প্রস্রাবে অতিরিক্ত দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ চিকিৎসা ও প্রতিকার

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আজকে আমরা আপনাদের জানাবো প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ চিকিৎসা ও প্রতিকার। প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো জল কম খাওয়া। আপনার শরীরে যদি জলের ঘাটতি তৈরি হয় তবে প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হবে সেজন্য শরীরে যখন জলের পরিমাণ পর্যাপ্ত হয় এবং না অন্য বজ্র পদার্থ গুলির মাত্রাও বেড়ে যায় তখনই প্রস্রাব থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। এটা থেকে মুক্তির জন্য আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

প্রস্রাবে অতিরিক্ত দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ চিকিৎসা ও প্রতিকার

প্রস্রাবের প্রায় ৯৫% পানি সঙ্গে আছে ইউরিয়া ইউরিক অ্যাসিড ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি। স্বাভাবিক অবস্থায় হয় সঙ্গে হালকা ঝাঁঝালো গন্ধ থাকে যার কারণ মূলত বাতাসের সংস্পর্শে আসার পর অক্সিডেটিভ ক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপন্ন অ্যামেনিয়া যৌগ। শারীরিক নানা কারণে প্রস্রাবের দুর্গন্ধ হতে পারে। জীবাণু গঠিত কারণেও মূত্রনালীর সংক্রমণে প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হতে পারে।

সূচিপত্রঃ প্রস্রাবে অতিরিক্ত দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ চিকিৎসা ও প্রতিকার

ভূমিকাঃ

কখনো কখনো কিছু খাদ্যাভাসার কারণে প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হতে পারে যেমন পেঁয়াজ রসুন ইত্যাদি খাবার খেলে প্রস্রাব অতিরিক্ত গন্ধযুক্ত হতে পারে যারা চা কফি ইত্যাদি ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় বেশি খান তাদের ক্ষেত্রেও এরকম সমস্যা হতে পারে। মহিলাদের ক্ষেত্রে জরায়ু মুখের প্রদাহের কারণেও প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হতে পারে।

অনেক বেশি বজ্র অভিশপ্ত পদার্থ প্রস্রাবের মধ্যে থাকলে এ ধরনের গন্ধ হয় এ থেকে দুদিন এমন গন্ধ হলে চিন্তার কারণ নেই তবে এ ধরনের গন্ধ অনেক দিন ধরে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে আপনাকে। গবেষণায় দেখা গেছে প্রস্রাবের গন্ধ থেকে বোঝা যেতে পারে কেউ অ্যালজাই মাসে আক্রান্ত হতে পারেন কিনা।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিশক্তি কমতে কমতে চরম অবস্থায় পৌছলে অ্যালজাইমাস রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ। কখনো কখনো আপনার শরীরে পানির শূন্যতা দেখা দিলে প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হয় এমন হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন দেখবেন গন্ধ দূর হয়ে যাবে।

প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণঃ

আমাদের মধ্যে কম বেশি সকলেরই প্রস্রাবে দুর্গন্ধ রয়েছে। তবুও আমরা সে বিষয়ে খুব এমন কোন গুরুত্ব দেই না। আমরা কমবেশি সকলেই জানি শরীরে পানি কম থাকলে প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হয়। প্রস্রাবে গন্ধ মূলত এমোনিয়ার কারণে হয় তবে অতিরিক্ত দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব কিন্তু শারীরিক সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। তবে শুধুমাত্র প্রস্রাবের দুর্গন্ধই নয় প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বারবার প্রস্রাবে তাগিদ পাওয়ার মতো একাধিক লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে আপনাকে। 

এছাড়া রক্তের শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলেও প্রস্রাবে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে আপনার শরীরে ডায়াবেটিসের রোগী হজম করতে পারে না ফলে তাদের প্রচুর পরিমাণে দুর্গন্ধ বের হয়। কিডনিতে পাথর জমলে প্রস্রাব থেকে অতিরিক্ত দুর্গন্ধ বের হতে পারে। লবণ ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ জমা হয়ে পাথর তৈরি হয় শরীরে।

  • পর্যাপ্ত পানি পান না করলে
  • যৌনাঙ্গ পরিষ্কার ও শুকনো না রাখলে
  • গর্ভবতী হলে
  • মূত্র তন্ত্রের স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে এমন রোগ হলে যেমন কিডনিতে পাথর হওয়া
  • মাসিক চিরতরে বন্ধ হয়ে গেলে এই ঘটনাকে মনো পথ বলা হয় এক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন কমে যাওয়ার সংক্রমণ প্রবণতা বেড়ে যায়।
  • মূত্রথলি পুরোপুরি খালি করতে বাধা সৃষ্টি করে এমন রোগ হলে যেমন পুরুষদের প্রসেট গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা স্নেহ তন্ত্রের কোন অসুখ হল।
  • ইতিপূর্বে প্রস্রাবের ইনফেকশন হয়ে থাকলে
  • যৌন সহবাস করলে
  • প্রস্রাবের রাস্তায় নল বা ক্যাথেটার পরানো থাকলে 

প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হওয়ার লক্ষণঃ

প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হওয়ার প্রধান লক্ষণ হল আপনার প্রস্রাবে অ্যামোনিয়ার গন্ধ ইউ টি আই এর লক্ষণ হিসেবে প্রস্রাবের রং বদলে ঘোলাটে হয় আবার কিছুটা রক্তাক্ত হতে পারে। একই সঙ্গে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি হতে পারে এমনকি প্রস্রাবের চাপও বাড়তে পারে। এর সঙ্গে আপনার জ্বর ও মানসিক বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে। এছাড়া প্রস্রাবে এমোনিয়ার মত গন্ধ ডিহাইড্রেশন নির্দিষ্ট খাবারের কারণে ঘটতে পারে। এ প্রস্রাবের দুর্গন্ধ থেকে আপনার যেসব রোগের ইঙ্গিত দেখা দিতে পারে-

