জুম্মার দিনের আমল ফজিলত ও সুন্নাহ

 প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা আলোচনা করব জুম্মার দিনের আমল ফজিলত ও সুন্নাহ সম্পর্কে। মহান রাব্বুল আলামিন শুক্রবার দিন পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এই দিন জুম্মার দিন। শুক্রবারের এই দিনেই আবার পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। আল্লাহর সৃষ্টি নেয়ামতের মধ্যে শুক্রবারের দিনটি একটি বড় নেয়ামত। জুম্মার দিনের ফজিলত পূর্ণ হওয়ার কারণে তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমল। আসুন জেনে নেওয়া যাক জুম্মার নামাজের জুম্মার দিনের আমল ফজিলত ও সুন্নাহ সম্পর্কে-

জুম্মার দিনের আমল ফজিলত ও সুন্নাহ

আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন জুম্মার নামাজের আমল ফজিলত ও সুন্নাহ সম্পর্কে। সেজন্য আজকে আপনাদের জানাবো জুম্মার নামাজের আমল ফজিলত ও সুন্নাহ সম্পর্কে। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

পেইজ সূচিপত্রঃ জুম্মার দিনের আমল ফজিলত ও সুন্নাহ

  •  ভূমিকা
  • জুমার দিনের আমল ও ফজিলত
  • জুম্মার দিনের আমল 
  • বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা
  •  জুম্মার দিনের নিষিদ্ধ কাজ
  • জুম্মার দিনের সুন্নাহ
  • জুম্মার দিনের ঘটনা
  • উপসংহার

ভূমিকাঃ

আল্লাহতালা বলেন, জুম্মার দিন যে ব্যক্তি ফজর হইতে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করবে এবং সুন্নাহ গুলো সব মেনে চলবে সে যেন আমার স্মরণ হইবে। জুম্মার দিনের একটি ইসলামের বিধি বিধান। হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জামাতের ফরজ গোসল করে সবার আগে মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি উট কুরবানী করল।

 দ্বিতীয় যে ব্যক্তি সবার আগে মসজিদে প্রবেশ করবে সে যেন একটি গরু কোরবানি করলো। তৃতীয় যে ব্যক্তি সবার আগে মসজিদে প্রবেশ করবে সে যেন একটি ছাগল কোরবানি করলো। চতুর্থ যে ব্যক্তি সবার আগে মসজিদে প্রবেশ করবে সে যেন মুরগি কোরবানি করলো। পঞ্চম যে ব্যক্তি সবার আগে মসজিদে প্রবেশ করবে সে যেন ডিম কোরবানি করলো। নিম্নে জুম্মার নামাজের সুন্নাহ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

জুম্মার দিনের আমল ও ফজিলতঃ

পবিত্র জুম্মা এবং জুম্মার রাত প্রত্যেক মুসলমানের জীবনে একটি তাৎপর্যপূর্ণ রাত। এবং প্রত্যেক মুসলমানের উচিত এই তাৎপর্যপূর্ণ রাজ স্বীকার করা। সপ্তাহিক ঈদের দিন বলতে শুক্রবার কে বোঝায়। আমরা মুসলমান কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা জুম্মার দিনের আমল ফজিলত সম্পর্কে। তাই আমাদের সকলকেই জানতে হবে জুম্মার দিনের আমল ও ফজিলত সম্পর্কে। 

শুক্রবারের তাৎপর্য আমল ও ফজিলত বসার জন্য খুব বেশি জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না। জুম্মার সোয়াব দুই ঈদের সমতুল্য। মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে জুম্মার নামে একটি সূরা নাযিল করেছেন। কারণ শুক্রবার আল্লাহর কাছে একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এটি আমাদের জুম্মার দিবসের উপকারিতা ও গুরুত্ব বুঝতে সাহায্য করে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা'আলা ঘোষণা করেন" যখন জুম্মার আযান দেয় তখন তোমরা মসজিদে যাও এবং জুম্মার নামাজ আদায় করো, এবং তোমরা আমাকে স্মরণ করো এবং যাবতীয় কাজ ত্যাগ কর এতে তোমরা উপকৃত হবে"

রাসুল সাঃ এর ভাষায়- শুক্রবার হচ্ছে ঈদের দিন । ইবনে মাজহা লিখেছেন, করিম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম অন্য এক হাদিসে দাবী করেছেন - শুক্রবার সূর্য উদিত হওয়ার মধ্যে সবচেয়ে ভালো দিন এই দিনে হযরত আদম আলাই সাল্লাম কে তৈরি করা হয়েছিল। তিনি এই দিনে জান্নাতে প্রবেশ করেন এবং এই দিনেই জান্নাত থেকে নির্বাসিত হন। আর এই শুক্রবারের দিনেই কিয়ামত সংগঠিত হবে। 

