বাসক পাতা খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা এবং বাসক পাতা খাওয়ার নিয়ম

আসসালামু আলাইকুম,প্রিয় পাঠক বন্ধুরাআপনারা যারা জানতে চেয়েছেন বাসক পাতা খাওয়ার উপকারিতা  অপকারিতা এবং বাসক পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কেআমাদের আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য। বাসক পাতার নির্যাস বা রস তরল করে নির কমে সুবিধা করে দেয় বলে সর্দি কাশি এবং শ্বাস নারীর প্রদাহমূলক ব্যাধিতে বিশেষ উপকারী। আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে আপনাদের জানাবো ও বাসক পাতা খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা এবং বাসক পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। চলুন দেরি না করে নিম্নে জেনে নেওয়া যাক বাসক পাতা খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা এবং বাসক পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।

বাসক পাতা খাওয়ার উপকারিতা  অপকারিতা এবং বাসক পাতা খাওয়ার নিয়ম
বাসক পাতা হচ্ছে এক ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন উদ্ভিদ। এটি এর ১২ টি পাতা দৈনিক খেতে পারলে এটি আমাদের শরীরের নানাবিধ রোগের উপশম করে। সেজন্য আমাদের আর্টিকেলের আজকের এই পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো বাসক পাতা খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা এবং বাসক পাতা খাওয়ার নিয়ম।

পেজ সূচিপত্রঃ বাসক পাতা খাওয়ার উপকারিতা  অপকারিতা এবং বাসক পাতা খাওয়ার নিয়ম

ভূমিকাঃ

বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশের অনেক জায়গায় বাসক পাতা চাষ করা হয়ে থাকে। বাসক পাতার মধ্যে নানাবিধ ঔষধে ঘুর থাকার কারণে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিগুলো পাতাগুলো কিনে থাকে। বাসক পাতা এক ধরনের উদ্ভিদের পাতা, যেটির অনেক ঔষধি গুন আছে। বাসক একটি ভেষজ উদ্ভিদ যেটা ভারত উপমহাদেশীয় অর্থাৎ ভারত উপমহাদেশের সর্বত্র এটি পাওয়া যায়।
' আড়াটোডা' বাসিকা হল বাসকের বৈজ্ঞানিক নাম। এটির আয়ুর্বেদিক নাম হলো বাসকা/বাসা এবং এর ইংরেজি নাম 'Vaska,Malabar Nut Tree. হিন্দিতে এটিকে ' আডুসা' বলা হয়ে থাকে। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক বাসক পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং বাসক পাতা খাওয়ার নিয়ম।

বাসক গাছের বৈশিষ্ট্যঃ

বাসক পাতার গাছটি লম্বায় ৩-৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই উদ্ভিদটি সাধারণত আদ্র এবং সমতল ভূমিতে বেশি জন্মে থাকে। বাসক পাতা আমাদের অনেক রোগ থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে। আমরা যদি নিয়ম করে প্রতিদিন বাসক পাতা খেতে পারি তবে আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকার পাওয়া যাবে।

