টনসিল কেন হয় - টনসিলের চিকিৎসা ও প্রতিকার

 আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আপনারা যারা আজকে জানতে চেয়েছেন টনসিল কেন হয় - টনসিলের চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য। আমরা অনেকেই মনে করি গলায় ব্যথা হলে সাধারণত আমরা ধরে নেই টন ছিলে ইনফেকশন হয়েছে। টনসিল হলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী অঙ্গ এবং এগুলো মুখের ভেতরে কয়েকটি গ্রুপে অবস্থান নেই। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক টনসিল কেন হয় - টনসিলের চিকিৎসা ও প্রতিকার।

টনসিল কেন হয় - টনসিলের চিকিৎসা ও প্রতিকার
টনসিল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর কারণ ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। সাধারণত কম বয়সী শিশুরা জনিত কারণে (যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দ্বারা ) টনসিলে আক্রান্ত হয়। শীতের দিনে মৌসুম শুরু হওয়ায় টনসিলাইটিস এর প্রকোপ বাড়ে। ৫ থেকির ১৫ বছর বয়সী শিশুর টনসিলাইটিস হতে পারে। 

সূচিপত্রঃ টনসিল কেন হয় - টনসিলের চিকিৎসা ও প্রতিকার

  • ভূমিকা
  • টনসিল কেন হয়
  • টনসিল হওয়ার কারণ
  • টনসিল হওয়ার লক্ষণ
  • টনসিল এর চিকিৎসা
  • টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবেনা
  • টনসিল এর অপারেশন কখন করতে হয়
  • টনসিল হলে করণীয়
  • উপসংহার

ভূমিকাঃ

টনসিল একটি ভাইরাস জনিত রোগ। টনসিল আক্রান্ত শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে এটা চলতে থাকলে তাদের শ্বাস ও হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন রোগ হতে পারে। টনসিল ও এডিনয়েড শিশুদের চার থেকে দশ বছর বয়সের মধ্যে খুব সক্রিয় থাকে। আসলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবে কমে যায়।

আরো পড়ুনঃ জন্ডিস রোগের লক্ষণ, কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার

যে কারণে অন্যান্য সময় থেকে রোগ জীবাণু বেশি আক্রান্ত হয় বিশেষ করে শিশুরা শীতকালের রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। সাধারণত সন্ধিক্ষণ বা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরবর্তী সময়ে বিলীন হয়ে যায়। সাধারণত টনসিল ও অ্যাডিনয়েডের প্রদাহ ছাড়াও টনসিলের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য নানা জটিল রোগে ভুগে থাকে। আর কথা না বাড়িয়ে চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক টনসিল কেন হয় - টনসিলের চিকিৎসা ও প্রতিকার।

টনসিল কেন হয়ঃ 

টনসিল হলো স্পষ্ঠ কালীর মুখী অবস্থিত অঙ্গ গুলির একটি সেট। যা ওয়াল ড্রয়ারের টনসিলের রিং নামে পরিচিত। টনসিলের সমস্যা হলে অনেক সময় মুখ গলা নাক ও কান দিয়ে শরীরের অভ্যন্তরে জীবাণু প্রবেশে বাধা দেয়। ভোগ গিলতে কষ্ট হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় টনসিল কে টনসিলাইটিস বলা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একটি শিশুদের হলেও পূর্ণবয়স্কদেরও এই রোগ হতে পারে।

চিকিৎসকদের ভাষায় টনসিল ফুলে যাওয়ার অনেকগুলো কারণ আছে। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক টনসিল কেন হয় এর ছয়টি কারণ-

  • ভাইরাস সংক্রমণ
  • ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ
  • টনসিলে পাথর
  • পাকস্থলীর এসিড
  • ক্যান্সার
  • সিফিলিস ও গনোরিয়া প্রভৃতি যৌনবাহিত রোগ 

টনসিল হওয়ার কারণঃ

আইসক্রিম বা ফ্রিজের আঁকা শীতল পানি বেশি পরিমাণে পান করলে টনসিল হতে পারে। অন্যদিকে আপনার শরীরে যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, এবং মুখ ঠিকমতো পরিষ্কার না রাখা ক্ষতিকর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ টনসিলার ইনফেকশনের কারণও হতে পারে। সাথে বাসস্থান ঠান্ডা আবহাওয়া শীতের প্রকোপ বেশি হলে গরমে ঘাম বসে গেলে টনসিলের প্রদাহ বেড়ে যেতে পারে। এমতাবস্থায় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে শরীরে টনসিলের ভাইরাস প্রবেশ করতে না পারে। 

টনসিল হওয়ার লক্ষণঃ

নিম্নে বর্ণিত লক্ষণ গুলো যদি আপনার শরীরের লক্ষ্য করেন তবে বুঝতে হবে আপনি টন্সিলে আক্রান্ত। চলুন নিম্নে জেনে নেই টনসিল হওয়ার লক্ষণগুলো-

  • মাঝারি থেকে তীব্র জ্বর।
  • মাথাব্যথা, কানে ব্যথা।
  • গলার স্বরে পরিবর্তন।
  • টনসিলের আকার যদি বেশি বড় হয়ে যায় তবে শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে।
  • মুখে দুর্গন্ধ ও মুখ থেকে লালা ঝরে।
  • গলা ব্যথা খাবার এবং শিশু খেতে চায় না অনেক সময় বমিও হতে পারে।

এমতাবস্থায় যদি আপনি টস দিয়ে গলার ভিতরে দেখেন তবে দেখতে পাবেন দুদিকের টনসিল লাল হয়ে ফুলে গেছে। অনেক সময় এর ওপর হলুদ বা সাদা আস্তরণ পড়ে। এছাড়া গলার দুইপাশের চাকার মত লিম্ফ নোট বড় হয়ে যায় ও ব্যথা করে।

