কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা এবং কাঁঠাল খাওয়ার সঠিক সময়

গ্রীস্মের অন্যতম আকর্ষণীয় ফল হলো কাঁঠাল। বাঙালির পুষ্টির অভাব পূরণ করতে কাঁঠাল কাঁঠালের ভূমিকা অপরিসীম। মানুষের দেহে যেসব পুষ্টির প্রয়োজন সেই সকল পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে কাঁঠাল। বেশিরভাগ মানুষ কাঁঠাল পছন্দ করেনা এবং পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য কাঁঠাল খেয়ে থাকেন। আবার কিছু কিছু মানুষ আছে যারা কাঁঠাল পছন্দই করেন না। কাঁঠাল পুষ্টির রাজা কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে নানা গুন যা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। পুষ্টিবিদরা বলেছেন কাঁঠাল পুষ্টি গুনে ভরপুর তাই আমরা প্রতিদিন কাঁঠাল খেলে আমাদের শরীরে পুষ্টির কোন ঘাটতি থাকবে না।

কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা এবং কাঁঠাল খাওয়ার সঠিক সময়

কাঁঠালের নানা রকম পুষ্টি উপাদান ও খনিজ পদার্থ আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করে। পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি কাঁঠাল আমাদের শরীরে ভিটামিনের চাহিদা ও পূরণ করে থাকে। কাঁঠালের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা খুব একটা জানিনা এবং কাঁঠাল খাওয়ার সঠিক সময় কখন সেটাও জানি না। চলুন জেনে নেওয়া যাক কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা এবং কাঁঠাল খাওয়ার সঠিক সময়।

পেইজ সূচিপত্রঃ কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা এবং কাঁঠাল খাওয়ার সঠিক সময়

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়েঃ

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কাঁঠালের ভূমিকা অপরিসীম। কাঁঠাল একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল যার হোক প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কাজ করে। কাঁঠাল খেলে দ্রুত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে কারণ কাঁঠালের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। কাঁঠালের পুষ্টি উপাদান ক্যান্সার ও টিউমারের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।

আরো পড়ুনঃ সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

হাড় ভালো রাখেঃ

কাঁঠালের প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকায় আপনার হাড় কে শক্ত রাখতে সাহায্য করে। হাড়ের খয়  একটি ভয়ানক অসুখ। আপনার শরীরে যদি হাড়ের ক্ষয় হয় তবে বাইরে থেকে বোঝা যাবে না। কিন্তু ভেতর থেকে আপনি একেবারে শেষ হয়ে যাবেন। সেজন্য হাড় ভালো রাখতে খাবারের তালিকায় কাঁঠাল রাখুন।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ

আপনার শরীর কি সুস্থ রাখার জন্য হজম শক্তি ভালো রাখতে হবে। কারণ আজমে কোনরকম গোলমাল হলে তার প্রভাব পড়ে আমাদের শরীরের ওপর। সেজন্য কাঁঠাল হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে কারণ কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে যা আমাদের পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য খাদ্য তালিকায় আপনি কাঁঠাল রাখতে পারেন কারণ কাঁঠালি থাকে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম যা আপনার শরীরে ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্সকে ঠিক রাখে। এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আপনাকে একটু সচেতন হতে হবে এবং কিছু খাবার যোগ বিয়োগ করে আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। সে ক্ষেত্রে আপনি কাঁঠাল রাখতে পারেন। কাঁঠাল আপনার রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে এবং হার্ট কেউ ভালো রাখবে।

ত্বক উজ্জ্বল করেঃ

ত্বক উজ্জ্বল করতে হলে আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন কাঁঠাল রাখুন। কারণ কাঁঠালের আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় সেই সঙ্গে আপনার ত্বকের বলিরেখাও কমায়। তো উজ্জ্বল রাখতে চাইলে কেবল বাইরে থেকে যত্ন নেওয়া হয় যথেষ্ট নয় বরং খেয়াল রাখতে হবে আপনার খাবারের দিকেও। সেজন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আপনি কাঁঠাল খেতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ পুদিনা পাতার উপকারিতা অপকারিতা ও ব্যবহারের নিয়ম

চোখ ভালো রাখেঃ

চোখ ভালো রাখার জন্য আপনি নিয়মিত কাঁঠাল খান কারণ কাঁঠালের আছে প্রচুর ভিটামিন এবং বিটা ক্যারোটিন যা আপনার চোখকে ভালো রাখতে সাহায্য করবে। আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য চোখের যত্ন নেওয়া জরুরি। চোখের যত্ন না নিলে অবহেলা ও অযত্নের কারণে আপনার দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত কাঁঠাল রাখুন।

কোলেস্টেরল মুক্ত রাখেঃ

কাঁঠালে কোনো রকম কোলেস্টেরল নেই তাই কাঁঠাল খেলে উপকার মিলবে সহজেই। কাঁঠালে আছে ভিটামিন বি ৬। এবং এই উপাদান ছাড়াও কাঁঠাল এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। তাই আমাদের শরীরকে কোলেস্টেরল মুক্ত রাখতে হলে নিয়মিত কাঁঠাল খেতে হবে।

