বর্তমান পদ্ধতিতে পাট চাষ ও পাট কাটার সময়

পাট উৎপাদনে জমি নির্বাচন থেকে শুরু করে সব ধরনের পরিচর্যা সময়মতো করতে হয়। পাট ভালো উৎপাদন করতে হলে ২২ কেজি এমওপি সার প্রথমে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। এবং ইউরিয়া সার প্রয়োগ এর সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে সারপাটের কুচি পাতা এবং ডোগায় না পড়ে তা না হলে সে পাট মারা যাবে। বাংলাদেশে পাটের মধ্যে অন্যতম হলো-বীজে আর আই দেশি পাট ৮ ও ৯ অন্যতম। এ জাত দুটির গড় ফলন প্রায় দশমন হয়ে থাকে। এদের জীবনকাল ১১০ থেকে ১১৫ দিন এবং এ পাট গুলো বপন করা হয় চৈত্রের মাঝামাঝি থেকে বৈশাখের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত।

বর্তমান পদ্ধতিতে পাট চাষ ও পাট কাটার সময়

দেশি পাট বিচে আর আই দেশি পাট নয় জাতের পাট তুলনামূলকভাবে সাদা এবং কম কাটিং যুক্ত। সাক এর জন্য পাট ভালো বীজে আর আই দেশি পাট এক ও বিনা পাট নামে দুটি জাত আছে এ জাতগুলো থেকে প্রচুর শাক পাওয়া যায়। এ শাকগুলোতে প্রচুর ভিটামিন থাকে এবং এই পাট শাক ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

পেইজ সূচিপত্রঃ বর্তমান পদ্ধতিতে পাট চাষ ও পাট কাটার সময়

ভূমিকাঃ

বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল হলো পাট। বাংলাদেশের উৎপাদিত পাঠ শতকরা৭০ ভাগ দেশে ব্যবহৃত হয়। বাকি ৩০ ভাগ বাইরের রপ্তানি হয়। পাটের আঁশ থেকে বিভিন্ন রকম আসবাবপত্র তৈরি করা হয়।পাঠ খড়ি থেকে পাটিকেল বোর্ড ও প্রিন্টারের কালি তৈরি করা হয়। পাটের পাতা থেকে প্রচুর পরিমাণে জৈব সার তৈরি করছে পাট চাষ করলে প্রতি বিঘা জমিতে তিন মাসে ১৫ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং ১১ টন অক্সিজেন প্রকৃতিকে দেয়। পাটকে বাজারজাতকরণের জন্য বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে যেমনঃএ -বটম, বি- বটম, সি -বটম ক্রস -বাটন ও কাটিং শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ ফুলকপি এর বীজ ও বীজ তোলার তথ্য উপকারিতা

পাটের জাতঃ

দেশি জাতের মধ্যে বাংলাদেশে অন্যতম হচ্ছে বীজে- আর- আই ৮ও৯ অন্যতম। এ পাট দুটোর জীবনকাল ১১০ থেকে ১১৫ দিন। এদের বপনের সময় চৈত্রের মাঝামাঝি থেকে বৈশাখের প্রথম  সপ্তাহ। এদের গড়ে ওজন হয় দশ মন। বিজে আর আই - ৯ এ জাতের পাট তুলনামূলক সাদা। তোষা জাতের মধ্যে ফাল্গুনী, বীজে আর তোষা পাট ৫-৬ ও ৭ অত্যন্ত ভালো। এদের গড় ফলন বিঘায় ১০ থেকে ১২ মন। এবং এদের জীবনকাল ১২০ থেকে ১৫০ দিন। বিজে আর আই তোষা পাট-৬ এ জাতের পাট এর মান ভালো এবং এর রং সোনালী। পাটের শাকে প্রচুর ভিটামিন এ সমৃদ্ধ থাকে এবং এই সাক ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। পাট শাক খাওয়ার জন্য দুটি পাট আছে-বিজে আর আই এক, বিনা পাঠ শাখ। এ জাতের পাট ২৫ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে পাওয়া যায়।

পাট চাষের জন্য জমি নির্বাচনঃ

যেসব জমি বর্ষার পানিতে ডুবে না এবং পানি সরে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে পাটের বীজ রোপনের জন্য সেসব জমি নির্বাচন করতে হবে। পাটের বীজ রোপনের জন্য জমিকে ভালো করে চাষ দিতে হবে। কারণ পাটের বিচ খুব ছোট এবং যেসব জমিতে আগে থেকে আলু বা সবজি চাষ করা হয় সেসব জায়গায় পাট চাষ করলে উৎপাদন বেশি হয় এবং খরচ কম হয়। 

