জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - জামের পুষ্টিগুন
জাম গীষ্মকালীন একটি ফল। জাম গ্রীষ্মকালীন ফল হলেও এটি জুন জুলাই বা আগস্ট মাসেও পাওয়া যায়। জামে ক্যালরি খুব কম থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। জামের রং বেগুনি কালো এবং এর স্বাদ বেশিরভাগ মিষ্টি আবার অনেকটা টক হয়। জামে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ এবং এতে অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। অন্যান্য ফলগুলোর তুলনায় জাম স্বাস্থ্যকর একটি ফল। জামে আছে প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টিগুণ।
জাম ফলটি ক্যালসিয়াম লৌহ পটাশিয়াম এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। তাই হাড় খয় হয়ে
যাওয়া রোগীদের এবং বয়স্ক মানুষদের খাবার তালিকায় এই সুস্বাদু ফল জাম রাখা
উচিত। জামের বী জ পাতা এবং সালের ঔষধি গুন রয়েছে এবং এটি বিভিন্ন চিকিৎসা
গুলোতেও ব্যবহার করা হয় এবং এর চাহিদা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। চলুন
আমরা জেনে নেই জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - জামের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।
পেইজ সূচিপত্রঃ জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - জামের পুষ্টিগুণ
জামের বিভিন্ন নামঃ
জাম বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামের পরিচিত যেমন-জাম্বুল, জাম্ভুল, জাম্বু,,
জাম্বুলা, জাভা প্লাম, জামুন, কালো জাম, জামব্লাং, জাম্বো লানা, কালো প্লাম,
ড্যামসন প্লা্ম, দুহাট প্লাম, জাম্বোলান ্পিলাম, পতুগাজ প্লাম,
ইত্যাদি। মালায়ালম ভাষায় নাভাল পাঁচহাম। তেলুগু ভাষায় একে বলা
হয় নেরুদু পান্ডু। এবং কানাড়া ভাষায় নিরালে হান্নু। ফিলিপাইনে একে বলা হয়
ডুহাট।
জাম ফলের বিবরণঃ
আমাদের দেশে জামের কোন অনুমোদিত জাত নেই। ফলের আকার অনুযায়ী দুই জাতের
জাম পাওয়া যায়। যার দুটি হল খুদি জাত - খুব ছোট এবং মহিষে জাত - বেশ বড়
ও মিষ্টি। সব ধরনের মাটিতে জাম চাষ করা যায়। উচ্চ ফলনের জন্য সুনিস্কাশিত
দোয়াশ মাটি প্রয়োজন।লবনাক্ততা এবং জলমগ্ন জায়গায় ও যান ভালোভাবে
উৎপাদিত হয়। জামের বীজ টাটকা রোপন করতে হবে। বীজ এবং আংগোস পদ্ধতিতে জামের
বংশবিস্তার করা যায়। জামের বীজ রোপণের সময় মধ্যযুষ্ঠ থেকে মধ্য ভাদ্র
পর্যন্ত। জামের বীজ ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে এই অঙ্কুরিত হয়। জাম গাছ শাড়ি
থেকে শাড়ির দূরত্ব হবে 10 মিটার এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে ১০
মিটার।
জাম ফলের নানান ব্যবহার সম্পর্কে জানুনঃ
জাম ফলকে ব্যবহার করা হয় খাদ্য হিসেবে। জাম ফল মিষ্টি সুস্বাদু হওয়ায় এই
ফলটি বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ ভারত বর্ষ
ইন্দোনেশিয়া এবং চীনে জামের ব্যবহার হয়ে আসছে। জামের বীজ দিয়েও নানা রকম
চিকিৎসা করা হয়। হজমের সমস্যা উচ্চ রক্তচাপ নারীর প্রদাহ ইত্যাদি রোগে
গ্রামের বীজ খাল ও পাতা ব্যবহার হয়। জাম থেকে মদ ও সিরকা তৈরি করা হয়। জামে
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি থাকে।
জাম খাওয়ার সতর্কতাঃ আধা পাতা জাম খাওয়া উচিত নয়। খালি পেটে জাম খাবেন না এবং জাম
খাওয়ার পর দুধ খাবেন না। পাকা ফল ধরা পেটে খেলেও অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি ও
দেশটির ভাব হতে পারে। তাই আপনারা যদি জাম খান তবে পাকা জাম খান এবং
খালি পেটে কখনোই জাম খাবে না।
জামের পুষ্টি উপাদানঃ
- আমিষ রয়েছে - ৯.১ %
