ডিপ্রেশন থেকে নিজেকে ভালো রাখার উপায়
আসসালামু আলাইকুম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে পৃথিবীতে বর্তমানে প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন লোক বিষন্নতা ব্যাধিতে ভুগছেন। প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আপনারা যারা আজকে জানতে চেয়েছেন ডিপ্রেশন থেকে নিজেকে ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য। আজকে আমাদের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাবো ডিপ্রেশন থেকে নিজেকে ভালো রাখার উপায়। দুঃখজনক হলো আমরা অনেকেই জানিনা ডিপ্রেশন একটি রোগ বা জানলেও সেটা স্বীকার করতে চায় না। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক ডিপ্রেশন থেকে নিজেকে ভালো রাখার উপায়।
ডিপ্রেশন যে কি ভয়াবহ মানসিক ব্যাধি, যারা এ রোগে ভুগছেন তারাই বোঝেন তারা কোন
কাজ করতে পারেন না, কোন কিছুতে উৎসাহ পান না, ঠিকমতো কারো সঙ্গে কথা বলতে পারেন
না ,সারাদিন কান্নাকাটি করেন। আমাদের আজকের আর্টিকেলের এই পর্বে আমরা আপনাদের
জানাবো ডিপ্রেশন থেকে নিজেকে ভালো রাখার উপায়।
পেজ সূচিপত্রঃ ডিপ্রেশন থেকে নিজেকে ভালো রাখার উপায়
- ভূমিকা
- ডিপ্রেশন কি
- ডিপ্রেশন কেন হয়
- ডিপ্রেশন থেকে নিজেকে ভালো রাখার উপায়
- কিভাবে বুঝবেন আপনি ডিপ্রেশনে ভুগছেন
- উপসংহার
ভূমিকাঃ
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের দিন দিন ডিপ্রেশনে ভোগা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। দিপ্রেশন যে একটি রোগ সেটা অনেকে বোঝেনা বা বুঝলেও তা স্বীকার করতে চায় না। এ প্রসঙ্গে কি ভয়াবহ মানসিক ব্যাধি যারা এ রোগে ভুগছেন তারাই বোঝেন তারা কত কষ্টে আছে ডিপ্রেশনের রোগীরা ।প্রথমে কেউ বুঝতে পারে না দিন দিন অবস্থা খারাপের দিকে নিয়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ মাথায় টাক পড়ার কারণ - ছেলেদের মাথায় টাক পড়ে কেন
শুধু ডিপ্রেশন রোগের কারণে তারা নিজের তো বটে তার সন্তানদের জীবন পর্যন্ত
বিপর্যস্ত হয়ে ওঠে। আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাবো ডিপ্রেশন থেকে
নিজেকে ভালো রাখার উপায়।চলুন জেনে নেওয়া যাক ডিপ্রেশন থেকে নিজেকে ভালো রাখার
উপায়গুলো-
ডিপ্রেশন কিঃ
ডিপ্রেশন খুবই কমন কিন্তু মারাত্মক এক ধরনের মানসিক ব্যাধি যা আপনার অনুভূতি
চিন্তা চেতনা ও কাজ কর্মের ওপর নীতি বাচক প্রভাব ফেলে। আমরা অনেক সময় দুঃখবোধ ও
বিষন্নতাকে ডিপ্রেশন বলে মনে করি এ দুটি কিন্তু এক নয় দুঃখবোধ হলো সাময়িক মন
খারাপ যা অল্প কিছু সময় পরে ঠিক হয়ে যায় এর জন্য কোন চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না
অন্যদিকে ডিপ্রেশন দীর্ঘকালীন সমস্যা যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য উপযুক্ত
চিকিৎসা ও পরামর্শের প্রয়োজন হয় তাহলে তা না হলে ধীরে ধীরে মানুষ মৃত্যুর কোলে
ঢলে পড়ে।
ডিপ্রেশন কেন হয়ঃ
ডিপ্রেশন একটি জটিল রোগ কেনই রোগ হয় নির্দিষ্ট করে কারো পক্ষেই বলা সম্ভব নয়
তবে এর অনেকেরই ক্ষেত্রে কিছু কমন কারণ থাকে যার জন্য এ রোগের উৎপত্তি হতে পারে।
চলুন নিম্নে জেনে নেই ডিপ্রেশন হওয়ার কারণগুলো-
নিরাপত্তাহীনতা বা একাকীত্বঃ
পারিবারিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেক বিষন্নতার শিকার হয় তাছাড়া বাবা-মা
বন্ধুবান্ধব বা অন্য কাছের মানুষদের সঙ্গে সম্পর্কহীনতা বা মতবিরোধ থেকেও অনেক
বিষন্নতার ভোগে থাকেন।
বংশগত প্রভাবঃ
পরিবারে কারো ডিপ্রেশন থাকলে তা অন্যদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
বড় কোন রোগের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ
বড় ধরনের কোন রোগ থাকলে রোগী ডিপ্রেশনের শিকার হতে পারে।
অপমান বোধঃ
