গরুর মাংসের উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
গরুর মাংস প্রোটিনের ভালো উৎস। গরুর মাংস আছে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় নয়টি পুষ্টি উপাদান। আমাদের মধ্যে অনেকে গরুর মাংস খেতে ভয় পায় কারণ তারা মনে করে গরুর মাংস খেলে শরী্রে ক্ষতি পারে। আপনার কি মনে হয় আসলেই কি গরুর মাংস ক্ষতিকর। ঈদুল আযহয় গরু কিনবা খাসি কোরবানি করা হয়। সে সময় আমাদের সকলের বাড়িতে গরুর মাংস থাকে। কোরবানির মাংস দিয়ে তৈরি করা হয় সুস্বাদু অনেক খাবার। আমরা অনেকে গরুর মাংস ক্ষতিকর ভেবে সে সুস্বাদু খাবার গুলো খেতে ভয় পাই।
গরুর মাংস অনেক স্বাদের এবং প্রায় সবার কাছে খুব প্রিয় একটি খাবার। তবে তবে বেশ
কিছু স্বাস্থ্যজিকের কারণ চিহ্নিত হওয়ায় খাবারটি প্রিয় হলেও অনেকে গরুর মাংস
থেকে এড়িয়ে চলেন। কারণ গরুর মাংস যদি মাত্রা অতিরিক্ত খাওয়া যায় তবে
স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই আমাদের সকলের গরুর মাংস খাওয়ার পূর্বে
এর উপকারিতা অপকারিতা ও এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই চলুন
আমরা জেনে নেই গরুর মাংস খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।
পেইজ সূচিপত্রঃ গরুর মাংসের উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
গরুর মাংসের উপকারিতাঃ
আয়রনের ভালো উৎসবঃ
গরুর মাংসের আয়রন শরীরে ভালোভাবে শোষিত হয়। আয়রন যুক্ত অনেক খাবারের তুলনায়
গরুর মাংসের অনেক বেশি আয়রন থাকে। রক্তস্বল্পতা দূরীকরণ এবং শরীরের সব কোষে
অক্সিজেন সরবরাহর জন্য গরুর মাংস সাহায্য করে। তাই শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণের
জন্য গরুর মাংস বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
আরো পড়ুনঃ কাঁচা আমের উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
জিংক এর অভাব পূরণ করেঃ
জিংক একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। অনেকেই জিংকের অভাবে ভুকে থাকেন। বিশেষ করে কিশোর কিশোরীরা জিংকের অভাবে বেশি ভুকতে থাকেন। ৮৫ গ্রাম গরুর মাংস খেলে তাড়াতাড়ি ৩৯ শতাংশ পূরণ করে।
প্রোটিনের ভালো উৎসঃ
প্রোটিনের ভালো উৎস থাকে গরুর মাংসে। মাংস ছাড়া গরুর হাড়, কলিজা মগজ ইত্যাদি
থেকে অনেক পরিমাণে প্রোটিন পেয়ে থাকে। এবং এই প্রোটিন থেকে পাওয়া যায়
অ্যামাইনো এসিড যা আমাদের শরীরে হার ও মাংস বেশি ভালো রাখতে সাহায্য করে। ১০০
গ্রাম গরুর মাংসে পাওয়া যায় ২২.৬ গ্রাম প্রোটিন।
খনিজের অভাব দূর করেঃ
গরুর মাংস শরীরের খনিজের অভাব দূর করতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কারণ এই খনিজ লবনের দুর্দান্ত উৎস। গরুর মাংসে ভিটামিনের
সবগুলো উপাদান থাকে যেমন জিংক, পসফরাস ও সেলেনিয়া এবং
প্রচুর লৌহ। গরুর মাংসের ভিটামিন বি- ৩ ভিটামিন বি- ৬,বি-১২ ইত্যাদি
ভিটামিনের যোগান দেয়।
আরো পড়ুনঃ পুদিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা ও ব্যবহারের নিয়ম
শরীর বৃদ্ধিতে সহায়কঃ
৮৫ গ্রাম গরুর মাংসের ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুর দৈনিক চাহিদার ১ থেকে ২৫ শতাংশ
ভিটামিন বি ১২, ৯০ শতাংশ প্রোটি্ ৩২ শতাংশ আইরন, ২৯ শতাংশ নয়াসিন, ৭৪ শতাংশ
জিংক, ক ৪২ শতাংশ সেলেনিয়া্ম, ৩২ শতাংশ ভিটামিন বি-৬, ২৩ শতাংশ রিবুপ্লোভিন, এবং
১৬ শতাংশ ফসফরাস থাকে। সেজন্য গরুর মাংস খেলে আমাদের শরীরে বুদ্ধিবৃত্তিক গঠন
শারীরিক বর্ধন ও রক্তবধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গরুর মাংসের অপকারিতাঃ
স্ট্রোকের ঝুঁকিঃ