বাসক পাতার উপকারিতাঃ

বাসক পাতা আদিকাল থেকে সর্দি কাশির সমস্যায় ব্যবহার করা হয়ে আসছে। বিশেষ করে যখন ঋতু পরিবর্তন হয় তখন আমরা সকলে সর্দি কাশি সমস্যায় ভুগে থাকে যদি আপনারও এমন হয় তবে আপনি দুই তিনটি বাসক পাতা বেটে এর রস পান করতে পারেন। এতে করে আপনি অনেক উপকার পাবেন। বাসকের পাতা খেতে তেতো হয় তবে এক চামচ বাসক পাতার রস আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বিগুণ বৃদ্ধি করে। আমাদের আজকের আর্টিকেলের পরে আমরা আপনাদের জানাবো বাসক পাতার উপকারিতা সম্পর্কে। 
চর্ম রোগের সমস্যায়ঃ
যাদের শরীরের চর্মরোগ জনিত সমস্যা রয়েছে তারা এই উদ্ভিদের রস খেয়ে দেখতে পারেন। বাসক পাতার রস আপনি যদি প্রতিদিন খেতে পারেন তবে আপনার চর্ম রোগের সমস্যা গুলো মুক্তি পেতে পারে।
খিচুনির সমস্যা দূর করতেঃ
আমরা অনেকেই খিচুনি রোগে ভুগি। এই খিচুনি রোগ থেকে মুক্তি পেতে চান তবে আপনার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত বাসক পাতা রাখুন। কারণ এই রোগটি সারানোর জন্য বাসক পাতার রস অনবদ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। আপনি যদি নিয়মিত এই উদ্ভিদের রস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলেন তবে এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
ঘামের গন্ধ দূর করতেঃ
ঘামের গন্ধ আমাদের সকলের শরীর থেকে বের হয়ে থাকে তবে এই ঘামের গন্ধ যদি শরীরে থেকে দূর করতে চান তাহলে স্নানের আগে বাসকের পাতার রস গায়ে ভালোমতো মেখে নিন এবং পরে স্নান করে নিন। দেখবেন আপনার ঘামে দুর্গন্ধ চলে যাবে শরীর থেকে।
জন্ডিসের সমস্যা দূর করতেঃ
যারা জন্ডিসের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত প্রতিদিন সকালে খালি পেটে বাসকের রস খেতে পারেন। এই বাসক পাতার রস খেলে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং জন্ডিসের সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে। আপনি প্রতিদিন সকালে এক চামচ বাসকের সাথে এক চামচ মধু অথবা চিনি মিশিয়ে কয়েকদিন খেলে দেখবেন জন্ডিস থেকে অনেকটাই মুক্তি পেয়েছেন।
শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর করতেঃ
আপনি কি শ্বাসকষ্টই ভুগছেন। তবে আপনি বাসক পাতা খেতে পারেন কারণ এদের মধ্যে থাকা ওষুধে কোন শ্বাসনালী বসন্ত রাখে। শ্বাসকষ্টের সমস্যা তৈরি হলে দুই চামচ বাষক রস সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। আপনি যদি নিয়মিত বাসক পাতার রস খেতে পারেন তবে দেখবেন আপনার শরীরে অনেক উপকার পাবেন এবং খুব তাড়াতাড়ি শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
দাঁতের সমস্যা দূর করতেঃ
আপনি কি দাঁতের সমস্যায় ভুগছেন তবে বাসক পাতার রস অনেক উপকারে আসবে আপনার দাঁতের জন্য। যাদের দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে এবং পাইরিয়া রয়েছে দাঁতে তারা নিয়মিত বাসক পাতা ধুয়ে দুই কাপ জল নিয়ে তাতে ফুটিয়ে নিন এরপর সে জলগুলো দিয়ে কুলকুচি করুন ভালোমতো দেখবেন অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই আপনার দাঁতের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
রক্ত পরিষ্কার করতেঃ
আপনার শরীরের রক্ত পরিষ্কার না থাকলে আপনাদের মুখে ব্রণ হওয়ায় সম্ভাবনা থাকে পেটের সমস্যা এবং এলাচি আরো বেশি দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার রক্তকে পরিষ্কার রাখতে চান তাহলে আপনার দৈনিক রুটিনের বাসক পাতা রাখুন। এটি রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে থাকে রক্তচাপ কমাতেও এটি অনেক সাহায্য করে।
ত্বকের যত্নেঃ
আমরা সকলেই আমাদের ত্বক ফর্সা বা উজ্জ্বল করার জন্য কত কিছুই না করে থাকি। অনেক ধরনের ফেসওয়াশ কিংবা অনেক ক্রিম আমরা আমাদের ত্বকে ব্যবহার করে ত্বকের উজ্জ্বলতা নষ্ট করে ফেলি। আপনি যদি বাসকের রস এবং চূর্ণ মিলিয়ে মুখে লাগাতে পারেন তবে আপনার ত্বক অনেকটা উজ্জ্বল ও ফর্সা হয়ে যাবে।
জন্ডিসের সমস্যা দূর করতেঃ
আপনারা যারা জন্ডিসের মত সমস্যায় ভুগছেন তারা বাসকের টা রস করে খেতে পারেন। এক চামচ বাসকের সাথে এক চামচ মধু অথবা চিনি মিশিয়ে কয়েকদিন খেলে জন্ডিস অনেকটা সেরে যাবে। আপনি যদি জন্ডিসের রোগী হয়ে থাকেন তবে নিয়মিত বাসক পাতা খান দেখবেন জন্ডিস অনেকটাই সেরে যাবে।
জ্বর কমাতেঃ
নানা কারণে আমাদের শরীরে জ্বর হয়ে থাকে। জ্বর হলে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা অনেকটা বেশি থাকে সময় এই ভেষজ উদ্ভিদ পাতার রস আমাদের শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে থাকে। আপনি নিয়মিত যদি বাসক পাতার রস খেতে পারেন তবে এ রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ
যে কোন কিছু শ্রবণের পূর্বে এটির কোন অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে কিনা সেটি জেনে নেওয়া আমাদের সকলের জন্য প্রয়োজনীয়। তাহলে চলুন বাসকের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কি সেগুলো জেনে নেওয়া যাক-
কোন ধরনের সমস্যা ছাড়া অথবা প্রয়োজন ছাড়া যদি এই উদ্ভিদের পাতার রস খাওয়া হয় তাহলে বমি বমি ভাব, বমি সমস্যা বা পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া বেশি পরিমাণে খাওয়ার ফলে বমি অথবা পেটের সমস্যা হয়।

