অনিয়মিত মাসিকের ঘরোয়া ১১ টি উপায়

 বর্তমান সময়ে অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা সকল বয়সের নারীদের  দেখা যায়। অনিয়মিত  মাসিকের অনেকগুলো কারণ  এ হয়ে  থাকে যেমন, স্টেজ ,পরিশ্রম, জীবনযাত্রায় বড় কোনো পরিবর্তন, সাধারণত এইসব কারণে মাসিকের সমস্যা হয়ে থাকে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে শারীরিক অসুস্থতার কারণেও অনিয়মিত মাসিক হয়ে থাকে। বিশেষ করে যারা অবিবাহিত তাদের অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা বেশি দেখা দেয়।

অনিয়মিত মাসিকের ১২ টি ঘরোয়া উপায়

মাষিক নিয়মিত করতে চিকিৎসকরা সাধারণত হরমোন থিরেপি দিয়ে থাকেন। যেটা আমাদের সকলের পরিচিত খাবার পিল হিসেবে। কিন্তু এসব পিল এ অনেক ধরনের সাইড এফেক্ট থাকে। যেমনঃ পা ব্যথা, পেট ফাঁপা, মাথাব্যথা, খাবারের অরুচি ইত্যাদি। তাই আসুন আমরা জেনে নেই অনিয়মিত মাসিকের ১২ টি ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে।

পেইজ সূচিপত্রঃ অনিয়মিত মাসিকের ১২ টি ঘরোয়া উপায়

ধনে গুঁড়োঃ

যারা প্রায় মাসিক দেরি হওয়ার সমস্যায় ভুবেন তাদের জন্য ধনে বেশ উপকারী একটি উপাদান। । ধনে গুঁড়তে রয়েছে এমি ইন গোক নামক একটি ঔষধি উপাদান যা মাসিক নিয়মিত রাখতে সাহায্য করে। দুই কাপ পরিমাণ পানিতে একটা চামচ ধনে গুঁড়ো ফুটিয়ে নিন। পানি ফুটে এক কাপ পরিমাণ নেমেলে ছেকে আলাদা করে রাখুন। মাসিকের সময় এগিয়ে আসার কিছুদিন আগ থেকে দিনে তিনবার ওই পানি পান করুন দেখবেন অনেকটা উপকৃত হবেন।

আরো পড়ুনঃ চোখ ওঠা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

মৌরিঃ

মৌরি পানিতে ফুটিয়ে সুগন্ধি চা তৈরি করে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ওই চা পান করলে মাসিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া রাতে এক গ্লাস পানিতে দুই চা চামচ ময়ূরী ভিজিয়ে রাখতে হবে সকালে থেকে ওই পানি খালি পেটে পান করুন।

গরম পানিঃ

 আমাদের মধ্যে অনেকেরই মাসিকের শুরুতে তলপেট এবং কোমরে প্রচুর ব্যথা হয়। এ সমস্যায় হট ওয়াটার ব্যাগ দিয়ে ব্যথার জায়গায় শেখ দিলে আরাম হতে পারে। এছাড়া গরম শেখের ফলে মাসে দ্রুত শেষ হতে পারে। দিনে দু-তিনবার ১০ থেকে ১৫ মিনিট শেক দিলে আরাম পাওয়া যায়।

ফল ও সবজির জুসঃ

আপনাদের খাদ্য তালিকায় বেশি বেশি ফল ও সবজির জুস রাখুন। ফল সবজির জুস শরীর ঠান্ডা রাখে ও হরমোন এর রেগুলেশন এ সাহায্য করে। আপনারা দিনে গাজর, পুদিনা পাতা করলার রস দুইবার খেতে পারেন। তবে পিরিয়ড নিয়মিত করতে গাজর এবং আঙ্গুরের রস সব থেকে বেশি কার্যকরী।

দারুচিনিঃ

যে সমস্ত খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে সেগুলোর মধ্যে দারুচিনি একটি অন্যতম খাবার। অনিয়মিত মাসিক দূর করতে চা লেবুর রসের সাথে দারুচিনি গুড়া করে মিশিয়ে খেতে পারেন। এই দারুচিনির গুলো আপনার মাসিক নিয়মিত করার পাশাপাশি মাসিক কালীন যে ব্যথা থাকে সেটা কমাতেও সাহায্য করে।

