তেজপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা - তেজপাতার ঔষধি গুনাগুন
আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আপনারা যারা আজকে জানতে চাইছেন তেজপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা - তেজপাতার ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য। আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাবো তেজপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা - তেজপাতার ঔষধি গুনাগুন। তেজপাতা আমাদের প্রতিটি রান্নাঘরের প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। তেজপাতা হল সুগন্ধিযুক্ত একটি পাতা প্রাচীনকাল থেকেই তেজপাতা ওষুধ তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়। তেজপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা - তেজপাতার ঔষধি গুনাগুন।
তেজপাতা সিদ্ধ জাতীয় খাবারের সুগন্ধ যোগ করতে ব্যবহার করা হয়। মসলা হিসেবে তেজপাতার বহুল ব্যবহার রয়েছে। এর ভেষজ গুণ শুধু খাবারের শাড়ি বাড়ায় না স্বাস্থ্য সুরক্ষাতেও এর ভূমিকা অপরিসিম। তেজপাতা বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও চীনে বেশি উৎপন্ন হয়। আর কথা না বাড়িয়ে চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক তেজপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা - তেজপাতার ঔষধি গুনাগুন।
ভূমিকাঃ
সাধারণত তেজপাতা তাজা এবং শুকনো দুই অবস্থায় পাওয়া যায়। তেজপাতার গুড়াও বর্তমানে পাওয়া যায়। তেজপাতার স্বাস্থ্য গুণ এবং সৌন্দর্য বর্ধক উপাদানের সম্পর্কে স্বাস্থ্য বিষয়ক এক ওয়েবসাইটে জানানো হয় এ সুগন্ধ পাতা পারফিউম তৈরিতে ব্যবহৃত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ঔষধ তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়।
তেজপাতার প্রাচীনকাল থেকেই খাবারের স্বাদ বাড়াতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তেজপাতা হল ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, আইরণ, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং এন্ট্রক্সিডেন্ট এর একটি ভালো উৎস। তেজপাতা হজম শক্তি বাড়াতে দুর্দান্ত কাজ করে। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে এবং কার্যকারিতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
তেজপাতার উপকারিতাঃ
তেজপাতার উপকারিতা অনেক। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক তেজপাতার উপকারিতা কি কি-
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে তেজপাতা। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে তেজপাতা।
শ্বাসতন্ত্রের জন্যঃ
শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে তেজপাতা। তেজপাতা শ্বাসতন্ত্রে উন্নতিতে সাহায্য করে। তেজপাতার নির্যাস এর মধ্যে প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য আছে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এছাড়াও তেজপাতা ব্যথা নাশক হিসেবেও কাজ করে।
ছত্রাক সংক্রমণঃ
ছত্রাক সংক্রমণ এড়িয়ে চলতে সাহায্য করে তেজপাতা। কারণ তেজপাতার মধ্যে আছে অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণ এটি খামির সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে এছাড়াও তেজপাতার তেল ত্বকের ছত্রাক সংক্রমণের জন্য ব্যবহার করা হয়।
ক্ষত নিরাময়ে সহায়কঃ
ক্ষত নিরাময় সাহায্য করে তেজপাতা। তেজপাতার নিঃশ্বাসে দানাদার সাহায্য করতে পারে। অর্থাৎ তেজপাতা ক্ষত নিরাময়ের সাহায্য করে।
ওজন কমাতেঃ
ওজন কমাতেও সাহায্য করে তেজপাতা। তেজপাতা এমন একটি সুযোগাদান যা খিদে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তেজপাতা খাওয়ার পর অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ এড়াতে পারেন ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন আপনি।
চুলের জন্যঃ