জুম্মার দিনের আমলঃ

জুম্মার দিনে নানা কাজ আছে তবে কয়েকটি কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেগুলো না করলেই নয়। তাই অবশ্যই আমাদের জুম্মার দিনের এই আমল গুলো পালন করা উচিত। নিম্নে জুম্মার দিনের আমল গুলো তুলে ধরা হলো-

ফজরের সালাত একসাথে পড়া প্রথম জুম্মার সুন্নত। ফজরের নামাজ ও এশার নামাজ এই দুইটি নামাজ মুনাফিকদের জন্য খুব চ্যালেঞ্জের একটি সময়। 

মেসওয়াক করা নবীর দ্বিতীয় সুন্নত। মেসওয়াক করলে দাগিন হবে এবং আল্লাহ খুশি হবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর মতে আল্লাহ বলেন যদি আমার বান্দার কষ্ট না হতো তবে আমি প্রত্যেক সালাতের পূর্বে মেসওয়াকের আদেশ দিতাম। মেসওয়াক করার মাধ্যমে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ইন্তেকাল করেছেন।

তেল মালিশ করা, নবীজি তেল দিয়ে দাড়ি ও শরীর মালিশ করতেন। শরীর যাতে সুস্থ থাকে সেজন্য শুক্রবারের দিন অতিরিক্ত তেল মালিশ করা উচিত।

শুক্রবারে সুগন্ধি লাগানো সুন্নত। মহানবী সাঃ বলেন আমার কাছে কয়েকটি জিনিস খুব প্রিয় এক হল নারীরা, দুই সুগন্ধি কারণ আমাকে কেউ যদি সুগন্ধি উপহার দিত আমি সেটা ফেরত দিতাম না। 

শুক্রবারের দিন জুম্মার নামাজের সময় একেবারে নতুন কাপড় পড়ে নামাজ পড়তে যাওয়া, এটি একটি উত্তম ইবাদত । যেহেতু মহান রাব্বুল আলামিন সুন্দর তাই তিনি সুন্দরকে ভালোবাসেন। 

শুক্রবারের দিন বেশি বেশি করে সূরা তাওয়াফ তেলাওয়াত করবেন।

রাসুল সাঃ এরশাদ করেন তোমরা জুম্মার দিনে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো কেননা তোমাদের পাট ক্ষেতের দুরুদ আমার সামনে পেশ করা হবে। (আবু দাউদ হাদিস নম্বর ১০৪৭)

এমনিতেই তিরমিজি শরীফের হাদিস অনুযায়ী আমরা জানতে পারি যে ব্যক্তি দরুদ পাঠ করে আল্লাহতালার উপর 10 টি রহমত নাযিল করবেন সুতরাং আমাদের জুম্মার দিন অন্যান্য আমলের সাথে সাথে বেশি বেশি করে দুরুদ পাঠ করতে হবে।

জুম্মার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিবেচনা করে প্রতিটি মুসলিমের রচিতে এই দিনটিকে কাজে লাগানো।

বেশি বেশি দরুদ পাঠ করাঃ

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর উপর বেশি বেশি দুরুদ পাঠ করার জুম্মার দিনের ফজিলতপূর্ণ আরেক আমল। আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেন দ্বীন সমূহের মধ্যে জুম্মার দিনে সর্বোত্তম ওই দিনে আদম আলাই সাল্লাম কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনেই সিংগাই ফু দেওয়া হবে। এই দিনে সমস্ত সৃষ্টিকে বেহুশ করা হবে। অতএব তোমরা এই দিনে আমার উপর অধিক পরিমাণে দুরুদ পাঠ করো কেননা তোমাদের দুধ আমার সম্মুখে পেশ করা হয়ে থাকে। 

জুম্মার দিনের নিষিদ্ধ কাজঃ

জুম্মার দিনে মূলত আযানের পর থেকে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়টিতে কিছু ফরজ বিধান রয়েছে। এ সময়টিতে কিছু বিধান মেনে চলতে হবে শরীয়ত বহি ভূত কোন কাজ করা যাবে না। যেমন আজান হয়ে যাওয়ার পর ব্যবসা বা অন্যর্থ্য কাজে ব্যস্ত থাকা। উপস্থিত মুসল্লিদের জন্য খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। তাই খুতবা চলাকালে নিরর্থ কাজে লিপ্ত থাকা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়।

, হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু বলেন, হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন জুমার দিন খুতবা প্রদানের সময় যদি তোমার সঙ্গীকে তুমি চুপ করে বল তখন তুমি অনর্থক কথাই বললে।(সহীহ বুখারী)

বর্ণিত হাদিসের মাধ্যমে সুধীরভাবে প্রমাণ হয় খুতবার সময় চুপচাপ ভাবে খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব এবং কথাবার্তা বলা হারাম। অনুরূপ খুতবার সময় সুন্নত নফল নামাজ পড়া বৈধ নয়। অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যখন ইমাম খুতবার জন্য বের হবেন তখন নামাজ পড়বেন না কথাও বলবেন না।

