লাল শাক ও পালং শাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানুন

আসসালামু আলাইকুম, পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি, ই এবং আয়রন। অপরদিকে লাল শাকে ও রয়েছে ফসফরাস, আয়রন, সেলিনিয়াম, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি। লাল শাক রক্ত হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়।এছাড়া দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং রক্তশূন্যতা দূর করে লাল শাক।

লালশাক ও পালং শাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানুন
পালং শাক শরীরের জন্য চমৎকার উপকারী ভূমিকা রাখে। যাদের বয়স জনিত চোখের সমস্যা রয়েছে তাদের চোখের ক্ষতি রোধ করতেও পালং শাক ভূমিকা রাখে। এছাড়াও এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং শরীরের শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। অপরদিকে লাল শাক হৃদরোগের ঝুঁকি এবং ক্যারোটিন কমায়। অস্ত্র পাচারেরে কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক এই লাল শাক।

ভূমিকাঃ

লাল শাক বা পালং শাক আমাদের প্রতিদিনের খাবারে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি স্বাস্থ্যকর এবং উপকারী সবজি গুলোর মধ্যে একটি। বিভিন্ন রকম শাকে রয়েছে প্রয়োজনীয় মিনারেল ও ফাইবার যা আমাদের পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। সেজন্য আমাদের আর্টিকেলের আজকের এই পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো লাল শাক ও পালং শাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। প্রাচীনকাল থেকে বাঙালির প্রথম পাতের শাক ছাড়া ভাত মুখে স্বাদ আসতো না।

কিন্তু বর্তমান সময়ে প্রায় অফিস ছুট কর্মজীবী নারী ও পুরুষেরা কোনমতে এক পথ খেয়েই চলছে। কারণ তারা অধিকাংশই বাইরের খাবার বেশি পছন্দ করে। কিন্তু আপনি যদি সারা বছর নিয়ম করে শাক-সবজি খেতে পারেন তবে আপনার শরীরের ধারে কাছেও রোগ আসবে না।

লাল শাকঃ

লাল শাক কিংবা পালং শাক আমাদের প্রতিদিনের খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আপনি যদি আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় লাল শাক কিংবা পালং শাক রাখতে পারেন তবে আপনি নানা রকম রোগ থেকে মুক্তি পেতে পাবেন। আমাদের আর্টিকেলের এই পর্বে চলুন জেনে নেই লাল শাক খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।

লাল শাক খাওয়ার উপকারিতাঃ

  • লাল শাকের ভিটামিন সি থাকায় চোখের রেটিনার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যা আপনার দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে সাহায্য করবে। আপনি যদি গ্লুকোমার সমস্যায় ভুগেন তবে প্রতিদিন লাল শাক খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন দেখবেন এ রোগ থেকে পরিত্রাণ পাবেন।
  • আপনি যদি আপনার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত লালশাক খেতে পারেন তবে আপনার কিডনির কার্যক্ষমতা বেড়ে যাবে। এছাড়াও রক্ত পরিশুদ্ধ রাখবে আপনার।
  • লাল শাকের মূল দিয়ে দাঁত মেজে লবণ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন এর ফলে আপনার দাঁতের মধ্যে থাকা হলুদ ভাব কেটে যাবে এবং আপনার দাঁতের যদি অন্যান্য সমস্যা থাকে সেগুলোও দূর হয়ে যাবে।
  • শরীরের রক্তের পরিমাণ বাড়ায় লাল শাক। সে জন্য আপনারা যদি কেউ অ্যানিমিয়ায় ভোগেন তাহলে আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় লাল শাক রাখুন।
  • আপনার কি স্বাভাবিকের চেয়ে চুল পড়ছে তবে এটা থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে, লালশাক ভালো করে বেটে তার মধ্যে এক চা চামচ লবণ মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন এই মিশ্রণটি খান দেখবেন চুল পড়া অনেকটাই কমে যাবে।
  • গর্ভবতী মায়েদের এবং শিশুদের স্বাস্থ্য উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে লাল শাক।
  • লাল সাথে আছে ফাইবার আর এই ফাইবার পরিপাকে সাহায্য করে, যেহেতু হজম প্রক্রিয়া সঠিকভাবে হয় সেহেতু কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা দূর করে লাল শাক।
  • আপনাদের মধ্যে যারা ডায়েটে রয়েছেন তারা তাদের খাদ্য তালিকায় লাল শাক যোগ করুন।
  • লাল শাক কিডনিকে পরিষ্কার রাখতে খুব কার্যকরী এইসব কিডনির কার্যক্ষমতা কেউ ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