বাসক পাতার অপকারিতাঃ

বাসক পাতার উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমনি এর অপকারিতা ও রয়েছে। চলুন নিম্নে আমরা জেনে নেই বাসক পাতার অপকারিতা গুলো-
  • প্রয়োজনের তুলনায় যদি বাসক পাতার ব্যবহার বেশি করা হয় সেক্ষেত্রে বমি বমি ভাব পেটের সমস ইত্যাদি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
  • গর্ভবতী মহিলাদের বাসক পাতা খেতে বারণ করা হয় কারণ বাসক পাতায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা গর্ভাবস্থায় শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে।
  • বাসক পাতা মধুমেহ রোগের সাহায্য করে তবে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বাসক পাতা খেয়ে ফেললে রক্তের শর্করার মাত্রা কমে যেতে পারে এবং ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে অস্বস্তি দেখা দিতে পারে।

বাসক পাতা খাওয়ার নিয়মঃ

আমরা নানাভাবে বাসক পাতা খেয়ে থাকি। এছাড়া অনেক ধরনের সমস্যা দূর করার জন্য বাসক পাতা খাওয়া হয়ে থাকে তবে আপনি দুইভাবে এটিকে খেয়ে দেখতে পারেন-
আপনি এটিকে বেটে এর রস তৈরি করে খেতে পারেন। বাসক পাতা বেটে রস খেতে চাইলে প্রথমে পাতাগুলো একটু পরিষ্কার পাত্রে নিন এরপর পরিষ্কার জলের সাহায্যে পাতাগুলো ভালোমতো ধুয়ে নিন। এখন আপনি যে কোন কিছুর মাধ্যমে পাতাগুলো পেটে সেখান থেকে রস গুলো বের করে নিন। এরপর আপনি সেটা খেতে পারেন।
পরিষ্কার জলে ফুটিয়ে বাসক পাতা খেতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রথমে বাসকের পাতা ভালোমতো ধুয়ে নিন এরপর পানিতে এটিকে ফুটিয়ে নিন ভালো করে। এরপরে যখন পাতাগুলো জলে ফুটানো হয়ে যাবে তখন জল ঠান্ডা হলে সেটিকে থেকে খেয়ে ফেলুন।
যাদের খুব বেশি সত্যি কাশি রয়েছে তারা নিয়মিত দুই তিনটি পার সব পাতা বেটের রস খেতে পারেন। যাদের কোন ধরনের সমস্যা নেই তারা অযথা বাসকের পাতা না খাওয়াটাই ভালো হবে এতে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

উপসংহারঃ বাসক পাতা খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা এবং বাসক পাতা খাওয়ার নিয়ম

পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, আপনারা যারা আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি পড়েছেন তারা নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন বাসক পাতা খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা এবং বাসক পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। আপনি যদি উপরে উল্লেখিত কোন সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে আপনি আপনার রুটিনে বাসক পাতা অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তবে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। এবং আমাদের আর্টিকেলের মধ্যে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তবে আপনার মহামূল্যবান কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাবেন যাতে করে আমরা সেই ভুলগুলো সংশোধন করতে পারি। এতক্ষন ধৈর্য সহকারে আমাদের সঙ্গে থেকে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url