হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ, কারণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা

হার্ট অ্যাটাক  একটি বিশেষ রোগ ।এর কারণ হলো হার্ট অ্যাটাক রোগে যারা মৃত্যুবরণ করে তাদের বেশিরভাগ লোকই কিন্তু প্রথম ঘণ্টার মধ্যে মারা যায়।হার্ট অ্যাটাক রোগটি আসলে সবার মধ্যে খুব ভয় সঞ্চার করে থাকে। হার্ট অ্যাটাক সম্বন্ধে আমাদের সবার একটি ব্যক্তিগত ধারণা থাকা দরকার। এর কারণ হার্ট অ্যাটাক যেই রোগীর হয় তাকে হাসপাতালে পৌঁছনের আগে রোগীর পাশে যারা থাকেন তাদের কিছু বিষয় জেনে রাখা দরকার তাদের কিছু দায়িত্ব থাকে। পুরুষ ও নারীর উভয়ের ক্ষেত্রে হার্ট এটাকের অন্যতম লক্ষণ হল বুক ব্যথা । তবে  নারীদের ক্ষেত্রে অন্য লক্ষণ গুলো বেশি দেখা দেয় -  ছোট ছোট শ্বাস, বমি বমি ভাব, পিঠেবা চলে ব্যথা হঠাৎ করে মুখ হাত-পা বিশেষত শরীরের এক পাশ দুর্বল হয়ে যাওয়া।

হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ, কারণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা

কিছু নিয়ম মেনে চললে হার্ট অ্যাটাক এড়ানো সম্ভব যেমন ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে ছেড়ে দিতে হবে। শরীরে যদি বাড়তি ওজন থাকে তবে সেটা কমিয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিতভাবে ব্যায়াম ও শরীর চর্চা করতে হবে এবং পরিমাণ মতো খাবার খেতে হবে। প্রতিটি সুস্থ মানুষদের কমপক্ষে সপ্তাহে দুই আড়াই ঘণ্টা মাঝারি ধরনের ব্যায়াম করতে হবে।

পেইজ সূচিপত্রঃ হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ, কারণ,  প্রতিকার ও চিকিৎসা

হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণঃ

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ অনেক। এ লক্ষণ গুলো সবার একসঙ্গে প্রকাশ পায় না। নিম্নে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ তুলে ধরা হলো।

আরো পড়ুনঃ শিশুদের পেট ব্যথার কারণ ও চিকিৎসা

কাশিঃ

আপনি কি দীর্ঘদিন কাশির সমস্যায় ভুগছেন এবং তার সঙ্গে সাদা বা কিছুটা ঘোলাটে কফ বের হয় তবে বুঝতে হবে আপনার হার্ট ঠিকমতো কাজ করছে না ভবিষ্যতে আপনার হার্ট অ্যাটাক হতে পারে তবে হ্যাঁ কাশি সব সময় হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ নাও হতে পারে কফের সঙ্গে নিয়মিত রক্ত বের হলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকে।

অজ্ঞান হয়ে যাওয়াঃ

আপনি যদি কাজের মাঝে প্রায় হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যান তাহলে বুঝবেন আপনার হার্টের সমস্যা রয়েছে।

শ্বাসকষ্ট হতে পারেঃ

হার্ট অ্যাটাক হলে রোগীর শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এবং সেটা কারো খুব বেশি আবার কারো হালকা ব্যথা করতে পারে।

আতঙ্কিত হতে পারেঃ

হার্ট অ্যাটাক হলে রোগী ভয়ে আতঙ্কিত হতে পারে। ভয়ে অস্থিরতার পাশাপাশি রোগী মনে করে যে সে মারা যাচ্ছে।

 মাথা ঝিমঝিম করা অথবা মাথা ঘোরানোঃ

হার্ট অ্যাটাক করলে রোগী মাথা ঘোরাতে পারে। মাথা ঘুরে রোগী পড়েও যেতে পারে। মাথা ঝিমঝিম করতে পারে।

অকারণে ঘামতে থাকাঃ

হার্ট অ্যাটাক করলে রোগী প্রচুর পরিমাণে ঘামতে থাকে। এবং এই ঘামের পরিমাণ অল্প কিংবা বেশি হতে পারে।

বুকে ব্যথা হতে পারেঃ

হার্ট অ্যাটাক এর রোগীর বুকে তীব্র আকারে ব্যথা হতে পারে। এবং এ ব্যথা বুক চেপে ধরার মতো ব্যথা হতে পারে। এবং রোগের বুকের মধ্যে কিছু চেপে বসে আছে অথবা কিছু আটকে আছে এমন অনুভূতিও হতে পারে।

বুক ছাড়া শরীরের অন্য জায়গায় ব্যথাঃ

বুক ছাড়া শরীরের অন্য জায়গায় ব্যথা হতে পারে। বুক থেকে এই ব্যথা হাতেও নেমে যেতে পারে। তবে এই ব্যথা উভয় হাতেই হতে পারে সাধারণত বাম হাতে এমন ব্যথা হয়। হাতের পাশাপাশি ঘাড়পিঠ ও পেটে ব্যথা হতে পারে।

ক্লান্ত হয়ে পড়াঃ

আপনি কি অল্পতেই খুব তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ কাজ করলেই বুক ধরফর করে তবে আপনি এখনই কোন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিশেষ করে মহিলাদের হার্টের সমস্যার প্রধান লক্ষণ এটি।

