ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা - ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাবো ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা - ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। ডাবের পানি শীতে যে উপকার করে গরমেও সেই উপকারী করে। ডাবের পানিতে রয়েছে পটাশিয়াম, সোডিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের উপস্থিতি যা ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে শরীরের।
ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা - ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম
প্রাকৃতিক ভিটামিন ও খনির চেয়ে ভরপুর ডাবের পানি খেলেও তা দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করলে ত্বকের নানারকম উপকার হয়। ডাবের পানি ত্বকের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং আদ্রতা ধরে রাখে। অ্যামিনো এসিড ও শর্করা থাকে বলে এটি শুষ্ক ত্বকে পুষ্টি যোগায় ও আদ্রতা বজায় রাখে। আপনি যদি নিয়মিত ডাবের পানি দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করেন তবে আপনার ত্বক হবে মসৃণ ও ডাকমুক্ত কারণ ডাবের পানিতে রয়েছে ইলেক্ট্রোলাইট উপাদান। 

সূচিপত্রঃ ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা - ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম

ভূমিকাঃ

ডাবের পানিতে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে ফলে এটি ব্রণ হওয়ার হাত থেকে আপনার ত্বককে রক্ষা করতে পারে। তবে এটি বলা হয় যে এর কোন প্রমাণ নেই বরং বিশেষজ্ঞরা বলেন ডাবের পানি দ্রুত ব্রণ দূর করতে সহায়তা করলেও করতে পারে। খনিজ লবনের ভালো উৎস ডাবের পানি। খনিজ লবণ দেহের বিপাকীয় কাজের সহায়তা করে এবং কোষের কার্যকারিতা কে ত্বরান্বিত করে।
কিডনি রোগীরা ডাবের পানি মাত্রা অতিরিক্ত খেতে পারবেন না কারণ দেহে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকলে ডাবের পানি খাওয়া নিয়মের মধ্যে রাখা অবশ্যক। ডাবের স্বচ্ছ পানি অত্যন্ত সুস্বাদু ডাবের পানির উপকারিতার কথা সবাই জানলেও এর অপকারিতার কথা আমরা অনেকেই জানিনা। সেজন্য আমাদের আজকের আর্টিকেলের পরে আমরা আপনাদের জানাবো ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা - ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম।

ডাবের পানির উপকারিতাঃ

বাজারে তরল পানি ওগুলো জোর প্রচারণা চালিয়ে গেলেও স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় গরমে এখনো সবার প্রথম পছন্দ ডাবের পানি। শুধু ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা নয় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা সহ ডাবের পানিতে আছে আরো অনেক গুণ। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক ডাবের পানির উপকারিতা গুলো-
  • দেহে ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়ামের অভাব হলে ডাক্তার ডাবের পানি পান করার পরামর্শ দেন, কারণ  ডায়রিয়া বা কলেরা রোগীদের ঘন ঘন পাতলা পায়খানা ও বমি হলে দেহে প্রচুর পানি ও খনিজ পদার্থের ঘাটতি দেখা দেয় এই ঘাটতি ডাবের পানি পূরণ করতে পারে।
  • মুখে ছোট ছোট দাগের জন্য সকালবেলা ডাবের পানি দিলে দাগ মুছে যায় এবং মুখের লাবণ্য উজ্জ্বলতা বাড়ে ডাবের পানিতে উল্লেখযোগ্য কোনো পুষ্টি না থাকলেও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। । সেজন্য আপনি যদি প্রতিদিন সকালে ডাবের পানি দিয়ে মুখ মুছে নিতে পারেন তবে আপনার উজ্জ্বলতা বাড়বে দ্বিগুণ এবং ত্বক হবে দাগ মুক্ত।
  • আপনি যদি নিয়মিত ডাবের পানি পান করেন তবে আপনার ফাইবার ইনসুলিন এর কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেবে এবং আপনার ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
  • ডাবের পানি দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা কমিয়ে শরীরকে রাখে ঠান্ডা। ডাবের পানি যে কোন কোমল পানীয় থেকে অধিক পুষ্টি সমৃদ্ধ, ডাবের পানি মিষ্টি হওয়া সত্ত্বেও ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য ডাবের পানি উপকারী।
  • ডাবের পানিতে খনিজ লবণ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাসের উপস্থিতি উচ্চ মাত্রায় থাকার কারণে আপনার দাঁতের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং দাঁত ও মাড়িকে করে শক্তিশালী ও মজবুত।
  • আপনি যদি প্রতিদিন ডাবের পানি পান করেন তবে আপনার শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পাবে কারণ এতে রয়েছে রাইবোফ্লিন, নিয়াসিন, থিয়ামিন ও পাইরিডোক্সিনের এর মত উপকারী উপাদান।
  • ডাবের পানিতে ক্যালসিয়াম থাকে ফলে এটি প্রাকৃতিকভাবে ক্যালসিয়ামের যোগান দেয় শরীরে।
  • ডাবের পানি শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান বের করে।
  • ডাবের পানিতে থাকা আর শরীরের বিপাকক্রিয়া উন্নত করে।
  • চর্বির পরিমাণ খুব কম থাকায় ওজন নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে ডাবের পানি।
  • যে কোন ধরনের পানি শূন্যতা দূর করতে পারে ডাবের পানি।
  • যে কোন কোমল পানি এর থেকে এতে অনেক কম ক্যালোরি ও চিনি থাকে।
  • পটাশিয়াম সোডিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের উপস্থিতির কারণে শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে ডাবের পানি।
  • ডাবের পানি শরীরকে তরল বাজানো আদ্রতা বজায় রাখতে সহায়তা করতে পারে।

