শবে মেরাজ শব্দের অর্থ কি - শবে মেরাজ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আমাদের আজকে রাতে গেলে আমরা আপনাদের জানাবো শবে মেরাজ শব্দের অর্থ কি - শবে মেরাজ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে। ইসলামের নবী মোহাম্মদ সাঃ ঐশ্বরিক উপায়ে উর্ধ্ব আকাশে আরোহন করেছিলেন এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ইসলামে মেরাজের বিশেষ গুরুত্ব আছে কেননা এই মেরাজের মাধ্যমেই ইসলাম ধর্মের পঞ্চ স্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ অর্থাৎ নামাজ মুসলমানদের জন্য ফরজ করা হয়। 

শবে মেরাজ শব্দের অর্থ কি - শবে মেরাজ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে
ইসলামের মেরাজের বিশেষ গুরুত্ব আছে কেননা এই মেরাজের মাধ্যমেই ইসলাম ধর্মের পঞ্চ স্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ অর্থাৎ নামাজ মুসলমানদের জন্য ফরজ করা হয়েছে। এ রাতেই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কায়েম করার বিধি মুসলমানদের জন্য নিয়ে আসেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

ভূমিকাঃ

ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়তের দশম বছরে রজব মাসের ২৬ তারিখের দিবাগত রাতে আমাদের নবী প্রথমে কাবা শরীফ থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত বাইতুল মুকাদ্দাস বা মসজিদুল আকসায় গমন করেন এবং সেখানে তিনি নবীদের জামাতে ইমামতি করেন। অতঃপর তিনি বরাক নামক বিশেষ বাহনে আসীন হয়ে উদ্ধলোকে গমন করেন। 

উর্দ্ধ আকাশে সিদরাতুল মুনতাহে তিনি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করেন। হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করার আগ পর্যন্ত এই সফরের ফেরেশতা জিব্রাইল আলাই সাল্লাম তার সফর সঙ্গী ছিলেন। আমাদের আজকের আর্টিকেলের এই পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো শবে মেরাজ শব্দের অর্থ কি - শবে মেরাজ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে।

শবে মেরাজ শব্দের অর্থঃ

মেরাজ আরবি শব্দ, এর সাব্দিক অর্থ হচ্ছে -

  • ঊর্ধ্বগমন
  •  আকাশ পথে ভ্রমণ করা 
  • সোপান ইত্যাদি।

রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে জাগ্রত অবস্থায় মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা এর পর বরাক করে ঊর্ধ্ব আকাশে পাড়ি দেওয়ার মাধ্যমে আরও সে আজিমে পৌঁছে আল্লাহর দিদার লাভ করার নামই মিরাজ। পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন," পবিত্র সত্ত্বা তিনি যিনি বান্দাকে তার নির্দেশ গুলো দেখানোর জন্য রাত্রিকালে ভ্রমণ করেছেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত। যার পরিবেশ পবিত্র নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা"(সূরা বনী ইসরাইলঃ আয়াত এক )

শবে মেরাজ কিঃ

শবে মেরাজ বা লাইলাতুল মেরাজ অর্থ ঊর্ধ্বগমনের রাত। রজবের ২৭ তারিখ রবিবারের দশম বর্ষে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর পঞ্চাশ বছর বয়সে পবিত্র মেরাজ সংঘটিত হয়। পবিত্র মেরাজ যাত্রা শুরু হয় মসজিদে হারাম থেকে। হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম বোরাকে করে নবীজিকে বায়তুল মুকাদ্দাস নিয়ে যান। ওখানে তিনি দুই রাকাত নামাজ পড়েন ও নামাজে নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম সব নবীদের ইমামতি করেন।

এরপরে সিদরাতুল মুনতাহা হয়ে আরশে আজিমে মহান আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। পবিত্র মেরাজের রাতে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বচক্ষে বেহেস্ত দোযখ দেখেছেন। সর্বোপরি মহান আল্লাহর সঙ্গে পবিত্র দিদার লাভ করা সহ তিনি পেয়েছেন সৃষ্টি জগতের অপার রহস্য। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিধান নাজিল হয় এই রাতেই।

