বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার
আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আজকে আপনাদের জানাবো বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ চিকিৎসাও প্রতিকার সম্পর্কে। আমরা অনেকেই ডেঙ্গু রোগীকে কখন ও কোন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাবেন তা নিয়ে চিন্তিত থাকি ফলে চিকিৎসা নিতে দেরি হয় যার কারণে বেশিরভাগই রোগী খারাপের দিকে চলে যায়। আবার আমরা অনেকেই জানিনা বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে। সেজন্য আজকে আপনাদের জানাবো বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে।
সর্বপ্রথম ডেঙ্গুভাইরাস আবিষ্কার করেছিলেন ১৯৪৩ সালে রেন কিমুরা ও সুসুমু হোত্তা। প্রথম ডেঙ্গু ভাইরাস কে বিছিন্ন করেছিলেন তারা। এই দুই বিজ্ঞানী জাপানের নাগা সাক্ষীতে ১৯৪৩ সালে মহামারীর সময় রোগীদের রক্তের নমুনা নিয়ে অধ্যায়ন করেছিলেন। সেজন্য আজকে আপনাদের জানাবো বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে।
পেইজ সূচিপত্রঃ বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার
ভূমিকা
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা
ডেঙ্গু জ্বরের প্রকারভেদ
ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকার
সতর্কতা
উপসংহার
ভূমিকাঃ
ডেঙ্গু জ্বর গ্রীষ্ম মন্ডলী অঞ্চলের একটি সাধারণ ভাইরাস সংক্রমণ যা মশার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। শহর অঞ্চলে ডেঙ্গু জ্বর বেশি দেখা যায় তার কারণ হলো অনেক মানুষের আগমন অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট ও বাড়ি নির্মাণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বজুড়ে মানুষ ও মশার চলমান ভ্রমণের ফলে শহরে ডেঙ্গু জ্বর ৩০ গুন বেড়েছে। ১৯৬০-২০২২ সালের মধ্যে শহরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অধিক হারে বেড়েছে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণঃ
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ গুলো সাধারণত সংক্রমনের তিন থেকে ১৪ দিন পর শুরু হয়।। উচ্চমাত্রার জ্বর মাথাব্যথা বমি বমি ভাব বেশিতে ব্যথা ও ত্বকের ফুসকুড়ি ডেঙ্গু জ্বরের অন্যতম লক্ষণ। ডেঙ্গুর লক্ষণ গুলো সাধারণত দুই থেকে সাত দিন স্থায়ী হয়। বেশিরভাগ মানুষই এক সপ্তাহ পরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে গুরুতর ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে আবার মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি হয় যেখানে প্লাজমালিক তরল জমা শ্বাসকষ্ট মারাত্মক রক্তপাত বা অঙ্গ দুর্বলতার কারণে রক্তচাপ বিপদজনক মাত্রায় নেমে যেতে পারে।
সাধারণত ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে এক শতাংশের কম ক্ষেত্রে মারাত্মক হয় অন্যদিকে ডেঙ্গু হেমরজিক জ্বর ২.৫ শতাংশের ক্ষেত্রে মারাত্মক হয়। যদি ডেঙ্গু হেমোলজিক জ্বরের চিকিৎসা না করা হয় তাহলে মৃত্যুহার ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হয়।
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসাঃ
সাধারণত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে বলা হয় দুই থেকে তিন দিন অপেক্ষা করার জন্য। কিন্তু বর্তমানে জ্বর আসার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরে চিকিৎসক বাড়িতে বিশ্রাম থাকার পরামর্শ দেন। সঙ্গে জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল সিরাপ দেওয়া হয় বয়সও ওজন অনুযায়ী। বছর পরিমাণে তরল খাবার খাওয়ানোর জন্য বলা হয় শিশুকে।
এরপর চিকিৎসক রক্ত পরীক্ষার জন্য উপদেশ দেন ও তিনদিন পর আসতে বলেন যদি না অন্য কোন উপসর্গ চলে আসে। মাঝারি বা তীব্র ডেঙ্গু জ্বরের সাধারণত হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এ ক্ষেত্রে দেখা যায় রক্তচাপের পরিমাণ কমে যায় প্লাসমা লিকেজ হয় বাচ্চার মধ্যে অস্থিরতা ও খেতে না পারার লক্ষণগুলো চলে আসে।