লাল শাকের পুষ্টিগুণঃ

পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলেছেন, লালশাক রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায়।দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং রক্তশূন্যতা দূর করে। সহজলভ্য লালশাদে রয়েছে ভিটামিন এ পাইরেডিক্সিন ও ভিটামিন সি। ছাড়াও রয়েছে-

  • ফলেট
  • রিব্লোবিন
  • নিয়াসিন 
  • থায়ামিন প্রোটিন
  • প্যানটোথেনিক এসিড

খনিজ উপাদান  

  • ফসফরাস
  • আয়রন
  • সেলেনিয়াম
  • কপার
  • জিংক
  • ম্যাঙ্গানিজ
  • ক্যালসিয়াম
  • পটাশিয়াম ইত্যাদি।

পালং শাকঃ

পালং শাক শীতকালীন সবজি। পালংশাক খেতে যেমন মজা তেমনি এর উপকারিতা অনেক। পালং শাকে রয়েছে শরীরকে সুস্থ ও সরল রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। আপনি যদি আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পালং শাক রাখেন তবে আপনার নানা প্রকার অসুখ-বিসুখ কে দূরে রাখতে সাহায্য করবে পালংশাক। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা এবং পালং শাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।

পালং শাক খাওয়ার উপকারিতাঃ

পালং শাকের প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা আপনার শরীরকে নানা রকম রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে। সে জন্য আপনি যদি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পালং শাক রাখতে পারেন তবে আপনাকে অসুখ-বিসুখের হাত থেকে রক্ষা করবে পালং শাক। নিয়ে জেনে নেই পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা গুলো-

  • আপনি যদি আপনার খাদ্য তালিকায় কম ক্যালরিযুক্ত খাবার বাছাই করতে চান সেক্ষেত্রে আপনি পালং শাক রাখতে পারেন। কারণ প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে ক্যালরি রয়েছে মাত্র সাত কিলো ক্যালরিযা আপনার শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
  • আপনার দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে আপনি আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পালং শাক রাখুন কারণ পালংশাকে রয়েছে উচ্চমাত্রার বিটাকার রুটিন যা আমাদের চোখের ছানি পড়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • আমাদের শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর করে এবং রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও পালং শাকে রয়েছে উৎপাদনের জন্য খুবই জরুরী।
  • পালংশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিনে যা সুস্থ কার্ডীয় ভাসুকুলার সিস্টেমের জন্য খুবই জরুরী। সেজন্য আপনাকে আপনার হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখতে আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পালং শাক রাখুন।
  • আপনি যদি প্রতিদিন পালং শাক খেতে পারেন তবে আপনাকে ক্যান্সারের আক্রমণ থেকে রক্ষা করবে এই পালং শাক কারণ পালং শাকে রয়েছে ১০ টিরও বেশি ভিন্ন ধরনের ফ্ল্যাভোনেয়েড। জামনার শরীরে ভয়ানক রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে।
  • আপনার যদি জয়েন্টে ব্যথার সমস্যা থেকে থাকে তবে আপনি অবশ্যই আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পালং শাক রাখতে পারেন এতে করে আপনি উপকৃত হবেন।
  • আপনার ত্বকে কি বয়সের ছাপ পড়ে গেছে তবে আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পালং শাক রাখুন কারণ পালং শাক ত্বককে নরম ও স্থিতিস্থাপক অবস্থা ধরে রাখতে সাহায্য করবে। এছাড়াও আপনার যদি ত্বকে ব্রণের সমস্যা থাকে তবে সে সমস্যাও দূর হয়ে যাবে।
  • আপনি কি কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভুগছেন। যার কারণে আপনি বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকেন তবে আপনি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রেহাই পেতে আপনার নিয়মিত খাদ্য তালিকায় পালং শাক রাখুন দেখবেন এই রোগ থেকে আপনি মুক্তি পাবেন।

