পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা এবং পুষ্টিগুন
আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাবো পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ। পালং শাকে আছে উচ্চমাত্রার ম্যাগনেসিয়াম যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। পালং শাক এর আদিবাস মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া। পালং শাক এক প্রকার সপুষ্পক উদ্ভিদ।
সূচিপত্রঃ পালংশাক খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ
ভূমিকাঃ
মাত্রা অতিরিক্ত যে কোন খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আপনার নিয়মিত খাদ্য তালিকায় পালং শাক রাখুন কারণ পালং শাক পুষ্টিতে ভরপুর একটি শাক। পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল তার মধ্যে ভিটামিন এ বি ২ সি ই কে আয়রন ম্যাগনেসিয়াম ক্যালসিয়াম ফসফরাস জিংক কপার ও প্রোটিন এগুলি তো আছেই।
শুধু তাই নয় অক্সিডেন্টিভ স্পেস কমিয়ে হার মজবুত করতে পালং শাক খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের আজকে রাতে গেলে এই পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ। পালং শাক সুপার ফুড হিসেবে বিবেচিত হয়েছে এবং ব্যাপকভাবে স্বাস্থ্যকর সবজিগুলির মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত হয়।
পালং শাক খাওয়ার উপকারিতাঃ
একটি সবুজ শাক শাক যা পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা দিয়ে পরিপূর্ণ। পালংশাকে নানা রকম স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে যেগুলো আমরা অনেকেই জানিনা। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা গুলো-
ত্বক ফর্সা হয়ে ওঠেঃ
পালং শাকে উপস্থিত ভিটামিন কে এবং ফলেট ত্বককে ফর্সা করে তোলার পাশাপাশি ডার্ক সার্কেল দূর করতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে পালং শাক দিয়ে বানানো পেস্ট যেমন মুখে লাগাতে পারেন তেমনি পালংশাকের রস খেলেও সমান উপকার পাওয়া যায়।
স্বাস্থ্যকর ত্বক প্রদান করেঃ
পালং শাক এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ যা আপনার স্বাস্থ্যকর ত্বক প্রদান করতে সাহায্য করে। আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা ভিটামিন এ ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রোশন থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে এবং অকাল বাধ্যক্য প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে ভিটামিন এ।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করেঃ
পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট কম এবং ফাইবার বেশি যার রক্তের সরকারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে। পালংশাকের ডায়াবেটিস আছে যা ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি আছে এমন লোকদের জন্য এটি একটি দুর্দান্ত বিকল্প হিসেবে কাজ করে। সেজন্য আপনার ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে আপনি পালং শাক খেতে পারেন।
হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ
পালং শাকের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কেউ রয়েছে সক্রিয় করতে সাহায্য করে এবং হাড় গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে। পালং শাক ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস যা হারের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য আপনি যদি হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চান তবে আপনার খাদ্য তালিকায় পালং শাক যোগ করুন।
চোখের স্বাস্থ্য ভালো করেঃ
লুকিয়ে এবং জিক্সেন থিম দুটি এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পালংশাকে যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি এন্টিঅক্সিডেন্ট গুলির ক্ষতিকারক ইউভি রশ্নির দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি থেকে চোখের রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও পালং শাক সানি প্রতিরোধের সাহায্য করে।
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ
পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফোলেট সহ হাটের নানা স্বাস্থ্যের উপকারী বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে পালং শাকে। আপনার হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে আপনি আপনার নিয়মিত খাদ্য তালিকায় পালং শাক রাখতে পারেন কারণ পালং শাক নিয়মিত খেলে রক্তচাপ কমাবে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃপালংশাগে ে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যা আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ভিটামিন সি সংক্রমণ রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে পালংশাক। আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় পালং শাক যোগ করতে পারেন প্রতিনিয়ত।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করেঃ
ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যারোটিনয়েড এবং ক্লোরোফিল এবং বেশ কিছু যৌগ রয়েছে পালং শাকে যা আপনার শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। আপনি যদি আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পালং শাক রাখতে পারেন তবে পালং শাকের যৌগ গুলি কোষকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে এবং ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে।
হজম স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ
আপনি যদি নিয়মিত পালং শাক খেতে পারেন তবে পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা স্বাস্থ্যকর হজমের সাহায্য করতে পারে আপনার শরীরের। পালংশাক কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অন্যান্য হজম সংক্রান্ত সমস্যা প্রতিবেদেও সাহায্য করে।
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করেঃ
পালং শাক স্মৃতিশক্তি এবং জ্ঞানী ও কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে এবং আলঝেইমার রোগের যোগী কমাতে সাহায্য করে পালং শাক। এছাড়াও পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ফুলের থাকে, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে। আপনার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত পালং শাক রাখতে পারেন।
পালং শাক খাওয়ার অপকারিতাঃ
যে কোন জিনিস খাওয়ার যেমন সুবিধা রয়েছে তার অসুবিধা রয়েছে অনেক তেমনি একটি হল পালং শাক। পালং শাক একটু পুষ্টিকর সবজি যে অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। পালং শাক খাওয়ার যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে অপরদিকে পালং শাক খাওয়ার কিছু অপকারিতা ও রয়েছে যা আপনার জানা খুবই জরুরী।
পালং শাক অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা দেয় তবে এর সম্ভাব্য অসুবিধা গুলি সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রত্যেকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিডনিতে পাথর, থাইরয়েডের সমস্যা, গেটে বাথ বা ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মতো নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যগত অবস্থার মানুষেরা তাদের পালং শাক খাওয়া সীমিত করতে চাইতে পারেন বা এটি নিয়মিত খাওয়ার আগে একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সাথে পরামর্শ করে তারপরে খেতে পারেন।
জৈব পালং শাক বেছে নেওয়া বা কীটনাশকের সংস্পর্শ কমাতে প্রচলিতভাবে জন্মানো পালং শাককে ভালোভাবে দুই এ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আজকের আর্টিকেলের এই পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো পালং শাক খাওয়ার অপকারিতা গুলো। চলুন নিম্ন জেনে নেওয়া যাক পালং শাক খাওয়ার অপকারিতা গুলো-
নাইট্রেট উপাদানঃ
পালং শাকে রয়েছে উচ্চমাত্রার নাইট্রেট যা শরীরের নাইট্রেট এর রূপান্তরিত হতে পারে। নাইট্রেট শরীরে কিছু পদার্থের সাথে বিক্রিয়া করে জৈব তৈরি করতে পারে যা ক্ষতিকারক হতে পারে আপনার শরীরের জন্য। পালং শাক রান্না করা নাইট্রেট এর পরিমাণ কমাতে পারে তবে এটি পরিমিত ভাবে খেতে হবে। আপনি যদি পরিমিত মাত্রার চেয়ে বেশি খেয়ে ফেলেন তবে এটা আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
প্রচুর পরিমাণে পিউরিনঃ