পাট চাষের জন্য সার ব্যবস্থাপনাঃ

পাট চাষের জন্য জমিতে বীজ বপণের আগে জমিতে পরিমাণ মতো সার প্রয়োগ করতে হবে এবং বীজ বপণের দিন প্রয়োজনীয় পরিমাণে ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিম সাম অথবা জৈব সার জমিতে শেষ চাষে প্রয়োগ করে মই দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। এতে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। মনে রাখবেন আপনি যদি আপনার জমিতে জৈব সার ব্যবহার করেন তবে রাসায়নিক সার কম লাগবে।

পাট চাষের জন্য বীজের পরিমাণঃ

আপনি যদি ভালো ফলন পেতে চান তবে রোগমুক্ত পরিষ্কার মানসম্মত বিচ ছিটিয়ে বপন করতে হবে। পাটের বীজ শারিতে রোপন  করলে বীজের পরিমাণ কম লাগে এবং গজায়ও ভালো। শারি থেকে শারির দূরত্ব ১২ ইঞ্চি করলে ভালো হয়। শারিতে বীজ বপন করলে গাছ ও পরিচর্যা সমানভাবে নেওয়া যায়।

পাট চাষের জন্য চারার ঘনত্বঃ

পাট চাষের জন্য ১২ ইঞ্চি দূরে দূরে শারির লাইন করে বীজ বপন করলে সবচেয়ে ভালো হয়। গাছ থেকে গাছের দূরত্ব তিন থেকে চার ইঞ্চি রাখা ভালো। সিডার ব্যবহার করে শারিতে বীজ বপন করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। শারিতে পাটের বীজ বপন করলে বিঘাপতি দেশি পাটের জন্য এক কেজি এবং তোষা পাটের জন্য ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম বিজ লাগবে। অপরদিকে যদি আপনি ছিটিয়ে পাটের চারা রোপন করেন তবে বিঘা প্রতি দেশী পাঠের বীজ লাগবে দেড় কেজি এবং তোষা পাটের জন্য ১২০০ থেকে ১৩০০ গ্রাম বীজ লাগবে।

আরো পড়ুনঃ বাদাম খেলে কি হয় কাঁচা বাদামের উপকারিতা অপকারিতা

পাট ক্ষেত নিড়ানিঃ

পাট বপণের ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে আপনাকে পাটের চারা গুলো পাতলা করে দিতে হবে। হাত দিয়ে বা আচড়ার মাধ্যমে পাটের চারা পাতলা করতে হয়। ৪০ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে আপনি পাটের চারা পাতলা করতে পারেন এবং বয়স যখন ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যে হয় সে সময় যে চারা পাতলা করা হয়। এর নাম টানা বাস নামে পরিচিত এবং ৪৮ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে যে পাট চারা গোড়া থেকে কেটে পাতলা করা হয়। সেটা কাঠ বাস নামে পরিচিত এই কচি পাট গাছ থেকে খুব উন্নত মানের সুতা তৈরি করা হয়।

পাট এর ক্ষেতে পানি নিষ্কাষনের ব্যবস্থাঃ

পাট এর খেতে পানি জমতে দেওয়া যাবেনা। যদিও বা পানি অল্প কিছু জমা হয় তবে দেরি না করে তৎক্ষণার নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশি পাটের জাত ছোট অবস্থায় পানি সহ্য করতে পারে না। কিন্ত।গাছের বয়স যখন বাড়ে তখন জলবদ্ধতা সহ্য করতে পারে ।অপরদিকে তোষা পাট ছোট অবস্থায় পানি শুদ্ধ করতে পারে না। এমনকি বড় হলেও পানি সহ্য করতে পারে না।

পাটের রোগ ব্যবস্থাপনাঃ

পাটের রোগের মধ্যে হলুদ মোজাইক, এন থাকনোজ বা শুকনো ক্ষত কালো পট্টি ইত্যাদি  আক্রমণ দেখা দিতে পারে। সম্মানিত বালাই ব্যবস্থাপনার আইপিএম এর আলোকে রোগ পোকা দমন ব্যবস্থা নিতে হবে। জমিতে উরচুঙ্গার আক্রমণ হলে বীজের পরিমাণ বাড়িয়ে রোপন করতে হবে। অন্যান্য ক্ষতিকর প্রকার মধ্যে বিছা পোকা, কাটওয়াম, মাকড়, চেলে পোকা অন্যতম। উর চুঙ্গা পোকা দমনের জন্য ক্ষেতের পাশে সন্ধ্যা বেলায় আগুন জ্বালিয়ে রাখলে এই পোকা মারা যায়।

