এইডস কি, এইডস কিভাবে হয় - এইডস হলে করণীয়
আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য বিষয়ক সংকট গুলোর একটি হল এইডস। আমরা অনেকেই জানিনা এইডস কি, এইডস কিভাবে হয় - এইডস হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে আজকে আমরা আপনাদের জানাবো। প্রতিদিন এইডসে ঘরে আক্রান্ত হচ্ছেন সাড়ে ৫ হাজার মানুষ। এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ মিলিয়ন মানুষ এ প্রাণঘাতী রোগে মারা গেছেন। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক এইডস কি, এইডস কিভাবে হয় - এইডস হলে করনীয় কি সে সম্পর্কে।
১৯৮০ সালে প্রথম এই ভাইরাস ছড়াতে শুরু করে বলে জানা যায়। প্রাণঘাতী ব্যাধি এইডস সম্পর্কে সবারই কম বেশি ভুল ধারণা আছে। এ কারণেই এইডস রোগীকে খারাপ চোখে দেখে সমজ। সবার ধারণা থাকে এই রোগটি হওয়ার মূল কারণ হলো অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক কিভাবে হয় - এ এইটস হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে।
পেইজ সূচিপত্রঃ এইডস কি, এইডস কিভাবে হয় - এইডস হলে করণীয়
এইডস কিঃ
এইড হলো এক ধরনের ব্যাধি, যাকে মরণব্যাধিও বলা হয়।human immunodeficiency virus বা hiv নামক ভাইরাস এই রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। এইচআইভি এমনই ভয়ংকর জাতের ভাইরাস যে এ ভাইরাস মানুষের শরীরে অনুপ্রবেশ করার পর তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়। ফলে এইচআইভি আক্রান্ত রোগী যেকোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারে এবং যা তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়।
একটি মরণব্যাধি হওয়ায় এর সম্পর্কে মানুষের রয়েছে ব্যাপক ভীতি। আর এর বিপরীতে তেমনি রয়েছে ব্যাপক ধারণা। এইচআইভি বহনকারী ব্যক্তি বা এইড সং আক্রান্ত রোগীকে একই সঙ্গে সামাজিকভাবেও অব্যনীয় দুর্ভোগ হয়। এর সম্পর্কে সচেতনতার অভাবে এবং অযৌক্তিক ঘৃণার কারণে দুঃখজনক আর অমানবিক অজ্ঞতার মাধ্যমে জীবন দিতে হয়েছে অনেক এইডস রোগীকে।
কিন্তু বাস্তব হলো এইচআইভি নয় এবং শুধুমাত্র স্পর্শের মাধ্যমে এই এইচআইভি এক শরীর থেকে অন্য শরীরে স্থানান্তরিত হতে পারেনা। এ বিচারে এইচআইভি বহনকারী ব্যক্তি অন্য সাধারণ ব্যক্তিদের মতো স্বাভাবিক আচরণ প্রত্যাশা করতে পারেন।
এইডস এর উৎপত্তিঃ
১৯২০ সালে আফ্রিকার বেলজিয়াম কংগের রাজধানী কিংস শাসন হলো এইডস এর উৎপত্তিস্থল। এইডস এর উৎপত্তিস্থলে ১৯২০ সালের শুরুর দিকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। এইডসের উৎপত্তিস্থল এত বছর পর খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। এইডস এর উৎপত্তিস্থল থেকে এই এইডস দিন দিন পুরো বিশ্ব ছড়িয়ে পড়েছে। এইডসের উৎপত্তিস্থল কিংস শসা থেকে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে।
এইডস কেন হয়ঃ
শারীরিক সম্পর্ক ছাড়াও নানারকম কারণে এইচআইভি পজেটিভ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এইডস এর জন্য দায়ী হিউম্যান ইমিউনো ডেফিশিয়েন্সি ভাইরাস এইচআইভি নামের রেট্রো ভাইরাস টি মানুষের রক্তে ও অন্যান্য দেহের রসেই একমাত্র বেঁচে থাকে এই ভাইরাস।। রোগীর দেহ থেকে ছড়ায় রক্ত বীর্যের মাধ্যমে বীর্যের মাধ্যমে সংক্রমিত হয় বলে এই অসুখকে সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ হিসেবে গণ্য করা হয়।
যদিও এইচআইভি তে আক্রান্তদের বাঁচাতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের চেষ্টার শেষ নেই চলছে একের পর এক গবেষণা। এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এমন কি সর্দি কাশি কেউ আটকাতে পারেনা শরীর ফলে এক ওয়াট ইমো নো ডেফিসিয়েন্সি সিনডেম বা এইডসের প্রভাবে মৃত্যু অবধারিত হয়ে ওঠে।