- স্নেহ রয়েছে - ৪.৩ %
- আশ রয়েছে - ১৭.০ %
- ছাই রয়েছে - ৭ %
- ক্যালসিয়াম রয়েছে - ১.৩ %
- ফসফরাস রয়েছে - ০.১৯ %
জাম খাওয়ার উপকারিতাঃ
হজমের সমস্যাঃ
খাবার খাওয়ার পর অনেকেই হজম জনিত নানা সমস্যায় ডুবে থাকেন। হজমের সমস্যা
সমাধানে জাম অনেক উপকারী একটি ফল। কুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে যা হজম শক্ত কার্যক্রম
তা বাড়াতে সাহায্য করে। ডায়েটারি ফাইবারের অন্যতম কার্যকরী উৎস হওয়ার
কারণে জাম ফল নিয়মিত খাওয়ার ফলে যেমন হজম শক্তি বাড়ে তেমনি হজম সংক্রান্ত নানা
সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।এছাড়া জাম ফল লিভার কে ভালো রাখতে ও কার্যকরী
ভূমিকা পালন করে। জাম খেলে পেট ঠান্ডা হয় ফলের দ্রুত হজম হয়ে যায়। যাদের
অম্বলের সমস্যা আছে তারা বেশি করে জাম খেলে উপকার পাবেন।
চোখের যত্নেঃ
জামে ভিটামিন এ আর সি আছে। এছাড়াও এতে থাকে বিভিন্ন মিনারেল, যা আমাদের চোখ এবং
ত্বকের জন্য খুব উপকারী।
ত্বকের সমস্যাঃ
যাদের ত্বকের সমস্যা আছে তারা নিয়মিত জাম খেলে ত্বকের অনেক সমস্যা থেকে
মুক্তি পাবে। এই ফল তককে টানটান করতে সাহায্য করে। এছাড়া জাম খেলে তকে ব্রোন
ব্ল্যাকহেডস ইত্যাদির সমস্যা দূর করে এবং ত্বককে করে উজ্জ্বল ও লাবণ্যময়।
রক্ত পরিষ্কার রাখতেঃ
জামে প্রতি পরিমাণে আয়রন থাকে। আর আয়রন থাকার ফলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বেড়ে
যায়। ফলে রক্ত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে জাম। যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন
তাদের জন্য জাম খুবই ভালো একটি উপকারী ফল।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেঃ
জামে ফসফরাস ও পটাশিয়াম জাতীয় খনিজ থাকার কারণে জাম হৃদযন্ত্রের জন্য অনেক
উপকারী হিসেবে কাজ করে। যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে এবং
হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখতে বেশ কার্যকরী। এ কারণে জামের মৌসুমে নিয়মিত এই ফলটি
খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।
দাঁত এবং হাড়ের জন্য উপকারীঃ
জাম ফল দাঁত এবং হাড়কে মজবুত করতে সাহায্য করে। যার ফলে ক্যালসিয়াম
ম্যাগনেসিয়াম পটাশিয়াম ও আয়রন থাকার কারণে এই ফল দাঁত ও হাড়কে মজবুত
রাখতে সাহায্য করে। দুধের সঙ্গে জামের গুঁড়া মিশিয়ে খেলে আরো ভালো ফল
পাওয়া যায়।
রোগ প্রতিরোধঃ
জাম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। জাম ফলে
ভিটামিন বি ১, বি ২,বি ৩,বি ৬ ও ভিটামিন সি রয়েছে ক্ষমতা বাড়াতে
কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এছাড়াও জামের অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য
থাকার কারণে এটি শরীরের ভেতরে এবং বাইরে সংক্রমণ কেউই প্রতিরোধ করতে
সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস রোগে উপকারীঃ
জ্যামে কম গ্লাস সেমিজ সুযোগ থাকার কারণে এই ফলকে রক্তের চিনির মাত্রা
নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারী
এই জাম। এছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের ঘন ঘন তৃষ্ণা এবং প্রসাব এবং
দুর্বলতা সমস্যা কমাতে সাহায্য করে এই ফলটি।
জাম খাওয়ার অপকারিতাঃ
জামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা দূর করতে সাহায্য করবে। তোমার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধি করে জাম। জামে রয়েছে ভিটামিন বি ১, বি ২, বি ৩, বি ৬,
ভিটামিন সি প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সাহায্য করে
