মাসিকের কতদিন পর সহবাস করলে বাচ্চা হয়

আজকে আমরা জানবো মাসিকের কতদিন পর সহবাস করলে বাচ্চা হয় সে সম্পর্কে। গর্ভধারণের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় সময় বা ফারটাইল উইন্ডো চেনার অনেকগুলো পদ্ধতি আছে। এগুলো চেনার আগে আপনাকে জানতে হবে মাসিকের কত দিন পর সহবাস করলে বাচ্চা হয় সে সম্পর্কে। এবং একাধিক পদ্ধতি একত্রে ব্যবহার করলেন গর্ভধারণের সঠিক সময় জেনে নেওয়া যায়। এই সময়ে সহবাসে দ্রুত গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ে।

মাসিকের কতদিন পর সহবাস করলে বাচ্চা হয়

আজকে রাতে খেলে আপনাদের জানাবো মাসিকের কত দিন পর সহবাস করলে বাচ্চা হয়। সন্তান ধারণ জীবনের একটা অধ্যায়। প্রতিটি মহিলা পুরুষ  চান তাদের একটা সুন্দর ফুটফুটে সন্তান হোক। এবং  সন্তান ধারনের উপায় নিয়ে অনেকেই আজও রয়েছে নানা ধোঁয়াশা। আমরা অনেকেই জানিনা মাসিকের কতদিন পর সহবাস করলে বাচ্চা হয়। নিম্নে বিস্তারিত তুলে ধরা হল।

পেইজ সূচিপত্রঃ মাসিকের কতদিন পর সহবাস করলে বাচ্চা হয়

সাদাস্রাব পর্যবেক্ষণের পদ্ধতিঃ

মেয়েদের সাদা স্রাব চার রকমের অবস্থা দেখা যায় প্রতি মাসে। সেগুলো হলো-

  • মাসিক এর রাস্তাঘাট খুব শুকনো শুকনো মনে হয় তখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি কারণ এটা মাসিকের ঠিক পরে যখন কোন সাদা স্রাব দেখা যায় না।
  • এবার গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকলে এক শতাংশের একটু বেশি কারণ এ সময় মাসিকের রাস্তা হালকা ভেজা মনে হয় কিন্তু চোখে কোন সাদা স্রাব দেখা যায় না হাতেও ভরা যায় না।
  • তৃতীয় অবস্থায়  ঘন সাদা স্রাব জাই সেটা আঙ্গুলের সাথে আঠালো হয়ে লেগে থাকে তখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেড়ে ২.৫ শতাংশের কাছে চলে আসে।
  • চতুর্থ অবস্থায় সাদাস্রাব খুব পাতলা এবং পিচ্ছিল হয়। কাঁচা ডিমের সাদা অংশ যেমন মসলিন আর পিচ্ছিল হয়। কিছুটা তেমন দেখতে স্বচ্ছ আর সেই সাদা স্রাব দুই আঙ্গুল দিয়ে টেনে বড় করা যাই।কয়েক ইঞ্চি বড় করলেও ভাঙ্গে না তখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায় ২৮.৬ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি চলে আসে।

আরো পড়ুনঃ জরায়ু ক্যান্সারের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার

কারো কারো ক্ষেত্রে এই চতুর্থ অবস্থা শেষ হওয়ার পর আবার সাদা সিরাপ ঘন ১৮ হয় এবং একেবারে আর কোন সাদা স্রাব যায় না। তবে অনেকের মাসিকের ঠিক আগে আবার পাতলা সাদা সিরাপ যেতে পারে তবে সেটা গর্ভধারণের সাথে সম্পর্কিত নয়।

সাদাস্রাবের পরিবর্তন আসে কেনঃ

নানারকম কারণের সাদা স্রাবের পরিবর্তন আসে হলে এই পদ্ধতি কখনো কম কার্যকরই হতে পারে এর মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে-

  • জন্ম নিয়ন্ত্রণ পীল শোভন করা
  • যোনিপথের কোন ইনফেকশন
  • সহবাস
  • কিছু ঔষধ
  • সহবাসের সময় পিচ্ছিল কারী কোন কিছু ব্যবহার করা
  • শিশুকে বুকের দুধ পান করানো

তাপমাত্রা মাপার পদ্ধতিঃ

মাসিকের পরপর মেয়েদের শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকে। যখন ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণুর বের হওয়ার পরে অর্থাৎ যখন ডিমটা ফোটে তখন শরীরের তাপমাত্রা খানিকটা বেড়ে যায়। আপনি যদি সেটা না মাপেন তবে বুঝতে পারবেন না কারণ এটি খুবই সামান্য ০-২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা০-৪ ডিগ্রী কিন্তু আপনি প্রতিদিন শরীরের তাপমাত্রা মাপতে থাকলে কখন আপনার শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যায় আপনি ধরতে পারবেন।

আরো পড়ুনঃ প্রস্রাবের রাস্তায় চুলকানির কারণ লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার

এক্ষেত্রে একটা কথা মনে রাখবেন, ছয় এর পরের দিন। টানা ছয় দিন কম তাপমাত্রা আর পরে টানা তিন দিন বেশি তাপমাত্রা থাকতে হবে। সেটা হতে হবে  কমপক্ষে ০-২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা০-৪ ডিগ্রী ফারেন হাইট একদিন তাপমাত্রা এসে যদি আবার চলে যায় তবে হবে না। বিভিন্ন কারণে আপনার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। যদি আপনার শরীরে একটানা বেশিদিন তাপমাত্রা থাকতে শুরু হওয়ার পরে তৃতীয় দিন পর্যন্ত ফার টাইল উইন্ডো থাকে। এই বেশি তাপমাত্রা যতদিনই থাকবে ধরে নিতে হবে তিনদিন পরে ফার টাইল উইন্ডোজ শেষ।

সঠিক তাপমাত্রা মাপার নিয়মঃ

  • কোন সাধারণ থার্মোমিটার দিয়ে এই জ্বর মাপা যায় না। বিভিন্ন ফার্মেসিতে অল্প খরচে এটি কিনতে পাওয়া যায়। উনার বাড়িতে যে থার্মোমিটার থাকে এটা দিয়ে মাপলে এত শুকনো পরিবর্তন বোঝা যায় না। সেজন্য এই জ্বরকে ডিজিটাল থার্মোমিটার দিয়ে মাপতে হয়।
  • এই জ্বর আপনি ঘুম থেকে ওঠার পরে কোন কিছু করার আগে বিছানায় থাকা অবস্থাতেই  মাপতে হবে। আপনি প্রতিদিন নিয়মিতভাবে ঘুম থেকে উঠে এই জ্বর মাপার অভ্যাস গড়ে তুলুন সেজন্য আপনাকে থার্মোমিটার কি হাতের কাছেই রাখতে হবে। এবং প্রতিদিন যে সময়ে আপনি জ্বরটা মাপবেন চেষ্টা করবেন যাতে সে সময়েই মাপতে পারেন।
  • আমরা অনেকেই এই জ্বর মাপতে পারি না। আমরা মনে করি জ্বর যেভাবে মাপি সেভাবেই মাপতে হবে কিন্তু সেভাবে মাপলে হবে না। আমরা অনেকেই বগলের নিচে তাপমাত্রা মাপি। এখানে সেভাবে মাখলে হবে না। এই তাপমাত্রা মুখের ভিতর থেকে মাপতে হবে। সেজন্য আপনাকে থার্মোমিটারটি জিহ্বার নিচে রেখে মুখ বন্ধ করে রাখবেন।
  • এই পদ্ধতি করলে আপনার হারটাইল উইন্ডো কখন শুরু হয় সেটা বোঝা না গেলেও কখন শেষ হবে সেটা বোঝা যাবে।

শরীরের তাপমাত্রা কখন পরিবর্তন হতে পারেঃ

আপনি যদি মানসিক চাপে থাকেন কিংবা যদি ঘুম কম হয় তবে আপনার শরীরে তাপমাত্রা পরিবর্তন হতে পারে। আবার আপনার শরীরে যেকোনো ধরনের অসুস্থ তাই আপনার শরীরে আবার তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। সেজন্য না শরীরের তাপমাত্রা মেপে হার টা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে চাইলে প্রতিদিনের তাপমাত্রা একটি চাটে নোট করে রাখতে হবে। আপনার শরীরে যদি হঠাৎ করে তাপমাত্রা বেড়ে যায় কিংবা তাপমাত্রা নেমে যায় সেটাও নোট করে রাখতে হবে।

স্ট্যান্ডাড ডে পদ্ধতিঃ

আপনার ফার টাইল উইন্ডো বা সবচেয়ে সম্ভাবনাময় সময় হচ্ছে মাসিক শুরু হওয়ার পর আট নাম্বার দিন থেক ১৯ নাম্বার দিন পর্যন্ত। অর্থাৎ যদি ১ তারিখে মাসিক শুরু হয় তাহলে ৮ তারিখ থেকে ১৯ তারিখ পর্যন্ত সময়টাতে আপনার গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেশি থাকবে।

মাসিকের কিভাবে হিসাব করবেনঃ

  • আপনার মাসিক যদি শুরু হয় ১ তারিখে তবে তার পরের মাসিক হলো সেই মাসের ২৯ তারিখে। তাহলে ১ তারিখ থেকে সাইকেল শুরু হয়েছে, ২৮ তারিখে শেষ ২৯ শে আবার নতুন সাইকেল শুরু তাহলে এবার আপনার সাইকেল ছিল ২৮ দিনের।
  • আপনার মাসিক প্রথম যেদিন শুরু হয় সেই তারিখটা ক্যালেন্ডার এ লিখে রাখুন। এবার মাসিক কবে শেষ হলো সেটা দাগানোর প্রয়োজন নেই। এরপরে আবার যেদিন মাসিক শুরু হবে ক্যালেন্ডারের সেই তারিখটা তুলে রাখবেন। এই দুইটা তারিখের মধ্যে যতদিনের পার্থক্য সেটা আপনার মাসিকের সাইকেলের দৈর্ঘ্য।
  • মহিলাদের মাসিকের সাইকেল হিসাব করার সময় সাধারণত দুইটা ভুল দেখা যায়। মাসিক শেষ হওয়ার দিন থেকে অনেকে গোনা শুরু করেন। কিন্তু আপনাকে হিসাব করতে হবে আপনার মাসিক শুরু হয়েছে যেদিন সেইদিন থেকে। শেষের দিন থেকে নয়। আপনারা অনেকে পরের মাসিক শুরু হওয়ার দিনটাও মনে থাকেন। পরের মাসিক যেদিন শুরু হলো সেদিন থেকে নতুন সাইকেলের হিসাব করতে হবে।

