কিশোর কিশোরীদের বয়সন্ধিকাল কখন আসে

 আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আজকে আপনাদের জানাবো কিশোরীদের বসন্তকাল কখন আসে। বয়সন্ধিকাল ছেলে ও মেয়ে উভয়ের শরীর ও মনে নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটে। তেমনি তাদের চিন্তা চেতনায়ও দেখা দেয় ব্যাপক পরিবর্তন এবং তারা এসময় দ্রুত বেড়ে উঠতে থাকে। আজকে আমাদের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাবো কিশোর কিশোরীদের বয়সন্ধিকাল কখন আসে। জেনে নেওয়া যাক কিশোর কিশোরীদের বয়সন্ধিকাল কখন আসে।

কিশোর কিশোরীদের বয়সন্ধিকাল কখন আসে
শৈশব পেরিয়ে তারুণ্য পা রাখার আগে প্রতিটি ছেলে মেয়ের দেহে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় যা তাকে পরবর্তীতে প্রজনন লক্ষণ পূর্ণাঙ্গ পুরুষ বা নারীতে পরিণত হতে সাহায্য করে। সেজন্য আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাবো কিশোর-কিশোরীদের বয়সন্ধিকাল কখন আসে।

পেজ সূচিপত্রঃ কিশোর কিশরীদের বয়সন্ধিকাল কখন আসে

ভূমিকাঃ

শৈশব পেরিয়ে তারুণ্যে পা রাখার আগে প্রতিটি ছেলে মেয়ের দেহে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় যা তাকে পরবর্তীতে প্রজনন লক্ষণ পূর্ণাঙ্গ পুরুষ বা নারীতে পরিণত হতে সাহায্য করে। কিন্তু অজ্ঞতার কারণে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ এ বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখে না কিংবা ভুল ধারণার জন্ম দেয়।

আরো পড়ুনঃ ডিপ্রেশন থেকে নিজেকে ভালো রাখার উপায়

কোন ভাবেই তারা বুঝতে চান না যে এটা একটা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা যা পৃথিবীর প্রতি তিনি নারী পুরুষের জীবনে ঘটে থাকে। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক কিশোর-কিশোরীদের বয়সন্ধিকাল কখন আসে।

বয়সন্ধি কিঃ 

ছেলেদের ক্ষেত্রে সাধারণত ১২ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে পরিলক্ষিত হলেও মেয়েদের বেলায় পরিবর্তনের সময়কালটা কিছুটা আগে। সাধারণত ১১ থেকে ১২ বছর বয়সে একজন মেয়ে তার দেহে পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে তা ৮ থেকে ৯ বছরেও দেখা দিতে পারে অনেকের আবার কিছুটা দেরিতে যেমন ১২ বছর বয়স থেকে শারীরিক পরিবর্তন আসে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় দেহে বিশেষ হরমোন নিঃসরণ শুরু হওয়ার ফলেই এই শারীরিক পরিবর্তন আসতে শুরু করে।

বয়সন্ধিতে কিভাবে কিশোর কিশোরীদের দেহ ও মনে প্রভাব ফেলেঃ

ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের দেহে ও মনে বয়সন্ধি জনিত পরিবর্তনের প্রভাব বেশি। শৈশবের নির্ভেজাল সময় পেরিয়ে এসে হঠাৎ এই শারীরিক পরিবর্তন মোকাবেলার মানসিক শক্তি অর্জন করা অনেক মেয়ের জন্যই দূরহ হয়ে পড়ে। এর সঙ্গে যদি যোগ হয় রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থা তবে তা যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা। শারীরিক এই পরিবর্তন সম্পর্কে আগে থেকে পরিষ্কার কোন ধারণা না থাকাই বয়সন্ধির প্রথম দিকটাই এদেশের অধিকাংশ মেয়েদেরই বেশ বিব্রতকর সময় পার করতে হয়।

সহরাঞ্চলে এই বিষয়টা নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেলেও গ্রামীণ জনপদের অবস্থাটা এখনো শোচনীয়। এছাড়া এই সময়টাই ছেলে এবং মেয়ের উভয়েরই আচরণ এবং আবেগীয় পরিবর্তনগুলো লক্ষ্য করা যায়। এই সময়টাই ব্যক্তি নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করে বলে আত্মমর্যাদা দ্রত বেড়ে যায়। প্রতিক্রিয়া দেখানোটাও স্বাভাবিক আচরণে পরিণত হয়। এছাড়া অন্য কারো সাথে নিজের শারীরিক গঠনের তুলনা করে বা অন্যের আচরণ নকল করতে গিয়ে হতাশায় ডুবে যায় তারা।

