গর্ভবতী গাভীকে খাদ্য প্রদানের নিয়ম ও পরিচর্যা

 খাদ্যের উপর নির্ভর করে গাভীর সৌন্দর্য এবং সুস্বাস্থ্য। তাই গাভী যখন গর্ভবতী হবে তখন গর্ভবতী গাভীকে খাদ্য প্রদানের নিয়ম ও পরিচর্যা এবং অধিক পরিমাণে তাকে দানাদার খাবার খাওয়াতে হবে। কেননা গাভীকে যতটা সম্ভব ভালো খাবার খাওয়াতে হবে তাহলে গাভীর পেটের বাছুরও ভালো থাকবে। গর্ভবতী গাভীকে প্রতিদিন১৪-১৫ কেজি সবুজ ঘাস,৩-৪ কেজি খড়,২-৩ কেজি দানাদার, পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি এক সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। এবং গাভী যখন গর্ভবতী হবে তখন কিছু বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয় তাই সব সময় আমাদের গাভীর ভালো-মন্দের দিকে একটু বাড়তি নজর দিতে হবে।

গর্ভবতী গাভীকে খাদ্য প্রদানের নিয়ম ও পরিচর্যা

গর্ভবতী গাভীকে খাদ্য প্রদানের নিয়ম ও পরিষদ যা আমাদের অনেকেরই জানা নেই। গাভীর সুস্থতা এবং সৌন্দর্য বজায় থাকে খাদ্যের ওপর। তাই গাভী যখন গর্ভবতী হয় তখন গাভীকে খাদ্য প্রদানের নিয়ম অনুযায়ী খাবার দিতে হবে। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক গর্ভবতী গাভীকে খাদ্য প্রদানের নিয়ম ও পরিচর্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো।

পেইজ সূচিপত্রঃ গর্ভবতী গাভীকে খাদ্য প্রদানের নিয়ম ও পরিচর্যা

গর্ভবতী খাদ্য প্রদানের নিয়মঃ

আরো পড়ুনঃ বর্তমান পদ্ধতিতে পাট চাষ ও পাট কাটার সময়

গর্ভবতী গাভীকে যে খাবার খাওয়াতে হবেঃ

 গাভী যখন গর্ভবতী হবে তখন গর্ভবতী গাভীকে কিছুটা বাড়তি খাবার খাওয়াতে হবে। গর্ভবতী গাভীকে প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৫ কেজি সবুজ ঘাস,৩-৪৩ কেজি খড়, দুই থেকে তিন কেজি দানা খাদ্য একসঙ্গে মিশিয়ে গর্ভবতী গাভীকে খাওয়াতে হবে। এতে করে গর্ভবতী গাভীর পেটের বাছুর পুষ্টিহীনতার হাত থেকে রক্ষা পাবে।

গর্ভবতী গাভীর দানাদার খাদ্যঃ

গর্ভবতী গাভীকে ঘাস খড় এর পাশাপাশি দানাদার খাদ্য খাওয়াতে হবে। দানাদার খাদ্য খাবার খেলে গাভী এবং পেটের বাচ্চা দুজনেই পুষ্টিহীনতার হাত থেকে রক্ষা পায়। তাই গর্ভবতী গাভীকে দানাদার খাদ্য প্রতিদিন খাওয়াতে হবে। নিম্নে গর্ভবতিকা গাভীর খাবারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উপাদান তুলে ধরা হলো-

  • গমের ভুসি
  • খৈল-২৫০ গ্রাম
  • খেসারি ভাঙ্গা এক কেজি
  • খনিজ মিশ্রণ- ৫০ গ্রাম
  • চিটাগুড়- ১৫০ গ্রাম
  • লবণ ৫০ গ্রাম
  • চাউলের গুড়া ৫০০ গ্রাম

গর্ভবতী অবস্থায় বাসস্থানঃ

গর্ভবতী গাভীর বাছুর হওয়ার আগে গাভীকে আলাদা ঘরে রাখতে হবে। এ সময় গাভীর বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। কারণ চলাফেরা করার সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য এবং গাভী যাতে অন্য গরু বাছুর দ্বারা কোনভাবে আঘাত না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

