১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ইতিহাস

আসসালামু আলাইকুম, আমাদের আজকের আর্টিকেলের এই পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ইতিহাস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ হলো ১৯৭১ সালের তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের সংঘটিত একটি বিপ্লব ও সশস্ত্র সংগ্রাম। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান ও স্বাধিকার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এবং বাঙালি গণহত্যার প্রেক্ষিতে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ইতিহাস - বিজয় দিবস কি ও কেন হয়
১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করে এবং নিয়ন্ত্রক গণহত্যা শুরু করে। এর মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী সাধারণ বাঙালি নাগরিক ছাত্র শিক্ষক বুদ্ধিজীবী ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং পুলিশ ও ইপিআর কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়।

সূচিপত্রঃ ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ইতিহাস 

ভূমিকাঃ

যুদ্ধের প্রথম দিকে বাঙ্গালীদের প্রতিরোধ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত কিন্তু অসম অসংগঠিত। এই প্রতিরোধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না তবে পাকিস্তানি বাহিনী সাধারণ নাগরিকদের উপর আক্রমণ শুরু করলে পরিস্থিতি দুটো পাল্টে যায় এবং প্রতিরোধর হয়ে ওঠে। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৭ এপ্রিল তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বর্তমান জেলা বৈদ্যনাথ তলার ভবের পাড়ায় বর্তমান মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়।
পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি তার অনুপস্থিতদের সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দিন আহম্মদকে প্রধানমন্ত্রী এবং এমএজি ওসমানীকে মুক্তি বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হয় মাছের শেষ দিক থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।
এপ্রিল থেকে শুরু হয় শরণার্থীদের এই স্রোত নভেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল আক্রমণ থেকে বাঁচতে দলে দলে মানুষ ভারতের সীমান্তের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। এই সময়ে প্রায় এক কোটি শরণার্থী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম রাজ্যে আশ্রয় নেই পাকিস্তানের সেনাদের উপর মুক্তিবাহিনীর গেরিলা আক্রমণ অব্যাহত থাকে। কিন্তু অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের অভাবে যুদ্ধ পরিকল্পিত রূপ লাভ করতে জুন মাস পার হয়ে যায়।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ইতিহাসঃ