একটি শিশু যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পথে এগিয়ে যায় এবং তার মাঝে কিছু শারীরিক ও মান সী উন্নয়ন ও পরিবর্তন লক্ষণীয় হয় তখন তাকে কৈশোর বা বয়সন্ধিকাল বলা হয়। কৈশোর বা বয়সন্ধিকাল বলা হয় বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে একটি শিশুর মধ্যে কিছু হরমোন জনিত পরিবর্তন সাধিত হয় যা তার শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের মাধ্যম প্রকাশ পায়।১০ থেকে ১৮ - ১৮ থেকে ২০ বছর সময়কে বয়সন্ধিকাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

আনন্দ রাগ দুঃখের মতো অনুভূতিগুলো তীব্রমাত্রায় দেখা যায়। আজ আনন্দ উল্লাস করলে আরেকদিন মনমরা ভাব থাকে। এ সময় তাদের মধ্যে হরমোনাল কারণে আবেগের প্রাবল্য দেখা দেয়। মোট সুইমিং হয় বা মন মেজাজ খুব দ্রুত উঠানামা করে। ছোট থেকে বড় হওয়ার এই সময়টাতে বড় ধরনের মানসিক ভাঙ্গা গড়ার মধ্যে দিতে হয় এই ছেলেমেয়েদের। শৈশবে তারা যেমন মা বাবা যা বলতো তাই করতো তাই ভাবতো কিন্তু এই বয় সন্ধির সময় তারা স্বাধীনভাবে সবকিছু ভাবতে শুরু করে।

 সে কি পড়বে কি খাবে কাদের সাথে মিশবে সেটা সে নিজে সিদ্ধান্ত নেই। যা তারা পরিবারের থেকে আলাদা হতে পারে এজন্য বাবা-মায়ের সাথে তাদের দূরত্ব তৈরি হতে থাকে ভালো মন্দের একটা কনসেপ্ট তৈরি হয় যদিও সেটাকে খুব পরিপক্ক বলা যাবে না।

বয়সন্ধিকাল কখন আসেঃ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ১০ বছর এবং ১৯ বছর বয়সের মাঝামাঝি সময়টাকে কৈশোর বলে।এর যে কোন এর সময় বয়সন্ধিকাল আসতে পারে এটা মূলত কৈশোর ও যৌবনের মধ্যবর্তী পর্যায়। ছেলেদের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকাল আসে ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে। মেয়েদের বয়সন্ধিকাল ছেলেদের চাইতে কিছুটা আগে শুরু হয়। মূলত  ১০ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে যেকোনো সময় তা হতে পারে। এ বয়সে মেয়েদের উচ্চতা বাড়ে। শরীরের বিভিন্ন অংশ স্ফীত হয়। মাসিক শুরু হয়।

তেমনি ছেলেদের ক্ষেত্রে এ সময় তাদের দেহের উচ্চতা দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে, গলার স্বর ভারী হয়ে আসে, কাধ চওড়া হয়। পেশি সুগঠিত হয়। মুখে দাড়ি গোঁফ উঠে সে সঙ্গে শরীরের নানা জায়গায় বিশেষ করে বুকে বাহু মূলে ও যৌনাঙ্গে লোম গজায়। এ সময়ে ছেলেরা একটু বেশি ঘামে। বয়ঃসন্ধির এই সময়টা ছেলে-মেয়ে উভয়ের প্রজনন ক্ষমতা বিকাশ হতে থাকে বলে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ হয়। অনেক সময় ঘুমের মধ্যে ছেলেদের বীর্যস্থলন হয়ে থাকে যা অস্বাভাবিক নয়। এটি বয়ঃসন্ধির একটি লক্ষণ।

আরো পড়ুনঃ মাথায় টাক পড়ার কারণ - ছেলেদের মাথায় টাক পরে কেন

বয়সন্ধিকালে কি করা উচিতঃ

বয়সন্ধিকালীন এই সময় থেকে ছেলেমেয়েদের আত্মপরিচয় গড়ে উঠতে শুরু করে। আত্মপরিচয় বলতে বোঝানো হয়েছে তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গা তৈরি হয়। তার কি পছন্দ-অপছন্দ সে কি চায় এছাড়া নিজের জীবন, সমাজ, সংস্কৃতি ধর্ম সম্পর্কে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে। এবং তারা পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন মানুষ হিসেবে জীবনের এই পর্যায়ে আত্মপ্রকাশ করে। ছোট বড় হওয়ার এই সময়টাতে বড় ধরনের মানসিক ভাঙ্গা গড়ার মধ্যে দিতে হয় এই ছেলেমেয়েদের।

এ সময় তাদের মধ্যে হরমোনাল কারণে আবেগের প্রাবল্য দেখা দেয়। মেজাজ মন খুব দ্রুত উঠানামা করে। আনন্দ রাগ দুঃখের মতো অনুভূতিগুলো তীব্রমাত্রাই দেখা যায় আজ আনন্দে উল্লাস করলে আরেকদিন মন মরা ভাব থাকে। শৈশবে তারা যেমন মা বাবা যা বলত তাই করতো তাই ভাবতো। কিন্তু এই বয়সন্ধির সময় তারা স্বাধীনভাবে সবকিছু ভাবতে শুরু করে। 