পাট কাটার নিয়মঃ

ভালো ফলন পেতে হলে পাটকে ১০০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে কেটে নিতে হবে। সাধারণত পাট গাছ আমরা কাটি যখন ফুল আসতে শুরু হয় তখন। আশের ফলন এবং মানের মধ্যে সমতা পেতে হলে পাটকে ভালোভাবে কেটে জাক দিতে হবে।

পাট বাছাই করনঃ

অনেক সময় আমরা ভালো ফলন পাওয়ার জন্য দেরিতে পাট কেটে থাকি। কিন্তু কাটার পরে মোটা চিকন বাসায় না করে একসঙ্গেই বেঁধে ফেলি এভাবে না বেঁধে মোটা  চিকন আলাদা করে বাধবো। এবং সেগুলোকে আলাদা আলাদা ভাবে জাগ দিব। পাটের আটি কখনোই খুব শক্ত করে বাধা যাবে না। এতে পাঠ করতে অনেক সময় লাগে। কারণ শক্ত আঁটির মধ্যে পানি ঢুকতে পারেনা।

পাটের ছাল কম সময়ে পচানোঃ

 সাধারণত ছাল পচনে ১২ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে। পাটের ছাল সাধারণত দুইভাবে পচানো যায় যেমন-পতি ১০০ কেজি পাটের কাঁচা ছাল এর জন্য আধা কেজি ইউরিয়া সার ব্যবহার করুন তাহলে পাটের ছাল গুলো তাড়াতাড়ি পচে যাবে। অথবা একটা ছোট হাড়িতে কয়েকটি পাট টুকরো টুকরো করে কেটে পানি দিয়ে পচাতে দিন। পানিতে ডুবানোর সাত থেকে আট দিন পরে দেখুন পাট গুলো ঠিকমতো পচন ধরেছে কিনা যদি পোচে যায় তবে পঁচানো পানি গুলো জাগ দোওয়া পাটের উপর  ছড়িয়ে দিন এতে করে তাড়াতাড়ি জাগ দেওয়া পাট গুলো পচে যাবে।

পাটের আঁশ ধোয়াঃ

আঁশ ধোয়ার সময় গোড়া গুলো সমান করে নিতে হবে। এবং পরিষ্কার পানি দিয়ে আঁশগুলোকে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এমনভাবে আঁশ গুলোকে ধুতে হবে যেন কোনরকম পঁচা ছাল বা পাঠ খড়ি, কাদা ময়লা গায়ে লেগে না থাকে। কারণ আঁশের গায়ে যদি কাদা, ময়লা আবর্জনা লেগে থাকে তবে বাজারে এগুলো চাহিদা কমে যায় এবং পাটের মান নষ্ট হয়।

আরো পড়ুনঃ শসা খাবেন জেনে নিন শশা ১০ টি উপকারী গুণ

পাটের আঁশ শুকানোঃ

আঁশ ধোয়ার পর পাটের আঁশকে খুব ভালোভাবে শুকাতে হবে। আঁশ কখনো মাটির উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুকাবেন না কারণ তাতে আঁশ এ ময়লা ধুলোবালি লেগে যায়। এজন্য বাসের আড় করে তারপরে আসগুলোকে শুকানো উচিত। আবার ঘরের চালে ব্রীজের রেলিং বা অন্য কোন উপায়েও পাটের আঁশ শুকানো যায় ।আঁশ ভালো করে শুকাতে হবে যেন ভেতরে কোন ভেজা ভাব না থাকে যদি দেখেন ভেতরে ভেজা ভাব আছে তবে আঁশগুলোকে গুদামজাত করা উচিত নয়।

পরিশেষে আমি বলতে চাই, পাট বাংলাদেশের একটি অর্থকারী ফসল। দেশে উৎপাদিত পাটের শতকরা ৭০ ভাগ দেশে ব্যবহার করা হয় বাকি ৩০ ভাগ কাঁচা পাট ও পাটজাত দ্রব্য হিসেবে রপ্তানি করা হয়।পাট থেকে আমরা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করি তাই নিয়ম অনুযায়ী পাট চাষ করব এবং পাটের আঁশ  সংরক্ষণ করব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url