ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের নানানকারনে ঘুম না আসতে পারে। তবে সে কারণগুলো খুঁজে বের করে এর সমাধান করতে হবে। তা না হলে ঘুম না আসার কারণে শরীর অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। একজন স্বাভাবিক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানোর প্রয়োজন। দিনে কমপক্ষে ছয় ঘন্টার কম ঘুমালে তা  আপনার স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। সাধারণত একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ৭-৮ ঘন্টা, শিশুদের ৯-১৩ ঘন্টা, নবজাতক বাচ্চাদের ১২-১৭ ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন। ঘুমানোর মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার

শরীর ও স্বাস্থ্য ভালো রাখার অন্যতম নিরামক হলো ঘুম। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানোর প্রয়োজন। তবে আপনি যদি দিন। ৬ ঘণ্টার কম ঘুমান তবে আপনার শরীর ও স্বাস্থ্য দুটোই খারাপ হতে পারে। সুতরাং আপনার পরবর্তী দিনের শক্তি অনেকটাই নির্ভর করে আপনার পর্যাপ্ত ঘুমের উপর। চলুন নিম্নে জেনে নেই ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে।

পেইজ সূচিপত্রঃ ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার

ঘুম না আসার কারণঃ

ঘুম না হওয়ার পেছনে দায়ী নানা কারণ। তার মধ্যে দুটি কারণ হলো মানসিক এবং শারীরিক। এছাড়াও পরিবেশগত কারণেও  এ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। মানসিক কারণ হচ্ছে-মানসিক চাপ, পেশাগত সমস্যা, দুশ্চিন্তা, ঝরকা ঝাটি, বিষন্নতা অসুখী দাম্পত্য জীবন, ইত্যাদি। এবং শারীরিক কারণ গুলোর মধ্যে রয়েছে, হৃদরোগ, হাঁপানি, এবং শরীরের নানা ধরনের সমস্যা। এছাড়াও সিজেন চেঞ্জ হলে, রাতে কোন কাজ করলে, কারো কারো ক্ষেত্রে আরামদায়ক বিছানা না হলে, কিংবা নির্দিষ্ট বিছানা পরিবর্তন হলে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। নিম্নে আরো কিছু কারণ তুলে ধরা হলো-

আরো পড়ুনঃ কাঁচা আমের উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার একজন সাহাবী ইবনে আমরকে বলেছেন যিনি সারা রাত সালাত আদায় করেছিলেন-"নামাজ পড়ো এবং রাতে ঘুমাও, যেহেতু তোমার উপর তোমার শরীরের অধিকার রয়েছে"

রাসুল সাঃ আরো বলেছেন," তোমাদের কেউ যদি নামাজ পড়ার সময় তন্দ্রা অনুভব করে তবে সে যেন ঘুমাতে যাই যতক্ষণ না তার ঘুম শেষ হয়" সহিঃ আল- বুখারী

আনুষাঙ্গিক কারণঃ

  • রাতে না খেয়ে থাকা, কারণ পেটে খিদে থাকলে তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে।
  • অসুখ ব্যথা বা জ্বর ইত্যাদি রোগের জন্য।
  • নির্দিষ্ট কোন রুটির না মেনে চলা।
  • মাত্রা অতিরিক্ত অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলা।
  • বিছানা আরামদায়ক না হওয়া।
  • চা বা কফি খাওয়া।
  • সোবার ঘরে বেশি শব্দ বেশি গরম কিংবা বেশি ঠান্ডা হওয়া।

এগুলোর মধ্যে কারণ যেটাই হোক না কেন আপনার উচিত সে কারণের দ্রুত সমাধান করা এবং সঠিক নিয়মের মধ্যে ঘুমানোর চেষ্টা করা। 

আড়ো পড়ুনঃ গরুর মাংসের উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

মানসিক অশান্তিঃ

  • দৈনন্দিন ব্যাপারে সবসময় চিন্তা করা।
  • বন্ধু-বান্ধব নিকট আত্মীয় দের কাছ থেকে অস্বাভাবিক আচরণ।
  •  কর্মক্ষেত্রে অসুবিধা।
  • পারিবারিক অশান্তি।
  • অতীত বা ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা করা।

