মাইগ্রেন কি, মাইগ্রেনের লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার
আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আজকে আমাদের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাবো মাইগ্রেন কি, মাইগ্রেনের লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে। মাইগ্রেন এক বিশেষ ধরনের মাথাব্যথা। এই ব্যথা অর্ধ মাথায় হয় বলে বিখ্যাত। কিন্তু পুরো পাশেও হতে পারে। শুরু হয়তো হলো একপাশ থেকে তারপর পুরো মাথা জুড়ে ছড়িয়ে যেতে পারে। সেজন্য আমাদের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের আজকে জানাবো মাইগ্রেন কি, মাইগ্রেনের লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার। চলুন আর কথা না বাড়িয়ে নিম্ন জেনে নেওয়া যাক মাইগ্রেন কি, মাইগ্রেনের লোকক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার।
যাদের মাইগ্রেন হবার প্রবণতা আছে তাদের শব্দ আলো গন্ধ কোন কিছুই সহ্য হয় না। মাথাব্যথার সাথে বমি বমি ভাব এবং ভূমিও হতে পারে। মাইগ্রেন হলে প্রথমে অর্ধেক মাথা ব্যথা করে তারপরে পুরো মাথা ছড়িয়ে পড়ে। চলুন আজকে আমরা নিম্নে জেনে নেই মাইগ্রেন কি, মাইগ্রেনের লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার।পেজ সূচিপত্রঃ মাইগ্রেন কি, মাইগ্রেনের লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার
- ভূমিকা
- মাইগ্রেন কি
- মাইগ্রেনের লক্ষণ
- মাইগ্রেনের কারণ
- মাইগ্রেনের প্রকারভেদ
- মাইগ্রেন কিভাবে হয়
- মাইগ্রেনের পূর্ববর্তী লক্ষণ
- মাইগ্রেনের পরবর্তী লক্ষণ
- মাইগ্রেনের চিকিৎসা
- মাইগ্রেনের প্রতিকার
- মাইগ্রেনের সমস্যা প্রতিরোধকারী খাবার
- উপসংহার
ভূমিকাঃ
মাইগ্রেনের ব্যথায় ভোগেন এমন মানুষের সংখ্যা আমাদের আশেপাশে নেই বললেই চলে। অনেকেরই প্রশ্ন মাইগ্রেনের ব্যথা কেন হয় মাইগ্রেনের প্রকৃত কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি তবে বলা হয় জেনেটিক এবং কিছু এনভায়রন মেন্টাল ফ্যাক্টর অনেক ক্ষেত্রে দায়ী হতে পারে। মাইগ্রেন শব্দটি বহু মানুষের জন্যই এক আতঙ্কের নাম।
অন্যান্য মাথাব্যথা থেকে ভিন্ন এই মাইগ্রেনের ব্যথা। মহিলাদের হরমোনাল পরিবর্তন বিল খেলে কিংবা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নিলে অনেকেরই মাইগ্রেন বেড়ে যেতে পারে। মাইগ্রেন আক্রান্তদের কয়েক ঘন্টা থেকে শুরু করে কয়েক দিন পর্যন্ত তীব্র মাথাব্যথা হতে পারে। মাইগ্রেন বিশেষ করে জেনেটিক বলে মনে করা হয়।
বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ মাইগ্রেনের স্বীকার। মাইগ্রেন আক্রান্তদের মাথাব্যথা শুধু সাধারণ কারণে হয় না এর কিছু উপসর্গ থেকে বোঝা যায় এর মধ্যে একটি হল কিছু উপসর্গ। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক-মাইগ্রেন কি, মাইগ্রেনের লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার।
মাইগ্রেন কিঃ
মাইগ্রেন এক বিশেষ ধরনের মাথাব্যথা। মাইগ্রেন শব্দটি একটি গ্রিক শব্দ" হেমিক্রেনিয়া" থেকে এসেছে। হেমি অর্থ অর্ধেক ক্রেনিয়া অর্থ মাথার খুলি। এই ব্যথা আমার অর্ধ মাথায় হয় বলে বিখ্যাত। কিন্তু পুরো পাশেও হতে পারে শুরু হয় তাহলে একপাশ থেকে তারপর পুরো মাথা জুড়ে ছড়িয়ে যেতে পারে। যাদের মাইগ্রেন হবার প্রবণতা আছে তাদের শব্দ আলো বন্ধ কোন কিছুই সহ্য হয় না মাথা ব্যথার সাথে বমি বমি ভাব এবং বমিও হতে পারে মাইগ্রেনের সমস্যা হলে।
মাইগ্রেনের লক্ষণঃ