আরো পড়ুনঃ শীতকালে মাথায় খুশকি দূর করার ঘরোয়া ১৩ টি উপায়

টনসিল এর চিকিৎসাঃ

টনসিল এর চিকিৎসার জন্য প্যারাসিটামল ব্যথা না শোক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া গরম পানি ও লবণ দিয়ে কুলকুচি, আদার রস, মধু ইত্যাদি গরম তরল জাতীয় খাবার গ্রহণে উপকারে আসে। তবে ব্যাকটেরিয়াজনিত টনসিল হলে এসবের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক ঔষধ খেতে হবে। মনে রাখতে হবে অ্যান্টিবায়োটিকের পুরো কোর্স সম্পূর্ণ না করলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে আপনার শরীরে। 

টনসিল হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবেনাঃ

আপনি যদি টন ছিলে আক্রান্ত ব্যক্তি হয়ে থাকেন তবে নিম্ন বর্ণিত খাবার গুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

  • অ্যালকোহল।
  • আচার।
  • টক জাতীয় ফল। 
  • ঝাল খাবার।
  • ফাস্ট ফুড।
  • চর্বিযুক্ত খাবার।
  • শক্ত খাবার যেমন -চিপস, কাঁচা সবজি, গাজর
  • সিগারেট।
  • টমেটো এবং টমেটো সস।

আপনি যদি টনসিলের রোগী হয়ে থাকেন তবে এই চারটি খাবার আপনাকে আরাম দেবেঃ

লবণ পানিঃ

একটু গরম পানিতে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করুন আরাম পাবেন।

মধু গ্রিন টিঃ

হাফ চা চামচ গ্রিন টি ও এক চা চামচ মধু পানিতে গুলিয়ে ১০ মিনিট সিদ্ধ করুন। যা ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়বে।

মধু ও লেবুঃ 

এক গ্লাস গরম পানিতে , একটি লেবু এক চা চামচ ও এক চিমটি লবন গুলিয়ে খান এতে ভালো উপকার পাবেন।

দূধ ও হলুদঃ 

এক কাপ দুধে সামান্য হলুদ মিশিয়ে নিন এবং খেয়ে ফেলুন। হলুদ ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও এন টি অক্সিডেন্ট রয়েছে

টনসিল এর অপারেশন কখন করতে হয়ঃ

টনসিলাইটিসের চিকিৎসা হিসেবে সব ক্ষেত্রে টনসিলের টমি অপারেশন বা টনসিল ফেলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যদি বারবার ইনফেকশন হয় (বছরের সাতবার বা পর পর দুই বছর বছরে পাঁচবারের বেশি ) জমে যায় অতিরিক্ত বড় টনসিলের কারণে শ্বাসকষ্টের সমস্যা অথবা ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যাঘাত বা আবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ এপনিয়া হয়। সেসব ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী অপারেশন করা যেতে পারে।

যে অবস্থায় টনসিলের অপারেশন করা যাবে নাঃ

  • জ্বর বা ব্যথা থাকা অবস্থায় করা যাবে না টনসিলের অপারেশন।
  • যদি কারো রক্ত রোগ থাকে যেমন থেলাছমিয়া। এবং রক্ত রোগ থাকলে টনসিলের অপারেশন করা যাবে না এছাড়া ডায়াবেটিস উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না এনে অপারেশন করা যাবে না।
  • অ্যাাকিউট ইনফেকশন থাকলে টন ছিলে অস্ত্র পাচার করা যাবে না। তখন ইনফেকশন সারা শরীরে ছড়িয়ে যেতে পারে এবং রক্তপাত বন্ধ নাও হতে পারে। 

টনসিল হলে করণীয়ঃ

আপনার শরীরে যদি টনসিলের ইনফেকশন হয়ে থাকে তবে নিম্নে বর্ণিত উপায় গুলো মেনে চলতে পারেন-

  • পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে যতদিন সুস্থ না হবেন।
  • বারবার কলি বা মাউথ ওয়াশ করতে হবে।
  • লেবু বা আদা চাও খেতে পারেন।
  • গলায় ঠান্ডা লাগানো যাবে না।
  • সাধারণত স্যালাইন বা লবন মিশ্রিত গরম পানি দিয়ে বারবার কুলি করতে হবে।
  • মুখের হাইজিন বা ওয়াল হাইজিন ঠিক রাখতে হবে।
  • প্রচুর পরিমাণে কুসুম গরম পানি ও তরল খাবার পান করতে হবে।

নিয়মিত ঔষধ খেলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও নিয়ম মেনে চললে রোগী সাধারণত ১ থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যে পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে অপর্যাপ্ত চিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশন বা ক্রনিক টনসিলাইটিস হতে পারে এবং কিছু অন্যান্য শারীরিক জটিলতা যেমন কিডনিও হাটের বাল্বের সমস্যাও হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ শুকনো কাশির সমস্যায় ঘরোয়া ১২ টি প্রতিকার

উপসংহারঃ টনসিল কেন হয় - টনসিলের চিকিৎসা ও প্রতিকার

পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, দীর্ঘমেয়াদী টনসিলাইটিস এর চিকিৎসা সাধারণত অস্ত্রপাচার বা অপারেশন। যদি বারবার টনসিলাইটিস হয় বা এর জন্য অন্য কোন জটিলতার সৃষ্টি হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে টনসিল ফেলে দেওয়াই ভালো। 

আমাদের সঙ্গে থেকে এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে এবং আপনি এটা থেকে যদি উপকৃত হন তবে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। এবং এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url