শিশুর বিছানায় প্রস্রাব করার কারণ চিকিৎসা ও প্রতিকার
শিশুর বিছানায় প্রস্রাব করা একটি স্বাভাবিক বিষয়। জন্মের পর ২-৩ বছর পর্যন্ত ঘুমের মধ্যে প্রস্রাব করে শিশুরা। ঘুমের মধ্যে প্রস্রাব করা শিশুদের এটি কোন রোগ নয়। শিশুদের তিন বছর বয়স পর্যন্ত মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ পরিপক্কতা আসে না। সেহেতু প্রস্রাব ও পায়খানা ধরে রাখার ক্ষমতা মস্তিষ্ক থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে কোন শিশু যদি দুই থেকে তিন বছরের উর্ধ্বে হয় এবং বিছানায় প্রস্রাব করে তবে এটি রোগ।
যেসব শিশুরা দুই থেকে তিন বছরের উর্ধ্বে তারা যদি বিছানায় প্রস্রাব করে তবে সেটা একটি রোগ। এবং সেটা হয় কিডনি ও পস্রাবের পুরো ব্যবস্থার কোথাও ত্রুটি থাকলেও রাতে বিছানায় প্রস্রাব করতে পারে শিশুরা। নিম্নে শিশুর বিছানায় প্রস্রাব করার কারণ চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো-
পেইজ সূচিপত্রঃ শিশুর বিছানায় প্রস্রাব করার কারণ চিকিৎসা ও প্রতিকার
- শিশুদের বিছানায় প্রস্রাব করার কারণ
- চিকিৎসা
- প্রতিকার
- মূত্রতন্ত্রের গঠনগত সমস্যা
- প্রস্রাব পরীক্ষা
- মানসিক ঝুঁকি
- শেষ কথা
শিশুদের বিছানায় প্রস্রাব করার কারণঃ
আরো পড়ুনঃ শিশুর পেট ব্যথার কারণ ও চিকিৎসা
শিশুদের বিছানায় প্রস্রাব করার কারণ এখনো অজানা। তবে ধারণা করা যায় স্বাভাবিক অবস্থায় জন্মের পর দুই তিন বছর পর্যন্ত দেহের মেরুদন্ডের কোমরের অংশের স্নায়ুতন্ত্র যেটা সেক্রাল প্রকাশ নামে পরিচিত সেটা প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণ করে। সেজন্য ২-৩ বছরের শিশু বাচ্চারা ঘন ঘন পেশাব করে এবং তাদের প্রস্রাবে কোন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। বাচ্চাদের যখন তিন বছর পার হয় তখন মস্তিষ্কের মূল অংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে আসে ফলে প্রস্রাব টা তারা কন্ট্রোল করতে পারে তবে যেই বাচ্চা গুলো তিন বছরের পরেও বিছানায় প্রস্রাব করে এটা তাদের একটি রোগ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাচ্চারা বিছানায় প্রস্রাব করে দেয় যেমনঃ
ঘুমের সময় প্রস্রাব না করে ঘুমাতে যাওয়া।
ঘুমের সমস্যা হলে অথবা বাচ্চারা অসুস্থ থাকলে।
যে সকল বাচ্চাদের প্রস্রাবে ইনফেকশন আছে।
চিকিৎসাঃ
শিশুদের বিছানায় প্রস্রাব করার তেমন কোন কার্যকর চিকিৎসা নেই। তবে কাউন্সিলিং এর
মাধ্যমে এটা স্বাভাবিক করা যায়। আর যাদের কোনো কারণ নেই তারা ডেসমুক পেয়েছেন বা
মেলি গ্রামীণ ট্যাবলেট খেলে উপকার পেতে পারব। এক্ষেত্রে পরামর্শ খুব জরুরী।
ব্যাপারটা শুরুতে বাবা-মা ও বাচ্চাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। বাবা মা যেন বাচ্চার
ক্ষেত্রে কোন রকম শাস্তির অভ্যাস গড়ে না তুলে সে ব্যাপারে সতর্ক করতে হবে।
কারণ তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে যদি বিছানা ভেজানো অব্যাহত ভাবে চলতে থাকে তবে
ধৈর্য্য ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সমস্যার মোকাবেলা করতে হবে।
শিশুদের বিছানায় প্রস্রাব জাতের বিছানায় না করে সেজন্য শিশুকে সারাদিন নিয়মিত প্রস্রাব করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে দিনে এবং সন্ধ্যায় প্রতি দুই ঘণ্টা বা তার একটু বেশি সময় পর পরই প্রস্রাব করার পরামর্শ দান করতে হবে তবে অন্যান্য চিকিৎসার আগে বিছানা ভেজা হওয়ার অন্তনিহিত কারণগুলো যেমন কষ্ট কাঠিন্য বা স্লিপেনিয়া থাকলে তার চিকিৎসার প্রয়োজন প্রশংসা বা ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে হবে যেদিন বাচ্চা বিছানা শুকনো রাখবে তবে ভেজালে বকা যাবে না পুনরায় বোঝাতে হবে।
শিশু যদি ৭ বছর বয়সেও বিছানায় প্রস্রাব করে তবে তাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