সে কি করবে কি খাবে কাদের সাথে মিশবে সেটা সে নিজে সিদ্ধান্ত নেই। এজন্য বাবা-মায়ের সাথে তাদের দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। ভালো মন্দের একটা কনসেপ্ট তৈরি হয় যদিও সেটাকে খুব পরিপক্ক বলা যাবে না। এই বয়সটাই স্বাধীন আত্মপরিচয় গড়ে ওঠায় তারা সবকিছু নিয়ে ভীষণ সংবেদনশীল থাকে। তাই তাদের সঠিক পথে রাখতে পরিবারকে কৌশলী ভূমিকা রাখতে হবে।

তে থাকা ছেলেমেয়েরা ভীষণ কৌতূহল প্রবন হওয়ায় অনেক সময় তাদের বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেক্ষেত্রে পরিবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে সচেতন ভূমিকা রাখতে হবে। মায়ের চাইতে বন্ধুবান্ধবদের দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়। অনেকেই বাবা-মায়ের বাধা মেনে নিতে পারেনা রেগে যাই এ বিষয়গুলো বাবা-মায়ের পক্ষে নেও কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু তাদের ধৈর্য হারালে চলবে না। তাদের আচার-আচরণের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে।

তার মানে এটা নয় যে তারা যা বলবে তাই মেনে নিতে হবে। বরং সন্তানের পছন্দ-অপছন্দের প্রতি সম্মান জানিয়ে সেটা বুঝিয়ে বলতে হবে। যেন তার আত্মসম্মানে আঘাত না আসে আবার ভালো মন্দের ব্যবধানটাও বোঝানো যায়। এই বয়সের ছেলেমেয়েদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতিও শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।

বাচ্চাদেরকে একটু একটু করে ছাড়তে হবে। শিশুদের মত নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তার ব্যাগ চেক করা, মোবাইল চেক করা, ডায়েরি খুলে পড়া এসব করা যাবে না। বন্ধুবান্ধবদের ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্য করা যাবে না। তবে তারা কি করছে কাদের সাথে মিশছে সেটা অন্যভাবে খোঁজ নিতে হবে। তা না হলে বাবা মার প্রতি বিশ্বাস ও আস্থার জায়গাটা হারিয়ে ফেলবে ছেলেমেয়েরা।

উপসংহারঃ কিশোর কিশোরীদের বয়সন্ধিকাল কখন আসে

বয়সন্ধিকালে যেহেতু ছেলেমেয়েদের প্রজনন ক্ষমতার বিকাশ হওয়ায়, তাই এই বয়সে সেক্স এডুকেশন বা যৌন শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা বেশ জরুরী। যেখানে তারে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের দিকগুলোর বিষয়ে ব্যাখ্যা থাকবে এতে তারা ঘাবড়ে যাবে না। তাদের প্রজনন স্বাস্থ্য পুষ্টি মানসিক ও সামাজিক বিষয়ে কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থা রাখতে হবে।

ছেলেদের এটা যে স্বাভাবিক বা ছেলেমেয়েরা একে অপরের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে সেটা তারা কিভাবে হ্যান্ডেল করবে সে বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটা দিক নির্দেশনা দিতে পারে। কারো সাথে রোমান্টিক সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে তার পরিসীমা মেনে চলা আরেকজনের ইচ্ছা অনিচ্ছাকে সম্মান জানানো, একে অপরের প্রতি সৎ থাকা এসব বিষয়ে তাদের সচেতন করা দরকার।

বয়ঃসন্ধিকালীন সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং প্রজনন তন্ত্রের সংক্রমণ ও যৌন রোগ সম্পর্কে জানা ও প্রতিরোধ করার জ্ঞান থাকা জরুরী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ইউনিসেফ এর তথ্য মতে বাংলাদেশে বয়সন্ধিকালে বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে অপুষ্টিতে ভোগে। কারণ স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কে বেশিরভাগ পরিবার সচেতন নয়।

আরো পড়ুনঃ হাঁসের ডিম না মুরগির ডিম - কোনটা বেশি উপকারী

তাই এ সময় ছেলে-মেয়ে উভয়কে, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, কার্বোহাইড্রেড, জিংক, আয়োডিন, আয়রনসমৃদ্ধ খাবার যেমন শাকসবজি, ফলমূল, ডাল, দুধ, মাছ মাংস খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা।

আমাদের আজকের আর্টিকেলটি যারা মনোযোগ সহকারে পড়েছেন তারা নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন কিশোর কিশোরীদের বয়সন্ধিকাল কখন আসে। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পরে যদি আপনি উপকৃত হন এবং আপনার যদি ভালো লেগে থাকে তবে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। আমাদের আর্টিকেলের মাঝে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে। 

তবে আপনার মহামূল্যবান কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাবেন যাতে করে আমরা সেটা সংশোধন করতে পারি। এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url