এজমা কি, ঘরোয়া উপায়ে এজমা থেকে মুক্তির উপায়

বর্তমানে পৃথিবীতে এজমা সমস্যার নাম না সোনা নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আমাদের আশেপাশে বহু লোক এই এজমা সমস্যায় ভুগছেন। কোন কারণবশত শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে গেলে শ্বাস প্রশ্বাসে অসুবিধা হয় । সেটাই এজমা। বিশেষজ্ঞদের মতে এজমা স্থায়ী বা বংশানুক্রমিক একটি অসুখ। এজমা রোগের কোন সমাধান নেই যার ফলে একেবারে অ্যাজমার সমস্যা ভালো হয়ে যাবে।

এজমা কি,ঘরোয়া উপায়ে এজমা থেকে মুক্তির উপায়

তবে আপনার কোন চিন্তার কারণ নেই। এজমা কোন মারাত্মক  মরণব্যাধি নয়।এজমা থেকে মুক্তির এবং সাময়িক নিরাময়ে অনেকগুলো উপায় রয়েছে। এসব চিকিৎসা করালে এবং জীবন যাপনের সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চললে আপনার জীবনে চলার পথে এজমা কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। কিন্তু অনেকেই জানেন না এজমা থেকে মুক্তির উপায় কি এ কারণে অনেক মানুষ নিয়ে নাজেহাল হয়ে পড়েন তাই আমরা আজকে অ্যাজমা কি ঘরোয়া উপায়ে এজমা থেকে মুক্তির উপায় গুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরা হল।

পেইজ সূচিপত্রঃ এজমা কি, ঘরোয়া উপায়ে এজমা থেকে মুক্তির উপায়

এজমা কিঃ

শ্বাসনালীতে অনেক সময় ইউসিনোফিল কোষ ও অন্যান্য উপাদান জমা হয় ফলে শ্বাস নারীর ছিদ্রপথ বন্ধ হয়ে যায় তখন শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয় তখন সেটাকে এজমা বলা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে এজমা বংশানুক্রমিক একটি ওষুধ আরো বলা হয় এই রোগে কোন নিরাময় নেই অর্থাৎ এমন কোন সমাধান নেই যার ফলে একেবারে এজমা সমস্যা নির্মূল হয়ে যাবে। আমরা অনেকেই অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টকে এক করে ফেলি। এজমার কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তবে এজমা ও শ্বাসকষ্ট এক জিনিস নয় শ্বাসকষ্ট অনেক রোগের উপসর্গ মাত্র।

আরো পড়ুনঃ পইলস কি, পাইলস এর লক্ষণ চিকিৎসা ও ঘরোয়া প্রতিকার

এজমা থেকে মুক্তির উপায়ঃ

এজমা থেকে মুক্তির উপায় রোগের মাত্রা ভেদে ভিন্ন ভিন্ন। অনেক রোগীদের ক্ষেত্রে জীবন ধারণে সাধারণ পরিবর্তন আনলেই চলে আবার কারো কারো ক্ষেত্রে ওষুধ দিয়ে সাময়িকভাবে এরপেক্ষ কমানো যায় তবে অনেকের অবস্থা গুরুতর হয়ে যায় তখন চিকিৎসা ছাড়া উপায় থাকে না।  এজমা থেকে মুক্তির সব ধরনের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আমি আপনাদের জানাবো।

এজমার উপসর্গঃ

সাধারণত মূলত ফুসফুসের যেসব নাড়ীগুলির মাধ্যমে বায়ু চলাচল করে সেগুলোর সংকীর্ণতার জন্য এজমা ও হাঁপানির লক্ষণ দেখা যায়। যথা-

  • রাতে হঠাৎ দম আটকে যাওয়া।
  • বুকে ব্যথা
  • শুকনো কাশি
  • নিঃশ্বাসে দুর্বলতা
  • বুকের ভেতর শব্দ করে
  • অ্যাজমার ধরনঃ

মানুষের শরীরে অনেক ধরনের এজমা দেখা যায়। অর্থাৎ একজনের এক এক কারণে সমস্যা বৃদ্ধি পায় এবং প্রকাশের লক্ষণও আলাদা আলাদা তবে এর মধ্যে তিনটি প্রধান লক্ষণ আছে সেগুলো হলো-

একজন সুস্থ ব্যক্তির হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট হয়। আবার কয়েক মিনিট পর কোন ওষুধ ছাড়াই নিজে নিজে ঠিক হয়ে যায়।

এই উপসর্গটি ও হঠাৎ করে হয় তবে এটি অনেকক্ষণ থাকে এবং এটি চিকিৎসা ছাড়া ভালো হয় না একে স্ট্যাটাস অ্যাজমাটিকাস বলে।

এই উপসর্গটি সবসময় শ্বাস-প্রশ্বাসে হালকা বাধা দেয়। হঠাৎ তীব্র প্রদাহ হয় আবার কমেও যায়। তবে শ্বাস নেওয়ার সময় স্থায়ীভাবে একটু টান বাধা অনুভব হয় শরীরের ভেতর।

