জুমার দিন গোসল করার সঠিক সময় জেনে নিন
আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাবো জুম্মার দিন গোসল করার সঠিক সময় সম্পর্কে। মুসলমানদের সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হল জুম্মার দিন। এদিন জুমার নামাজের মত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে ভালোভাবে গোসল করা সুন্নত। জুমার নামাজ আদায় করার আগে যে সময় মানুষ মসজিদে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয় সময়টি জুম্মার গোসল করার সঠিক সময়।
ভূমিকাঃ
জুমার দিন কোন সময় গোসল করলে সুন্নত আদায় হবে এ ব্যাপারে ফকিহিগণ বলেন, জুমার প্রস্তুতি হিসেবে এমন সময় গোসল করা উত্তম যেন ওই অজু গোসল দিয়েই জুমার নামাজ আদায় করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ জুমার নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে যে মানুষ মসজিদে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয় ওই সময় টুকু জুমার দিনের গোসল করার সঠিক সময়।
একটু হাদিসে রাসূল সাঃ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ এই দিনটিকে মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন রূপে নির্ধারণ করেছেন। সেজন্য যে ব্যক্তি জুম্মার নামাজ আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি যদি থাকে তবে শরীরে লাগায়। মেসওয়াক করাও একজন মুসলমানের কর্তব্য জুম্মার দিন। ( সুনানে ইবনে মাজাহঃ৮৩ )।
জুম্মার দিনের মর্যাদাঃ
ইসলাম এ কথা কে পছন্দ করে। মানুষ মানুষকে একতা করার প্রতি আহ্বান করে বিছন্নতা ও একতেলাফ ও অপছন্দ ঘৃণা করে ইসলাম। মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন শুক্রবার। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন-" আমরা শেষে এসেছি কিন্তু কেয়ামতের দিন সকলের আগে থাকবো"। আমাদের পূর্বে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের গ্রন্থ দেওয়া হয়েছে আমরা যদি শুক্রবারে জুম্মার দিন একটু আগে মসজিদে যায় তবে এর জন্য অনেক ফজিলত পাব।
সেজন্য আসুন আমরা জুম্মার দিনে আগে মসজিদে যাই তবে এর ফজিলত অনেক বেশি হাদিসে আছে রাসুল সাঃ বলেছেন-" যে ব্যক্তি গোসল করে প্রথমদিকে মসজিদে হাজির হয় সে যেন একটি উট কোরবানি করল, দ্বিতীয় সময়ে যে মসজিদে প্রবেশ করলো সে যেন একটি গরু কুরবানী করল, তৃতীয় সময়ে যে মসজিদের প্রবেশ করলো সে যেন একটি ছাগল কোরবানি করলো,
এবং চতুর্থ সময়ে যে মসজিদে প্রবেশ করলো সে যেন একটি মুরগি কোরবানি করল, আর পঞ্চম সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলো সে যেন একটি ডিম কোরবানি করলো। অতঃপর ইমাম যখন বেরিয়ে এসে মিম্বরে বসে গেলেন খুতবা শুনতে বসে যাই" ( বুখারীঃ ৮৮১ ইফা, ৮৩৭, আধুনিক ৮৩০)
অতঃপর আপনাদের মধ্যে "যে ব্যক্তি আদব রক্ষা করে জুম্মার সালাত আদায় করবে তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে তার জন্য পুরো এক বছরের রোজা পালন এবং রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়ার সমান সওয়াব লেখা হবে"।
জুমার দিন গোসল করার সঠিক সময়ঃ
আউশ বিন আউজ সাফা আস সাকাফি রাজাল্লাহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন-" জুম্মার দিন যে ব্যক্তি গোসল করায় অর্থাৎ সহবাস করে, ফলে স্ত্রী ফরজ গোসল করে এবং নিজেও ফরজ গোসল করে, সকলের আগে মসজিদে আগমন করে পায়ে হেঁটে মসজিদে যায় অর্থাৎ কোন কিছুতে আরোহন করে নয়, ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনে, কোন কিছু নিয়ে খেলা তামাশা করে না, সে ব্যক্তির প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য রয়েছে বছরব্যাপী রোজা পালন ও সারা বছর রাত জেগে ইবাদত করার সমতুল্য সোয়াব" ( মুসনাদে আহমাদঃ৬৯৫৪, ১৬২১৮ )।
পবিত্র আল কুরআনের ইরশাদ হয়েছে-" হে মুমিনগণ, জুম্মার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে এসো এবং বেচাকেনা বন্ধ কর, এটা তোমাদের জন্য উত্তম, অথবা নামাজ সমাপ্ত হলে ভূপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ জীবিকা তালাশ করো আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো যাতে তোমরা সফলকাম হও"।( সূরা জুম্মা, আয়াত ৯-১০ )।
জুম্মার দিন কোন সময় গোসল করলে এর সুন্নত আদায় হবে এ ব্যাপারে ফকিগণ বলেন, জুম্মার প্রস্তুতি হিসেবে এমন সময় গোসল করা উত্তম যেন ওই অজু গোসল দিয়ে জুম্মার নামাজ আদায় করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ জুমার নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে যে সময় মানুষ মসজিদে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়, ওই সময়টি জুম্মার দিনের গোসল করার সঠিক সময়। তবে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী জুমার নিয়তের দিনের প্রথম ভাগে গোসল করলেও সুন্নত আদায় হয়ে যাবে আবার গোসল করার প্রয়োজন হবে না।
জুমার দিনে যে ব্যক্তি জুমার নামাজের জন্য গোসল করলো সে অধিক উত্তম কাজ করলো। সুন্নত আমল পূর্ণ করল কারণ যে ব্যক্তি জুম্মার দিন ওযুর সঙ্গে সঙ্গে গোসল করলো তা শুধু অজু অপেক্ষা গোসলের মত অধিকত্তম সুন্নত আমল করলো। প্রসিদ্ধ যার ইমামসহ অধিকাংশ আলেম জুম্মার দিন অজুর সঙ্গে সঙ্গে গোসলের পদ্ধতিকে গ্রহণ করেছেন।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন" জুমার দিনে প্রত্যেক সাবালকের জন্য গোসল করা ওয়াজিব"( বুখারী )। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ জুমার নামাজে আসলে সে যেন গোসল করে আসে" বুখারী, মুসলিম। সেজন্য জুমার দিন ওযুর চেয়ে গোসল করাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
উপসংহারঃ জুমার দিন গোসল করার সঠিক সময় জেনে নিন
পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের উচিত জুম্মার নামাজের জন্য গোসল করে এ দিনের উত্তম আমলে নিজেদের সম্পৃক্ত করা। যদি একান্ত কোন কাজে ব্যস্ত থাকে তবে অজু করে জুমার নামাজ পড়া দোষ নেই তবে জুমার জন্য গোসল করাকে অবশ্য বলেছেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। গোসল করে নামাজের প্রস্তুতি গ্রহণ ও আগে আগে পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার তৌফিক দান করুন সকলকে।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আপনারা যারা এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি পড়েছেন তাদেরকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তবে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন এবং এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url