চুলের জন্য তেজপাতা আমাদের খুবই উপকারী একটি উপাদান। চুলের গোড়াকে ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনের হাত থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। কারণ তেজপাতা তে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গালের বৈশিষ্ট্য।
তেজপাতার চাঃ
তেজপাতার গুঁড়ো রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। সেজন্য যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তারা তেজপাতা সিদ্ধ তৈরি চা পান করলে উচ্চ রক্তচাপ কমতে পারে। তেজপাতার রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপের রোগী হয়ে থাকেন তবে প্রতিদিন তেজপাতার চা খেতে পারেন।
ত্বকের জন্যঃ
তেজপাতা ত্বকের জন্য উপকারী একটি উপাদান কারণ তেজপাতা অপরিহার্য তেল প্রসাধনীশিল্পে ক্রিম পারফিউম এবং সাবান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি ত্বকে গভীরে গিয়ে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে কারণ তেজপাতার মধ্যে আছে এসটিজেন্ট বৈশিষ্ট্য।
কোলেস্টেরল এবং হার্টের জন্যঃ
আপনি যদি একজন কোলেস্টেরল এবং হার্টের রোগী হয়ে থাকেন তবে তেজপাতা নিয়মিত শ্রবণ করলে কোলেস্টেরল এবং হাটের কার্যক্ষমতা সঠিক থাকবে। কারণ তেজপাতার মধ্যে কিছু ফেমেলিক যৌগ আছে যা এনটিঅক্সিডেন্ট এর কার্যকলাপের কারণে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে আর সেই সঙ্গে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
কিডনি সমস্যা প্রতিরোধেঃ
আপনি কি কিডনি সমস্যায় ভুগছেন তবে আপনার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত তেজপাতা রাখুন কারণ তেজপাতার নির্যাস ঐতিহ্যগতভাবে কিডনি ও মন্ত্রণালী পাথরের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে। তেজপাতার মধ্যে লরিক এসিড আছে যা কিডনি সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে।
ফোলা কমাতেঃ
তেজপাতার মধ্যে উপস্থিত সিনিয়র নামক একটি উপাদান প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে এবং আপনার শরীরে যদি কোথাও ব্যথা ও ফলা থেকে থাকে তবে আপনি ওষুধ হিসেবে তেজপাতা ব্যবহার করতে পারেন।
ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ
তেজপাতার মধ্যে ক্যান্সার প্রতিরোধ উপাদান রয়েছে। তেজপাতা ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে। তেজপাতার মধ্যে যে বৈশিষ্ট্য আছে তা করুন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তেজপাতার নির্যাসে এন্টি কাজিনো জেনি প্রভাব আছে যা স্তন ক্যান্সারের বৃদ্ধিতে বাধা দিতে পারে।
দাঁতের জন্যঃ
তেজপাতার অপরিহার্য তেল মুখের মধ্যে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এছাড়া তেজপাতার ছাই দিয়ে ব্রাশ করলে মাড়ি শক্ত হয়। তেজপাতার ডাল কিছু উদাই তেল থাকে যেটা রক্ত প্রবাহকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
তেজপাতার অপকারিতাঃ
তেজপাতার যেমন বহু উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর অপকারিতাও রয়েছে। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক তেজপাতার অপকারিতা গুলো-
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য শুধুমাত্র একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে তেজপাতা খাওয়া উচিত।
- তেজপাতায় প্রচুর পরিমাণে এলার্জি রয়েছে। তেজপাতা থেকে তৈরি অপরিহার্য তে সংবেদনশীল ত্বকে এলার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় তেজপাতা বা এর এর সম্প্রক গ্রহণ সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই সেজন্য আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন তবে তেজপাতার ব্যবহার করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর ব্যবহার করুন।
- তেজপাতা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে ধীর করার জন্য অন্য ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে। সেজন্য অস্ত্র পাচারের কমপক্ষে দুই সপ্তাহ আগে তেজপাতা খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
