শিশুদের পেট ব্যাথার কারন ও চিকিৎসা

 পেট ব্যাথা বিভিন্ন কারনে হয়ে থাকে।ছোট কিংবা বড় বেশির ভাগ শিশুই জিবনে কোন না কোন দিন পেট ব্যাথায় ভুগেছে। বিভিন্ন কারনে পেট ব্যাথা হয়ে থাকে, যেমন-গ্যাস, খাবারের এলার্জি, কোষ্ঠকাঠিন্য, বদ হজম, কৃরমি এগুলো ছাড়াও টিউমার ও কিছু সার্জিক্যাল সমস্যাও হয়ে থাকে যার কারণে শিশুদের পেটে ব্যথা হতে পারে। কিছু কিছু শিশুদের মানসিক ও শারীরিক কারণে পেট ব্যথা হতে পারে। কিছু বাচ্চার খাদ্যনালীতে জীবনু সংক্রমণ থাকার কারণে পেট ব্যথা হতে পারে।

শিশুদের পেট ব্যথার কারণ ও চিকিৎসা

শিশুদের পেট ব্যথা নানা রকম কারণে হয়। খাবারে অনীহা, ঠিকমতো খেতে যায় না এ সকল বাচ্চাদের পেট ব্যথা বেশি দেখা দেয়।  একসঙ্গে নানা রকম খাবার খেতে দিলে সেই খাবার থেকে বাচ্চাদের পেটে গ্যাস করে এবং সেখান থেকে পেট ব্যথা শুরু হয়। নিম্নে শিশুদের পেট ব্যথার কারণ ও চিকিৎসা তুলে ধরা হলো

পেজ সূচিপত্রঃ শিশুদের পেট ব্যথার কারণ ও চিকিৎসা

মানসিক ও শারীরিক কারণে ব্যথার মধ্যে পার্থক্যঃ

ঘুমের মধ্যে ব্যথা হলে এবং ব্যথার কারণে শিশুর ঘুম ভেঙ্গে গেলে কখনোই তা মানসিক  ব্যথা না বরং সেটা শারীরিক কারণে ব্যথা।

আরো পড়ুনঃ রোজা ভঙ্গের কারণ এবং ওযু ভঙ্গের কারণ

ব্যথার সঙ্গে শিশুর শরীরে যদি জ্বর, র‍্যাস, হাড়ে ব্যথা ,ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয় তবে অবশ্যই সেই ব্যথার নির্দিষ্ট কোন কারণ রয়েছে। এবং এমন ব্যথা হলে জানবেন এটা শারীরিক ব্যাথা।

শারীরিক কারণে ব্যাথা হলে শিশুরা নির্দিষ্ট ভাবে ব্যথার জায়গাটা দেখাতে পারে। আর মানসিক কারণে হলে সেভাবে দেখাতে পারে না বা একেবারে একক স্থানে দেখায়।

তিন বছরের নিচে শিশুদের পেট ব্যথা হলে তা সাধারণত রোগের কারণেই হয়ে থাকে।

অকারণে পেট ব্যথাঃ

তিন থেকে দশ বছর বয়সী শিশুর কখনো পেট ব্যথার প্রায় 8 থেকে 16 শতাংশ কোন রোগের জন্যই হয় না। এটাই হলো অকারণে পেটব্যথা। মানসিক কারণে সাধারণত এ পেটব্যথা হয়ে থাকে এ ধরনের পেট ব্যথার নির্দিষ্ট কোন চরিত্র হয় না। এ ধরনের পেট ব্যথা শিশুরা অত্যাধিক মানসিক চাপে ভোগে কিছুটা সিরিয়াস প্রকৃতির হয়ে থাকে শিশু স্কুলে যেতে না চাইলে পড়া ভালো না লাগলে পরিবারে অশান্তি থাকলে বন্ধুরা কোন বিষয় নিয়ে উত্ত্যক্ত করলে হঠাৎ বাসা পরিবর্তন করলে বন্ধুদের সাথে বিচ্ছেদ ঘটলে কোন কিছু না খেতে চাইলে ইত্যাদি উপসর্গ পেট ব্যথার কারণ। এ ব্যথা কিন্তু ইচ্ছাকৃত নয় , শিশুর  মনের ভেতরে মানসিক দ্বন্দ্বের প্রকাশ ঘটে পেট ব্যথার মাধ্যমে।

 গ্যাস জনিত ব্যথাঃ

বড়দের মতো শিশুদেরও পেটে গ্যাস করে। যদি শিশু কোন স্পষ্ট কারণ ছাড়াই  অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাঁদতে থাকে তবে সেটা উপেক্ষা করা উচিত নয়। শিশুদের পেটে গ্যাস হয় মায়ের দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি এর কারনে। দুধ খাওয়ানোর ভিতর ত্রুটি থাকলে বাচ্চারা বাতাস খেয়ে ফেলে তাই পেটে গ্যাস হয়। আর এই গ্যাসের কারণেই বাচ্চারা কান্না করতে থাকে । বাচ্চাদের মধ্যে কান্না খুব স্বাভাবিক কারণ। কান্নার মাধ্যমে বাচ্চারা তাদের প্রয়োজনীয়তার প্রতি পিতা-মাতার মনোযোগ আকর্ষণ করে।

আরো পড়ুনঃ প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়ার কারণ চিকিৎসা ও প্রতিকার