ভালো ঘুম হওয়ার জন্য প্রতিকারঃ

এটা সত্য যে সঠিক নিয়ম অনুসরণ না করলে শান্তিপূর্ণ ঘুম হয় না। শতকরা আশি পাচ্ছেন মানুষ আজকাল ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন। তারা সঠিকভাবে ঘুমাতে চান কিন্তু সঠিকভাবে ঘুমানোর নিয়ম অনুসরণ করতে চান না। আসুন জেনে নেওয়া যাক শান্তিপূর্ণ ঘুম পাওয়ার উপায় গুলোঃ

আরো পড়ুনঃ কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা এবং কাঁঠাল খাওয়ার সঠিক সময়

  • এশার নামাজ আদায় করুন এবং সেইসাথে সুন্নত নামাজ হিসেবে তাহাজ্জুদ নামাজ ও আদায় করতে পারেন।
  • রাতে হালকা খাবার খেলে শরীর এটি দ্রুত হজম করতে পারে এবং ভাল ঘুম হতে সাহায্য করে। সেজন্য রাতে ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • ঘুমানোর সর্বপ্রথম প্রস্তুতি হচ্ছে ওযু করা। ঘুমানোর আগে ওযু করে পবিত্রতা অর্জন করতে হয় শরীর পবিত্র থাকলে মন শান্ত থাকে। এবং ঘুমও ভালো হয়।
  • ঘুমোতে যাওয়ার আগে ডিলিট হালা পোশাক পড়ুন দাঁত ব্রাশ করুন ওযু করুন এবং আরো কিছু কাজ থাকলে সেটাও সেরে ফেলুন।
  • জরুরী প্রয়োজন ছাড়া এশার নামাজের পরে রাত জাগতে ইসলাম নিরুৎ সাহিত্য করেছে। তাই এশার নামাজ আদায়ের পর যত দ্রুত সম্ভব ঘুমিয়ে পড়ুন। কারণ আপনি যত দ্রুত ঘুমিয়ে পড়বেন তত সহজে ভোরবেলা উঠতে পারবেন এবং ফজরের নামাজ আদায় করতে পারবেন।
  • আপনি যদি ভোরবেলা উঠতে না পারেন তবে অ্যালার্ম দিয়ে রাখুন। অনেকে দেখা যায় রাত জেগে কাজ করে ভোরবেলা আর উঠতে পারে না। এজন্য কাজগুলো বরং ফজরের নামাজের পরে করার জন্য রেখে দিন এতে করে একটা নিয়ম তৈরি হবে এবং আপনার শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে।
  • আপনি ঘুমেতে যাওয়ার আগে আপনার বাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন, বিছানা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করুন টিভি বা মোবাইল থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলুন আলো নিভিয়ে দিন যাতে করে ঘুমানোর জন্য উপযোগী হয়।
  • প্রতিদিন ঘুমোতে যাওয়ার পূর্বে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিন এবং আপনি সকলকে ক্ষমা করে দিন এতে আপনার মানসিক চাপ কমবে এবং নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবেন।
  • ঘুমোতে যাওয়ার পূর্বে আল্লাহর সন্তুষ্ট অর্জনের জন্য এবং শয়তান থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য কয়েকটি সূরা পড়ুন, যেমন আয়াতুল কুসরি পাঠ করুন, সূরা মূলক, চার কুল, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ এবং আল্লাহর জিকির করে সবশেষে ঘুমানোর দোয়া পড়ে  ঘুমাতে যান। ঘুমানোর দোয়াটি হচ্ছে-" আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতো ওয়াহিয়া" এটা পড়ার পরে ডান কাধে ঘুমিয়ে পড়ুন।

শেষ কথাঃ

 পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, আমাদের সকলের ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই হওয়া উচিত। আশা করি ঘুমানোর এই টিপস গুলো আপনার ভালো ঘুমের জন্য কাজে আসবে। আসুন আমরা সকলে ইসলামের বিধান মত চলি এবং ইসলামের বিধিবিধান মেনে আমাদের জীবনকে গড়ে তুলার চেষ্টা করি। উপরে উল্লেখিত ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকারগুলো যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবেই আমার লেখা সার্থক হবে। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url