  • প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া হওয়া
  • স্বাভাবিকের চেয়ে ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া
  • রাতে বারবার প্রস্রাবের বেগ আশা
  • অস্বাভাবিক গন্ধযুক্ত অথবা ঘোলাটে প্রস্রাব হওয়া
  • হঠাৎ প্রস্রাবের বেগ আশা অথবা ব্রেক ধরে রাখতে সমস্যা হওয়া
  • প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া এবং তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা হওয়া

প্রস্রাবে অতিরিক্ত দুর্গন্ধ হওয়ার চিকিৎসাঃ

আপনার যদি প্রস্রাবে অতিরিক্ত দুর্গন্ধ হয় তবে বাড়িতে বসে না থেকে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডাক্তার প্রস্রাব পরীক্ষা করানোর পাশাপাশি প্রয়োজন বোধে উপযুক্ত এন্টিবায়োটিক শোভনের পরামর্শ দিতে পারেন। এন্টিবায়োটিকের সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করা গুরুত্বপূর্ণ। উপরে উল্লেখিত লক্ষণ গুলি চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে কমে গেলেও প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধের সম্পূর্ণ করতে হবে আপনাকে।

আপনি সাধারণত ওষুধ খাওয়ার দুই-তিন দিনের মধ্যে লক্ষণ গুলো কমতে শুরু করবে যদিও ওষুধের সম্পন্ন করার পরেও লক্ষণের উন্নতি না হয় অথবা না কমে তবে আপনাকে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলার পাশাপাশি ঘরোয়া ভাবে আপনি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক প্রস্রাব অতিরিক্ত দুর্গন্ধ হওয়ার ঘরোয়া চিকিৎসা-

  • আপনার প্রস্রাবের দুর্গন্ধের সমস্যা হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যায়। কারণ অন্যান্য ওষুধের তুলনায় প্যারাসিটামল অধিক কার্যকর।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়ানো যেতে পারে।
  • পিঠে পেটে ও দুই উড়ুর মাঝে গরম সেক নেওয়া যায় এটি অস্বস্তি উপশমের সাহায্য করতে পারে।
  • সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত যৌন সহবাস থেকে বিরত থাকা ভালো ইউরিন ইনফেকশন ছোঁয়া চেনা হলে ইনফেকশন থাকা অবস্থায় জন সহবাস অস্বস্তিকর হতে পারে। 
  • কিডনি রোগ হৃদরোগ অথবা প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারার মতো বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে দৈনিক কতটুকু পানি পান করা দরকার এবং আপনার শরীরের জন্য কতটুকু পানির প্রয়োজন সেগুলো ডাক্তারের কাছে থেকে জেনে নিন।

প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হওয়ার প্রতিকারঃ

প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হওয়ার প্রতিকার গুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো-

  • যৌনাঙ্গ শুকনো বা পরিষ্কার রাখুন
  • বার্তা বা পুকুরে গোসল করার পরিবর্তে সাওয়ার কিংবা বালটির সাহায্যে গোসল করুন।
  • সহবাসের আগেও পরে যৌনাঙ্গ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • সুতি কাপড়ের ঢিলেঢালা আন্তবাস ব্যবহার করুন।
  • এক থেকে তিন বছর বয়সী বাচ্চার দায়ভার বা কাপড়ের নেপি নিয়মিত পরিবর্তন করুন।
  • সহবাসের পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রস্রাব করুন।
  • প্রস্রাব করার সময় মূত্রথলী সম্পূর্ণ খালি করার চেষ্টা করুন।
  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন দৈনিক কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করুন।
  • টয়লেটে টিস্যু ব্যবহারের সময় সামনে থেকে পেছনে পরিষ্কার করুন।

এগুলোর পাশাপাশি যে কাজগুলো আপনি করবেন না সেগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো-

  • সিনথেটিক কাপড় যেমন নাইলনের তৈরি আটোসাটো আন্ত বাঁশ ব্যবহার করবেন না।
  • চিনিযুক্ত খাবারও পানিও খাবেন না এগুলো জীবাণু বেড়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে আপনার শরীরে।
  • আটোসাটো টাকা পায়জামা পড়বেন না।
  • প্রস্রাব করার সময় তাড়াহুড়া করবেন না। ধীরে সুস্থে প্রস্রাব করবেন।
  • প্রস্রাবের বেগ আসলে তা ধরে রাখবেন না যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি করে প্রস্রাব সেরে ফেলবেন।
  • যৌনাঙ্গে সুগন্ধি সাবান অথবা টেলিকম পাউডার ব্যবহার করবেন না।
  • যেসব ডায়াফ্রামে শুক্রানু ধ্বংস করার পিচ্ছিল কারক থাকে সেগুলো ব্যবহার করবেন না। এর পরিবর্তে ভিন্ন ধরনের লুব্রিক্যান্ট কিংবা জন্মনিয়ন্ত্রণের বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করুন।

উপসংহারঃ প্রস্রাবে অতিরিক্ত দূর্গন্ধ হওয়ার কারণ চিকিৎসা ও প্রতিকার

পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, প্রস্রাবে অতিরিক্ত দুর্গন্ধ খুবই পরিচিত একটি রোগ। এই রোগে প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া অথবা ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে। আপনি যদি কিছু নিয়মকানুন মেনে চলেন তবে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

আমাদের আজকের আর্টিকেলটি যারা এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে পড়েছেন তাদেরকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তবে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। এবং এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট টি ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url