ছাগলের ঘর পরিচর্যা ও ছাগল পালন করার পদ্ধতি
ছাগল একটি গৃহপালিত প্রাণী । বাংলাদেশের সর্বত্রই ছাগল পালন করা হয়। ছাগলের ঘর সেতসেতে রাখা যাবে না এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আলো বাতাস ও বায়ুচালার সুব্যবস্থা থাকতে হবে। বৃষ্টির পানিও ঠান্ডা ছাগলের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই বৃষ্টির পানি ও ঠান্ডা যাতে ছাগলের না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ছাগলের ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এবং সপ্তাহে একদিন হলেও ছাগলের ঘরে কীটনাশক দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
ছাগল পালনের জন্য সবথেকে বড় উপাদান হলো ছাগলের ঘর বা মাচা তৈরি করা। এই ঘর বা
মাচার যত্ন না নিলে বিভিন্ন প্রকারের রোগ জীবাণু আক্রমণ করে ছাগলের ক্ষতি করতে
পারে তাই ছাগলের ঘর পরিচর্যায় আপনাকে নজর দিতে হবে। নিম্নে ছাগলের ঘর
পরিচর্যা ও ছাগলের ঘর জীবাণুমুক্ত করার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা
হলো।
পেইজ সূচিপত্রঃ ছাগলের ঘর পরিচর্যা ও ছাগল পালন করার পদ্ধতি
- লালন পালন পদ্ধতি
- ঘরে ছাগলের জায়গার পরিমাণ
- ঘরের পরিচর্যা ও জীবাণু মুক্তকরণ পদ্ধতি
- ছাগলের ঘরের প্রকৃতি
- ছাগলের বাচ্চার যত্ন ও পালন
- বাচ্চা ছাগলের যত্ন
- বাচ্চা পালন পদ্ধতি
- গর্ভবতী ছাগলের পরিচর্যা
- শেষ কথা
লালন পালন পদ্ধতিঃ
- প্রত্যেকদিন সকালে ছাগলকে ঘর থেকে বের করে ঘরের আশেপাশে ছাগলকে ঘুরে বেড়াতে দিতে হবে।
- ছাগলের গায়ে যাতে সূর্যের আলো লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- ছাগলকে ঘর থেকে বের করে ছাগলের ঘরকে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
- কোন ছাগল যদি অসুস্থ থাকে সকালে ঘর থেকে বের করার আগে খেয়াল রাখতে হবে এবং সেই অসুস্থ ছাগলটিকে আলাদা করে চিকিৎসা করাতে হবে।
- ছাগলকে প্রতিদিন সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে।
- পানি দিয়ে নিয়মিত গোসলের পরিবর্তে ব্রাশ দিয়ে দেহ পরিষ্কার রাখতে হবে এতে ছাগলের লোমের ভেতরের ময়লা বের হয়ে আসে এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।
- সকল ছাগলকে নিয়মিত কিরমির ওষুধ খাওয়াতে হবে এবং টিকা প্রদান করতে হবে।
ঘরে ছাগলের জায়গার পরিমাণঃ
আরো পড়ুনঃ গর্ভবতী গাভীকে খাদ্য প্রদানের নিয়ম ও পরিচর্যা
ছাগলের প্রকৃত জায়গার পরিমাণ--------------প্রয়োজনীয়তাবাচ্চা ছাগল-----------------------------------------০৩ বর্গমিটার।
পূর্ণ বয়স্ক ছাগল-------------------------------------১৫ বর্গমিটার।
গর্ভবতী ছাগল---------------------------------------১৯ বর্গমিটার।
পাঠা---------------------------------------------------২৮ বর্গমিটার।
ঘরের পরিচর্যা ও জীবাণুমুক্তকরণ পদ্ধতিঃ
- খেয়াল রাখতে হবে ছাগলের ঘর যাতে স্যাঁত সাথে হয়ে না থাকে। এবং আলো বাতাস ও বায়ু চরাচলের সুব্যবস্থা থাকে।
- ছাগলকে বের করে নিয়ে নেওয়ার পরে ছাগলের ঘর পরিষ্কার করতে হবে।
- বৃষ্টির পানি ও ঠান্ডা ছাগল সহ্য করতে পারে না, তাই খেয়াল রাখতে হবে যাতে বৃষ্টির পানিও ঠান্ডা ছাগলকে না লাগে।
- সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন জীবাণুনা সুখ মিশ্রিত পানি দিয়ে ছাগলের ঘর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
ছাগলের ঘরের প্রকৃতি ঃ
ছাগলের ঘরের প্রকৃতিঃ
ছাগল পালনের জন্য নানা রকমের ঘর রয়েছে তার মধ্যে সাধারণত দুই ধরনের ঘর দেখা
যায় যথা-
ভূমির ওপর স্থাপিত ঘরঃ
এই ঘরের মেঝে কাঁচা অথবা পাকা হতে পারে। সাধারণত কৃষকেরা এধরনের ঘরে ছাগল পালন
করে। এ ধরনের ঘরেতে শুকনা খড় বিছিয়ে সব সময় পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখতে হয়। এ
ঘরকে পানি দিয়ে ধোঁয়া বা পরিষ্কার করা যাবে না।
মাচার ওপর স্থাপিত ঘরঃ