বিকাশ শাস্ত্রের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ ফাতাওয়ায়ে স্বামীতে একটি মূলনীতি উল্লেখ হয়েছে, এসব কর্ম নামাজের মধ্যে হারাম তা খুতবা চলাকালীন সময় ও হারাম যেমন কথাবাত্রা বলা পানাহার করা ইত্যাদি। 

জুম্মার দিনের সুন্নাহঃ

জুম্মার দিনে কয়েকটি সুন্নাহ কাজ রয়েছে। যেগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো-

  • ফজরের নামাজের জামাত আদায় করা
  • মেসওয়াক করা
  • জাইতুল তেল ব্যবহার করা
  • সুগন্ধি ব্যবহার
  • পরিষ্কার জামা পরিধান
  • দুরুদ পাঠ করা
  •  সুরা কাওয়াফ তেলাওয়াত করা
  • নফল নামাজ দুই রাকাত পড়া
  • মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা 
  • দোয়া করা
  • মসজিদের সবার আগে প্রবেশ করা
  • হাত ও পায়ের নখ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা
  • মসজিদে পায়ে হেঁটে যাওয়া
  • ঘাড় দিঙ্গে সামনে না যাওয়া
  • হাদিস পাঠ করলে হাদিস পাঠ সোনা মনোযোগ সহকারে

জুম্মার দিনের ঘটনাঃ

শুক্রবারে কি ঘটেছিল তা নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেকেই কৌতুহলী আমরা অনেকেই হয়তো জানি না শুক্রবারের দিন কি ঘটেছিল। শুক্রবারের দিন অনেক কিছু ঘটেছে। নিম্নে শুক্রবার এর ঘটনাগুলো তুলে ধরা হলো-

প্রথম ঘটনাঃ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন -নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম আমার হাত ধরে এরশাদ করেন আল্লাহ তাআলা শনিবার দিন জমিন সৃষ্টি করেছেন। রবিবারের সৃষ্টি করেছেন পাহাড় পর্বতমালা। সোমবারে সৃষ্টি করেছেন গাছপালা। যত মন্দ জিনিসগুলো রয়েছে সেগুলো মঙ্গলবারে সৃষ্টি করেছেন। বুধবারের দিন তিনি আলো বা জ্যোতি তৈরি করেছেন। আর বৃহস্পতিবারের দিন তিনি জীবজন্তু ও প্রাণী জগতকে সৃষ্টি করে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এবং জুম্মার দিনের সর্বশেষ সময় আসরের পর মাগরিবের পূর্ব মুহূর্ত সর্বশেষ সৃষ্টি হিসেবে তিনি আদম আলাইহি সাল্লামকে সৃষ্টি করেছেন। 

উল্লেখিত হাদিস থেকে আমরা অনুমান করতে পারি যে, শুক্রবারে আল্লাহ মহাবিশ্ব এবং আদমকে সৃষ্টি করেছেন, শেষ বিচার শুক্রবার হবে এবং গ্রহটি শুক্রবারেই ধ্বংস হবে।

দ্বিতীয় ঘটনাঃ ছয় দিনে আল্লাহ আকাশ পৃথিবী এবং সমস্ত গ্রহ উপগ্রহ তৈরি করেছেন। এর প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা'আলা ঘোষণা করেন" তোমাদের রব আল্লাহ মাত্র ছয় দিনে তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। এরপর তিনি সিংহাসনে আরোহন করেন। তিনি দিনকে এমন ভাবে রাতের সাথে বেষ্টন করেছেন যেদিন রাতের দিকে চলে যায়। তিনি আদেশ দিয়েছিলেন এবং চাঁদ সূর্য তারা তৈরি করা হয়েছিল। স্বীকার করুন যে তিনি মহান যিনি আদেশ করেন এবং সৃষ্টি করেন। মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ। 

উপসংহারঃ জুম্মার দিনের আমল ফজিলত ও সুন্নাহ

পরিশেষে আমি বলতে চাই যে জুমার দিন মুসলিম উম্মার সাপ্তাহিক উৎসব ও ইবাদতের দিন। জুমার দিনটিকে সাপ্তাহিক ঈদের দিনও বলা হয়। সাধারণ অর্থে জুমাবারকে জুমার দিন বলা হয়। জুমা আরবি শব্দ আবার শুক্রবারকে এই আমল জুমা বলা হয়। প্রতি শুক্রবার দিনে প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানরা এক নির্দিষ্ট সময়ে মসজিদে একত্র হয়ে জামাতের সঙ্গে যে নামাজ ফজর রূপে আদায় করে সে নামাজকে জুমার নামাজ বলে আর সেদিনকে জুমার দিন বলে। আপনারা যদি আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েন তবে জানতে পারবেন জুম্মার দিনের আমল ফজিলত ও সুন্নাহ সম্পর্কে। আমাদের সঙ্গে এতক্ষণ থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url