দেনমোহর পরিশোধ করতে হয় কেন - বিয়েতে দেনমোহর বাকি রাখা কি জায়েজ

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আজকে আমাদের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাবো দেনমোহর পরিষদ করতে হয় কেন - বিয়েতে দেনমোহর বাকি রাখা কি জায়েজ। দেনমোহর হচ্ছে বিয়ে উপলক্ষে স্বামী কৃতজ্ঞ বাধ্যতামূলকভাবে স্ত্রীকে নগদ অর্থ সোনা, রুপা বা স্থাবর সম্পত্তি দান করা।

দেনমোহর পরিষদ করতে হয় কেন - বিয়েতে দেনমোহর বাঁকে রাখা কি জায়েজ
হাদীস শরীফে এসেছে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোন নারীকে বিয়ে করল এবং তার মোহর বাকি রাখল এরপর সেই ইচ্ছা করলো মোহর আংশিক বা একেবারেই আদায় করবে না তাহলে সে ব্যবসারী হয়ে যাবে এবং আল্লাহর সঙ্গে ব্যভিচারী হিসেবে সাক্ষাৎ করব। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক দেনমোহর পরিষদ করতে হয় কেন - বিয়েতে দেনমোহর বাকি রাখা কি জায়েজ।

ভূমিকাঃ

হাদীস শরীফে এসেছে যদি কোন ব্যক্তি কারো কাছ থেকে কোন পণ্য কিনে এবং তার মূল্য পরিষদের ইচ্ছা না রাখে অথবা কারো উপর কিছু ঋণ আছে কিন্তু সেই আদায়ের ইচ্ছা না রাখে তাহলে ওই ব্যক্তি মৃত্যুর সময় ওকেয়ামতের দিন প্রতারক ও চোর হিসেবে চিহ্নিত হবে। সেজন্য কোন ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীর দেনমোহর ঠিকমতো আদায়ের ইচ্ছা না রাখে তাহলে তার উপর দুটি অপরাধ এসে পড়বে প্রথমটি হল ব্যভিচার এবং দ্বিতীয়টি হল প্রতারণা বা চুরি।
বিয়ের কাবিননামায় স্বাক্ষর ও মৌখিকভাবে বিয়ে পড়ানোর পর সহবাস করার আগে দেনমোহর দেওয়ার নিয়ম থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা মানা হয় না। তবে বিয়ের পরে যদি দেনমোহর পরিষদ করতে বিলম্ব হয় তবে স্ত্রীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট করে সময় চেয়ে নিতে হবে আপনাকে ও অবশ্যই পরে সে নির্দিষ্ট টাইমে দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে।

দেনমোহর পরিশোধ করতে হয় কেনঃ

স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণের নামই হচ্ছে দেনমোহর। সেজন্য বিয়ের পরে কাবিননামায় দেনমোহরের বিষয়ে উল্লেখ থাকে। দাম্পত্য জীবন শুরু করার সময় স্বামীকে এই দেনমোহর পরিশোধ করতে হয়। আপনার স্ত্রী যতক্ষণ ক্ষমা না করবে ততক্ষণ এ ঋণ পরিশোধের বিকল্প কিছু নেই। তালাকের পরবর্তী সময়ে যদি স্বামীর মৃত্যু হয় তবে স্বামীর রেখে যাওয়া প্রাপ্ত সম্পত্তি থেকে দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। 
এর থেকে পরিত্রাণের কোন সুযোগ নেই। কাবিননামায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে উসুল। বিয়ের সময় স্বামী যদি স্ত্রীকে গহনা বা অন্য জিনিস দিয়ে থাকে এবং তা যদি কাবিননামায় লিখিতভাবে উল্লেখ থাকে তবে কাবিনের টাকা থেকে কর্তন করা হবে। এবং সেটা লিখিতভাবে থাকতে হবে। বর্তমান সময়ে অনেকেই বিয়েতে আমরা দেখি থাকি অনেকে ভারী অংকের কাবিননামা করা হয়।
কাবিন হচ্ছে ইসলামের বিধান অনুযায়ী নারীকে সম্মান করা স্বামীর সমর্থন অনুযায়ী কাবিন করতে হবে। জোরপূর্ব অতিরিক্ত অর্থের কাবিন ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়।