মানসিক বা শারীরিকভাবে অপমান ের শিকার হলে অনেকে ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতায় আক্রান্ত
হয়।
মৃত্যু শোকঃ
কাছের মানুষের মৃত্যু অনেকের ক্ষেত্রে বিষন্নতার ঝুঁকি বাড়ায়।
জীবন পদ্ধতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনঃ
চাকুরী হারালে অবসরে গেলে আয় কমে গেলে জায়গা পরিবর্তন করলে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটলে
এমনকি নতুন বিয়ে করলেও অনেকে ডিপ্রেশনের শিকার হয়। জীবনের বড় কোনো পরিবর্তন
ঘটলে তা থেকে অনেকে বিষণ্নতাই ভোগেন।
ঔষধের প্রভাবঃ
নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ সেবনের ফলেও কেউ কেউ বিষন্নতায় আক্রান্ত হয়। যেমন ব্রণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত আইসোত্র টিয়ন বা অ্যান্টিভাইরাল ইন্টারপ্রোন আলফা জাতীয় ঔষধ শ্রবণেও অনেকে বিষন্নতায় আক্রান্ত হয়।
আরো পড়ুনঃ ব্রণ কেন হয় - ব্রণ দূর করার উপায়
ডিপ্রেশন থেকে নিজেকে ভালো রাখার উপায়ঃ
ডিপ্রেশন আপনাকে অসহায় অবস্থায় ফেলে দেবে। পেছন থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন ধরনের
থেরাপি ও চিকিৎসার পাশাপাশি নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। নিজের চেষ্টা না থাকলেও এ
রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। নিজের প্রতিদিনের কাজকর্ম খাওয়া দাওয়া
জীবন প্রণালী এমনকি চিন্তা ভাবনা ও পরিবর্তন আনতে হবে। চলুন নিম্নে জেনে নেই
ডিপ্রেশন থেকে নিজেকে ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে -
লক্ষ্য নিয়ে কাজ করাঃ
ডিপ্রেশন হলে যেহেতু কোন কাজ করতে ইচ্ছা করে না তাই প্রতিদিন একটু একটু করে কাজ
করার জন্য লক্ষণ নির্ধারণ করতে হবে। প্রথম দিন আপনি ঠিক করলেন আপনি আজ একটা মজার
কিছু রান্না করবেন। যদি আপনি সে কাজটা সঠিকভাবে করতে পারেন তবে পরের দিন আরও একটু
বেশি কিছু করার কথা চিন্তা করতে হবে। এভাবে ধীরে ধীরে কাজের সঙ্গে নিজেকে
জড়িয়ে ফেলতে হবে এক সময় তাহলে দেখবেন আপনি ডিপ্রেশন থেকে নিজেকে ভালো রাখতে
পারবেন।
সুষম খাদ্য গ্রহণঃ
আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে আপনি যে খাবার গ্রহণ করেন না কেন সে খাবারে প্রয়োজনীয়
পুষ্টিগুণ থাকতে হবে। কারণ সুষম খাদ্য গ্রহণে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে যেসব খাবারে ওমেগা ৩ এসিড এবং ফলিক এসিড থাকে সেসব খাবার
ডিপ্রেশন থেকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
অনিদ্রা দূর করে দূর করেঃ
ডিপ্রেশনের রোগীদের নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়। সেজন্য পর্যাপ্ত ঘুম ডিপ্রেশন কমায়
তাই প্রথমেই ঘুম সমস্যার সমাধান করতে হবে আপনাকে। প্রতিদিনের জীবনযাপনের কিছু
পরিবর্তন করলেই আপনার নিদ্রাহীনতা দূর হবে। প্রতিদিন ঠিক সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং
সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে আপনাকে। এবং দিনের বেলায় অল্প
কিছুক্ষণ ঘুমের অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। আপনি যে ঘরে ঘুমান বা বিশ্রাম
করেন সেই ঘর থেকে টিভি কম্পিউটার মোবাইল এগুলো সরিয়ে রাখতে হবে। এভাবেই আপনি
নিজেকে ডিপ্রেশন থেকে ভালো রাখতে পারবেন।
আনন্দদায়ক কাজের মধ্যে সময় কাটানোঃ
আপনাকে সব সময় চেষ্টা করতে হবে যাতে নতুন কিছু করার। মজার কোন কাজ করার যেমন
নতুন কোথাও ঘুরতে যাওয়া, মজার মজার বই পড়া, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দেয়া।
আপনার মন ভালো রাখার সব রকম চেষ্টা করতে হবে আপনাকে মন ভালো থাকলে আপনার ডিপ্রেশন
কমে যাবে।
ইতিবাচক চিন্তা করাঃ
আপনি যদি ডিপ্রেশনের রোগী হয়ে থাকেন তাহলে বিভিন্ন রকম নেগেটিভ চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকবে আপনার মনে। যেমন-আমার মত দুঃখ আর কারো নেই, আমি সবার চেয়ে অসুস্থ, এ পৃথিবীতে আমি সবচেয়ে খারাপ মানুষ, এ ধরনের চিন্তা যদি মনের ভেতর ঘুরপাক খেতে থাকে।