আরো পড়ুনঃ পাইলস কি ,পাইলসের লক্ষণ, চিকিৎসা ও ঘরোয়া প্রতিকার

যোগব্যায়ামঃ

মাসিক নিয়মিত না হওয়ার প্রধান কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো মানসিক চাপ। শরীরের যে সমস্ত হরমোন মাসিক নিয়ন্ত্রণ করে মানসিক চাপের কারণে সেগুলোর ব্যালেন্স নষ্ট হয় যার ফলে ঠিকমতো মাসিক হয় না। যোগব্যায়াম মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে। মাসিক নিয়মিত করতে সব থেকে ভালো পদ্ধতি গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম পদ্ধতি।

অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারঃ

অনিয়মিত মাসিক হওয়ার অনেক কারণ এর মধ্যে একটা হল রক্তে ইনসুলিন ও সুগারের মাত্রা তারতম্য অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারের মাধ্যমে আপনি এর অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এক গ্লাস পানিতে দুই চা চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে প্রতিদিন খাবার খাওয়ার আগে খেয়ে নিন আপনার মাসিক  নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

জিরাঃ

মাসিক নিয়মিত করতে জিরার গুরুত্ব অপরিসীম। জিরার কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। এক গ্লাস পানিতে দুই চা চামচ জিরা নিয়ে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন সকালে ওই পানি এবং জিরা দুটোই খেয়ে ফেলুন। নিয়মিত এই জিরা পান করলে সুফল পাবেন আপনি অবশ্যই।

আদাঃ

এক কাপ পানিতে এক চা চামচ পরিমাণ আদা কুচি করে ৫-৭ মিনিট পানিতে ফুটিয়ে নিন। এখন এর সঙ্গে অল্প পরিমাণে চিনি ও মধু মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন খাবার খাবার পরে এই পানিওটি তিনবার তিন বেলা খাবেন কিন্তু মনে রাখবেন এই পানীয়টি ভরা পেটে খেতে হবে কয়েক মাসের মধ্যে সুফল পাবেন। আদ পিরিয়ড সাইকেল রেগুলেশন এর সাহায্য করে এবং অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করে। 

কাঁচা পেঁপেঃ

কাঁচা পেঁপে মাসিক ভালো হওয়ার জন্য সাহায্য করে পেটে জরায়ুর ফাইবার কন্টাকসন এর সাহায্য করে পরপর কয়েক মাস নিয়মিত কাঁচা পেঁপের রস খেলে মাসিক নিয়মিত হয় তবে মাসিক চলাকালীন এটি না খাওয়াই ভালো। কাঁচা পেঁপে তে রয়েছে নানা রকম পুষ্টিগুণ নিয়মিত কাঁচা পেঁপে খেলে মাসিক ছাড়াও আরো অনেক কাজে সাহায্য করে যেমন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং ত্বক মুসলিন রাখে। এবং কাঁচা পেঁপে হজমের অনেক সমস্যার সমাধান করে।

অ্যালোভেরাঃ

এলোভেরা রূপচর্চার পাশাপাশি মাসিক নিয়মিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এটি হরমোন রেগুলেশন এর সাহায্য করে সবথেকে ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে তাজা এলোভেরা পাতার রস সামান্য মধুর সাথে মিশিয়ে খান এতে ভালো ফল পাওয়া যায়।

আড়ো পড়ুনঃ প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়ার কারণ চিকিৎসা ও প্রতিকার

কাঁচা হলুদঃ

হলুদ মসলা জাতীয় খাবার হলেও প্রাচীনকাল থেকে কাঁচা হলুদ চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করে আসছে এটি মাসিক নিয়মিত করতে এবং শরীরে হরমোনের চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। কাঁচা হলুদ জয়ের মাংসপেশি সংকোচন প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং মাসিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এককাপ দুধে চা চামচের চারভাগের কাঁচা হলুদ নিয়ে মধু বা গুড় দিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেয়ে দেখুন আপনার মাসিকের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

শেষ কথাঃ

পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, একটা বিষয় মনে রাখা উচিত শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলেও অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা হতে পারে। এজন্য এই পদ্ধতি গুলোর পাশাপাশি আয়রন যুক্ত খাবার খেতে হবে। যেমনঃ গরু, মুরগির, মাংস, কলিজা, ডিম, কচু শাক, লাল শাক ,পালং শাক, মিষ্টি আলু, ফুলকপি ,তরমুজ ,খেজুর প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। এসব ঘরোয়া পদ্ধতি মেনে যদি আপনারা উপকৃত না হোন তবে অবশ্যই একজন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url