ইসলামের দৃষ্টিতে দেন মোহর পরিশোধের নিয়মঃ

দেনমোহর স্বামীর আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ রেখে নির্ধারণ করতে হবে আপনাকে। সর্বোচ্চ দেনমোহর কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ নেই। দেনমোহরের পরিমাণ নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে স্ত্রীর পারিবারিক অবস্থান ও স্বামীর আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনা করা প্রয়োজোন। কারণ দেনমোহর এত অধিক হওয়া উচিত নয় যা স্বামীর পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব নয় কারো বাড়াবাড়িতে মোহর বেশি দিয়ে তা আদায় করতে না পারলে স্বামীকে গুনাহগার হতে হয়। 
সেজন্য আপনার যতটুকু সামর্থ্য আছে সে অনুযায়ী আপনার বিএর দেনমোহর নির্ধারণ করতে হবে। কারন মোহর যদি একবার নির্ধারণ করা হয় তবে সেটা আর পরে কমানো যায় না। তবে স্বামী নিজ উদ্যোগে সেটা বাড়াতে পারবে সেটা দিতে পারবে কারণ যার সামর্থ্য আছে সে স্ত্রীকে বেশি মোহর আদায় করবে তাতে অন্যায়ের কিছু নেই। 
অন্যদিকে আবার দেনমোহর এত কম হওয়া উচিত নয় যা স্ত্রীকে আর্থিক নিরাপত্তা দিতে পারেনা। আত্মিক সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনা করে মোহর ধার্য করলে স্বামী সহজে পরিশোধ করতে পারবেন এবং প্রাপ্য দেনমোহরের অধিকার থেকে নারীরা বঞ্চিত হবে না।
অপরদিকে পাত্রের যদি দেনমোহর পরিষদ করতে সমস্যা হয়ে থাকে অথবা আর্থিক সমস্যার কারণে দেনমোহর পরিশোধ করার ব্যাপারে কপালগতা প্রকাশ করে। আর সেটি যদি আদালতের মাধ্যমে ডিভোর্স হয়ে যায় তাহলে সেখানে সময় নির্ধারণ করার মাধ্যমে কিস্তিতে আপনারা দেনমোহর পরিশোধ করতে পারেন।
আর যদি পারিবারিকভাবে এই সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে তাহলে দেখা যাবে যে নির্দিষ্ট সময়ের পর পর আপনারা দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। দেনমোহর পরিষদ করার আগে যদি স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায় তবে দেনমোহরের টাকা অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে স্বামীকে। আপনার স্ত্রীকে তালাকের পর কিংবা তালাকের আগে দেনমোহর পরিশোধ করতে পারবেন কারণ দেনমোহর স্বামীর দিন যা স্বামী তার স্ত্রীকে পরিশোধ করতে বাধ্য।

ইসলামে দেনমোহর পরিশোধ না করার শাস্তিঃ

স্ত্রীর মোহরানার টাকা যদি পরিশোধ না করে কোন স্বামী মারা যায় তবে স্ত্রীর কাছে মোহরের টাকা দেনাদার হিসেবে কেয়ামতের ময়দানে দাঁড়াতে হবে তাকে। শোকাহে কেরামান বলেন কোন মানুষ যদি মারা যায় তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে স্ত্রীর মোহরানা পরিশোধ করতে হবে। মুসলিম বিয়েতে দেনমোহর হচ্ছে স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রী একটি বিশেষ অধিকার।
দেনমোহর সাধারণত বর ও কোণের সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। দেনমোহর হিসেবে যে কোন পরিমাণ অর্থ নির্ধারণ করা যায় কিন্তু কোন অবস্থায় স্বামী নূন্যতম দশ দিরহাম বা সমপরিমাণ অর্থ অপেক্ষা কম নির্ধারণ করতে পারবেন না। মুসলিম আইন অনুযায়ী দেনমোহর বিয়ের একটি অন্যতম সর্ত। 
অনেককে দেখা যায়,বাসর রাতে স্ত্রীকে স্পর্শ করার আগে ক্ষমা চেয়ে নেন যাতে হারামে লিপ্ত না হন। অথচ এটা খুব মূর্খতার কাজ। কেউ এভাবে ক্ষমা চাইলেও অনেক সময় পরিপূর্ণ ক্ষমা হয় না কারণ এটা এক ধরনের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে ক্ষমা হয়। সুতরাং জবাব এর আগে শরীয়তকে প্রাধান্য দিতে হবে আপনাকে।
অনেক সাধারণ দিনি ভাই এখনো মনে করেন যে বিয়ে করলে স্ত্রীকে মোহর দেওয়া পর্যন্ত স্পর্শ করা হারাম বা যিনা হতে পারে। সেজন্য খুব কষ্ট করে আগে মোহরানার টাকা যোগাড় করেন তারপর বিয়ে করেন। এতে করে বিয়ে করতে বেশ দেরি হয়ে যায় তাছাড়া বর্তমান সমাজ ব্যবস্থাকে বিয়ে অনেক কঠিন করে তুলে ধরা হচ্ছে যার তুলনায় হারাম রিলেশন বেপর্দা বেহায়াপনা ঝিনাই ইত্যাদি ততটাই সহজ হয়ে যাচ্ছে। 

