শীতকালে মাথায় খুশকি দূর করার ঘরোয়া ১৩ টি উপায়
আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক আজকে আমাদের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাবো শীতকালে মাথায় খুশকি দূর করার ঘরোয়া ১৩ টি উপায় সম্পর্কে। প্রকৃতিতে শীতের হাওয়া লেগে গেছে। এ সময়ে ত্বকের যেমন বিশেষ যত্ন নিতে হয় তেমনি চুলেরও বিশেষ যত্ন নিতে হয়। শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়ার কারণেই চুলে খুশির সমস্যা দেখা দেয়। আর এই খুশকির সমস্যা থেকে চুলকে রক্ষা করতে আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাবো শীতকালে মাথায় খুশকি দূর করার ঘরোয়া ১৩ টি উপায়।
আপনার মাথার চুল যদি অত্যাধিক ঝরে এবং চুল যদি রুক্ষ হয় অথবা ইনফেকশনের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দায়ী এই খুশকি। তাই খুশির সমস্যার সমাধানের সঠিক সময়ে তৎপর না হলে মাথা ভরা চুল ঝরে গিয়ে অল্প দিনের মধ্যে তালু হয়ে যেতে পারে আপনার মাথা। সেজন্য আমাদের আজকের আর্টিকেলের এই পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো শীতকালে মাথায় খুশকি দূর করার ঘরোয়া ১৩ টি উপায়।
সূচিপত্রঃ শীতকালে মাথায় খুশকি দূর করার ঘরোয়া ১৩ টি উপায়
- ভূমিকা
- খুশকি কি
- খুশকির ধরন
- খুশকির সমস্যা কেন হয় মাথায়
- ঘরোয়া ভাবে খুশকি দূর করার উপায়
- উপসংহার
ভূমিকাঃ
দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি যে প্রতিদিনের জীবনযাপনের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় চুল। তাই সপ্তাহে শুধু একদিন নয় পারলে প্রতিদিনই চুলের যত্ন নিন। কারণ নারীর সৌন্দর্যের বড় একটি অংশই হল দীঘল কালো ঝলমলে সুন্দর চুল। আর এই চুলের কারণেই মেয়েদেরকে সুন্দর লাগে বেশি। কিন্তু খুশকির কারণে সেই চুলগুলোকে আর সুন্দর রাখা যায় না ফলে নারী হারায় তার চুলের সৌন্দর্য।
মাথা থেকে খুশকি চিরতরে দূর করতে চাইলে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাবো শীতকালে মাথায় খুশকি দূর করার ঘরোয়া ১৩ টি উপায়।
খুশকি কিঃ
বর্তমানে মাথায় কখনো খুশকি হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। খুশকি আসলে ত্বকের মরা কোষ। মাথার ত্বক বা স্কেলপে নতুন কোর্স তৈরির পাশাপাশি এর আবির্ভাব ঘটে। তাতে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হলেই মাথা চুলকায়।
খুশকির ধরনঃ
খুশকি প্রধানত দুই রকমের হয়ে থাকে-ছোট ও বড়।
ছোট খুশকিঃ
ছোট খুশকি সাধারণত বোঝা যায় না চুল আচড়ালে চিরনিতে আঠার মতো লেগে থাকে। মাথা খুব চুলকায় নিয়মিত আপনি যদি মাথার চুল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন এবং চুলের পরিচর্যা করেন তবে এগুলো দূর হয়।
বড় খুশকিঃ
অন্যদিকে বড় খুশকি মারাত্মক। চুলের ওপর ভেসে থাকে। এ ধরনের খুশকিতে চুল পড়ে চোখ চুলকায় এমনকি এগুলোর জন্য ব্রণ ও হয়।
খুশকির সমস্যা কেন হয় মাথায়ঃ
১। মাথায় ঘন ঘন তেল দিলে ত্বক চিটচিটে হয়ে খুশকি জমে।
২। স্কাল তৈলাক্ত কিংবা বেশি সিল্ক হলেও বেশি খুশ্কি হওয়ার প্রবণতা থাকে।
৩। সঠিক পদ্ধতিতে সঠিক শ্যাম্পু ব্যবহার না করলে খুশকি হয়।
৪। ধুলা ময়লা চুলের ভেতর জমে খুশকিতে পরিণত হতে পারে।
৫। ত্বকের সমস্যা যেমন- সেবেরিক ডার্মাটাইজ, সেরিআসিস, একজিমা, ফাঙ্গাল ইনফেকশন এবং অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন বা সংক্রমণ খোস্কির মতো মনে হতে পারে।
৬। চুল অপরিষ্কার থাকলে খুশি হবেই আপনার মাথায়।
৭। পানি কম খাওয়ার অন্যতম কারণ হলো মাথায় খুশকি হওয়া।
৮। ভেজা চুল বেশিক্ষণ বেঁধে রাখলে খুশকি এবং তা থেকে পরবর্তীতে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে।
৯। মানুষের দুশ্চিন্তাও খুশকির জন্য দায়ী।
আরো পড়ুনঃ
ঘরোয়া ভাবে খুশকি দূর করার উপায়ঃ
শীতে মাথায় ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে চুল পড়ার মাত্রা বেড়ে যায়। সাধারণত প্রতিদিন ১০০ টির মত চুল পড়া স্বাভাবিক তবে শীতের পরিমাণ বেড়ে যায়। চলুন নিম্নে ঘরোয়াভাবে খুশকি দূর করার উপায় জেনে নেই-
১। সারারাত পানিতে মেথি ভিজিয়ে বেটে নিন। সেই পেস্টটা চুলের গোড়ায় লাগিয়ে আধা ঘন্টা রেখে এন্টি ড্রাফ শ্যাম্পু বা রিঠা দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
২। নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল গরম করে চুলের গোড়ায় ঘষে ঘষে লাগান।
৩। বিট সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে প্রতিদিন চুলের গোড়ায় মেসেজ করুন উপকার পাবেন।
৪। রাতে শোয়ার আগে লেবু ও আমলকির রস মিশিয়ে মাথায় লাগান এবং সকালে শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিন।
৫। টক দই এর সঙ্গে পাতিলেবুর রস ও নিম পাতার রস মিশিয়ে মাথায় মেখে আধাঘন্টা পর শ্যাম্পু করুন।
৬। এলোভেরা রস নিয়ে তার সঙ্গে নিম পাতার পেস্ট মিশিয়ে নিন, চাইলে এতে কিছুটা আমলকির তেলও দিতে পারেন এটি পুরো চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। মিশ্রণটি আপনার চুলকে করবে ঝরঝরে এবং উজ্জ্বল।
৭। গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে তা মাথায় পেঁচিয়ে রাখুন। গরম ভাব চুলের হারিয়ে যাওয়া পুষ্টি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে পাশাপাশি চুলের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
৮। নারকেল তেল এবং লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে মাথার তালুতে লাগালে দারুন কাজ করে। কারণ ক্ষতিকারক কেমিক্যাল এর থেকে নারকেল তেল এবং লেবুর রসের মিশ্রণ খোসকি তাড়াতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল গরম করতে হবে তারপর সেই মিশ্রণ লাগাতে হবে মাথায়। বিশ মিনিট রেখে ভালো করে শ্যাম্পু করে নিতে হবে।
৯। মেথির হেয়ার প্যাক ব্যবহার করলে খুব সহজে খুশকির হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও মেথি চুল পড়া অকালপক্কতা এবং উকুনের মতো সমস্যায় দূর করতেও কাজে আসে। এমনকি চুলের গোড়া শক্ত করতে এবং চুলকে ঝলমলে রাখতে পারে মেথি। সারারাত অল্প পরিমাণ পানিতে মেথি জানা ভিজিয়ে রাখতে হবে তারপর জল থেকে মেথি আলাদা করে বেটে নিতে হবে। এবার বেটে রাখা মেথি এক ঘন্টার জন্য চুলের গোড়ায় মেখে রেখে দিতে হবে সময় হয়ে গেলে হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। এতে করে আপনার চুল হবে ঝলমলে সুন্দর ও খুশকি মুক্ত।
১০। চুলের ভিত্তিতে বেকিং সোডা সমানভাবে উপকারী তাই ঘরোয়া পদ্ধতিতে খুশকি তাড়াতে হলে অবশ্যই আপনি বেকিং সোডা ব্যবহার করতে পারেন। বেকিং সোডা ব্যবহারের জন্য আপনাকে প্রথমে চুল সামান্য ভিজিয়ে নিতে হবে এরপর এক চা চামচ বেকিং সোডা নিয়ে চুলের গোড়ায় ভালোভাবে মালিশ করতে হবে এরপর ৬০ থেকে ৯০ সেকেন্ড পরে চুল ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এতে করে আপনার চুলের গোড়া হবে মজবুত এবং খুশকি মুক্ত।
১১। আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহারে আপনার চুলের সৌন্দর্য সারা জীবনের জন্য নষ্ট হবে না। আপনার চুলকে খুশকি মুক্ত রাখার জন্য প্রথমে সমপরিমাণ আপেল সিডার ভিনেগার এবং পানি নিয়ে মেশাতে হবে এরপরে চুল ভিজিয়ে ওই মিশ্রণটি ভেজা চুলে লাগাতে হবে এবং ভালো করে মালিশ করে ১৫ মিনিটের জন্য চুল রেখে দিতে হবে তারপর ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
১২। চুলের সৌন্দর্য আনতে হেনার গুরুত্ব অপরিসীম। চুলকে ঘন লম্বা এবং মজবুত করতে যেমন হেনা সাহায্য করে তেমনি হেনা খুশকি দূর করতেও কাজ করে। এরার সঙ্গে চায়ের লিকার দই এবং কয়েক ফোটা লেবুর রস মেশাতে হবে এবার ওই মিশ্রণটি ৮ ঘণ্টা ধরে একটি পাত্রে ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে। এবার চুলের গোড়া এবং চুলে লাগাতে হবে ভালো করে। তার পর দুই ঘন্টা রেখে চুল ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এই মিশ্রণটি আপনার চুলে লাগালে আপনার চুল হবে খুশকি মুক্ত এবং কোমল।
১৩। আপনি যদি ঘরোয়া পদ্ধতিতে আপনার চুলকে খুশকি মুক্ত রাখতে চান তবে আপনি টি ট্রি অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। আপনি যদি নিয়ম করে এই তেলটি ব্যবহার করেন তবে আপনার চুল হবে খুশকি মুক্ত। কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল চুলের গোড়ায় দিতে হবে এবং ভালো করে মালিশ করতে হবে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url