এইডস কিভাবে ছড়ায়ঃ
ইনজেকশন নেওয়ার সময় নতুন সিরিঞ্জ ও সুইচ ব্যবহার করা না হলে দ্রুত ওই ভাইরাস অন্যের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
এর চেয়ে আক্রান্ত পশতির সন্তানের শরীরেও এইডস হতে পারে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুর দেহে এই ভাইরাস প্রবেশ করে। ইউনিসেফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বে প্রতি দুই মিনিটে একটি শিশু আক্রান্ত হচ্ছে।
আক্রান্তদের মারির ক্ষত ও দেহের ক্ষত থেকে নিঃসৃত লালা ও রস থেকে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।
আধুনিক কিছু ঔষধে এই রোগে রোগীর জীবন কিছুদিন বাড়ানো গেলেও সেসব চিকিৎসা পদ্ধতি মোটেও মধ্যবিত্তের আয়ত্তে নেই।
কনডম ব্যবহার করলে এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার কোন সম্ভাবনা হবে নাএমন ধারণা ও ঠিক নয়। কারণ আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌন মিলনের সময় কনডম ফুটো হয়ে গেলে আপনি বিপদে পড়তে পারেন।
নারী বা পুরুষ কারো যদি শরীরে এই ভাইরাস থাকে তাহলে জনসম্পর্কের ফলে অন্য জনের শরীরে সহজে প্রবেশ করবে এই রেট্রো ভাইরাস।
এইচআইভি বহনকারী ব্যক্তির শরীরে রক্ত অন্য কোন শরীরে প্রবেশ করালে।
এইচআইভি বহনকারী ব্যক্তির সঙ্গে অরক্ষিত অবস্থায় স্ত্রীর যৌনি বা মলদ্বার বা মুখে যৌন সঙ্গম করলে।
কি উপায়ে এইডস ছাড়াই নাঃ
এইচআইভি বহনকারী ব্যক্তির সঙ্গে যে সকল সম্পর্ক করলে এই সার্ভিস সংক্রমিত হতে পারে তা নিম্নে তুলে ধরা হলো-
এইচআইভি মুক্ত সিরিজ ব্যবহারে রক্তদান করলে।
এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি কারো শরীরের উপর হাসি কাশি দিলে চোখের জল থুথু বা ঘাম ফেললে নাক ঝাললে এগুলো থেকে এইডস ছড়াই না।
একই আসবাবপত্র ব্যবহার করলে।
একই পুকুর গোসলখানা পায়খানা তোয়ালে লুঙ্গি গামছা ব্যবহার করলে।
এইচআইভি বহনকারী ব্যক্তির রান্না করা খাবার খেলে।
একই থালাবাসন কাপ প্যারিস তৈজসপত্র ব্যবহার করলে।
মশা মাছি বা পোকামাকড় কিংবা পশু কামড়ালে।
একই টেলিফোন যন্ত্রপাতি ইত্যাদি ব্যবহার করলে
একই বিছানা ব্যবহার করলে একই বাড়িতে অবস্থান করলে
এগুলো থেকে এইডস ছড়ায় না।
এইডস প্রতিরোধে করণীয়ঃ
আপনি যদি এইচআইভিতে ভাবেন তাহলে অবশ্যই সতর্ক থাকবেন। আপনার কারণে যাতে পরিবারে অন্য কেউ মারাত্মক এই রোগে আক্রান্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন এর পাশাপাশি নিয়মিত চেকআপ করুন।
প্রতিবার শারীরিক সম্পর্কের সময় নতুন কনডম ব্যবহার করুন।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে পুরুষের সুন্নতে খাতনা এই সার্ভিস সংক্রমণের যোগী কমাতে সাহায্য করে।
ইনজেকশন গ্রহণের সময় পরিষ্কার ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
আপনি যদি এই সাইজের সংস্পর্শে ভুল করেও আসেন তাহলে পোস্ট এক্সপ্রজার প্রফিল্যাকিস ব্যবহার করুন। এক্ষেত্রে প্রথম ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পিইউপি গ্রহণ করার মাধ্যমে এইচআইভি তে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে 28 দিন ওষুধ খেতে হবে।
আপনার যদি এইচআইভি থাকে তবে আপনার যৌনসঙ্গীকে আগেই জানান। না হলে আপনার ভুলে তিনিও আক্রান্ত হতে পারেন।
এইচআইভি পজেটিভ অবস্থায় আপনি যদি গর্ভধারণ করেন তাহলে শিশুর শরীরেও এই সংক্রমণ ঘটতে পারে। তবে আপনি যদি গর্ভাবস্থায় চিকিৎসা গ্রহণ শুরু করেন তাহলে আপনিও শিশু উভয়ই সুস্থ থাকবেন।
এইডস এর কোন প্রতিশোধক বা টিকা আবিষ্কার হয়নি এর চিকিৎসা বের হয়েছে তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাছাড়া এই চিকিৎসা শুধু এইডস আক্রান্তর সময়কে বিলম্বিত করে এই পুরোপুরি নিরাময় করেনা। তাই এখন পর্যন্ত এর থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হল এইডস সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা এবং সে অনুযায়ী সচেতন হয়ে নিরাপদ জীবন যাপন করা। এক্ষেত্রে ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