ঔষধ বা স্যালাইন এর মাধ্যমে শিশু অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসে। যেহেতু এটি ভাইরাস বাহিত রোগ তাই উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করা হয় রক্তক্ষরণ বেশি হলে তার জন্য প্রয়োজনে রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
অন্যজনের মতো প্যারাসিটামল দিয়ে জ্বর নামে রাখতে হবে। জন নামে একশো রাখলেই চলবে। 97 করার দরকার নেই। প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য ওষুধ ব্যবহার করা উচিত না। এনএসআইডি দ্রুত জ্বর নামে ঘাম ঝরিয়ে নিতে পারে কিডনির ক্ষতি করতে পারে। খাদ্যনালীতে রক্তক্ষরণ ত্বরান্বিত করে জীবনে ঝুঁকি ডেকে আনতে পারে। সাপোজিট নিলে শুধু প্যারাসিটামল অন্য কিছু নয়। করে প্রতিবারে ৫০০ মিলিগ্রাম প্যারাসিটামল খাওয়া উচিত তারপরেও ১০২ এর বেশি থাকলে একবারে তৎক্ষণাৎ ১০০০ মিলিগ্রাম প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে।
কয়েকদিন তিন লিটার পানি পান করতে হবে প্রয়োজনে স্যালাইন নিতে পারলে ভালো হবে।প্যারাসিটামল ও পানি ডেঙ্গুর আসল চিকিৎসা।
জ্বরের সময় ক্ষুধা মন্দা হয়, বমি লাগে। ফলের রস উপকারী পানি এবং অল্পতে বেশি ক্যালোরি পাওয়া সম্ভব। স্বাভাবিক খাবার খেতে হবে। ক্লাসিকাল ডেঙ্গু এবং গ্রেট এক হিমোরে জিকে এর চেয়ে বেশি কিছু লাগে না এবং বাসায় চিকিৎসা করা উচিত। দুই তে বাড়িতে সমস্যা হলে প্রথমদিকেই ধরতে না পারলে চিকিৎসা না দিলে গ্রেট-৩ বা গ্রেড-৪ অর্থাৎ শকে চলে যেতে পারে।
আসলে ডেঙ্গু চিকু শোকের দায়িত্ব একটাই তা হল শখ ঠেকানো। ব্লাড প্রেসার মনিটর করতে হবে যাতে পাল স্পেশাল ২০ এর বেশি থাকে। সিস্ট লীগ প্রেসার ৯০ এর বেশি রাখতে হবে। এটা করতে হলে পানি দিতে হবে স্যালাইন দিতে হবে। ব্লাড প্রেসার ও প্রস্রাবের এর পরিমাণ দেখে মনিটর করতে হবে।
গ্রেট ২ তে যদি এমন দেখা যায় পেটের ব্যথা কমছে না বা বমি হচ্ছে অথবা প্রেসার ঠিক থাকছে না তাহলে হাসপাতালে নিতে হবে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটা বেশি হয়। ইন্দমেথাসিন, ডাইক্লোফেনাক, সাপোজিটরি নিলেও এটা হয়।
ডেঙ্গু জ্বরের প্রকারভেদঃ
ডেঙ্গু জ্বরের ফেস গুলো সাধারণত তিনভাবে বিভক্ত। প্রথম হলো-ফ্রেবাইল বা জ্বরের ফেস, যা ২-৭ দিন স্থায়ী হয়। ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা হঠাৎই বেড়ে যায়.২-৫ দিনের মধ্যে শরীরের বেশিরভাগ অংশে লাল ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।
দ্বিতীয় হল, ক্রিটিকাল ফেইস-যা৪৮-৭২ ঘন্টা স্থায়ী থাকে। জ্বর খুব একটা থাকে না কিন্তু রোগী ক্লান্ত হয়ে পড়ে রক্ত কণিকার মধ্যে স্রোত কণিকা ও অনুচক্রিকা কমে যায়। হেমাটো ক্রিট বেড়ে যাই। তৃতীয় ও শেষটি হল কোন ভাল সেন্ট বা রোগ থেকে উন্নতি হওয়ার পর্যায়।
সাধারণ বা ক্লাসিকাল ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে জ্বর থাকে সাধারণত ২-৭ দিন পর্যন্ত। উপসর্গের মধ্যে বমি বমি ভাব খাওয়া উচিত শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশীতে তীব্র ব্যথা মাথাব্যথা অনুভূত হয়। এজন্য একে বলা হয় হাড্ডি ভাঙ্গা জ্বর।
মারাত্মক ডেঙ্গু জ্বর অভ্যন্তরীণ রক্তপাত ও অঙ্গ যেমন লিভার ও কিডনির ক্ষতি করতে পারে। রক্তচাপ বিপদজনক মাত্রায় নেমে যেতে পারে যার ফলে শখ হয় মারাত্মক ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুও হতে পারে। যেসব নারীরা গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন তাদের প্রসবের সময় শিশুর মধ্যে ভাইরাস ছড়াতে পারে।