পালংশাকের পুষ্টিগুণঃ

প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে রয়েছে-

  • প্রোটিন ২.০ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট ২.৮ গ্রাম
  • আয়রন ১১.২ মিলিগ্রাম।
  • ফসফরাস ২০.৩ মিলিগ্রাম।
  • নিকোটিনিক এসিড ০.৫ মিলিগ্রাম
  • অক্সালিক এসিড ৬৫২ মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম ৭৩ মিলিগ্রাম
  • পটাশিয়াম ২০৮ মিলিগ্রাম
  • আঁশ ০.৭ গ্রাম

এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে। এর ভিটামিনের পরিমাণ-

  • ৯৩০০ আই ইউ
  • রিবোফ্লোবিন ০.০৮ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন সি ২৭ মিলিগ্রাম
  • থায়ামিন ০.০৩ মিলিগ্রাম।

লাল শাক ও পালং শাকের চাষ পদ্ধতিঃ

লাল শাক ও পালং শাক চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আমাদের আর্টিকেলের এই পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক লাল শাক ও পালং শাক চাষ পদ্ধতি-
ছোট টপ বা প্লাস্টিকের বালটি অথবা কাঠের কন্টেনিয়ার বা ছাদের কোনায় বাউন্ডারি করে ছাদে শাক চাষ করা যায়। মাটি তৈরিতে মাটির সাথে বেশি করে গোবর বা জৈব সার মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে। সেটা জমিতে হোক কিংবা টবে হোক। বর্তমানে লাল শাক সারা বছরই পাওয়া যায় কিন্তু শীতকালে এটি বেশি হয়। লাল শাক ও পালং শাক যেখানে রোদ বেশি থাকে সেখানে ভালো ফলন হয় কিন্তু ছায়াযুক্ত স্থানেও লালসা হয় তবে উচ্চতা একটু কম হয়। 
আপনি টবে কিংবা জমিতে যেখানেই লাল শাক ও পালং শাক রোপন করেন না কেন দেখবেন যাতে সেখানে পানি জমতে না পারে সে ব্যবস্থা করে দেবেন। লাল শাক এবং পালং শাকে নানা রকম রোগ বালাই হয়ে থাকে যেমন গোড়া পচা এবং পাতায় ছত্রাকের সমস্যা। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আপনাকে লাল শাক এবং পালং শাক রোপনের আগে মাটি তৈরি করার সময় আপনি নিম পাতা গুঁড়ো করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে তারপর চারা রোপন করলে এ রোগ থেকে অনেকটা রক্ষা করা যায়।
লাল শাক ও পালংশাকের জন্য মাটি তৈরি করার আগে অবশ্যই আপনাকে উর্বর দোয়াশ ও বেলে ধোয়াশ মাটি নির্ধারণ করতে হবে। প্রথমে আপনাকে দুই থেকে তিনটি চাষ দিতে হবে জমিতে এবং শেষ চাষের সময় গোবর সারের পরিমাণ ৪০ কেজি, টিএসপি ৩০০ গ্রাম, এবং হেক্টর প্রতি গোবর ১০ টন।  

উপসংহারঃ লাল শাক ও পালংশাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানুন

পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন রকম শাকসবজি থাকা ব্যঞ্জনীয়। কারণ শাকসবজি ছাড়া সুষম খাবারের পুষ্টি পূরণ হয় না। সেজন্য আমাদের সকলেরই উচিত আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শাক সবজি রাখা। তাই আপনার সুষম খাদ্যের উপাদান হিসেবে আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় লাল শাক ও পালংশাক রাখতে পারেন।

এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি যদি আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হন তবে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন এবং এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট টি ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url