রাতে কয়েক মাস শুকিয়ে যাওয়ার পর নতুন ভাবে বিছানা ভেজাতে শুরু করলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
বিছানা ভেজার সঙ্গে বেদনাদায়ক মুত্র ত্যাগ অস্বাভাবিক না গোলাপি বা লাল
পস্রাব শক্ত মল বা কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
প্রতিকারঃ
শিশুর বিছানায় প্রসাব করার কারণ চিকিৎসা ও প্রতিকার এর সম্পর্কে কিছু নিয়ম
সঠিকভাবে পালন করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। যথা-
যে বাচ্চার এই অসুখটা হয়েছে তার বাবা-মাকে সম্মুখ ধারণা দিতে হবে।
সবার আগে দিনে অথবা রাতে যখনই ঘুমাতে যাবে বাচ্চাকে প্রসাব করিয়ে ঘুমাতে দিতে
হবে, এবং যদি সম্ভব হয় মাঝরাতে একবার ডেকে প্রসাব করাতে হবে।
৭০শতাংশ রোগের ক্ষেত্রে অ্যালম এর ব্যবহার বেশ কার্যকর।
প্রস্রাবে ইনফেকশন থাকলে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে।
তবে সামগ্রিক চিকিৎসা একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তদাপত্তা তত্ত্বাবধানে হওয়া
উচিত।
আরো পড়ুনঃ চোখ উঠা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
মূত্র তন্ত্রের গঠনগত সমস্যাঃ
যেমন-ক্ষুদ্র বৃক্ষ বা কিডনি একাধিক বৃক্ষ নালীটার কিডনি ফেইলর হার্ট ইত্যাদি
বিশেষ কিছু ওষুধ হতে পারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখতে হবে। শিশুদের ঘুমের
মধ্যে প্রস্রাব করা অথবা ঘুম থেকে ওঠার পরে প্রস্রাব করার কারণ বা কারণ গুলো
মাথায় রেখে সে অনুযায়ী বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়ে থাকে।
প্রস্রাব পরীক্ষাঃ
রক্তে গ্লুকোজ এর মাত্রা কিডনির কার্যকারিতা ও গঠনজনিত সমস্যা নিরূপণে কিছু বিশেষ
পরীক্ষা আলট্রাসনোগ্রাম কে প্রস্রাব পরীক্ষা বলা হয়। প্রস্রাবে ইনফেকশন ধরা
পড়লে চিকিৎসকের নির্দেশনা মোতাবেক অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করতে হবে।
আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে যদি পোস্টেড গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া প্রসাব করার
পর মুত্রতলীতে প্রসাব থেকে যাওয়া অথবা অন্য কোন সমস্যা ধরা পড়ে তবে সেই কারণ
অনুযায়ী যথাযথ চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। সেই সাথে জীবনযাত্রায় কিছু
পরিবর্তন মেনে চলতে হবে। যেমন-
- রাতে চা ও কফি খাওয়া যাবে না।
- রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রস্রাব করতে হবে।
- খাবার আগে ও পরে বেশি করে পানি পান করা যাবে না।
- রাতে ঘুম ভেঙে গেলে উঠে বাথরুমে যেতে হবে।
মানসিক ঝুঁকিঃ
বিছানা ভিজে যাওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধির সঙ্গে কয়েকটি কারণ যুক্ত রয়েছে-
চাপ এবং উদ্বেগঃ
জাতীয় বিষয় যেমন বড় ভাই বা বোন হওয়া নতুন স্কুল শুরু করার বা বাড়ির
বাইরে রাতে ঘুমানো বিছানা ভেজানোর কারণ বা ফিগার হতে পারে এছাড়া মানুষের ড্রেসে
যেমন স্কুলের পড়াশোনা চাপে বিছানা ভেজানোর সমস্যা বেশি দেখা দেয়।
জন্মগত কারণঃ
অনেক ক্ষেত্রে যেসব শিশু মানুষিক এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী বা অনগ্রসর তাদের জন্য
এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
আরো পড়ুনঃ রূপচর্চা ও সুস্বাস্থ্যের জন্য অ্যালোভেরার উপকারিতা
শেষ কথাঃ
পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, শিশুরা বিছানায় প্রস্রাব করলে তাদেরকে বকাঝকা না করে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলুন এবং শিশু যেখানে রাতে ঘুমায় সেখানে বিছানার চাদরের নিচে ভিজে যাওয়া ঠেকাতে পলিথিনের কাগজ বিছিয়ে দিন। মনে রাখবেন বিছানায় প্রস্রাব করার জন্য শিশুদের কখনো লজ্জা দেওয়া যাবে না কারণ এতে করে শিশুর বুদ্ধিবৃত্তির উপর খারাপ প্রভাব পড়বে। বরং বাচ্চাদেরকে বিষয়টি সহজ ভাবে বোঝাতে হবে এবং বেশি সমস্যা হলে সে ক্ষেত্রে একজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url