আপনি যদি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন তবে আপনার শরীরে চতুর্থ দিনে ফুসকুড়ি দেখা যায়। এর সঙ্গে তীব্র পেট ব্যথা বমি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া হাত-পা ছেড়ে দেওয়া রক্তে অনুচক্রিকার মাত্রা অতিরিক্ত মাত্রায় কমে যাওয়া রক্তে বমি হওয়া দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তপাত কালো পায়খানা এগুলো তীব্র ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ বলে গণ্য হয়।
ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকারঃ
শিশুকে সবসময় মশারির মধ্যে ঘুম পাড়াতে হবে। এ সময় শিশুদের ফুলহাতা জামা কাপড় পরিয়ে রাখাটাই ভালো বাজারে এখন বিভিন্ন ধরনের মশা কামড় নিরোধক ক্রিম পাওয়া যায় যা ব্যবহার করতে পারেন। শিশুরা যেন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত না হয় তার প্রতিরোধে আসলে আমাদের করণীয় দুটি উপায় আছে। একটি হলো টিকা দেওয়া ও অন্যটি বাহকের বিস্তার রোধে।
ক্সিন বিশ্বে চলে এসেছে আমাদের দেশে এখনো সহজলভ্য হয়ে ওঠেনি এজন্য মশা বিস্তার রোধে প্রথম গুরুত্ব দেওয়া উচিত আপনার। সর্বোপরি বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন নারকেলের খোলস ইত্যাদিতে যেন পানি না জমতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন। ফ্রিজ বা এসির পানি যাতে না জমে সেটার ব্যবস্থা করুন। তৃতীয় ধাপের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নির্ভর করে সরকারি পর্যায়ে বা সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থার উপর।
সতর্কতাঃ
গৃহপালিত এ মশা ঘরে চৌকির নিচে পদ্মার ভাজে বেসিনের নিচে লুকিয়ে থাকে। বংশবিস্তার করে পানিতে। ছোট পাত্রে পাঁচ দিনের কম জমে থাকা পানিতে নর্দমায় নয় ডোবাই দিনের পর দিন জমে থাকা ময়লা পানিতে নয় নদীর সাগর বিলের পরিষ্কার বহমান পানিতে নয়। এই মশা বংশবিস্তার করে ফুলের টবের নিচের পানিতে, বৃষ্টির দিনে রাস্তার ধারে জমা পানি, নির্মাণ সামগ্রীতে থাকা পানি, পেপসির ক্যান, নারিকেলের খোলায় জমা পানিতে।
মশা মারতে স্প্রে করতে হবে ঘরের মধ্যে টেবিলের নিচে দরজার আড়ালে পর্দার ভাজে বেসিনের নিচে। সকালে দিনের কাজটা স্প্রে দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। কোন চেম্বারে কোচিং সেন্টারে বসে থাকতে ফুলহাতা কাপড় মজা পড়ে থাকুন। ঘরে মশার ওষুধের মেশিন রাখুন দিনের বেলায় মশারি দিয়ে ঘুমান। কারণ কারণ দিনের বেলায় ডেঙ্গু মশা বেশি কামড়ায়।
উপসংহারঃ বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার
পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে উপরে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সেজন্য ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে হাত পা ঢাকা পোশাক গায়ে দিয়ে স্কুলে পাঠানো উচিত কেউ যদি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয় তবে সেই ব্যক্তিকে সর্বদা মশারির ভেতরে রাখা উচিত এছাড়াও মশা নিধন করার স্প্রে কয়েল ধূপকাঠি ইত্যাদি ব্যবহার করুন।
মশাদের বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করাটা তেমন সহজসাধ্য নয় তবে নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য আমাদের সবাইকে বাড়ির চারপাশে মশাবদ্ধির স্থান টায়ার পরিত্যক্ত পাত্র ডাবের খোসা ইত্যাদি সবকিছু সরিয়ে রেখে দিতে হবে তথা বাসস্থানের আশেপাশে জমে থাকা জল নিষ্কাশন করে রাখতে হবে কয়েক সপ্তাহ পর পর কীটনাশক ও মশা নিধনকারীর রাসায়নিক ছড়িয়ে দিতে হবে।
আপনারা যারা এতক্ষন আমাদের এই পোস্টটি ধৈর্য সহকারে পড়েছেন তাদেরকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। এবং বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার এই পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে আপনারা আপনাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন এবং এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url