কমলা গাছের যত্ন এবং কমলা গাছের পরিচর্যা পদ্ধতি

 প্রিয় পাঠক বৃন্দ, আসসালামুয়ালাইকু্ম আজকে আপনাদের জানাবো কমলা গাছের যত্ন এবং কমলা গাছের পরিচর্যা পদ্ধতি। আপনি যদি সঠিকভাবে কমলা গাছের পরিচর্যা করতে পারেন, তাহলে আপনার বাড়ির আশেপাশে খোলা জায়গায় কমলার চাষ করতে পারবেন। সেজন্য আজকে আমাদের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাবো কমলা গাছের যত্ন এবং কমলা গাছের পরিচর্যা পদ্ধতি। চলুন নিম্নে যেন নেওয়া যাক কমলা গাছের যত্ন এবং কমলা গাছের পরিচর্যা পদ্ধতি।

কমলা গাছের যত্ন এবং কমলা গাছের পরিচর্যা পদ্ধতি
কমলালেবু চাষ করতে হলে অবশ্যই আপনাকে যথাযথভাবে কমলা গাছের যত্ন নিতে হবে। আপনি যদি সঠিকভাবে কমলা গাছের পরিচর্যা করতে পারেন তাহলে আপনিও বাণিজ্যিকভাবে কমলা গাছের বাগান দিয়ে লাভবান হতে পারবেন।

পেট সূচিপত্রঃ কমলা গাছের যত্ন এবং কমলা গাছের পরিচর্যা পদ্ধতি

ভূমিকাঃ

রাস্তার টেবিলে ফল হিসেবে কমলার বিকল্প নেই। কমলা একটি ভিটামিন সি জাতীয় খাবার। কমলার বিজ থেকে চারা উৎপাদন করা যায়। গুটি কলম যোগ কলম ও জোড়া কলমের মাধ্যমে যারা উৎপাদন করা যায়। কমলা উৎপাদনের জন্য অযৌন চারা উত্তম। জমি আগাছা পরিষ্কার করতে হবে জমি তৈরির পর.৩*৩ মিটার দূরত্বে ৬০*৬০*৬০ মিটার আকারে গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্তের মাটি তুলে পাশে রেখে দিতে হবে।
বর্ষার আগে গর্ত মাটি দিয়ে ভর্তি করে রাখতে হবে। কমলা চাষের নির্বাচিত জমি পাহাড়ি হলে সেখানে ৩০ থেকে ৩৫ মিটার দূরত্বে ২ থেকে ৪টি বড় গাছ রাখা যেতে পারে। তবে বড় গাছ কাটলে সেকরসহ তুলে ফেলতে হবে তারপর পাহাড়ের ঢালু অনুসারে নকশা তৈরি করে নিতে হবে। কমলার ভালো ফলন পেতে হলে কমলা গাছের সার প্রয়োগ করা দরকার। মাটির উর্বরতা এবং গাছের অবস্থার উপর বিবেচনা করে স্যারের পরিমাণ কম বেশি করা যেতে পারে।

কমলা গাছ লাগানোর নিয়মঃ

কমলা গাছ লাগানোর পূর্বে আপনাকে কমলা গাছ লাগানোর জন্য মাটি প্রস্তুত করতে হবে। সে ক্ষেত্র.৬০*৬০*৬০ সেন্টিমিটার গর্ত করতে হবে। এবং সেই গর্তের মধ্যে ১০ কেজি পরিমাণ গোবর সার, ২০০ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া সার, ২০০ গ্রাম পরিমাণ এমপিও এবং ৫০০ গ্রাম পরিমাণ চুন প্রয়োগ করতে হবে।
এর পরে আপনাকে ২০ থেকে ২৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে। এর পরে আপনি কমলালেবু চারা গুলো সেই গর্তে ভালোভাবে লাগিয়ে দিন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে মাঝে মাঝে আপনাকে কমলা গাছগুলোতে পানি দিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করতে হবে। কমলা গাছের জন্য পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই মাঝে মাঝে পানি দিতে হবে। কমলা গাছ লাগানোর সময় আপনি একটি কথা মনে রাখবেন এই গাছটি সাধারণত বর্ষাকালে লাগালে ভালো হয় এবং গাছ মরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না তাই আপনি যদি কমলা গাছ রোপন করতে চান তবে বর্ষাকালে লাগাবেন।
বছরে গড়ে প্রয়োজন অনুযায়ী সার দিতে হবে ৪৫০ গ্রাম থেকে ৯০০ গ্রাম নাইট্রোজেন এবং পটাশিয়াম ফসফরাস সহ অন্যান্য সার দেওয়া যেতে পারে। মাঝে মাঝে কমলা গাছগুলো ছাঁটাই করে দিবেন কারণ এটির পাতাগুলো মারা যায় বা যে ডালগুলো এলোমেলো অবস্থায় নিচের দিকে ঝুলে পড়ে সেই ডালগুলো কেটে সুন্দর করে রাখতে হবে এবং কাটা অংশগুলোতে ভাঙ্গি সাইড লাগিয়ে দিতে হবে। আজকে আমাদের আর্টিকেলের এই পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো কমলা গাছের যত্ন এবং কমলা গাছের পরিচর্যা পদ্ধতি সম্পর্কে তাই মনোযোগ সহকারে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।