বিয়েতে দেনমোহর বাকি রাখা কি জায়েজঃ

দেনমোহর বিয়ের অন্যতম শর্ত এটি মূলত বড় কোণের মাঝে একটি চুক্তি। এতে উভয়পক্ষ যেভাবে সম্মত হবে ইসলামের দৃষ্টিতে সেভাবে গ্রহণযোগ্য হবে এর পরিমাণ কম বেশি নগদ বাকি যাই হোক না কেন। সুতরাং তারা যদি দেনমোহরের পুরোটাই নগদ কিংবা পুরোটাই বাকি অথবা মোহরের কিছু অংশ নগদ এবং কিছু অংশ বাকি রাখতে সম্মত হয় এতে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন আপত্তি নেই।
তবে যেটা বাকি রাখা হবে সেটা পরিশোধ করা ফরজ কেননা এটি একদিকে স্ত্রীর হক অন্যদিকে চুক্তি। মুমিন ব্যক্তি অবশ্যই চুক্তি পূরণ করবে চুক্তি লঙ্ঘন করা মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য তাইতো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন-" তোমাদেরকে বিয়ের চুক্তির যে সকল সত্য পালন করতে হয় তার মধ্যে সে সব সত্যই সবচেয়ে বেশি পালনীয় যার দ্বারা কোনো মহিলাকে তোমরা হালাল করো"।(সহি ও মুসলিম )
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম আরও বলেন" মুসলিম গণ তাদের সাথে কৃত সত্যের ওপর অবিচল থাকবে" তিরমিজি, ১৩৫২।
ইসলামী আইন ও ফিকাশাস্ত্রবিদদের মতে, বিয়ের সময় মোহর বাকি রাখা যায় তবে যেহেতু মোহর কাজের অন্তর্ভুক্ত তাই নগদ আদায় করা উত্তম। পর্ষদ করার নিয়তে দেনমোহর বাকি রেখে দিয়ে বৈধ এতে বৈবাহিক সম্পর্কে কোন সমস্যা হবে না।(মাবসুতুস সারাখাসি ৫/৬২, আল মোজামাল আসওয়াত ২/২৩৭)। আর যদি আপনি কোন কৌশল করে স্ত্রীকে মোহরানা থেকে বঞ্চিত রাখেন তবে পরকালের স্ত্রীর হক আদায় না করার কারণে আল্লাহ তাআলার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে আপনাকে। 
শরীয়তে মোহর দুইভাবে পরিশোধ করা যায়-
  • বাকি মোহর,
  • নগদ মোহর।
আপনার স্বামীর কাছে যদি মোহর পরিষদ করার মত সম্পদ না থাকে এবং সে পরে পরিশোধ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে এবং স্ত্রী সেটা মেনে নেয় তাহলে গুনাহ হবে না। এক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীকে নিষেধ করতে পারবে না।
অপরদিকে যদি আপনার স্বামীর নগদমাহর দেওয়ার শর্ত করা হয় তাহলে মোহর পরিষদের আগ পর্যন্ত স্ত্রী চাইলে স্বামীকে মোহর দেওয়া পর্যন্ত নিষেধ করতে পারবে। তবে মোহর দেওয়া যেহেতু ওয়াজিব তাই সেটা পরিষদের আগ পর্যন্ত স্বামী তার স্ত্রীর কাছে ঋণী হয়ে থাকবে। যেমন ভাবে দ্রুত পরিশোধ করতে হয় মোহর তেমনি ভাবে পরিশোধ করতে হবে আপনাকে।
নবী সাঃ এর নিজ কন্যা হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহুকে হযরত আলী রাঃ এর সঙ্গে বিবাহ দেওয়ার সময় যে মোহন নির্ধারণ করেছিলেন তাকেই মোহরের ফাতেমি বলে। মরে ফাতেমীর পরিমাণ হলো সাড়ে বারো উকিয়া বা ৫ শত দিরহাম। আধুনিক নিয়ম হিসেবে হয় ১৩১.২৫ তোলা বা ১. ৫৩০৯ কিলোগ্রাম রুপা।
এক দিরহামের ওজন হল ৩.০৬১৮ গ্রাম। বর্তমান বাজারে এক হাজার টাকা হলে মোহরের ফাতেমীর পরিমাণ হবে১৩১৫০০ টাকা। হাদীস শরীফে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর কন্যাদের মোহর ছিল ৫শত দিরহাম। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা হাদিসঃ১৬৬৩০)।
তবে আপনাকে মনে রাখতে হবে বিভিন্ন সময় রুপার দাম ওঠা নামা করে তাই অবশ্যই বর্তমান বাংলাদেশি টাকায় বর্তমান বাজার মূল্য জুয়েলারির দোকান থেকে জেনে নিতে হবে আপনাকে এবং সে অনুযায়ী মোহরানার টাকা পরিশোধ করতে হবে।

উপসংহারঃ দেনমোহর পরিশোধ করতে হয় কেন - বিয়েতে দেনমোহর বাকি রাখা কি জায়েজ

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আমাদের আজকের আর্টিকেলটি যারা মনোযোগ সহকারে পড়েছেন তারা নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন দেনমোহর পরিশোধ করতে হয় কেন - বিয়েতে দেন মোহর বাকি রাখা কি জায়েজ। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে অথবা আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তবে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন। আপনাদের যদি কোন মন্তব্য পরামর্শ থাকে সেটাও আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।
আমাদের সঙ্গে থেকে ধৈর্য সহকারে এতক্ষণ আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।  

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url