ক্যালেন্ডারে হিসাব রেখে গর্ভধারণ করার উপায়ঃ

  • মাসিক শুরু হওয়ার পরের আট নাম্বার দিন থেকে ২২ নম্বর দিন হলো আপনার ফারটাইল  উইন্ডো। এর যেকোনো একদিন আপনার অভারি থেকে ডিম্বাণু বের হওয়ার সম্ভাবনা আছে। যে এই সময়টাতে সহবাস করলে গর্ভধারন এর সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • সবচেয়ে ছোট সাইকেল থেকে ১৮ বিয়োগ করলে যে সংখ্যাটা পাবেন আপনার সাইকেলের সেই দিন থেকে হার টাইম উইন্ডোর শুরু। আর সবচেয়ে লম্বা সাইকেল থেকে ১১ বিয়োগ করলে যে সংখ্যাটা আসবে সেই দিন আপনার হার্ট টাইল উইন্ডোর এর শেষ দিন।
  • উপরে আমরা জেনেছি কিভাবে মাসিকের সাইকেলের হিসাব করতে হয়। এই নিয়মে অন্তত ছয় মাস ধরে আপনাকে মাসিকের হিসাব রাখতে হবে। এতে আপনি ৬-৭টা সাইকেলের দৈর্ঘ্য পেয়ে যাবেন। সবগুলো তোর ঘর একই নাও হতে পারে।, কোনোটা আসবে ৩৩ দিন, কোনটার ছাব্বিশ দিন। আপনি যখন ছয়টা সাইকেলের দৈর্ঘ্য পেয়ে যাবেন তখন এদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা আর সবচেয়ে ছোট সাইকেল দুটো বেছে নিতে হবে আপনাকে।
  • ধরুন আপনার সবচেয়ে ছোট সাইকেল হচ্ছে ২৬ দিনের। এখান থেকে ১৮ বিয়োগ করলে হল আট অর্থাৎ আপনার সাইকেলের অষ্টম দিন থেকে ফারটাইল উইন্ডোর শুরু। এরপর ধরা যাক আপনার সবচেয়ে লম্বা সাইকেল হচ্ছে ৩৩ দিনের। এখন এখান থেকে ১১ বিয়োগ করলে হবে ২২। অর্থাৎ আপনার সাইকেলের ২২ তম দিন হচ্ছে শেষ দিন।

অন্যান্য পদ্ধতিতে গর্ভধারণ করার উপায়ঃ

  • ডিম্বাণু বের হওয়ার পরে স্তনে বা তলপেটে ব্যথা হতে পারে পেট ফাঁপা লাগতে পারে তবে এই লক্ষণ গুলো ব্যবহার করে উইন্ডো বের করা নির্ভরযোগ্য নয়।
  • বিভিন্ন ফার্মেসীতে এভুলেশন টেস্ট পাওয়া যায় যেগুলো কিছুটা প্রেগন্যান্সি টেস্টের মত। প্রস্রাবে হরমোনের লেভেল মেপে বলে দেয় কখন ডিম্বাণু বের হয়ে আসতে পারে। সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন তবে দাম তুলনামূলকভাবে বেশি।
  • মোবাইল ফোনে কিছু অ্যাপ ডাউনলোড করে নেওয়া যায় যেমনঃ FLO CLUE GLOW  এই অ্যাপ গুলোতে মাসিকের তারিখ বসালে এগুলো ফারটাইল উইন্ডো হিসাব করে দেয় তবে কোন এপি ১০০% নির্ভরযোগ্য না এগুলো ব্যবহার করলে আপনার সাইকেলে ধরব সম্পর্কে একটা ধারণা পেতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ মহিলাদের সাদা স্রাব কি কেন হয় ঘরোয়া প্রতিকার

উপসংহারঃ মাসিকের কতদিন পর সহবাস করলে বাচ্চা হয়

পরিশেষে আমি বলতে চাই যে প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে মাসিক নিয়মিত হলেই এক এক মাসে এক এক সময় হতে পারে। নিজের শরীরের লক্ষণগুলো যেমন তাপমাত্রা সাদা সিরাপ এর দিকে খেয়াল রাখলে আপনি সমস্যা আর ভালোভাবে চিনতে পারবেন। আর্টিকেল যদি  আপনারা ভালোভাবে পড়েন তবে আপনারা জানতে পারবেন মাসিকের কত দিন পর সহবাস করলে বাচ্চা হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url