মাইগ্রেনের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে মাথার যেকোনো একপাশে মাঝারি থেকে তীব্র ধরনের ব্যথা। অনেক সময় ব্যাথার তীব্রতা এত বেশি হয় যে বমি বমি ভাব হতে পারে। অনেকের আবার এসব লক্ষণ ও উপসর্গ ছাড়াও আরো কিছু লক্ষণ থাকে যেমন-ঘাম ,মনোযোগহীনতা, অনেক বেশি গরম বা অনেক বেশি ঠান্ডা অনুভব হওয়া, পেট ব্যথা বা ডায়রিয়া।
এসব লক্ষণ যদি আপনার মধ্যে দেখতে পান বা যদি মনে হয় এই লক্ষণগুলো কোন কোনটি আপনার মধ্যে আছে তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মাইগ্রেনের কারণঃ
মাইগ্রেন নানা কারণে হয়ে থাকে। নিম্নে কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হলো-
- বংশগত কারণে।
- দুশ্চিন্তা
- অস্থিরতা
- জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি।
- পরিবেশের প্রভাব
এই চারটি কারণ মূলত প্রধান কারণ মাইগ্রেনের। এছাড়া আরো কিছু কারণ হতে পারে মাইগ্রেনের যেমন-
- চকলেট
- পনির
- মধ্য পান
- কোমল পানীয়
- পিরিয়ডের সময়
- অতিরিক্ত গরম প্রচন্ড শীত
- বেশি সময় ধরে কম্পিউটারের মনিটর ও টিভির সামনে থাকা
- অতিরিক্ত বা কম আলোতে কাজ করা।
মাইগ্রেনের প্রকারভেদঃ
মাইগ্রেন কে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায় যেমন-
- ক্লাসিক্যাল
- কমন
- অপথেলমোপ্লেজিক
- ব্যাসিলার আর্টারি
- হেমি প্লেজিক
- সেসিও প্লেজিক মাইগ্রেন ইত্যাদি
এগুলোর মধ্যে ক্লাসিক্যাল এবং কমন এই দুই ধরনের মাইগ্রেন বেশি দেখা যায়।
ক্লাসিক্যাল মাইগ্রেনঃ
প্রাথমিক পর্যায়ে দৃষ্টি বিক্রম হতে পারে। এমতাবস্থায় চোখের সামনে আলোর ঝলকানি দেখা দিতে পারে আপনার। হাত পা মুখের চারপাশে ঝিনঝিনে অনুভূতি সহ শরীরের একপাশে দুর্বলতা ও বেশ ভাব হতে পারে। তারপর শুরু হয় মাথা ব্যথা, যা মাথার এক পাশ থেকে শুরু হয়ে আস্তে আস্তে পুরো স্থানে বিস্মিত হয়। ব্যথা প্রচুর ঘাম বের হওয়া সহ ভূমি কিংবা বমি বমি ভাব একেবারে কাহিল করে ফেলে শরীরকে।
চোখের সমস্যা এক ঘন্টার বেশি স্থায়ী হলে ধরে নিতে হবে এটি মাইগ্রেন নয়। ব্রেন অথবা চোখে অন্য কোন সমস্যার কারণে দৃষ্টির এই সমস্যা বেড়ে যেতে পারে শরীরে। কখনো কখনো মাথা ব্যথা ছাড়া শুধুমাত্র দৃষ্টির সমস্যা নিয়েও এই রোগটি দেখা দিতে পারে।
কমন মাইগ্রেনঃ
মাইগ্রেন ই বেশি হয়ে থাকে। এ ধরনের মাথাব্যথা চাঁদ থেকে ৭২ ঘণ্টা ব্যাপী হয় এবং কমপক্ষে নিচের যেকোনো দুটি লক্ষণ থাকতে পারে শরীরে-
- চিন চিন করে ব্যথা
- অর্ধেক মাথায় ব্যথা
- বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া
- শব্দ ভীতি বা আলোভীতি
- অতীতে এ ধরনের মাথা ব্যথার কমপক্ষে পাঁচবার অভিজ্ঞতা ও কোন মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ রোগ না থাকা
কমন মাইগ্রেন এ মাথার দুই পাশ কানের উপর চাপ দিলে এবং মাথার চুল টানলে ভালো লাগে।
মাইগ্রেন কিভাবে হয়ঃ
আমাদের ব্রেনের ধমনী, শিরা, আবরণ, পেশি, সাইনাস এবং চোখ দাঁত এগুলোতে কিছু ব্যাথা গ্রাহক কোষ থাকে। এগুলো উদ্ধিত হলে ব্যথা অনুভূত হয়। বিজ্ঞানীরা একটি হরমোনকে জন্য দায়ী করেন-সেরোটোনিন এবং মেকানিক্যাল কারণে যখন এই গ্রাহক কোষগুলো উদযাপিত হয় তখন মাথায় ব্যথা হয়।
মাইগ্রেনের পূর্ববর্তী লক্ষণঃ
মাথা ব্যথা শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েকদিন আগে এইস্টেস হতে পারে। এ সময় মানসিক ও স্নায়বিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে আপনার শরীরে। বিষন্নতা, উল্লশিত,ঝিমনি, অতি সচেতন, অতি উৎসাহী কিংবা খিটখিটে শান্ত ধীরগতি ভাব হতে পারে। অনেক সময় এ লক্ষণ গুলো চোখ এড়িয়ে যায়। এগুলো সনাক্ত করে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা শুরু করা জরুরী।