তেজপাতা দেখতে কেমন হয়ঃ
তেজপাতা হচ্ছে সুগন্ধযুক্ত একটি পাতা। । এটি লরাস পরিবারের অন্তর্গত। তেজপাতা প্রায় এক হাজার বছর ধরে খাবার এবং ওষুধের ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রায় আড়াই হাজার প্রজাতি রয়েছে তেজপাতার। বেশিরভাগ তেজ পাতায় পাওয়া যায় পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ ও উত্তর আমেরিকা থেকে।
তেজপাতার দুটি প্রজাতি আমরা ব্যবহার করে থাকি প্রথমটি হলো লরাস আজোরিকা এবং অন্যটি হলো এল নবিলিস। তেজপাতা প্রধানত শকুনের পরেই ব্যবহার করা হয়। তেজপাতা সাধারণত মসলা অপরিহার্য তেল এবং ঐতিহ্যগত ওষুধের ব্যবহৃত হয়।
তেজপাতা কিভাবে খাওয়া যায়ঃ
তেজপাতার বহু উপকারিতা রয়েছে সেজন্য তেজপাতা কে নারা ভাবেই খাওয়া যায়। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক তেজপাতা কিভাবে খাওয়া যায়-
- তেজপাতা হল একটি মসলা। তাই এটি খাবারের স্বাদ বাড়াতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- তেজপাতা পায়েস ক্ষীর এই জাতীয় মিষ্টি খাবারে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
- অনেকে লিখার চায়ের সঙ্গেও তেজপাতা ব্যবহার করে থাকেন।
- চুলের জন্য এক কাপ জলে কিছু তেজপাতা সিদ্ধ করে মিনিট ১৫ পর জল থেকে পাতাগুলো বের করতে হবে এরপর ঠান্ডা হয়ে গেলে চলে শ্যাম্পু করার পর ওই জল চুল এবং মাথার ত্বকে ভালোভাবে লাগাতে হবে তাহলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
- ঠান্ডা এবং হজমের মতো সমস্যা দূর করার জন্য তেজপাতা জল সিদ্ধ করে পান করতে হবে।
- ব্যথা এবং প্রদাহ থেকে মুক্তি পেতে তেজপাতার তেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ব্যথার স্থানে কয়েক ফোটা তেল লাগিয়ে হালকা করে ম্যাসাজ করতে হবে।
তেজপাতার পুষ্টিগুণঃ
তেজপাতায় প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক প্রতি ১০০ গ্রাম তেজপাতার পুষ্টিগুণ-
- খাদ্যশক্তি ৩১৩ ক্যালোরি
- জল ৫.৪৪ গ্রাম
- প্রোটিন ৭.৬১ গ্রাম
- ফ্যাট ৮.৩৬ গ্রাম
- ফাইবার ২৬.৩ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট ৭৪.৯৭ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম ৮৩৪ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি ৪৬.৫ মিলিগ্রাম
- আইরন ৪৩.০ মিলিগ্রাম
তেজপাতার ঔষধি গুনাগুনঃ
তেজপাতা নানা রকম ভাবে আমরা খাবারের সুগন্ধে যোগ করতে এ পাতা ব্যবহার করে থাকি। কারণ তেজপাতা একটি সুগন্ধযুক্ত ঔষধি পাতা। প্রাচীনকাল থেকেই তেজপাতা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়ে আসছে ওষুধ হিসেবে। নেওয়া যাক তেজপাতার ঔষধি গুনাগুন গুলো-
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
- ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে।
- গলা খুসখুস ও কাশি দূর করে।
- চাপ কমায়।
- কিডনির পাথরের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
- ক্ষত নিরাময় করে।
- ব্যথা উপশম করে।
- হজমে সাহায্য করে।
- চুলের বৃদ্ধি ও খুশকি তাড়াই।
উপসংহারঃ তেজপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা - তেজপাতার ঔষধি গুনাগুন
পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, তেজপাতায় প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুবই প্রয়োজনীয়। আপনি যদি আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে থাকেন তবে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন তেজপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা - তেজপাতার ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে।
আমাদের আজকের আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার পরে যদি আপনি উপকৃত হন তবে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। এবং এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url