শিশুর এজমা সমস্যা ও চিকিৎসাঃ

বংশগতভাবে অথবা পরিবেশগতভাবে শিশুদের মধ্যে এজমা সমস্যা পাওয়া যায়। শিশুর শারীরিক অবস্থা ও পারিবারিক রোগের ইতিহাস ব্যাখ্যা করে এজমার নির্ণয় করা হয়। শিশুদের এজমার চিকিৎসা প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে কিছুটা আলাদা।

যে সকল শিশুদের স্বল্পমাত্রায় আক্রান্ত হয়েছে সাধারণত তাদেরকে সালবিউটামল ইনহেলার দেওয়া হয়। অথবা সালবিউটামল সিরাপ খাওয়ানো হয়।

মাঝারি মাত্রায় আক্রান্ত শিশুকে সালবিউটামল ইনহেলার কয়েকবার প্রয়োগ করা হয় অথবা শিশুকে নেবুলাইজার মেশিনের সালবিউটামল ও সাধারণ স্যালাইন দিয়ে নেবুলাইজ করে চিকিৎসা করানো হয়।

যে সকল শিশুরা তীব্রমাত্রায় আক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে অক্সিজেন দিতে হবে। আর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইস্ট এর ইট ইঞ্জেকশন প্রয়োগ ও নেবুলাইজ করতে হবে।

চিকিৎসা পদ্ধতি আলোচনা করা হলো তা ছিল স্বল্পমেয়াদি চিকি ৎসা। এজমা আক্রান্ত শিশুর দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা সালবিউটাম্ছাল ছাড়াও নিউক্রমিল, স্টেরইয়েড, এবং মন্টিলুকাস্ট ইনহেলার ব্যবহার করা হয়।

দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণঃ

মিথাইল লাজ্যানিহনঃ এজমার সমস্যা দূরে রাখতে মিথাইল ব্যবহার করা হয়। এটি দ্রুত অ্যাজমার প্রকোপ কমায়। থিও ফাইলিন রাত্রি কালীন অ্যাজমা প্রতিরোধ করতে ব্যবহার করা হয়।

ইনহেলড কোটিকোষ্টেরইয়েডসঃ ডাক্তারদের প্রথম পছন্দ এটি, দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ রাখতে এটি দীর্ঘ সময় ধরে সাহায্য করে। একটি ব্যবহারের ফলে শ্বাসনালীর প্রদাহ কমে এবং ফোলাও কমে।

আরো পড়ুনঃ পুদিনা পাতার উপকারিতা অপকারিতা ও ব্যবহারের নিয়ম

চিকিৎসার মাধ্যমে এজমা থেকে মুক্তিঃ

ইজমা থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তি পাওয়া বা এর প্রকোপ কমানোর জন্য অনেক চিকিৎসা রয়েছে তার মধ্যে কিছু তুলে ধরা হলো-

তৎক্ষণিকভাবে এজমা নিরাময়ের জন্য কিছু ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ইজমার সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য অনেকেই বিটা এগেনিস্ট ওষুধগুলির সাজেস্ট করেন এছাড়াও এজমা থেকে মুক্তির জন্য ডাক্তাররা আরো কৌশল কিছু ঔষধ প্রেসক্রিপশন করেন যেমন কলবিউটরল পিরভিউটেরিয়াল ইত্যাদি এরা শাসনালীকে দ্রুত শিথিল করে এবং নিঃশ্বাস স্বাভাবিক করো।

অনেকের ব্যায়াম করার ফলে এজমার সমস্যা থাপানের যায় এছাড়াও দৌড় খেলাধুলা ভারী কিছু উত্তোলন সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠা এসব কারণে সমস্যা হয় ডাক্তাররা এসব ভারী কাজ বা পরিশ্রমের আগে ওষুধ স্বপন করতে বলেন এসব ঔষধ শরীরকে শীতল করে এবং বায়ুমন্ডালি গুলোকে খুলে দেয় ফলে শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়।

এজমার কারণঃ 

প্রকৃতপক্ষে কি কারনে অ্যাজমা হয় তা এখনো জানা যায়নি তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন বংশগত কিংবা পরিবেশগত কারণে এজমা হতে পারে। সব সময় সব বয়সের মানুষেরই এজমা হতে পারে তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এরপর খুব বেশি হয় সাধারণত শীতকালে শুষ্ক ও ঠান্ডা বাতাসে এজমার বৃদ্ধি বেশি পাই এছাড়াও ধুলাবালি বিভিন্ন খাবারের প্রভাবে এজমার বৃদ্ধি পায়।