কমলা গাছের যত্নঃ

পরিমাণ মতো গোবর বা কম্পোস্ট, ইউরিয়া সার, টি এসপি,এমফিসার, জিংক, সালফেট এবং সারগুলোকে একত্রে মিশ্রিত করে একটি মিশ্রণ সার তৈরি করতে হবে। এরপর সেই মিশ্রণ সার গুলো প্রত্যেকটি কমলা গাছের গোড়ায় নির্দিষ্ট পরিমাণে দিয়ে দিতে হবে। আপনি যদি কমলা গাছের পর্যাপ্ত পরিমাণ যত্ন নিতে পারেন তবে অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই আপনি কাজগুলো থেকে ফল পাবেন।
কমলা গাছের জন্য ডাল ছাটাই অপরিহার্য। গাছ লাগানোর পর ফল ধরার পূর্ব পর্যন্ত ধীরে ধীরে ডাল ছেটে গাছকে নির্দিষ্ট আকারে দিতে হবে যাতে কাজ চারিদিকে ছড়াতে পারে। কারণ ৫০০ ডাল গুলিতে ফল বেশি ধরে। কান্ডের এক মিটার উচ্চতা পর্যন্ত সব ডাল ছাঁটাই করতে হবে ডাল ছাঁটাই করার পর ডালের কাঁটা অংশে বর্দো পেস্টর বলে করে দিতে হবে।
কমলা বাগান আকাছা মুক্ত রাখতে হবে। গাছের উপরে পরগাছা লতা জাতীয় আগাছা থাকলে তা দূর করতে হবে। পাহাড়ি এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে গাছের গোড়ায় খড়কুটা লতাপাতা কচুরিপানা ইত্যাদি দিয়ে ঝাবরা প্রয়োগ করা আবশ্যক। কমলা বাগানে প্রাথমিক পর্যায়ে মোটর, সিম, টমেটো, বরবটি, ঢেঁড়স, লাউ, কুমড়া ইত্যাদি আন্তর্ ফসল হিসেবে চাষ করা যায়।

কমলা গাছের পরিচর্যাঃ

আপনি যদি কমলা চাষ করতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে কমলা গাছের পরিচর্যা সম্পর্কে। কারণ সঠিকভাবে কমলা গাছের পরিচর্যা করলে কেবলমাত্র আপনি সেই গাছ থেকে ভালো ফলন পেতে পারেন। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক কমলা গাছের পরিচর্যা-
কমলা গাছ লাগানোর পদ্ধতিঃ
কমলার বিচ থেকে কমলালেবুর গাছ লাগানো যায়। কমলা গাছ লেবু জাতীয় একটি গাছ একটি সাইপ্রাস জাতীয় উদ্ভিদ অনেকেই মনে করে যে কমলার বিচ থেকে কমলালেবুর গাছ লাগানো যায়। আপনি যদি কমলার বীজ থেকে কমলার গাছ লাগান তবে সেই গাছে ফল ধরতে অনেকটা সময় লাগবে পক্ষান্তরে আপনি যদি ভালো না শাড়ি থেকে ভালো মানের কমলালেবুর চারা নিয়ে লাগান তাহলে দেখা যাবে যে কয়েক বছরের মধ্যেই আপনি সেই গাছ থেকে ফল পাবেন। 
সেজন্য কমলালেবুর গাছ লাগানোর জন্য আপনাকে অবশ্যই না শাড়ি থেকে ভালো মানের কমলালেবুর গাছ ক্রয় করে তারপরে লাগাতে হবে। কমলা গাছ লাগানোর পূর্বে আপনাকে কমলা গাছ লাগানোর জন্য মাটি প্রস্তুত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ৬০*৬০*৬০ সেন্টিমিটার গর্ত করতে হবে এবং সেই গর্তের মধ্যে ১০ কেজি পরিমাণ গোবর সার, ২০০ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া সার, ২০০ গ্রাম পরিমাণ এমপিও এবং ৫০০ গ্রাম পরিমাণ করতে হবে।
সার প্রয়োগ করার ২০ থেকে ২৫ দিন পর আপনাকে চারাগুলো সেই গর্তে ভালোভাবে লাগিয়ে দিতে হবে। এবং মাঝে মাঝে কমলা গাছগুলোতে পানি দিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করতে হবে। কমলা গাছের জন্য পানি খুবই গুরুত্বপূর্ন। সেজন্য গাছ লাগানোর পূর্বে মনে রাখতে হবে গাছটি সাধারণত বর্ষাকালে লাগালে ভালো হবে। এবং বর্ষাকালে গাছ মরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। সেজন্য আপনি চাইলে বর্ষাকালে কমলার গাছ লাগাতে পারেন।
লাগানোর পরে গাছের গোড়ায় প্রয়োজন অনুযায়ী সার দিতে হবে। মাঝে মাঝে কমলা গাছগুলোকে ছাটাই করতে হবে অর্থাৎ যে পাতাগুলো মারা যায় বা ডালগুলো এলোমেলো অবস্থায় নিচের দিকে ঝুলে পড়ে সেই ডালগুলো কেটে সুন্দর করে রাখতে হবে এবং কাটা অংশগুলোতে ফাঙ্গি সাইড লাগিয়ে দিতে হবে।