শবে মেরাজ সম্পর্কে ইসলাম যা বলেঃ

শবে মেরাজ বালায়লাতুল ইশরা আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর জীবনে ঘটায় অবসরণীয় ঐতিহাসিক ঘটনা। যে রাতে আমাদের নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম উদ্বোধক সায়র করেছিলেন। এটি আমাদের নবীজির জন্য মহা সম্মানের আমাদের জন্য মহাগৈরবের। কিন্তু এ রাতের সাথে আমাদের দেশে কত অবাস্তবহীন প্রথা জড়িত রয়েছে। মানুষ দিনের নামে এগুলো পালন করে প্রতারিত হচ্ছে অথচ এগুলো পালনের কোন ভিত্তি নেই। 

এগুলোকে তিনি কাজ বলা যাবে না আমল পালন করলে সওয়াব হওয়া তো দূরের কথা বরং গুনাগার হবে আল্লাহ রাসুলের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। শবে মেরাজ যেমন আমাদের নবীজির জন্য সম্মান ও মর্যাদার তেমনি আমাদের জন্য অনেক গৌরবের। এটি আল্লাহতালার এক মহান নিদর্শন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে এটি একটি স্মরণীয় তারিখ।

পবিত্র কুরআনের আলোকে শবে মেরাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে," পরম পবিত্র ও মহিময় স্বত্বা তিনি ও বান্দাকে রাত্রিবেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাকে কুদরতে কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি বরং শ্রবণকারী ও দর্শনশীল"।

শবে মেরাজ সম্পর্কে হাদিসের আলোকে এসেছে-" বিশিষ্ট সাহাবী জাবির রাজি আল্লাহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, কুরাইশরা যখন আমাকে মিথ্যাবাদী বলে তখন কাবা ঘরের হিজরত তথা হাতিমের মধ্যে আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম। অতঃপর আল্লাহ আমার সামনে বায়তুল মুকাদ্দাসকে প্রস্ফুটিত করে তোলেন। ফলে আমি এর চিহ্নগুলোর খবর ওদেরকে দিতে লাগলাম আর আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম"।( বুখারী ও মুসলিম মিশকাত ৫৩০ পৃষ্ঠা )

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু এর বর্ণনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "আমি হিজরের মধ্যে ছিলাম এমতাবস্থায় কুরাইশরা আমাকে মিরাজ ভ্রমণ সম্পর্কে এমন কিছু জিজ্ঞেস করে যেগুলো আমি ভালো করে আয়ত্ব করিনি। তাই আমি এত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলাম যে এর মত দুশ্চিন্তা গ্রস্থ আমি আগে হইনি। অতঃপর আল্লাহ আমার সামনে বাইতুল মুকাদ্দাস তুলে ধরলেন আমি ওদিকে চেয়ে থাকলাম ওরা যে কোন প্রশ্ন আমাকে করতে থাকে তার প্রত্যেকটার উত্তর আমি দিতে থাকলাম"।( মুসলিম প্রথম খন্ড ৯৬ মিশকাত ৫২৯ পৃষ্ঠা )

বিশিষ্ট সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ রাদিয়াল্লাহু এর বর্ণনায় আছে," পৃথিবীর আকাশ টি থেকে নিকটবর্তী আকাশ ৫০০ বছর চলার পথ। তারপর থেকে সপ্তম আকাশ পর্যন্ত প্রত্যেক আকাশের মাঝে ৫০০ বছর চলার পথ তারপর সপ্তম আকাশের ওপর থেকে ৫০০ বছর চলার পথ তার ওপরে আছে পানি পানির উপরে আছে আল্লাহর আরশ সমাসীন আছেন, আল্লাহ সুবাহান আল্লাহ ওয়া তা'আলা"। 

শবে মেরাজ ২০২৪ঃ

বায়তুল মোকাররাম এ ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। ১৪৪৩ হিজরী সনের পবিত্র রজব মাসের চাঁদ দেখা সম্পর্কে সব জেলা প্রশাসন ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর প্রধান কার্যালয় বিভাগীয় জেলা কার্যালয় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান হতে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে,