ঘরোয়া পদ্ধতিতে এজমা থেকে মুক্তির উপায়ঃ

এজমা অনেক চিকিৎসা রয়েছে তবে এখন আপনি চাইলে খুব সহজে ওষুধ ছাড়ায় ঘরোয়া পদ্ধতিতে পরিত্রাণ পেতে পারেন এজমার হাত থেকে। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের রান্না ঘরে থাকা সাধারণ কিছু খাবার চটজলদি অ্যাজমা কমাতে দারুন কাজে আসে। এবার থেকে যখনই দেখবেন শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তখনই এখানে আলোচিত খাবার গুলির যে কোন একটি সঙ্গে সঙ্গে খেয়ে নেবেন দেখবেন সঙ্গে সঙ্গে আরাম পাবেন। তাহলে জেনে নিন এজমা প্রতিরোধে ঘরোয়া উপায়ে চিকিৎসা-

আদাঃ

গবেষণায় দেখা গেছে এই প্রাকৃতিক উপাদানটি শরীরে থাকা বেশ কিছু উপকারী উপাদান শ্বাসনালীর প্রদাহ কমিয়ে অক্সিজেনের প্রবেশের যাতে ঠিকমতো হয় সেদিকে খেয়াল রাখে ফলে স্বাভাবিকভাবে এজমা কমাতে সাহায্য করে।

সরিষার তেলঃ

হ্যাঁ আপনি ঠিকই শুনেছেন, শ্বাসকষ্ট কমাতে  এ সরিষার তেল দারুন কাজে আসে। সরিষার তেল রেসিপিরে প্যাকেজকে খুলে দেয় ফলে শ্বাস নিতে কোন কষ্ট হয় না তাই এবার থেকে অ্যাজমার অ্যাটাক হলেই অল্প করে সর্ষের তেল গরম করে নেবেন তারপর সেটি অল্প ঠান্ডা করে বুকে পিঠে ভালো করে মালিশ করবেন দেখবেন অ্যাজমা অনেকটা কমবে।

রসুনঃ

হাফ কাপ দুধে পরিমাণ মতো রসুন খেলে ভালো করে দুধটাকে ফুটিয়ে নিন তারপর হালকা ঠান্ডা করে দুধটাকে ফেলুন এই দুধটা খাওয়ার পরে দেখবেন অ্যাজমার সমস্যাটা অনেকটাই স্বাভাবিক হবে। কারণ এটা আসলে ফুসফুস যাতে ঠিকমতো কাজ করতে পারে সেদিকে রসুন নজর রাখে। ফলে অ্যাজমার সমস্যা কমতে সময় লাগেনা।

কফিঃ

দারুণ কাজে কারণ গরম গরম এক ওয়ালে কফি খেলে শ্বাস মালিক খুলে যায় তাহলে অক্সিজেন খুব সহজেই ফুসফুসের ভেতর প্রবেশ করতে পারে। তাই এবার থেকে শ্বাস নিতে সমস্যা বা অসুবিধা হলে ক তবে দিনে তিনকাপের বেশি কপি কিন্তু ভুলেও খাবেন না।

ডুমুরঃ

 ডুমুরে একাধিক উপকারী উপাদান ফুসফুসের কর্ম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে আর একবার ফুসফুস ঠিক মতো কাজ শুরু করে দিলে শ্বাস প্রশ্বাস ও স্বাভাবিক হতে শুরু করবে। তিনটি ডুমুর রাত্রিতে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন  সকাল বেলা খালি পেটে পানি এবং তিনটি খেয়ে ফেলুন। এতে করে এজমার সমস্যা অনেকটা হলেই কমবে।

মধুঃ

আসলে এই প্রাকৃতিক উপাদানটির শরীরে রয়েছে বেশ কিছু উপকারী উপাদান যা এমন রোগের প্রকোপ কমাতেও দারুন কাজে আসে মধু বহুকাল আগে থেকেই অ্যাজমার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দিনে তিনবার একগ্লাস করে গরম জলে এক চা চামচ করে মধু মিশিয়ে পান করুন এতে করে এজমা অনেকটা স্বাভাবিক থাকবে।

পেঁয়াজঃ

রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি ইনফ্ল ম্যাটরি উপাদান যা শ্বাসনালীর প্রদাহ কমে এজমার্ক কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে কাঁচা পেঁয়াজ খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

আরো পড়ুনঃ প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়ার কারণ চিকিৎসা ও প্রতিকার

শেষ কথাঃএজমা কি ঘরোয়া উপায়ে এজমা থেকে মুক্তির উপায়

পরিশেষে আমি বলতে চাই যে,শিশু থেকে বয়স্ক বর্তমান সময়ে সবারই এজমা খুবই সাধারণ রোগ হয়ে পড়েছে। এজমা থেকে মুক্তির উপায় না জানার কারণে প্রকোপ থেকে রেহাই পাচ্ছে না মানুষ।  সারা দেশের মধ্যে বায়ু দূষণের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে ঢাকা শহর। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকাবাসীদের যে ফুসফুসের বা অ্যাজমার রোগ বাড়বে এটা নতুন কি।কিন্তু সঠিক চিকিৎসা ও জীবনধারণের নিয়মাবলী মেনে চললে সমস্যা দূর করা কিছুটা হলেও সম্ভব হবে।                                                                      

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url