সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
সজনে পাতায় রয়েছে নানা রকম পুষ্টিগুণ। প্রতি গ্রাম সজনে পাতায় একবাটি কমলার চেয়ে সাত গুণ ভিটামিন সি থাকে। সজনে পাতায় দুধের চেয়ে বেশি চারগুণ ক্যালসিয়াম থাকে । বহুকাল পূর্বে সজনে গাছ শুধু আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশে পাওয়া যেত। কিন্তু এখন সারা বিশ্বের সজনে গাছ পাওয়া যায়। আমরা সজনে গাছের পাতা এবং সজনে গাছের ডাঁটা খেয়ে থাকি। বর্তমান সময়ে আমরা সুপার ফুড সম্পর্কে অনেকেই জানি এই সুপার ফুড বা সজনে পাতার গুড়া তার মধ্যে অন্যতম একটি।
সজনে গাছ আমাদের বাড়ির আশেপাশে পাওয়া যায়। এবং এর পাকা ও ডাটা আমরা খেয়ে থাকি। প্রাচীন ভারত ভারতবর্ষে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় সজনে গাছের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। নিম্নে সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা তুলে ধরা হলো।
পেইজ সূচিপত্রঃ সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- সজনে পাতার উপকারিতা
- সজনে পাতার অপকারিতা
- সজনে পাতা গুড়া করার নিয়ম
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
- প্রোটিনের উৎস
- লিরভা
- কোলেস্ট্রল নিয়ন্ত্রণ
- ব্লাড সুগার
- হজম শক্তি
- আর্সেনিকের প্রভাব
- শরীরে হাড়ের ক্ষয় রোধ
- ত্বক এবং চুলের জন্য
- সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম
- শেষ কথা
সজনে পাতার উপকারিতাঃ
সজনে পাতাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন মিনারেল প্রোটিন ইত্যাদি বিশেষ করে
ভিটামিন সি যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে । সজনে
পাতার গুড়ো চা হিসেবে আমরা প্রতিদিন ব্যবহার করি প্রতিদিন ব্যবহারে আমাদের
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এবং প্রতিদিন ব্যবহারের ফলে আমাদের শরীরে
কোনরকম ভিটামিন এবং মিনারেলসের অভাব হয় না। আমাদের শরীরে প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০
গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন এবং এই প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে সজনে পাতা।
আরো পড়ুনঃ চোখ উঠা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
সজনে পাতার অপকারিতাঃ
সজনে পাতার খাওয়ার ক্ষেত্রে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই তবে কিছু কিছু
ক্ষেত্রে সুজনে পাতার গু ড়ো না খাওয়াই ভালো। যেমন-
আমাদের ব্লাড প্রেসার কে কম করতে সজনে পাতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে। আপনারা যারা ব্লাড প্রেসার বাড়ানোর জন্য ওষুধ খেয়ে থাকেন তারা সজনে পাতার
গুড়ো না খাওয়াই ভালো তার কারণ সজনে পাতা গুড়া খেলে ব্লাড প্রেসার লেভেল আরো
কমে যাবে যা আপনার শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
সজনে পাতার গুঁড়োতে প্রচুর পরিমাণে মিনারেলস থাকে তাই খুব বেশি পরিমাণ সজনে পাতা
খেলে আমাদের খিদে কম হতে পারে এবং পেটে গ্যাস বা ডায়রিয়ার সমস্যা হতে
পারে ।
সজনে পাতাতে কিছু প্লান্ট কেমিক্যাল থাকে যার কারণে একদম ছোট বাচ্চা এবং
গর্ভবতী মায়েদের এবং না খাওয়াই উচিত।
সজনে পাতার গুড়ো খাওয়ার বা গ্রহনের পূর্বে অবশ্যই একবার আপনার দপ্তরের সাথে কথা
বলে নেবেন।
সজনে পাতা গুড়ো করার নিয়মঃ
আমরা সজনে গাছ থেকে সজনে পাতা গুলোকে ভেঙে পাতাগুলো পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে আলো ছায়া জায়গাতে পরিষ্কার কাপড় এর ওপর দুই দিন ভালো করে শুকিয়ে নেব তবে আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা সরাসরি সূর্যের রোদে শুকাতে দেব না।
ভালোভাবে শুকানো হয়ে গেলে পাতাগুলোকে ভালোভাবে পিশে নেব।
এরপর একটি পরিষ্কার কাজের কৌটাতে রেখে দেবো পরবর্তী সময়ে ব্যবহারের জন্য। কৌটার
ভিতরে যেন আলো বাতাস না ঢুকতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ
সজনে পাতাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন মিনারেল থাকে যা বিশেষ করে ভিটামিন সি
আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করার জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয়।তাই
সজনে পাতার উপকার আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয় তার কারণ সজনে পাতা
নিয়মিত গ্রহণ করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত হয় এবং আমাদের শরীরের