মাংস খেলে আমাদের অনেকেরই শরীরে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে সেটা আপনিও হয়তো জেনে থাকবেন। কারণ এতে থাকা অতিরিক্ত সোডিয়াম আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ শরীরে রক্তচাপ সৃষ্টিতে কাজ করে সোডিয়াম। আমরা যদি গরুর মাংস খাই তবে আমাদের শরীরে হতে পারে উচ্চ রক্তচাপ সেখান থেকে দেখা দেয় স্ট্রোকের মত সমস্যা। চলুন আমরা জেনে নেই একজন মানুষ দৈনিক গরুর মাংস কতটুকু খেতে পারবেন-
দৈনিক গরুর মাংস খেতে পারবেন ৮৫ গ্রাম। ৮৫ গ্রাম চর্বি ছাড়া গরুর মাংস খেলে তা
আপনার দৈনিক ক্যালোরির চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ করবে। রান্না করা তিন টুকরা মাংসের
৮৫ গ্রাম হয় তাই আপনারা চেষ্টা করুন দিনের টুকরার বেশি মাংস না খেয়ে খেতে। আর
যদি আপনারা মনে করেন একেবারে আরও বেশি মাংস খেয়ে ফেলার ভয় থাকে তবে সপ্তাহে দুই
দিনের বেশি গরুর মাংস না খাওয়াই ভালো। মাত্রা অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে শরীরে
নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই আমরা চেষ্টা করব গরুর মাংস টা যতটুকু
আমার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো ততটুকু খাওয়ার। যাতে করে আমাদের শরীরের কোন ক্ষতি না
হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি বাড়ায়ঃ
আমাদের মধ্যে অনেকে গরুর মাংস খেতে অনেক পছন্দ করে। সেজন্য অনেকের অতিরিক্ত গরুর
মাংস খেয়ে ফেলেন। এতে বাড়ে কোষ্ঠকাঠিন্যর ঝুঁকি। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পরবর্তীতে
আরো বড় অসুখ দেখা দিতে পারে আপনার শরীরে। তাই আমাদেরকে অতিরিক্ত গরুর মাংস
খাওয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখতে হবে। আবার গরুর মাংস সবজির সঙ্গে মিলিয়ে খেলে
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যায়।
কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকিঃ
চিকিৎসকের মতে, সপ্তাহে পাঁচ বেলা গরু, খাসি কিংবা ভেড়ার মাংস খেলে বাড়ে পূরণ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। সেই সঙ্গে প্রক্রিয়াজাত লাল মাংস খেলে তা মৃত্যু ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দেয়। সেজন্য আমাদের শরীরের পক্ষে অতিরিক্ত গরুর মাংস খাওয়া মোটেও উপকারী নয়। তাই যতই আমাদের গরুর মাংস খেতে ভালো লাগুক না কেন আমরা এড়িয়ে চলব। তা না হলে মৃত্যুর ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দেব।
আরো পড়ুনঃ কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা এবং কাঁঠাল খাওয়ার সঠিক সময়
গরুর মাংসের পুষ্টিগুণঃ
প্রোটিন, জিংক, ভিটামিন বি, টুয়েলভ, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, নয়াসিন, ভিটামিন বি ৬,আয়রন, এবং রিবোফ্লাভিন। এই নয়টি পুষ্টি উপাদান আছে গরুর মাংসের আর সেগুলো এর জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। প্রোটিন শরীরের পেশি গঠনে ভূমিকা রাখে। জিংক পুরো প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ফসফরাস দাঁত ও হাড়ের শক্তি বাড়ায়। আয়রন শরীরের পেশিতে অক্সিজেন প্রবাহের সহায়তা করে। ভিটামিন বি টুয়েলভ খাদ্য থেকে শক্তি যোগান দেয়।
শেষ কথাঃ
পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, কোন খাবারের ভালো খাবার দুটো দিকে থাকে। অতিরিক্ত খেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে আবার কম খেলে পুষ্টির ঘাটতি থাকে। তাই সুস্থ থাকার লক্ষ্যে আমাদের সবাই কে গরুর মাংস খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে। যাতে করে আমরা সুস্থ থাকি এবং আমাদের পুষ্টির ঘাটতেও যাতে না হয়।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url