কারো নিজের শরীরে এ ভাইরাস পাওয়া গেলেঃ
মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে সহজভাবে এর মোকাবেলা করতে হবে। দুশ্চিন্তায় এড়িয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে হবে। এ সময় ভালো থাকার জন্য ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। পুষ্টিকর ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। নিজের টুথব্রাশ রেজার ব্লেড খোর অন্যকে ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না এতে করে যিনি এগুলো ব্যবহার করবেন তারও এইডস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
স্বাভাবিক কাজকর্ম বিশ্রামও প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে। যৌন মিলনের সময় অবশ্যই কনডম ব্যবহার করতে হবে। মহিলাদের ক্ষেত্রে বাচ্চা নিতে চাইলে বা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে চাইলে সন্তান আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাই এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত।
মশা দ্বারা কি এইডস ছাড়াইঃ
মশা একই ঘরে থাকা মানুষজনের কামরাতে থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ে যদি অন্য অন্য ব্যক্তিকে কামড়ায় তাহলে এইডস ছড়াতে পারে সেটি ভুল ধারণা। যৌন মিলনের পর স্নান করলে এইচআইভি ভাইরাস পরিষ্কার হয় এই ধারণায় একেবারে ভুল। যদিও রক্তদারা এই ভাইরাস ছড়ায় কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে মশা বা রক্ত খায় এমন কীট দ্বারা আপনি আক্রান্ত হবেন না।
তার দুটি কারণ একটি হলো একজনের শরীর থেকে রক্ত খেয়ে শেষ রক্ত দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি সরে ইনজেকশন দেওয়ার মতো করে রক্ত ঢুকিয়ে দেয় না। আর মশা বা অন্য কিটের শরীরে এই জীবাণু খুব সামান্য সময় বেঁচে থাকে। সেজন্য মশা দ্বারা এইডস ছড়াই এ কথাটি ভুল।
এইডস হলে কিভাবে বুঝবেনঃ
যদি এই আইডিতে আক্রান্ত হন তবে সংক্রমণের দুই তিন মাসের মধ্যে কিছু কিছু প্রাথমিক লক্ষণ ধরা পড়তে শুরু করে। ব্যক্তিবেদে লক্ষণগুলো আলাদা হতে পারে আর সংক্রমণের ছয় মাস পর ওয়েস্টার্ন ব্লাড টেস্ট করালে টেস্টের রিপোর্ট সঠিক হবে। আপনি ছয় সপ্তাহ পর টেস্টের কথা উল্লেখ করেছেন ছয় সপ্তাহ পর করালেন 90 শতাংশ ক্ষেত্রে পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়া যেতে পারে। নিজেকে শতভাগ নিরাপদ মনে করতে হলে ছয় মাস পর টেস্ট করাতে হবে।
উপসংহারঃ এইডস কি, এইডস কিভাবে হয় - এইডস হলে করণীয়
পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, এইডস কি, এইডস কিভাবে হয় - এইডস হলে করণীয় সে সম্পর্কে উপরে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আপনারা যদি মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন আমাদের আজকের পোস্ট সম্পর্কে। আমাদের আজকের পোস্টটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তবে আপনার বন্ধুদের মাঝে পোস্টটি শেয়ার করুন।
ধৈর্য সহকারে এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থেকে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। আর্টিকেলের মাঝে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তবে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং আপনার মহামূল্যবান কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাবেন। এরকম আরো আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url