তবে আপনি কখনোই সুস্থ হতে পারবেন না। সেজন্য আপনাকে প্রথমে ইতিবাচক চিন্তা
গুলো মন থেকে দূর করে পজেটিভ চিন্তা করার চেষ্টা করতে হবে। যুক্তি দিয়ে সবকিছুর
বিচার করতে হবে অসাহত হওয়া যাবে না কোনোভাবেই।
নিয়মিত ব্যায়াম করাঃ
প্রতিদিন অল্প কিছু সময় ব্যায়াম করলে তা আপনার শরীর এবং মনকে সুস্থ রাখতে
সাহায্য করবে। ব্যায়াম করা মানে ম্যারাথন দৌড় টাইপ কিছু না আপনি যদি প্রতিদিন
কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করেন তবুও তা আপনার মস্তিষ্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে যে
আপনাকে ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
রুটিন মাফিক চলাঃ
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে আপনাকে প্রতিদিনের জীবনকে একটি রুটিনের মধ্যে নিয়ে
আসতে হবে। প্রতিদিনের কাজকর্মকে যদি একটা নিয়মের মধ্যে বেঁধে ফেলা যায় তবে তার
ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
কিভাবে বুঝবেন আপনি ডিপ্রেশনে ভুগছেনঃ
আপনি যদি জানতে চান ডিপ্রেশন হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায় তবে নিম্নের
কাজগুলো থেকে বুঝবেন আপনি ডিপ্রেশনে ভুগছেন-
খাদ্যাভাসের পরিবর্তনঃ
আপনি যদি ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হন তবে রেগুলার খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন দেখা দিবে আপনার। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খাবেন আর নয়তো খাবারের অরুচি দেখা দেবে। ফলে আপনার ওজন খুব দ্রুত বাড়বে অথবা কমতে থাকবে। যা শরীরের জন্য খুবই খারাপ।
অবসাদঃ
আপনি যখন দেখবেন আপনি ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হচ্ছেন তখন আপনার শরীরে কোন এনার্জি
আসবে না। কোন কিছুতেই উৎসাহ পাচ্ছেন না তখন বুঝবেন আপনি একজন ডিপ্রেশন এর রোগী।
আপনি যখন বিষন্নতায় আক্রান্ত হবেন তখন অবসাদ আপনাকে গ্রাস করবে এবং ধীরে
ধীরে ডিপ্রেশনের দিকে নিয়ে যাবে।
সবকিছুতেই মনোযোগের অভাবঃ
আপনি যদি ডিপ্রেশন এর রোগী হয়ে থাকেন তবে আপনার কোন কিছুতেই ঠিকভাবে মননিবেশ
করতে পারবেন না অন্যদের কথায় মন দিয়ে শুনতে পারবেন না বা কোন আলোচনায় অংশগ্রহণ
নিতে পারবেন না।
মাথা ব্যাথা ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাঃ
কেউ তো মাথা ব্যথা ও হজমের সমস্যা ও ডিপ্রেশনের লক্ষণ।
সব বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাবঃ
দুঃখ পদ ও আশাহীনতা ও হতাশা আপনাকে ঘিরে ফেলবে। সবকিছুতেই নেতিবাচক মনোভাব দেখা
দিতে থাকবে আপনার।
আরো পড়ুনঃ লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা ও অপকারিতা
নিজের মধ্যে গুটিয়ে যাওয়াঃ
আপনি যখন বিষন্নতায় থাকবেন তখন নিজেকে নিজের মধ্যে গুটিয়ে ফেলবেন। পরিবার ও
বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে ভালো লাগবে না। সামাজিকতার অনেক সময় অসহনীয় হয়ে দেখা
দেবে একাকীত্ব ঘিরে ফেলবে আপনাকে যা আপনার অসুস্থতা আরও বাড়িয়ে তুলবে।
উপসংহারঃ ডিপ্রেশন থেকে নিজেকে ভালো রাখার উপায়
আপনি যদি বিষন্নতা থেকে মুক্তি পেতে চান তবে আপনাকে প্রথমেই জানতে হবে বিষন্নতা কি বিষন্নতা কেন হয় বিষন্নতার লক্ষণ কি কি যদি আপনি এটা নিশ্চিত হতে পারেন এবং আপনার এ রোগ আছে তবে তা সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সেরে উঠতে পারেন। প্রিয় পাঠক বন্ধুরা যারা আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়েছেন।
তারা নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন ডিপ্রেশন থেকে নিজেকে ভালো রাখার উপায়গুলো। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url