এ ঘর মাটির ওপর থেকে৩-৪ ফুট উচ্চতায় খুটির ওপর স্থাপিত হয়। এ ঘরের মেঝে বাঁশ বা
কাঠ দিয়ে মাচার মত তৈরি করা হয়। এ ধরনের ঘর পরিষ্কার করা সহজ কারণ পানি দিয়ে
এটাকে পরিষ্কার করা যায়।
আরো পড়ুনঃ এজমা কি, ঘরোয়া উপায়ে এজমা থেকে মুক্তির উপায়
ছাগলের বাচ্চার যত্ন ও পালনঃ
বাচ্চা ছাগলের সঠিক যত্নের উপর ওই এদের বেড়ে ওঠা ও ভবিষ্যৎ নির্ভর করে।
বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে না বলে এরা অত্যন্ত রোগ সংবেদনশীল হয়। একটি
ছাগলের যদি দুইটা বাচ্চা হয় এমত অবস্থায় সমান যত্নের অভাবে বাচ্চার মৃত্যু
হয়।
বাচ্চা ছাগলের যত্নঃ
- বাচ্চা ছাগল জন্মানোর পরে বাচ্চার শ্বাস প্রশ্বাস চালু করা এবং বাচ্চার শরীর পরিষ্কার করা ও শুকানো এ কাজগুলো খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে।
- বাচ্চার নাভি পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত কাঁচি দিয়ে কেটে দিতে হবে।
- নাভির স্থানে আয়োডিন বা টিন যার বেনজিন জীবাণু নাশক ঔষধ লাগাতে হবে।
- বাচ্চাকে শাল দুধ খাওয়াতে হবে।
বাচ্চা পালন পদ্ধতিঃ
বাচ্চা পালন পদ্ধতি দুটি উপায়ে করা যায় যথা-প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মায়ের সঙ্গে,
কৃত্রিম পদ্ধতিতে মা বিহীন অবস্থায়। প্রতিটি পদ্ধতির এই সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে
তবে প্রাকৃতিক পদ্ধতিটাই ভালো ও প্রচলিত। সাধারণত ছাগলের বাচ্চারা দুই সপ্তাহ
বয়স হলেই কাঁচা ঘাস বা লতাপাতা খেতে শুরু করে। তাই এদের জন্য কচি ঘাস
লতাপাতা এবং দানাদার খাদ্য রাখতে হয়। এবং সব সময় ছোট বাচ্চাদের জন্য উন্মুক্ত
আলো বাতাসের ব্যবস্থার প্রয়োজন। গ্রীষ্মকালে দিনের বেলা গাছের নিচে বেড়া দিয়ে
বাচ্চা পালন করা যায় এতে এরা একদিকে পর্যাপ্ত ছায়া পেতে পারে অন্যদিকে
দৌড়াদৌড়ি এবং ব্যায়াম করার প্রচুর সুযোগ পাই যা তাদের স্বাস্থ্যের রক্ষার জন্য
প্রয়োজন।
প্রত্যেকটি বাচ্চা ছাগলের জন্য ৩০০ থেকে ৩২৫ মিলি দুধ দিনে তিন চারবার পান করাতে
হবে। এবং ধীরে ধীরে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ৬ থেকে ৭ সপ্তাহে তা ৭৫০ থেকে ৮৫০
মিলি হতে হবে। তিন সপ্তাহ পর বাচ্চাকে দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার দিতে
হবে।১০-১১ সপ্তাহে দৈনিক দুধ সরবরাহের পরিমাণ ২০০ - ১০০ মিলি নামিয়ে আনতে হবে। এ
সময় বাচ্চাকে ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম দানাদার খাদ্য ও প্রচুর কচি ঘাস লতাপাতা খেতে
দিতে হবে। তিন থেকে চার মাস বয়সে ছাগলের বাচ্চাকে দুধ পান পুরোপুরি বন্ধ
করে দিতে হবে। কারণ এ সময়টাই বাচ্চার পাকস্থলী পুরোপুরি ভাবে তৈরি হয়ে যায়
শক্ত খাদ্যদ্রব্য খাওয়ার জন্য।
আরো পড়ুনঃ সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
গর্ভবতী ছাগলের পরিচর্যাঃ
- ছাগল বাচ্চা প্রসব করে ১৪০থেকে ১৫০ দিনে। তাই বাচ্চা প্রসবের ৮-১০ দিন আগে তাকে আলাদা করে দিতে হবে এবং প্রতিদিন সকাল বিকেল লক্ষ্য রাখতে হবে।
- বাচ্চা হবার দুই এক দিন পূর্বে ওলানে অতিরিক্ত দুধ জমলে তা টেনে ফেলে দিতে হবে।
- সহজে বাচ্চা প্রসব না হলে বাচ্চা প্রসব করার জন্য ডাক্তারের সহায়তা নিতে হবে।
- বাচ্চা হবার আট-দশ ঘন্টার মধ্যে গর্ভ ফুল না পড়লে ডাক্তারের সাহায্য নিতে হবে।
- বাচ্চা হবার কয়েকদিন পূর্বে ও পরবর্তী সাতদিন ছাগলকে ভাতের মারসহ দানাদার খাদ্য ও নরম ঘাস লতাপাতা খেতে দিন।
শেষ কথাঃ
পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, ছাগলের ঘর পরিচর্যা ও ছাগলের ঘর জীবাণুমুক্ত করে ছাগল পালন করলে অবশ্যই আপনি লাভবান হবেন। শরৎ ও হেমন্তকালে ছাগলের মৃত্যুহার অত্যাধিক বেশি থাকে এ সময় কিরমির আক্রমণ দেখা দিতে পারে। তাছাড়া নিউমোনিয়া ব্যাপক হারে দেখা দিতে পারে তাই এ সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url