তারাবির নামাজ কত রাকাত এবং তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম
পবিত্র মাহে রমজান আনন্দময় ইবাদতের সময়। সারা বছরের আর কোনদিনও তারাবির নামাজ পড়ার বিধান নেই শুধুমাত্র রমজান মাসেই আছে রমজানে মুমিনের জন্য একটি বিশেষ নামাজের বিধান দেওয়া হয়েছে আর সেটি হলো তারাবির নামাজ। পবিত্র মাহে রমজানের রাত্রি কালে এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নত নামাজের পর দশ সালামে যে ২০ রাকাত নামাজ পড়া হয় তাকে তারাবির নামাজ বলে।
তারাবি আরবি শব্দ 'তার বিহাতুন' এর বহুবচন এর অর্থ হল- আরাম করা ও বিশ্রাম করা।
ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী তারাবির প্রতি চার রাকাত নামাজ পরপর বসে বিশ্রাম নেওয়ার
বিধান রয়েছে। তাই তাই এ নামাজকে আরামের নামাজ বলা হয় বা বিশ্রামের নামাজ বলা
হয়।
পেইজ সূচিপত্রঃ তারাবির নামাজ কত রাকাত এবং কি করে পড়তে হয়
তারাবির নামাজের রাকাতঃ
তারাবির নামাজ কত রাকাত এ নিয়ে ইমামদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। নিম্নে তা তুলে ধরা
হলো-
আরো পড়ুনঃ রমজানে অতিরিক্ত ঝাল মসলাদার খাবার খাওয়ার অপকারিতা
পবিত্র রমজান মাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল এই তারাবির নামাজ। এটি সুন্নাতে
মুয়াক্কাদা। তারাবির নামাজ মোট ২০ রাকাত। তারাবির নামাজ কে ৮ রাকাতের মধ্যে
সীমাবদ্ধ করে ফেলা উচিত। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ তিনদিন জামাতের সঙ্গে তারাবির
নামাজ আদায় করেছেন। কারণ তিনি যদি প্রতিদিন জামাতের সঙ্গে তারাবির নামাজ আদায়
করতেন তাহলে তারাবির নামাজ ফরজ হয়ে যেত সেজন্য তিনি জামাতের সঙ্গে তারাবির নামাজ
আদায় করতেন না।
তারাবির নামাজ পড়ার প্রচলন ঘটে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর রাঃ এর যুগে। সকল
সাহাবায়ে কেরামের ভিত্তিতে তারাবির নামাজ সুন্নত হিসেবে সাব্যস্ত হয় তখন আর এটি
ফরজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না মহানবী সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর ওফাতের মাধ্যমে ওহীর
পথ বন্ধ হয়ে গেছে। তাবেঈ ইবনে আবি যুবারা রাহমাতুল্লাহ , বলেন ওমর রাঃ এর যুগে
রমজানের তারাবি ছিল ২৩ রাকাত। পৃথিবীর প্রথম সহি হাদিস গ্রন্থ মুয়াত্তা মালিকসহ
অন্যান্য কিতাবের উল্লেখ রয়েছে তবেই ইয়াজিদ ইবনে রোমান রাঃ বলেন ওমর
ইবনুল খাতাপ যুগে লোকেরা রমজানে ২৩ রাকাত তারাবি পড়তেন।
তিরমিজি হাদিস প্রণেতার মতে, রাসূল সাঃ বলেন আমার ও আমার
রাশেদার সুন্নত দৃঢ়ভাবে ধারণ করা তোমাদের জন্য অপরিহার্য। এ ধরনের বহু সহি
বর্ণনার আলো কেউ সাহাবী তাবেঈনের যুগ থেকে চলে আসা অবিচ্ছিন্ন কর্মের ভিত্তিতে
প্রমাণিত হয়। ওমর রাঃ এর যুগে মসজিদে নববীতে ২০ রাকাত তারাবি হতো এখনো
মক্কা-মদিনায় ২0 রাকাত তারাবি হয়। সারা বিশ্বের মুসলমানরা এই সুন্নত নামাজের
স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। বলা যায় এটি সাহাবায়ে কেরামের সুন্নত।
তারাবির নামাজ পড়ার নিয়মঃ
আরো পড়ুনঃ রোজা ভঙ্গের কারণ ও ওযু ভঙ্গের কারণ
তারাবির নামাজ দুই ভাবে পড়া যায়। খতম তারাবি ও সূরা তারাবি। খতম তারাবি হলো
রমজান মাসে সম্পূর্ণ কোরআন সহকারে তারাবি আদায় করা।আর সূরা তারাবি হল সূরার
মাধ্যমে তারাবি আদায় করা। তবে খতম তারাবিতে সওয়াব বেশি। নিম্নে তারাবির নামাজ
পড়ার নিয়ম তুলে ধরা হল-
এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতের নামাজের আগে দুই
রাকাত করে দশ সালামের যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয় তাকেই তারাবির নামাজ
বলে।
আরবি এবং বাংলা উভয় নিয়তে তারাবির নামাজ পড়া যাবে, আরবিতে তারাবির নামাজের
নিয়ত হচ্ছে-নাওয়াইতুয়ান ঊষালিয়া লিল্লাহি তাআলা, রাকা তাই
সালাতিহ তারাবিহ সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তাআলা,
মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতি কাবাতিশ সারি ফাতি, আল্লাহু আকবার।
দুই রাকাত নামাজ আদায় করে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা। আবার দুই রাকাত নামাজ
পড়া। এভাবে চার রাকাত আদায় করার পর একটু বিশ্রাম নেওয়া। বিশ্রামের সময় তাসবিহ
পড়া। দোয়া-দরুদ ও জিকির-আজগার করা। তারপর আবার দুই দুই রাকাত করে আলাদা আলাদা
নিয়তে তারাবি আদায় করা
আরো পড়ুনঃ রোজা রেখে ফরজ গোসল কিভাবে করবেন জেনে নিন
ফরজ নামাজ ব্যতীত অন্য সকল নামাজ একাকী আদায় করা উত্তম। কিন্তু তারাবির
নামাজ ব্যতিক্রম। তারাবির নামাজ জামাতের সাথে আদায় করাই উত্তম। কারণ রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে তারাবির নামাজ জামাতে আদায় করেছেন এবং
জামাতে আদায় করার ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন।
পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, পবিত্র রমজান মাসে তারাবির নামাজ পড়া প্রত্যেক নারী পুরুষের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত। এবং জামাতের সাথে নামাজ আদায় করা উত্তম। তারাবির নামাজের নিয়ত আরবি এবং বাংলা উভয়েই করা যায়।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url