ক্যাপসিকাম খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আজকে আপনাদের জানাবো ক্যাপসিকাম খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। ক্যাপসিকাম এর উপকারিতা এতে মোটাবলিজাম প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পায়। ক্যালোরি পোড়ানোর পাশাপাশি এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে দেয় না। সেজন্য আজকে আপনাদের জানাবো ক্যাপসিকাম খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ। চলুন আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক ক্যাপসিকাম খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।
ক্যাপসিকাম খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

ভিটামিন এ এবং সি সমৃদ্ধ ক্যাপসিকাম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর খুব ভালো উৎস। সেজন্য আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাবো ক্যাপসিকাম খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। অক্সিডেন্ট এর পাশাপাশি ক্যাপসিকাম হৃদরোগ হাঁপানি এবং ছানি প্রতিরোধ এ খুব উপকারী। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক ক্যাপসিকাম খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।

পেইজ সূচিপত্রঃ ক্যাপসিকাম খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ


ভূমিকাঃ

ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ সারা বিশ্বেই একটি জনপ্রিয় সবজি। বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। মিষ্টি মরিচের আকার ও আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তবে  সাধারণত ফল গোলাকার ও ত্বক পুরু হয়। মিষ্টি মরিচ আমাদের দেশীয় প্রচলিত সবজি না হলেও ইদানিং এর চাষ প্রসারিত হচ্ছে বিশেষ করে বড় বড় শহরের আশেপাশে সীমিত পরিসরে কৃষক ভাইয়েরা এর চাষ করে থাকেন যা অভিজাত হোটেল ও বিভিন্ন বড় বড় মার্কেটে বিক্রি হয়ে থাকে।

আরো পড়ুনঃ ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ প্রতিকার ও ঘরোয়া চিকিৎসা

এছাড়া মিষ্টি মরিচের বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনা ও প্রচুর। কারণ সারা বিশ্বের টমেটোর পরেই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি হচ্ছে ক্যাপসিকাম। 

ক্যাপসিকাম এর ব্যবহারঃ

পুষ্টিমানের দিক থেকে মিষ্টি মরিচ একটু অত্যন্ত মূল্যবান সবজি। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকার কারণে এবং অতি সহজে টবে চাষ করা যায় বলে দেশের জনসাধারণকে ক্যাপসিকাম খাওয়ার জন্য বেশি উৎসাহ করা হয়। ক্যাপসিকাম আমরা নানাভাবে খেয়ে থাকি,  কেউবা সালাত হিসেবেও খেয়ে থাকেন। অভিজাত হোটেলে ক্যাপসিকাম এর ব্যবহার অনেক। নানা রকমের রান্নায় ক্যাপসিকাম ব্যবহার করা হয়। যেমন পিৎজা বার্গার আরো অনেক খাবারের সঙ্গে।

ক্যাপসিকাম লাগানোর নিয়মঃ

  • ক্যাপসিকাম চাষের জন্য দোআঁশ বা বেলে দোআশ মাটি ভালো। ক্যাপসিকাম গাছরা ও গোড়ায় পানি জমা কোনটি সহ্য করতে পারে না। ক্যাপসিকাম বিজ কেনার উপযুক্ত সময় হল অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত। প্রতি শতকের জন্য এক গ্রাম বীজ দরকার হয়। বীজ থেকে প্রথমে
  • চারা তৈরি করে নিতে হয়।
  • এজন্য ক্যাপসিকামের বীজগুলোকে ১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে আগে থেকে তৈরি করে রাখা বীজ তলায় ১০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে লাইন করে বীজ বুনতে হবে। বীজ বোনার ৭ থেকে ১০ দিন পর চারা তিন চার পাতা হলে মাঝারি আকারের পলিথিন ব্যাগে চারা স্থানান্তর করতে হবে।
  • এরপর মুল  জমি চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে তৈরি করে নিতে হবে। এরপর বেড তৈরি করে নিতে হবে প্রতিটি বেডে চওড়া ২.৫ ফুট রাখতে হয় দুই বেডের মাঝখানে নালা রাখা দরকার যাতে করে গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে।
  • প্রতি শতক জমির জন্য গোবর ৪০ কেজি, ইউরিয়া ১ কেজি, পিএসপি ১.৪কেজি, এমওপি ১ কেজি, দস্তা ২০ গ্রাম, এবং জিপসাম ৪৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়।
  • এর মধ্যে অর্ধেক গো বর্ষার জমি তৈরীর সময়, বাকি অর্ধেক গোবর সম্পূর্ণ টিএসপি, দস্তা, জিপসাম,১/৩ ভাগ ইউরিয়া চারা রোপনের গর্তে প্রয়োগ করতে হবে। বাকি.২/৩ ভাগ ইউরিয়া এবং এমওপি পরবর্তী দুই ভাগ করে চারার উপরের ২৫ এবং ৫০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে।
  • সাধারণত ৩০ দিন বয়সের চারা তৈরি করা বেডে১.৫ ফুট দূরে দূরে লাইনের রোপন করতে হয়। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রাতের তাপমাত্রা অনেক কমে যায় বলে পলিথিনের ছাউনি দিয়ে রাখলে ভেতরের তাপমাত্রা বেশি থাকে।
  • যেহেতু ক্যাপসিকাম করা ও জলাবদ্ধতা কোনটাই সহ্য করতে পারে না তাই প্রয়োজন অনুসারে জমিতে শেষ দিতে হবে। কোন গাছে ফল ধরা শুরু হলে খুঁটি দিতে হবে যাতে গাছ ফলের ভারে হেলেনা পড়ে জমি সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।