অনিয়মিত পালস রেটঃ

আপনি যদি অনেক বেশি নার্ভাস থাকেন বা কোথাও থেকে দূরে আসেন অথবা কিছু কাজ করার পরে হাপিয়ে যান তখন আপনার পালস রেট উঠানামা করতে পারে। তবে এটি যখন কোন কারণ ছাড়াই হয় তবে সেটা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, হার্ট এটাকের আগে এমনটাই উঠানামা করে।

আরো পড়ুনঃ পাইলস কি, পাইলসের লক্ষণ, চিকিৎসা ও ঘরোয়া প্রতিকার

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট অবস্থাঃ

সাধারণত কিছু কিছু ক্ষেত্রে হার্ট এটাক হলে হৃদপিণ্ড খুব তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং এটাকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বলে। এমন অবস্থা হলে রোগের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং শ্বাস নেওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া ধাক্কা দিলেও সাড়া না দেওয়ার মত লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে রোগীকে সিপিআর দিয়ে তার হৃদপিণ্ড চালু করতে হবে।

হার্ট অ্যাটাক এর কারণঃ

হার্ট অ্যাটাকের  আগে একটা কোলেস্টরলের প্লাট ফেটে যায়। যার ফলে রক্ত জমাট বাঁধে। রক্ত জমাট বাধার কারণে ধমনীতে একটি গোলাকারের সৃষ্টি হয়। এই এই গোলাকার পরের অংশে রক্ত যেতে পারে না। ফলে হৃৎপিণ্ডের সেই অংশটা নষ্ট হয়ে যায় এবং দেখা দেয় হার্ট অ্যাটাক। হৃদপিন্ডে রক্ত সরবরাহকারীর যতগুলো রক্তনালী রয়েছে সেগুলোকে করোনারী আটারি বলা হয়। এসব ধমনীর ভেতরে দেওয়ালে কোলেস্টেরল জমা হলে রক্তনালী সরু হয়ে যায় ফলে রক্তের প্রবাহ স্বাভাবিক বাধা সৃষ্টি করে এবং জমাট বাধায়ক এসব কোলেস্টেরল কে প্লাগ বলা হয়।

ধমনীর ভিতরে কোলেস্টেরল জমার কারণঃ

কোলেস্ট্রল এর নাম এক ধরনের চর্বি। এটি কয়েকটা ধরনের হতে পারে যেমন-ট্রাই গ্লিসারাইড, এল ডি এল, এইচ ডি এ্ল, এবং টোটাল কোলেস্টেরল। এইচডিএল বাদে অন্য সব কোলেস্টেরল গুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বিভিন্ন কারণে ধমনীর ভেতরের দেওয়ালে কোলেস্টেরল জমে। এই কোলেস্টেরল জমার অন্যতম কারণ হলো ধূমপান। এছাড়াও নানাভাবে ধমনীতে দেয়ালের সৃষ্টি করে যেমন খাবারে চর্বির পরিমাণ বেশি রাখা, উচ্চ রক্তচাপ, অলস জীবন যাপন, এছাড়াও বংশগত কারণেও কারো কারো রক্তে কোলেস্টরলের পরিমাণ বেশি হতে পারে।

হার্ট অ্যাটাকের প্রতিকারঃ

কমিয়ে ফেলতে হবে শরীরের বাড়তি ওজন। ধূমপান এবং মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে সেটা ছেড়ে দিতে হবে। এবং নিয়ম মেনে জীবন যাপন করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। যারা প্রাপ্তবয়স্ক তাদেরকে সপ্তাহে কমপক্ষে আড়াই ঘন্টা মাঝারি ধরনের ব্যায়াম করতে হবে। প্রতিদিন খাবারের তালিকায় প্রচুর ফলমূল ও শাক সবজি রাখতে হবে। খাবারে মাংস যুক্ত চর্বির পরিমাণ কমিয়ে আর যুক্ত খাবার বেশি করে খেতে হবে। এগুলো যদি আমরা ঠিক নিয়মিত মেনে চলি তবে হার্ট অ্যাটাকের প্রতিকার করতে পারব।

হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসাঃ

হার্ট অ্যাটাকের রোগীকে বাসায় না রেখে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। এ সময় রোগীকে বেশি করে বিশ্রামে রাখতে হবে। সম্ভব হলে এসপিরন ট্যাবলেট খাইয়ে বিশ্রামে রাখতে হবে এসপিরণ রক্ত পাতলা করে এবং হৃদপিন্ডে রক্ত বেশি করে সরবরাহ করতে সাহায্য করে।

আরো পড়ুনঃ প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়ার কারণ চিকিৎসা ও প্রতিকার

শেষ কথাঃ হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ, কারণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা

পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচতে হলে শরীরে বাড়তি ওজন কমিয়ে ফেলতে হবে। এবং চর্বিযুক্ত খাবার কম খেতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, ধূমপান করা যাবে না। সপ্তাহে অন্তত আড়াই ঘন্টা ব্যায়াম করতে হবে প্রাপ্তবয়স্কদের। এগুলো যদি আমরা নিয়মিতভাবে মেনে চলতে পারি তবে হার্ট অ্যাটাক থেকে অনেকটা মুক্তি পাওয়া যাবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url