১৯৭১ সালের বাংলাদেশের সর্ব মোট ১১ টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে আসা কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে প্রতিটি সেক্টরের জন্য একজন করে অধিনায়ক নির্বাচন করা হয়। এ সময়ে মুক্তিবাহিনী সীমান্ত ঘাঁটিগুলোতে আক্রমণ করে দখল করে নিতে থাকে। কমলাপুর বিলোনিয়া বিলোনিয়া ও বয়লার যুদ্ধ এগুলোর মধ্যে অন্যতম। পাকিস্তানি বাহিনীর ৩৭০ টি সীমান্ত ঘাটের মধ্যে ৯০ টি মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে। 
ভারত থেকে ত্রাণ ও অস্ত্র আনার ব্যবহার করে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে জরুরি ভিত্তিতে আরও পাঁচ ব্যাটালিয়ান শূন্য নিয়ে আসা হয়। এ অবস্থায় পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ৮ ব্যাটালিয়ান শূন্য পূর্ব পাকিস্তানের নিয়ে আসা হয় কিছুদিনের জন্য লালমনিরহাট ও সিলেটের বিমান ঘাঁটিও দখল নিয়ে নেয়। পাশাপাশি গেরিলা বাহিনীর আক্রমণ তীব্র হয় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার বাহিনী অসাধারণ মানুষদের ওপর নির্যাতন করতে থাকে এ অবস্থায় পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে আসা হয়।
উত্তর ভারতে পাকিস্তানের বিমান হামলার পর ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর ভারতে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধে যোগদান করে। পূর্ব ও পশ্চিম দুই প্রান্তে আরেকটি ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের সূচনা ঘটে। বিমান বাংলাদেশ ভারত যৌথ বাহিনীর তৎপরতায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ে। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে দীর্ঘ নয় মাসের এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।
১৯৭১ সালের ত্রিপুরা ডিসেম্বর পাকিস্তান বিমান বাহিনী ভারতের সীমান্তবর্তী বিমান ঘাঁটিগুলোতে অতর্কিত হামলা চালায়। বিমান ঘাঁটিতে থাকা ভারতীয় বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান গুলোকে ধ্বংসের উদ্দেশ্যে নিয়ে এই আক্রমণ চালায়। ৬ দিনের যুদ্ধে ইসরাইলি বিমান বাহিনীর অপারেশন ফোকাসের আদলে এই হামলা চালানো হয়। ভারত এই হামলাতে স্পষ্ট তো তাদের দেশের উপর অগ্রাসন হিসেবে দেখে এবং পাল্টা হামলা চালায় এই হামলা পাল্টা হামলার মধ্য দিয়ে উভয় দেশ সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং পাক ভারত যুদ্ধের সূচনা ঘটে যদিও কোন দেশি আনুষ্ঠানিকভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি।
১৯৭১ সালের যুদ্ধের ফলে বিশ্বের সপ্তম জনবহুল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্থান ঘটে,, যা দক্ষিণ এশিয়া ভূ- রাজনৈতিক দৃশ্য পথ বদলে দেয় জটিল আঞ্চলিক সম্পর্কের কারণে যুদ্ধটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছবিওতে ইউনিয়ন এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের অন্যতম প্রধান পর্ব ছিল। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বাংলাদেশের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের তিন কোর ভারতীয় সৈন্য অংশগ্রহণ করে। মুক্তিবাহিনীর আরও প্রায় তিন বিগ্রেড ০ এবং আরো অসংখ্য অনিয়মিত সেনা তাদের সহায়তা করে এ সেনারা পাকিস্তান সেনাবাহিনী ৩ ডিভিশন সৈন্যের তুলনায় অনেক গুণ বড় ছিল। যৌথ বাহিনীর দ্রুত বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে পড়তে থাকে। পাকিস্তানি বাহিনীর ঘাটি গুলো দখল করে যৌথ বাহিনীর দ্রুত রাজধানী ঢাকার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা আক্রমণ ঠেকাতে সীমান্তের দিকে ছড়িয়ে থাকা পাকস্থানে সেনারা এত দ্রুত আক্রমণ সামাল দিতে পারেনি। যৌথ বাহিনীর হাতে শীঘ্রই ঢাকার পতন ঘটে এবং ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীরা আত্মসমর্পণ করে।
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসন ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্ব কমান্ডার কামান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লা খান নিয়া যে আত্মসমর্পণের দলিলের স্বাক্ষর করেন। আত্মসমর্পণের সময় কেবলমাত্র কয়েকটি দেশী বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল প্রায় ৯৩ হাজার যুদ্ধবন্দী যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। জাতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বোচ্চ। স্থানান্তরের প্রক্রিয়া সহজ করতে ভারত ও পাকিস্তান ১৯৭২ সালে সিমলা চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তি যুদ্ধবন্ধিদের ফেরত পাওয়ার বিনিময়ে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্বীকৃতি নিশ্চিত করে।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের জন্য আবেদন করে। অধিকাংশ সদস্যের সমর্থন সত্ত্বেও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন বাংলাদেশের আবেদনে ভেটো প্রদান করে। পাকিস্তানের অপর মৃত্যু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক পরে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এর পাশাপাশি ভারত যুদ্ধে দখল করে নেওয়া পশ্চিম পাকিস্তানের ১৩০০০ কিলোমিটার ভূমি পাকিস্তানকে ফেরত দেয় তবে কারগিলের মতে কৈশলগত ভূমি ভারত নিজের আয়ত্তে রাখে যা পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে দুই দেশের মধ্যে আরেকটি যুদ্ধ কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

যুদ্ধের কারণঃ

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান কারণ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য। পূর্ব পাকিস্তান ছিল সাংস্কৃতিক ও ভাষাগতভাবে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলাদা এবং একটি স্বতন্ত্র পরিচয় ছিল। পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ এবং সাময়িক নেতাদের দ্বারা অধিপত্য ছিল যারা পূর্ব পাকিস্তানের অধিকার ও স্বার্থের প্রতি সমনতম সম্মান প্রদর্শন করে।
জেনারেল ইয়াহিয়া খান এর নেতৃত্বে পশ্চিম পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন সামরিক শাসন আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করে পূর্ব পাকিস্তানের ব্যাপক প্রতিবাদের জন্ম দেয় এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা হয় যা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে রূপ নেই।
মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবময় ঘটনা এই যুদ্ধের মধ্য দিয়েই আমরা লাভ করেছি স্বাধীন দেশ, নিজস্ব পতাকা ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ বাংলার ছাত্র যুবক কৃষক শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনগণ বর্বর হানাদার পাকিস্তানি বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। তারই পরিণতি ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্বের মানচিত্রে নাম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

উপসংহারঃ ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ইতিহাস

পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল দেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যার ফলে বাংলাদেশ স্বাধীন হয় এবং একটি নতুন জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করে। যুদ্ধ পূর্ব পাকিস্তানের বহু বছরের রাজনৈতিক সাংস্কৃতি এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যর ফল ছিল এবং এটি দেশ ও অঞ্চলের জন্য সুদূর প্রসারী পরিণত করেছিল। 
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের জনগণের জন্য গর্ব ও অনুপ্রের উৎস হিসেবে রয়ে গেছে এবং এটি দেশের জাতীয় পরিচয় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্ক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দেন ও শুরু হয় যুদ্ধে যুদ্ধ নয় মাস স্থায়ী হয় এবং এর ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং একটি নতুন জাতির সৃষ্টি হয়।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আপনারা যারা এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থেকে ধৈর্য সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি পড়েছেন তাদেরকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পরে যদি আপনি উপকৃত হন তবে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url