রক্তকণিকা বৃদ্ধি করেঃ

কাঁঠালে থাকে আয়রন। এই আয়রন আমাদের শরীরকে শরীরে রক্ত কণিকা বৃদ্ধি করে এবং রক্তস্বল্পতার হাত থেকে রক্ষা করে। কাল রক্তে লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ বাড়ায় তাই আপনাদের যাদের রক্তস্বল্পতা রয়েছে তাদের জন্য নিয়মিত কাঁঠাল খাওয়া খুবই জরুরী।

পাইলস ও ক্যান্সার থেকে রক্ষা করেঃ

পাইলস ও ক্যান্সার থেকে রক্ষা পেতে হলে এবং এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে হলে নিয়মিত কাঁঠাল খান। নিয়মিত কাঁঠাল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ফলে পাইলস আপনার শরীরে বৃদ্ধি পেতে পারেনা। সেই সঙ্গে কাঁঠাল খেলে ক্যান্সারের মতো মরণঘাতী রোগ থেকে মুক্তি মেলে।

ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে রাখেঃ

আমরা অনেকেই মনে করি কাঁঠাল মিষ্টি জাতীয় ফল যা খেলে ডায়াবেটিস বৃদ্ধি পেতে পারে। কিন্তু চিকিৎসকরা বলেন কাঁঠাল খেলে ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার তেমন কোন সম্ভাবনা নেই তবে অবশ্যই পরিমিত হারে খেতে হবে মাত্রা অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। কাঁঠাল আপনার শরীরে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। তাই আপনি ডায়াবেটিসের অপেক্ষা করে নিয়মিত কাঁঠাল খেতে পারেন। নিয়মিত কাঁঠাল খেলে ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে থাকে।

আড়ো পড়ুনঃ দেশি দশটা রান্নার রেসিপি

কাঁঠাল খাওয়ার সঠিক সময়ঃ

বছর ঘুরে প্রতিবারের মতো এবারও চলে এলো মধুমাস। গাছে গাছে ফলের রাজা সবুজ হলুদ  আম জাতীয় ফল কাঁঠাল আরো আছে জাম জামরুল লিচু ইত্যাদি। এত সুন্দর পছন্দের পুষ্টিকর রসালো ফল, এই রসালো ফল কাঁঠাল খাওয়ার সঠিক সময় আমরা কেউই জানিনা কাঁঠাল খাওয়ার সঠিক সময় কখন চলুন জেনে নেওয়া যাক কাঁঠাল খাওয়ার সঠিক সময়। খালি পেটে কাঁঠাল খেলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে খালি পেটে ফল খেলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কাঁঠাল যদি আমরা খাবার খাওয়ার পরে খাই তবে হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই কাঁঠাল খাওয়ার সঠিক সময় হচ্ছে সকালে নাস্তার পরে ও দুপুরে লাঞ্চের মাঝে ১১ টার দিকে। এ সময় আমরা অনেকেই হালকা কিছু খাবার খেয়ে থাকি সেজন্য অন্য খাবারের পরিবর্তে কাঁঠাল খেলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়।

আপনারা যদি দুপুর রাতের খাবারের সময় কাঁঠাল খেতে চান তবে অবশ্যই নিয়মিত যে পরিমাণ খাবার খান তার চেয়ে পরিমাণে খাবারটা কমিয়ে খাবেন এবং সেই পরিমাণে কাঁঠাল খেতে পারেন। কাঁঠাল একটি উপকারী ফল হলেও খেতে হবে ক্যালরি হিসাব করে। যেমন একটি আম খেলে আমরা ২০০ ক্যালোরি পাই। তাই যারা ওজন কমানোর চেষ্টায় থাকেন তারা যদি খুব বেশি পরিমাণে বাট্টি ক্যালরি যোগ করেন প্রতিদিনের খাবারের সঙ্গে তাহলে ওজন কিন্তু আপনার কমার চেয়ে বাড়তেই থাকবে। তাই আমাদের সকলের উচিত কাঁঠাল আমরা সঠিক সময়ে খাব এবং পরিমাণের চেয়ে কখনোই বেশি খাবোনা।

শেষ কথাঃ

পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, গরমকাল মানেই আম জাম লিচুর সঙ্গে উচ্চারিত হয় আরেকটি ফলের নাম সেটি হল কাঁঠাল। আরে কাঁঠাল আমাদেরকে অনেক রোগ থেকে রক্ষা করে। তাই কাঁঠাল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। কিন্তু কারো কারো কাঁঠাল শোভনের কারণে অনেক প্রতিকূলতা ও অ্যালার্জি হতে পারে। ভিটামিন মিনারেল কার্বোহাইড্রেট ইলেক্ট্রোলাইটস ফাইবার এবং প্রোটিন পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে কাঁঠালি যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই জরুরী। তবে যাদের রক্ত সংক্রান্ত কোনো রোগ আছে তাদের কাঁঠাল খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। এবং আপনি যদি কোন ধরনের অস্ত্রপাচার করতে চান তাহলে তার দুই সপ্তাহ আগে থেকে কাঁঠাল খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url