  • গর্ভবতী গাভীকে বাচ্চা প্রসবের২-৩ সপ্তাহ আগে একটি আবাসস্থল স্থানে রাখতে হবে। এবং এখানে তাদের বিশেষ যত্ন এবং পরিচর্যা করতে হবে।
  • প্রয়োজনীয় PREGNANT SHEAD এর সংখ্যা খামারের সেট প্রজননযোগ্য গাভীর সংখ্যার ১০% হতে হবে।
  • গর্ভবতী গাভীর ভালো দেখাশোনা করার জন্য খামারির বাসস্থান গাভীর আবাসস্থলের নিকটে হতে হবে।
  • PREGNANT SHED এর সংখ্যা পাঁচটি হতে হবে। এতে করে তাদের রক্ষণাবেক্ষণ করা সহজ হবে এবং গাভীকে নিরাপদে রাখতে পারবে।।
  • গাভী যে ঘরে থাকবে সে ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে ঘর যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

আরো পড়ুনঃ যক্ষা রোগ কেন হয়

গর্ভবতী গাভীর খাদ্যঃ

গর্ভাবস্থায় গাভীর বাড়তি খাবারের প্রয়োজন কারণ এ সময় গাভীর মধ্যে এক নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটে। সেজন্য গাভীর বাড়তি পুষ্টির প্রয়োজন। নিম্নের গাভীর খাদ্য তালিকা কেমন হওয়া প্রয়োজন তা আলোচনা করা হলো-

উপযুক্ত ফিডসঃ

গর্ভবতী গাভীর জন্য সব রকমের ফিড উপযুক্ত নয়। মানে পুষ্টিকর কিছু সহজপুত্র এমন ফিট গর্ভবতী গাভীর জন্য। যেমন গমের ভুষি এবং ত্সির তেল বীজ।

ঘাস সরবরাহঃ

কাঁচা ঘাসের কোন বিকল্প নেই গাভীর পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য। এ কারণে ৫০-৬০% লেগিউম  যুক্ত সবুজ ঘাসের পরিমাণ জন্মদানের পূর্বে শেষ তিন সপ্তাহের মধ্যে ধীরে ধীরে গাভীর খাদ্য তালিকায় বাড়ানো উচিত।

যে রকমের ফিট সরবরাহ করা উচিতঃ

সহজে পচ্য এবং পুষ্টিকর ফিড গাভীর জন্য সরবরাহ করতে হবে। এতে করে গাভী সহজেই হজম করতে পারবে এবং সেই সাথে পুষ্টি চাহিদাও পূরণ হবে।

রেশনের পরিমাণঃ

রেশন গাভীর পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহে অত্যন্ত সহায়ক। রেশনের DCP এবং TDN এর পরিমাণ যথাক্রমে ১৬-১৮% এবং৭০% হতে হবে।

বকনা গাভীর খাদ্য ব্যবস্থাঃ

গর্ভাবস্থায় প্রাথমিক প্রয়োজনে বকনা গাথিদের বিশেষ খাওয়ানোর প্রয়োজন হয় না। বংশবৃদ্ধির আগে বকনা গাভীদের জন্য প্রস্তাবিত ফিডিং অব্যাহত থাকতে পারে। গর্ভাবস্থায় শেষ তিন মাসের মধ্যে যখন বাচ্চার গ্রোথ বৃদ্ধি দ্রুত হয় তখন বকনা কে এক থেকে দুই কেজি দানাদার জাতীয় খাদ্য খাওয়াতে হবে।

জন্ম দেওয়ার পরপরই খাদ্য সরবরাহঃ

বাচ্চা জন্মের সাথে সাথে এক বালতি কুসুম গরম পানির সাথে দেড় কেজি গমের ভুসি, আধা কেজি চিটাগুড়, ৫০ গ্রাম লবণ মিশিয়ে গাভীকে খেতে দিন। এ খাদ্য খাওয়ালে গাভীর গর্ব ফুল তাড়াতাড়ি পড়ে যেতে সাহায্য করবে। তাছাড়া শুধু ঝোলা গুড় কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে গাভীকে খাওয়ানো যেতে পারে। এ সময় গাভিকে তার বাচ্চার জন্য খুব সতর্ক থাকতে হয় এবং বাচ্চা জন্মানোর ঘন্টা দুয়েক পর পরই খাবার গ্রহণ শুরু করে।

আরো পড়ুনঃ পুদিনা পাতার উপকারিতা অপকারিতা ও ব্যবহারের নিয়ম

শেষ কথাঃ গর্ভবতী গাভীকে খাদ্য প্রদানের নিয়ম ও পরিচর্যা

পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, প্রসব অনেক আবেগঘন একটি মুহূর্ত। তাই এ সময় গাভীর জন্য একটু বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। তাই আপনার গাভীর শরীরে যাতে কোন পুষ্টি ঘাটতি না হয় এবং কোন ভাবে গাভীর শরীর আঘাত না পায় সেদিকে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url