আরো পড়ুনঃ লেবুর উপকারিতা অপকারিতা এবং লেবুর পুষ্টিগুণ

ক্যাপসিকাম তোলার সময়ঃ

ক্যাপসিকাম সাধারণত পরিপক্ক সবুজ অবস্থায় লালচে হওয়ার আগেই মাঠ থেকে উঠানো যায়। সাধারণত সপ্তাহে একবার গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। ফল সংগ্রহের পর ঠান্ডা অথচ ছায়াযুক্ত স্থানে বাজারজাতকরণের পূর্ব পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হয়। তবে ফল সংগ্রহের সময় প্রতিটি ফলে সামান্য পরিমাণে বোটা রেখে দিতে হবে।

ক্যাপসিকামের রোগ বালাই প্রতিরোধঃ

ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচের কিছু মুখ পোকামাকড় ও রোগ আক্রমণ হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে আছে জাব পোকা,থ্রিপস, পোকা, লালমাকড়, এ্যানথ্রাকনোজ রোগ, ব্লাইট রোগ ইত্যাদি। এসব রোগে আক্রান্ত হলেন নিকটস্থ কৃষি কর্মীর সাথে পরামর্শ করে অনুমোদিত বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

ক্যাপসিকাম খাওয়ার উপকারিতাঃ

  • ক্যাপসিকাম যে কোন ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়, মাইগ্রেন, সাইনা্‌স, ইনফেকশন দাঁতে ব্যথা অস্টিঅথাইটিস ইত্যাদি ব্যথা দূর করতে কাজ করে ক্যাপসিকাম।
  • সি সিকনেস(সমুদ্রে যাওয়ার কারণে তৈরি অসুস্থতা) ম্যালেরিয়া জ্বর ইত্যাদি রোধে ক্যাপসিকাম বেশ কার্যকর।
  • চামড়া পরিষ্কার রাখতে ক্যাপসিকাম বেশ উপকারী এটি চামড়ার রেশ হওয়া ও ব্রণ প্রতিরোধ করে।
  • ক্যাপসিকাম এর ক্যাপসাইনিসক নামক উপাদান ডিএনএ এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানের সংযুক্ত হতে বাধা দেয় এভাবে এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।
  • এতে এলক্যালয়েড, ফ্লোবোনেড, ক্যানিন ইত্যাদি পাওয়া যায়। অ্যালকালয়েড এন্টি ইনফ্লু মেটরি ও এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। আন্ত্রিক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
  • ক্যাপসিকাম দেহের বাড়টিক্যালরি পূরণে কাজ করে ফলে উচ্চ চর্বি থেকে যে ওজন বৃদ্ধি পায় তা কমতে সাহায্য করে।
  • ক্যাপসিকামের ভিটামিন সি মস্তিষ্কের টিস্যুকে পূর্ণরূপ জীবিত করে দেহের হাড়কে সুগঠিত করে।

ক্যাপসিকাম এর পুষ্টিগুণঃ

ক্যাপসিকাম সাধারণত তিন রকমের হয়ে থাকে। লাল সবুজ রংয়ের ক্যাপসিকাম সবার নজর কাড়ে আসুন জেনে নেই ক্যাপসিকামের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে-

লাল ক্যাপসিকামঃ

লাল ক্যাপসিকামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিমাণও বেশি থাকে। লাল ক্যাপসিকাম খেলে ত্বকের স্বাভাবিকতা বজায় থাকে। চুলের সৌন্দর্য বাড়ে চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং এতে কোলেস্টেরল কম থাকায় এটি মোটা হওয়ার প্রবণতা কমায়।

সবুজ ক্যাপসিকামঃ

একটু অল্প বয়সীদের জন্য উপকারী। এতে ক্যাপশাইনিস নামক এক ধরনের উপাদান থাকে যা ডি এন এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানের সংযুক্ত হওয়াতে বাধা দেয়। এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে এছাড়া এই ক্যাপসিকাম মাইগ্রেন সাইনাস সংক্রমণ দাঁতে ব্যথা অ্যান্টি ওআর্থারাইটিস ইত্যাদি ব্যথা দূর করে।

হলুদ ক্যাপসিকামঃ

হলুদ ক্যাপসিকাম রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এতে ফ্রি মেডিকেলের সঙ্গে লড়াই করে এবং সেল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া রোধ করে। শরীর থেকে টক্সিন বের করে। এছাড়া হজম শক্তি বাড়ায় কোলেস্টেরল কমায় এবং উচ্চ রক্তচাপ কমায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

আরো পড়ুনঃ১২ টি উপায়ে সন্তান হবে বুদ্ধিমান ও মেধাবি

উপসংহারঃ ক্যাপসিকাম খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, ক্যাপসিকাম এর উপকারিতা এতে মোটাবলিজম প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পায়। ক্যালোরি পড়ানোর পাশাপাশি এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে দেয় না ভিটামিন এ এবং সি সমৃদ্ধ ক্যাপসিকাম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর খুব ভালো উৎস। এর পাশাপাশি হৃদরোগ হাঁপানি এবং সানি প্রতিরোধ এটি খুব উপকারী। আপনারা যারা আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি পড়েছেন তারা বুঝতে পারবেন ক্যাপসিকাম খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। এতক্ষন আমাদের সঙ্গে থেকে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url