মাইগ্রেনের পরবর্তী লক্ষণঃ
ব্যথা শেষ হওয়ার পর আক্রান্ত ব্যক্তি অনেক ক্লান্ত এবং অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়েন। যেন প্রচন্ড কোন শারীরিক ধকল গেল এমন মনে হয় শরীরে। মনোযোগ হীনতা ও ক্ষুধা মন্দা দেখা দেয় শরীরে। এ লক্ষণ গুলো দেখা দেয় মাইগ্রেন এর পরবর্তী সময়ে।
মাইগ্রেনের চিকিৎসাঃ
মাইগ্রেনের চিকিৎসা মানেই শুধু ওষুধ নয়। নিয়ম মেনে চলা সচেতন হওয়া এর মধ্যে পড়ে। আপনার যখন মাথা ব্যথা শুরু হবে তখন আপনি প্যারাসিটামল এসপিরন ডাই ক্লোফেনাক জাতীয় ঔষধ এবং বমি ভাব কমানোর জন্য মোটো ক্লোরোপ্লোমাইড, ডম্পেরিডন জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। বারবার মাইগ্রেনের আক্রমণ কমানোর জন্য পিজো টিফিন, এমিট্রি পটা ইলিন, বিটা ব্লোকার জাতীয় ঔষধ কার্যকর।
মাইগ্রেনের প্রতিকারঃ
- যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে তাদের অন্তত দৈনিক 8 ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন।
- কফি, চকলেট, পানির, কোমল পানিয়, মদ এড়িয়ে চলতে হবে যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা আছে।
- দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা যাবে না যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে।
- জন্মবিরতিকরণ পিল না ব্যবহার করে অন্য পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে যদি আপনার মাইগ্রেনের সমস্যা হয়।
- পরিশ্রম, মানসিক চাপ দীর্ঘ ভ্রমণ এড়িয়ে চলতে হবে।
- কড়া রোদ বা তীব্র ঠান্ডা পরিহার করতে হবে আপনাকে।
- উচ্চ শব্দ পরিবেশ বেশিক্ষণ না থাকাই ভালো আপনার জন্য যদি আপনার মাইগ্রেনের সমস্যা থাকে।
- বেশি সময় ধরে কম্পিউটারের মনিটর বা টিভির সামনে না থাকা এতে করে আপনার সমস্যা বাড়তে পারে।
মাইগ্রেনের সমস্যা প্রতিরোধকারী খাবারঃ
মাইগ্রেনের সমস্যা প্রতিরোধকারী কয়েকটা খাবার রয়েছে সেগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো আমাদের আজকের আর্টিকেলের এই পর্বে। চলুন নিম্নে জেনে নেই মাইগ্রেনের সমস্যা প্রতিরোধকারী খাবার-
- ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন টি সমৃদ্ধ খাবার-তিল, আটা, বিট।
- ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার-ঢেঁকি ছাটা চালের ভাত, আলু, বার্লি।
- সবুজ হলুদ ও কমলা রঙের শাকসবজি।
- হারবাল ট্রি যেমন গ্রিন টি।
- আদার রস বা আদার টুকরো।
- খেজুর ও ডুমুর জাতীয় ফল।
- মাইগ্রেনের সমস্যা এড়িয়ে চলতে যেসব খাবার খাবেন-
- দুধ ও দুধ জাত খাবার।
- আপেল কলা চিনাবাদাম টমেটো।
- পেঁয়াজ।
উপসংহারঃ মাইগ্রেন কি, মাইগ্রেনের লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার
পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, আপনারা এতক্ষণ যারা আমাদের সঙ্গে থেকে আমাদের আর্টিকেলটি পড়েছেন তারা নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন মাইগ্রেন কি, মাইগ্রেনের লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার। এবং আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে অথবা আপনি যদি আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হন তবে আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থেকে ধৈর্য সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url