তিন মাসের অধিক পেট ব্যাথাঃ

তিন মাসের অধিক পেট ব্যথা সাধারণত কোন গুরুতর অসুস্থতা বা রোগের কারণে হয় না। তিন থেকে চার মাসের কম বয়সী শিশু তিন সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে কাঁদতে থাকলে এবং প্রতিদিন বা সপ্তাহে ৪-৫ দিন সন্ধ্যার পর থেকে এবং প্রতিদিন কয়েক ঘন্টা ধরে অবিরত কাঁদতে থাকলে তবে তা সাধারণত এ ধরনের পেট ব্যথা হয়। তিন সপ্তাহ পরে দেখা যায় এবং তিন থেকে চার মাস বয়স থাকে না। এ ধরনের ব্যথার ক্ষেত্রে শিশুদের বুকে ও পিঠে হাত দিয়ে মালিশ করলে অথবা তলপেটের দিকে চেপে ধরলে শিশুদের আরাম বোধ হয়।

কোষ্ঠকাঠিন্যঃ

ছয় মাসের পর অপরিকল্পিতভাবে অন্য কঠিন খাবার খেতে শুরু করবে বা সুজি তাদের গোড়ার খাবার খায় তাদের পেট ব্যথার অন্যতম কারণ কোষ্ঠকাঠিন্য। যেসব শিশু গরুর দুধ বোতলের দুধ খায় তাদেরও কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ হতে পারে। শিশুদের দুই কিংবা তিন দিন ধরে ঠিকমতো পায়খানা না হলে তা পেটের ভেতর জমে থেকে ব্যথার সৃষ্টি করে। এজন্য শিশুদের নরম খাবার খাওয়াতে হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ হলে শিশুকে সাইকেলের মত পা দুটোকে চালনা করার মাধ্যমে  শিশুর ব্যায়াম করান বড় শিশুদের শাকসবজি আশযুক্ত খাবার ও ফলমূল খাওয়ানোর পাশাপাশি নিয়মিত মলত্যাগ করার অভ্যস্ত করতে হবে।

কৃরমিঃ

নোংরা পরিবেশ, অনিরাপদ পানি পান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যভাস,খালি পায়ে হাটা কৃমির সংক্রমনের জন্য দায়ী। প্রতি তিন মাস পর পর পরিবারের সবাই একটি করে এলবিনডাজল বড়ি শোভন করলে অথবা মেবেনডাজল পরপর তিনদিন খেতে হয় ৭ দিন পর দ্বিতীয় ডেস খেলে কিমি মুক্ত হওয়া যায়। শিশুদেরও একইভাবে সিরাপ খাওয়াতে হবে তবে দুই বছরের নিচে কোন  শিশুকে খাওয়াতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে দিন। কৃমি হলে সাধারণত অপুষ্টি ও রক্তশূন্যতায়্ ভুগে বাচ্চারা। কৃমিতে পায়ুপথের আশেপাশে চুলকানি হতে পারে।

বয়স ভেদে সমস্যা ও কারণঃ

বড় শিশু ও বালক বালিকাদের বেলায় নানা রকম ভাবে পেট ব্যথা হতে পারে যেমন- প্রসাবে সংক্রমণ, কৃমি ইত্যাদি। কিশোরীদের বেলায় মাসিক সংক্রান্ত সমস্যা ও পোশাবের সংক্রমণের দিকে অধিক মনোযোগ দেওয়া উচিত। এ বয়সের বালক বালিকার বেলায় মানুষের চেয়ে পর আঘাত এমনকি খাদ্যে বিষক্রিয়ার কথা ভাবতে হবে। দুই বছরের নিচের শিশুদের সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম, ডায়রিয়া, খাদ্যে বিষক্রিয়া প্রভৃতি কারণে পেট ব্যথা হয়।

উপদেশঃ

নবজাতক ও ছোট সুদের প্রতিবাদ দুধ খাওয়ানোর পর বাচ্চার ঢেকুর তুলানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুকে মাথা উঁচু করে সোজা করে খাওয়াতে হবে এবং প্রতিবার খাওয়ানোর পর কাঁধে নিয়ে আস্তে আস্তে তার পিঠে চাপড় দিতে হবে এতে পেটের বাতাস বের হয়ে আসে।

আরো পড়ুনঃ চোখ ওঠা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

গ্যাসের সমস্যা এবং শিশুদের পেট ব্যাথা উপশম করতে হাঁটু বাঁকানো ব্যায়াম কার্যকর। বাচ্চাকে চিত করে সয়ানোর পর তার পা দুটোকে হাঁটুর দিকে ভাজ করে পা দুটি পেটের দিকে ঠেলে দিতে হবে। এ  ব্যামটি দৈনিক চার থেকে পাঁচ বার করলে ভালো হয়।

সতর্কতাঃ

ছোট শিশুদের প্রথম খাবারের অভ্যাস করার সময় ধীরে ধীরে প্রথমে তরল নরম খাবার তারপরে খিচুড়ি বা পিসপাস অর্থাৎ চাল ডাল সবজি ছোট মাছ মুরগির মাংস ডিম মিশ্রিত খাবার খেতে দিন কোন খাবারে এলার্জি আছে কিনা খেয়াল করতে হবে। এবং সেটি বাদ দিতে হবে। খাদ্য প্রস্তুত ও পরিবেশনে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। শিশুদের হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, ব্যথা যদি খুব তীব্র হয়, সঙ্গে জ্বর থাকে, অনবরত বমি হয়,পেট শক্ত হয়ে যায়, মলের বা বমির সঙ্গে রক্ত দেখা দেয় বা পিত্ত বমি হয় সে ক্ষেত্রে শিশুদের দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। সুনির্দিষ্ট কারণ জানার আগে শিশুদের কিছুই খাওয়ানো উচিত নয় হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url