জাম।জাম, জামের পাতা, জাম গাছের ছাল, জামের বিচি, এই সকল উপকরণ
দিয়ে আপনি ওষুধের কাজ করতে পারেন। তাই আমি বলবো জামের কোন অপকারিতা
নেই বললেই চলে কারণ জাম উপকারী একটি ফল। জামের ফল বিচি গাছের ছাল
সবকিছুই উপকারিতা আছে। জামের কোন উপকারিতা নেই বললেই চলে।
আরো পড়ুনঃ
কাঁচা আমের উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
জামের পুষ্টিগুনঃ
জাম আকারে ছোট হলেও পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি ফল। বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ
মৌলসমৃদ্ধ এই ছোট্ট ফলের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। আমেরিকার কৃষি দপ্তরের তথ্য
অনুযায়ী প্রতি ১০০গ্রাম জামে থাকে-
- শক্তি ৬০ কিলো ক্যালরি।
- শর্করা ১৫.৫৬ গ্রাম।
- স্নেহ পদার্থ ০.২৩ গ্রাম।
- প্রোটিন ০. ৭২ গ্রাম
- থিয়ামিন (ভিটামিন b১ ০.০০৬ মিলিগ্রাম
- রাইবোফ্লাভিন(ভিটামিন b 2) ০.০১২ মিলিগ্রাম
- নিয়াসিন (ভিটামিন b 3) ০.২৬ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন b 6 ০.০৩৮ মিলিগ্রাম
- এসকরবিক এসিড(ভিটামিন c) ১৪.৩ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন a ৩ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম
- লোহা ০.১৯ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস ১৭ মিলিগ্রাম
- পটাসিয়াম ৭৯ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম ১৪ মিলিগ্রাম
- জল ৮৩.১ গ্রাম
জাম গাছের ছালের উপকারিতাঃ
ক্ষত স্থানঃ
আপনার শরীরে কোন স্থানে যদি খত হয়ে যায় তাহলে আপনি জাম গাছের ছাল গুরো
করে তারপর খত স্থানে লাগিয়ে দিবে যার ফলে ।আপনার কত স্থান খুব দ্রুত ভালো
হয়ে যাবে।
রক্ত পায়খানাঃ
যদি কারো পায়খানায় রক্ত পায়খানা হয়। তাহলে জাম গাছের ছাল করে নিয়ে
নিন এরপর এক থেকে দুই চা চামচ এর জাম গাছের ছালের রস নিয়ে নিন তারপর এর
সঙ্গে ছাগলের দুধ মিশিয়ে খেতে পারেন যার রক্ত পায়খানা বন্ধ হতে সাহায্য
করবে।
বাচ্চাদের পেটের সমস্যাঃ
অনেক বাচ্চার পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে তারা চাইলে যে
আমাদেরকেও করে এর সঙ্গে ৫ থেকে ৭কোথাও গাওয়া ঘি অল্প পরিমানে একসময়
মিশিয়ে তারপর বাচ্চাদের খাইয়ে দেন।
দাতের জন্যঃ
জাম গাছের ছাল দাঁতের জন্য খুব উপকারী। জাম গাছের ছাল আমাদের দাঁতের মাড়ি
দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ করবে। জাম গাছের ছাল গুঁড়ো করে তারপর দাঁতে লাগিয়ে
রাখুন তাতে দাত হবে মজবুত এবং তাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর হতে সাহায্য
করবে।
শেষ কথাঃ জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - জামের পুষ্টিগুণ
পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিষয়টা
জানতে গেলে জামের কোন অপকারিতা নেই। প্রিয় দর্শক আজকে আলোচনা হয়েছিল
জাম খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা ও জামের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। সকলের মনোযোগ
দিয়ে পোস্ট পড়ে নিন তাহলে বুঝতে পারবেন যে জামের কোন উপকারিতা নেই। গ্রাম
একটি মৌসুমী ফল। জাম ফল ডায়াবেটিস রোগের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। আমি আশা
করব আমার এই আলোচনা আপনাদের কাজে আসবে তাই সব সময় আমার সঙ্গে থাকুন। সবাই
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আবার আপনাদের সঙ্গে হাজির হব নতুন কোন পোস্ট নিয়ে
সে পর্যন্ত সবাই সুস্থ থাকুন ধন্যবাদ সবাই্কে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url