কোনরকম ভিটামিন এবং মিনারেল এর অভাব হয় না।
আরো পড়ুনঃ প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়ার কারণ চিকিৎসা ও প্রতিকার
প্রোটিনের উৎসঃ
প্রশ্নপত্রের প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ প্রয়োজন।
সজনে পাতার ঘুড়োতে ৯ থেকে ১০ প্রকারের অ্যামাইনো এসিড থাকে। আমরা প্রতিদিন
যে খাবার খেয়ে থাকি তার মধ্যে ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম প্রোটিন খুবই প্রয়োজন আমাদের
শরীরের জন্য। এবং সজনে পাতার গুড়োতে খুব ভালো একটা প্রোটিনের উৎস পাওয়া
যায়।
লিভারঃ
সজনে পাতা আমাদের লিভারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান ।যা বিভিন্ন
বিষাক্ত পদার্থ থেকে আমাদের লিভার কে রক্ষা করে এবং লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত কোষ
গুলোকে পুনরায় সচল কোষে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেঃ
যদি আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায় তবে আয় শরীরের নানারকম রোগ দেখা
দিতে পারে সজনে পাতা আমাদের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের কোলেস্টেরল
মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে এবং কোলেস্টেরল কে খুব বেশি বাড়তে দেয় না ফলে
আমাদের হৃদয় ও সুস্থ থাকে এবং হৃদয় গঠিত হোক থেকে রক্ষা করে।
ব্লাড সুগারঃ
নিয়মিত সজনে পাতার গুঁড়ো গ্রহণ করলে আমাদের রক্তের সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ
থাকে তার কারণ বিভিন্ন পরীক্ষায় জানা গেছে সজনে পাতাতে ব্লাড কেমিক্যাল
আইসতীহসায়ানাইস থাকে যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমাদের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ
থাকে।
হজম শক্তিঃ
আমরা অনেকেই নানা রকম সমস্যায় ভুগি যেমন-খাবার হজম হয় না, খুব বেশি এসিডিটি,
পেটে গ্যাস ইত্যাদি সজনে পাতাতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং ভিটামিন বি রয়েছে যা
আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং পেটের নানারকম রোগ থেকে রক্ষা
করে।
আর্সেনিকের প্রভাবঃ
আর্সেনিক এমন একটি পদার্থ যা আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ ক্ষতিকারক সাধারণত আমাদের
শরীরে আর্সেনিক দুটি মাধ্যমে প্রবেশ করে প্রথমত দূষিত জল পান করা মাধ্যম এবং
দূষিত ভাত বা খাবার গ্রহণ করার মাধ্যম সজনে পাতাতে কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
উপাদান রয়েছে যা বিষাক্ত আর্সেনিকের প্রভাবকে অনেক কম করে এবং আমাদের শরীরকে
বিভিন্ন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
শরীরে হাড়ের ক্ষয় রোধঃ
সজনে পাতাতে প্রচুর পরিমাণ খনিজ পদার্থ বা মিনারেল রয়েছে যেমন ক্যালসিয়াম
ফসফরাস ও আরো অনেক আমাদের শরীরের হাড় ক্ষয় রোধকে শক্ত বাদ দৃঢ় করতে
সাহায্য করে এবং বিভিন্ন ব্যথার সমাধান করে।
আরো পড়ুনঃ ফ্লু ভাইরাসের লক্ষণ
ত্বক এবং চুলের জন্যঃ
সজনে পাতাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে । যা আমাদের ত্বকের উপর মৃত কোষ গুলোকে সরিয়ে পুনরায় নতুন কোষ উৎপন্ন হতে সাহায্য করে। একইভাবে সজনে পাতা আমাদের চুলের গোড়াকে শক্ত করতে এবং চুল উঠে যাওয়া রোধ করতে সাহায্য করে। এবং সজনে পাতা তক এবং চুলের জন্য খুবই উপকারী।
সজনে পাতা পাতা খাওয়ার নিয়মঃ
সকালে এক গ্লাস উষ্ণ গরম জলের সাথে এক চামচ সজনে পাতা ও পাতিল লেবুর রস
মিশিয়ে আমরা খেতে পারি।
বিভিন্ন রকম সালাতের সাথে সজনে পাতার গুড়া সকালে ব্রেকফাস্ট এবং দুপুরে লাঞ্চের পর খেতে পারি।
এছাড়াও ডাল এবং বিভিন্ন তরকারিতে সজনে পাতার গুড়া পাউডার মিশিয়ে আমরা রান্না
করেও খেতে পারি।
শেষ কথাঃ সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, সজনে পাতা খাওয়ার যেমন উপকার আছে তেমনি অপকারও আছে। প্রাচীন ভারতবর্ষে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় সজনে গাছের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। আমরা সজনে গাছের পাতা এবং ডাটা খেয়ে থাকি। এখনকার দিনে আমরা অনেকেই সুপারফুট সম্পর্কে জানি তার মধ্যে সজনে পাতার গুড়া একটি। এই সজনে পাতার গুড়ায় আমরা প্রতিদিন সকালে চা হিসেবেও খেতে পারি। তবে এটি খেলে যেমন উপকার হয় তেমনি অপকারও হয় তাই সজনে পাতা খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে খেতে হবে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url