উচ্চ ইউরিক এসিডের মাত্রা আছে এমন ব্যক্তিরা তাদের পালংশাক খাওয়া সীমিত করতে বা এটি সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যেতে পারেন। কারণ পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে পিউরিন রয়েছে যা ইউরিক এসিড ভেঙ্গে গিয়ে গাউটের বিকাশে অবদান রাখতে পারে।
কীটনাশকের প্রভাবঃ
পালংশাক সবচেয়ে ভারী কীটনাশক দূষিত সবজি গুলোর মধ্যে একটি। যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক ভূমিকা পালন করে। সেজন্য কীটনাশকের সঙ্গে স্পর্শ কমাতে জৈব পালং শাক কেনার বা খাওয়ার আগে প্রচলিতভাবে জন্মানো পালং শাক ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেয় বিশেষজ্ঞরা। আপনি যদি পালং শাক খেতে চান তবে অবশ্যই পালং শাককে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে তারপরে রান্না করে খেতে পারেন।
অক্সালেটসঃ
আপনি যদি পরিমাণ এর চেয়ে বেশি পালং শাক খেয়ে ফেলেন তবে আপনার শরীরে ক্রিস্টাল তৈরি করে যা কিডনিতে পাথর তৈরিতে অবদান রাখতে পারে। যারা কিডনিতে পাথর হওয়া প্রবণতা তাদের পালংশাক খাওয়া সীমিত করতে বা পুরোপুরি এড়িয়ে চলতে পারেন। কারণ পালং শাক এ রয়েছে উচ্চমাত্রার অক্সালেট যা শরীরে ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থের সাথে আবদ্ধ হতে পারে।
গয়ড্রোজেনঃ
আপনারা যারা থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন তাদের পালংশাক খাওয়ার সীমিত করতে বা এটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে রান্না করতে চাইতে পারেন যা গয়ট্রেজেনের পরিমাণ কমাতে পারে। কারণ পালং শাকে গ্রয়প্রোজেন নামক যৌগ থাকে, যা থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে।
এলার্জির প্রভাবঃ
আপনি যদি পালং শাক খাওয়ার পরে আপনার শরীরে চুলকানি শ্বাসকষ্টের মত লক্ষণ দেখা যায় তবে আপনি অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কারণ আপনি যদি পালং শাক পরিমাণের চেয়ে বেশি খেয়ে ফেলেন অথবা কিছু লোকের পালংশাক থেকে অ্যালার্জিও হতে পারে সেজন্য আপনার যদি কোন অ্যালার্জির প্রভাব থেকে থাকে শরীরে তবে আপনি পালং শাক খাওয়া বন্ধ করুন।
ক্যালসিয়াম শোষণে হস্তক্ষেপঃ
ক্যালসিয়ামের ঘাটতি রয়েছে এমন ব্যক্তিরা তাদের পালং শাক খাওয়া সীমিত করতে চাইতে পারেন বা ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের সাথে তা গ্রহণ করতে পারেন। কারণ পালং শাকে রয়েছে অক্সালিক এসিড। যা ক্যালসিয়ামের সাথে আবদ্ধ হতে পারে এবং শরীরে এর শোষণে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
পালং শাক খাওয়ার পুষ্টিগুণঃ
পালং শাক একটু পুষ্টিকর ঘন সবজি যাবে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ। এটি ভিটামিন এ সি এবং কে পাশাপাশি ফোলেট এবং আয়রনের বিশত উচ্চ। পালং শাক একটি কম ক্যালরিযুক্ত সবজি যা ভিটামিন খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এটি ফাইবারেরও একটি ভালো উৎস। এক কাপ কাঁচা পালং শাকের প্রায় ৩০ গ্রামের মধ্যে রয়েছে-
- ক্যালোরিঃ৭
- প্রোটিন:> ০৯ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেটঃ ১.১ গ্রাম
- ফাইবারঃ 0.7 গ্রাম
- চর্বিঃ ০.১ গ্রাম
- ভিটামিন এঃ দৈনিক মূল্যের ৫৬ % ( DV )
- ভিটামিন সিঃ সিবির ১৪ %
- ভিটামিন কেঃ ডিভির ১৮১ %
- ফোলেটঃDV এর ১৫%
- আয়রনঃDVএর ৫%
- ক্যালসিয়ামঃDV এর ৩%
উপসংহারঃ পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ
পালং শাক ভিটামিন খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলির উচ্চ এবং চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে হৃদরোগের উন্নতি করতে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও পালং শাক ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা খুব সহজ এবং বিভিন্ন উপায়ে করা যেতে পারে আপনি শালা খুব কিংবা পাঁসতা খাবারের যোগ করতে পারেন পালংশাক।
পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, এতক্ষন আমাদের সঙ্গে থেকে ধৈর্য সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তবে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। এবং এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url