ডাবের পানির অপকারিতাঃ

প্রতিটি জিনিসের ভালো ও মন্দ দুটি দিগি থাকে ডাবের পানির ও সেটা আছে। আমাদের আজকের আর্টিকেলের এই পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো ডাবের পানির অপকারিতা গুলো চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক ডাবের পানির অপকারিতা-
  • নিয়ম করে ডাবের পানি খেতে হবে উপকার করে বলে অপ্রয়োজনে এটি খাওয়া যাবেনা তাতে বরং ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
  • ডাবের পানিতে পটাশিয়াম সোডিয়াম ম্যাগনেসিয়াম থাকে এই উপাদানগুলো শরীরে উচ্চ রক্তচাপ ইলেক্ট্রোলাইট ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। কিন্তু শরীরে এগুলোর কোনটার পরিমাণ বেড়ে গেলে উচ্চ রক্তচাপ ইলেকট্রোলাইট ডায়াবেটিস ইত্যাদির ভারসাম্য বজায় নাও থাকতে পারে। আবার এটি রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে এসব কিছুই স্বাস্থ্যঝকি তৈরি করতে পারে।
  • বলা হয়ে থাকে কিডনি সুস্থ রাখতে ডাবের পানি পান করা ভালো কিন্তু কিডনি রোগীদের জন্য ডাবের পানি ক্ষতির কারণ হয় তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডাবের পানি পান করুন অন্যথায় নয়।
  • কোন কোন এলার্জির রোগী ডাবের পানি পানের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন কাজেই যাদের অ্যালার্জি আছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শে ডাবের পানি পান করবেন।
  • যাদের ঠান্ডার রোগ আছে বা সর্দি রোগের কারণে ভুগছেন ডাবের পানি পান করা তাদের জন্য উচিত নয়।
  • অতিরিক্ত ডাবের পানি খেলে কারো কারো ডায়রিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেজন্য মাত্র অতিরিক্ত ডাবের পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

ডাবের পানি খাওয়ার নিয়মঃ

যে কোন জিনিস খাওয়ার পূর্বে সেটা যদি আপনি নিয়ম অনুযায়ী খান তবে আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম গুলো-
  • ডাবের পানি খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই তবে কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে আপনাকে।
  • কচি ডাবের পানি খেতে হবে ডাব যত বয়স্ক হবে তত তার পানির চিনির পরিমাণ বাড়তে থাকবে সেটা আপনার ক্ষতি করবে শরীরে।
  • ধাপ কাটার সঙ্গে সঙ্গে পানি খেয়ে নিতে হবে।
  • যে কোন সময় ডাবের পানি খাওয়া যায় তবে খুব রোদ থেকে এসে সঙ্গে সঙ্গে ডাবের পানি না খাওয়াই ভালো। আপনি যদি রোড থেকে আসেন তবে একটু জিরিয়ে তারপর খেতে পারেন।
  • ডাবের পানিতে অন্য কোন কিছু যেমন- চিনি, লবণ, গুড় ইত্যাদি মিশিয়ে খাওয়া যাবেনা।
ডাবের পানির উপকারিতা বলে শেষ করা যায় না তবে ডাবের পানিতে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি থাকে। ফলে কিডনি রোগীদের জন্য ডাবের পানি ক্ষতির কারণ হতে পারে। ঠান্ডাও সর্দি রোগী এলার্জির রোগীদের ও ডাবের পানি পানি সতর্ক থাকতে হবে।

উপসংহারঃ ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা - ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম

পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, কোন কিছু থেকে প্রাকৃতিকভাবে উপকার পেতে হলে তা দীর্ঘদিন খেতে হয় বা ব্যবহার করতে হয়। হঠাৎ এক আট দিন ব্যবহার করে ভালো উপকার পাওয়া যায় না তাই ডাবের পানি পান করে উপকার পেতে চাইলে নিয়মিত তা পান করতে হবে। খুব বেশি পানের দরকার নেই পরিমাণ মতো নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে তবেই উপকার পাবেন।
আমাদের আজকের আর্টিকেলটি যারা এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে পড়েছেন তাদেরকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের আর্টিকেলটি পরে যদি আপনি উপকৃত হন তবে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন এবং এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট টি ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url