিমাণ পানি প্রতিদিন পান করতে হবে। যাদের প্রস্রাবের সময় তলপেট ব্যথা আপনি দিয়ে জ্বর আসে অনেক সময় দেখা যায় প্রস্রাব ঘোলাটে হচ্ছে তবে একজন ভালো ডাক্তারের কাছে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে ওষুধ খেতে হবে।

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া লক্ষণঃ

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার অনেকগুলো লক্ষণ আছে যেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো-

  • প্রস্রাবে বাজে গন্ধের সৃষ্টি হয়।
  • প্রস্রাবের বেগ হয় কিন্তু পরিমাণে খুব কম হয়।
  • বমি বমি ভাব।
  • সারাক্ষণ জ্বর ভাব অথবা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে।
  • তলপেট ও পিঠে প্রচন্ড ব্যথা হয়।
  • প্রস্রাব গাঢ় হলুদ বা লালচে বর্ণ ধারণ করে।
  • প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা হয়।

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার প্রতিকারঃ

কিডনিতে পাথর্‌ কিডনিতে সংক্রমণ, যৌনবাহিত রোগ ভ্যাজাইনাল ইনফেকশ্‌ পানি শূন্যতা এগুলোর কারণে প্রসাবে জ্বালাপোড়া হয়। নিম্নে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার প্রতিকার কিভাবে করবেন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো-

গরম স্যাক দিনঃ

গরম স্যাক দিলে আরাম পাওয়া যায়। সে সাথে ব্যথাও কমে। এডিটিং প্যাড বা কোন কাপড় ব্যবহার করে তলপেটে স্যাক  দিন এবং এভাবে ৫-৬ মিনিট স্যাক দিন এতে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া অনেকটা কমবে।

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খানঃ

ভিটামিন সি জাতীয় খাবার প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি পর্যাপ্ত পরিমাণে খেলে মূত্রথলে ভালো থাকে এবং প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে।

বেকিং সোডাঃ

 প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমাতে ব্রেকিং সোডা খুব দ্রুত সাহায্য করে। আধা চাধা চা চামচ বেকিং সোডা এক কাপ পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন একবার খেলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়।

আনারস খানঃ

 প্রতিদিন এক কাপ করে আনারসের রস খেলে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কারণ আনারসে থাকা প্রেমও লাইন নামক উপকারী এনজাইম যা প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া থেকে রক্ষা করে।

আরো পড়ুনঃ যক্ষা রোগের লক্ষণ

তরল জাতীয় খাদ্য খানঃ

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া দূর করতে তরল জাতীয় খাবার বেশি করে খেতে হবে। যথা-এসব গুলের ভুষি, মিস্রীর শরবত, এলোভেরার শরবত, আখের গুড়, ফলের ফ্রেশ জু্‌স,ডাবের পানি, লেবুর শরবত, কুশরের রস। 

সঙ্গীর সঙ্গে মেলামেশাঃ

আপনার সঙ্গীর প্রস্রাবের সংক্রমণ হয়েছে কিনা তা মেলামেশার আগে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে। যদি তা হয়ে থাকে তবে অবশ্যই মেলামেশা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ সঙ্গীর প্রস্রাবের সংক্রমণ হলে তা আপনারও হতে পারে।

দইঃ

প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া দয়ে রয়েছে দই শরীরের পিএইচএম এর ভারসাম্য রক্ষা করে একজন যদি প্রতিদিন ২ থেকে তিন কাপ ধরে খায় তবে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া অনেকটা কমাতে সাহায্য করে।

পরিশেষে আমি বলতে চাই, আপনি যদি প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি পেতে চান তবে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি এবং পানি খান। এবং দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url