টবে লাগানো কমলা গাছের পরিচর্যাঃ

আপনি কি টবে কম লাগা চাষ করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে টবে কমলা গাছের পরিচর্যা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আপনাকে কমপক্ষ.১.৫ থেকে দুই ফুট*১.৫ থেকে দুই ফুট সাইজের টপ বা গ্রাম ব্যবহার করতে হবে। এর থেকে ছোট আকৃতির টবে বা ড্রামে চায়না কমলা চারা রোপন করা উচিত নয়। নিম্নে কমলা গাছের যত্ন এবং কমলা গাছের পরিচর্যা পদ্ধতি নিয়ে তুলে ধরা হলো।
টবে কমলা গাছ রোপন করার পূর্বে পরিমাণ মতো গোবর বা কম্পোস্ট, ইউরিয়া সার, টি এস পি, এমওপি সার, জিংক সালফেট এবং বরুন সার গুলোকে একত্রে মিশ্রিত করে একটি মিশ্রণ সার তৈরি করতে হবে। মিশ্রণ সার গুলোকে প্রত্যেকটি টবে নির্দিষ্ট পরিমাণে দিয়ে দিতে হবে। এরপর সে টপগুলোতে আপনি নার্সারি থেকে ক্রয় করা ভালো মানের কমলা গাছের চারা লাগিয়ে দিন।
আপনি যদি টবে কমলা গাছের পরিচর্যা সঠিকভাবে করতে পারেন তবে দেখবেন অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই গাছগুলো কত সুন্দরভাবে লেগে গেছে। এবং অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই আপনি কাজগুলো থেকে ফল পাবেন। কমলা গাছের যত্ন এবং কমলা গাছের পরিচর্যা পদ্ধতি সম্পর্কে নিম্নে আরো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।

কমলা গাছের রোগ প্রতিরোধঃ

কমলা গাছের কিছু রোগ রয়েছে যেগুলো আপনি যদি না জেনে থাকেন তবে আপনার গাছটির অকালেই মারা যেতে পারে। চলুন নিম্নে আমরা জেনে নেই কমলা গাছের রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে-
গ্রিনিং রোগঃ
এর রোগ দেখা দিলে আপনার কমলা গাছের পাতা হলুদ আকার ধারণ করবে এবং আস্তে আস্তে শিরা দুর্বল হয়ে পড়বে। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে, মেলাথিয়ন ০.০৪% অথবা সমীথিয়ন ৫০ ই সি ১০ লিটার পানিতে ৫ চা চামচ মিশিয়ে পুরো গাছে স্প্রে করে দিতে হবে।
বাকল ছিদ্রকারী পোকাঃ
বাকোল ছিদ্রকারী পোকা কমলার গাছের বাকল গুলোকে ছিদ্র করে ফেলে এবং বাকোলের রস পুরোপুরিভাবে চুষে নেই। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে রেপ কড ১০ ই সি কীটনাশক ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি বা ২ চামচ মিশিয়ে সারা গাছে স্প্রে করতে হবে।
পাতা খেকো পোকাঃ
আপনি কমলা গাছ রোপন করার পর রোপনকৃত কমলা গাছে যদি পাতা খেতে পোকা বসে বা বাসা বাঁধে তাহলে তা কমলা গাছের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে আপনাকে ১০ মিলি এটা সিস্ট টক্স ১০ লিটার পানিতে অথবা ডায়াজি নন ৬০ ইসি প্রতি ১০ লিটার পানিতে চার চামচ মিশিয়ে স্প্রে করে গাছের পাতা ভিজিয়ে দিতে হবে।

উপসংহারঃ কমলা গাছের যত্ন এবং কমলা গাছের পরিচর্যা পদ্ধতি

পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, আপনারা যারা আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়েছেন তারা নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন কমলা গাছের যত্ন এবং কমলা গাছের পরিচর্যা পদ্ধতি। আপনার কমলা গাছের যত্ন এবং পরিচর্যা পদ্ধতি যদি আমাদের আর্টিকেল এর নিয়ম অনুযায়ী করেন তবে আপনার কমলা গাছে এক বছরের মধ্যেই কমলা ধরা শুরু করবে।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থেকে ধৈর্য সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তবে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। এর মধ্যে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তবে আপনার মহামূল্যবান কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাবেন, যাতে করে আমরা সেই ভুলগুলো সংশোধন করতে পারি। এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url