২৯ জমা দিউস সানি ১৪৪৩ হিজরি, উনিশ মাঘ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ খ্রিস্টাব্দ বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র রজব মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। এজন্য বৃহস্পতিবার থেকে পবিত্র রজব মাস গণনা শুরু হবে। এর ওই পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২৬ রজব ১৪৪৩ হিজরি ২৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার দিবাগত রাতে পবিত্র শবে মেরাজ উদযাপিত হবে।

শবে মেরাজের ইতিহাসঃ

হিজরতের পূর্বের কথা। এক রাতে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম শুয়ে ছিলেন। চোখদুটো মুদে এসেছেন তবে হৃদয় মানুষ ছিল জাগ্রত। এ সময় আগমন করলেন হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সাল্লাম। তিনি নবীজিকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন জমজমের নিকট একটি স্বর্ণের পেয়ালা আনা হলো তা ছিল ঈমান তাদের জমজমের পানি ছিল। 

জিব্রাইল আলাই সাল্লাম প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর বক্ষ মোবারক বিদীর্ণ করলেন। বের করে আনলেন নবীজির হৃদয়। জমজমের পানি দিয়ে তা ধুয়ে আবার প্রতিস্থাপন করে দিলেন ঠিক জায়গা মত। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর কলব পূর্ণ করে দেওয়া হল ঈমান ও হিকমত দ্বারা। 

এরপরে আনা হলো নবীজিকে বহন করার জন্য সওয়ারি। প্রাণীটি গাধার চেয়ে বড়, ঘোড়ার থেকে ছোট। নাম বুরাক, এর রঙ ছিল সাদা ।এটা এতটাই ক্ষিপ্ত গতির যার এক একটি কদম পরে দৃষ্টির শেষ সীমায় গিয়ে। এই বাহনে করে নবীজি সাঃ মুহুর্তে পৌঁছে গেলেন বায়তুল মুকাদ্দাসে। কটি বেঁধে রাখা হলো পাথর ছিদ্র করে। 

যে পাথরে অপার আপার নবীগণ নিজেদের বাহন বেঁধে রাখতেন। নবীজি সেখানে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন নামাজ পড়ে বের হওয়ার সময় জিবরীল আলাইহিস সাল্লাম নবীজির সামনে দুটি পেয়ালা পেশ করলেন। একটি দুধের পেয়ালা অপরকে সরাবরের পেয়ালা। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম দুধের পেয়ালাটি গ্রহণ করলেন। 

জিব্রাইল আলাই সাল্লাম বললেন আপনি দিনের স্বভাব সিদ্ধ বিষয়টি নির্বাচন করেছেন। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ মদের পেয়ালা নেওয়ার পরিবর্তে দুধের পেয়ালা গ্রহণ করায় জিব্রাইল আলাই সাল্লাম বলেন," আপনি যদি মদের পেয়ালা নিতেন তাহলে আপনার উম্মত বিভ্রান্ত হয়ে পড়তো" বুখারীঃ হাদিস ৩৩৯৪।

শবে মেরাজের শিক্ষাঃ

শবে মেরাজের ঘটনা থেকে মুসলমানরা খুঁজে পায় সঠিক পথের দিশা, লাভ করে আল্লাহর অপার অনুগ্রহ ও দ্বীনের অবিচলতা। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলার কাছে কত দামী ও মর্যাদার অধিকারী তা এ ঘটনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়। তাকে এমন মর্যাদা দান করা হয়েছে যা অন্য কোন নবীকে দান করা হয়নি এ ঘটনার ফলে মুসলমানদের ঈমান মজবুত হয় এবং হৃদয়ে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসা গভীর হয়। 

উপসংহারঃ শবে মেরাজ শব্দের অর্থ কি - শবে মেরাজ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে

পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, আমাদের আজকের আর্টিকেলটি যারা মনোযোগ সহকারে পড়েছেন তারা নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন শবে মেরাজ শব্দের অর্থ কি - শবে মেরাজ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে, ২০২৪ শবে মেরাজ কবে অনুষ্ঠিত হবে, শবে মেরাজের শিক্ষা, শবে মেরাজের ইতিহাস ইত্যাদি সম্পর্কে।

আমাদের আজকের আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তবে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন এবং এরকম আরো ইসলামিক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url