স্ট্রোক কেন হয়, স্ট্রোকের কারণ লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাব -স্টোক কেন হয়, স্ট্রোকের কারণ লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার। স্টোক হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় বা মাথার ভেতরে রক্তক্ষরণের কারণে হয়ে থাকে। স্ট্রোক করার ফলে মস্তিষ্কের প্রভাবিত অংশের স্নায়ু কোষগুলি মারা যায় এবং শরীরের অঙ্গ গুলির কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা হারিয়ে যায়।

স্ট্রোক কেন হয়, স্ট্রোকের কারণ লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার

আপনি যদি স্ট্রোকের লক্ষণগুলি চিনতে পারেন এবং অবিলম্বে চিকিৎসা সহায়তা করতে পারেন তবে আপনি আপনার মৃত্যু সম্ভাবনা কমাতে পারেন। স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবিলম্বে চিকিৎসা সেবা পেতে হবে কারণ স্ট্রোক শুরু হওয়ার ৬০ মিনিটের মধ্যে তাদের হাসপাতালে পৌঁছানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রোকের কারণে মস্তিষ্কের প্রভাবিত অংশের উপর নির্ভর করে আপনার বাকশক্তি অনুভূতি বেশি শক্তি দৃষ্টিশক্তি বা স্মৃতিশক্তি হারাতে পারে।

ভূমিকাঃ

স্টকের রোগীদের তৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া গেলে রোগীর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। বর্তমান সময়ে স্টক একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা এবং দ্রুত এর চিকিৎসা শুরু করা না গেলে রোগীকে পঙ্গুত্ব বরণের পাশাপাশি তার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। স্ট্রোক হলে মানুষের মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে মানুষ মারা যায়।

আপনি যদি সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে চান তবে অবশ্যই একজন সুস্থ শরীরের প্রতিটি কোষে রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন কারণ এই রক্তের মাধ্যমে শরীরের কোষে কোষে অক্সিজেন পৌঁছায়। কোন কারনে যদি মস্তিষ্কের কোষের রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয় তখন রক্তনালী বন্ধ হয়ে যায় বা ছিড়ে যায় তখনই স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।

বর্তমানে তরুণ এমনকি শিশুরাও স্টকে আক্রান্ত হচ্ছে। সাধারণত স্ট্রোকে আক্রান্ত বেশি বয়সী রোগীদের কেই দেখা যেত। গবেষণায় দেখা গেছে নারীদের তুলনায় পুরুষদের স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। 

স্ট্রোক কেন হয়ঃ

স্টোক একটি মস্তিষ্কের রোগ এবং এটা হল আমাদের মস্তিষ্কের রক্তনালী গুলোর জটিলতার কারণে হয়। রক্তনালীতে কখনো রক্ত জমাট বেঁধে স্ট্রোক হয় এবং ব্রেনের একটা অংশের সক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়ার পরে আমাদের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। আপনার ব্রেনের মধ্যে যদি কোনো কারণে রক্তনালীর কোন অংশের তার ছিড়ে রক্তক্ষরণ হয় তবে ব্রেনের একটি অংশ কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এক্ষেত্রে এটাকে স্টোক বলে।

স্ট্রোক হওয়ার কারণঃ

স্টক হওয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো ধূমপান, ও ইস্থলতা, রক্তে কোলেস্টেরলের আর্থিক্য, বহুমূত্র, পূর্বের ক্ষণস্থায়ী রক্ত সংশোধন জনিত আক্রমণ, অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন। প্রধানত দুই ধরনের স্ট্রোক রয়েছে-মস্তিষ্কের রক্তসংরোধজনিত ও অন্ত রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক। রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক বিশেষ করে উপ এর একনয়ের রক্তক্ষরণের তীব্র মাথা ব্যাথা।

স্ট্রোক হওয়ার লক্ষণঃ

স্ট্রোকের লক্ষণ গুলি হার্ট অ্যাটাক এর মত নাটকীয় বা বেদনাদায়ক নাও হতে পারে তবে স্ট্রোকের কারণে আপনার জীবনে নেমে আসতে পারে অন্ধকার। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক স্ট্রোকের লক্ষণগুলো-

  • হঠাৎ বিভ্রান্তি কথা বলতে বা বুঝতে সমস্যা।
  • হঠাৎ হারতে সমস্যা মাথা ঘোরা ভারসাম্য বা সমম্বয় হারানো।
  • কোন অজ্ঞাত কারণ ছাড়াই হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা।
  • মুখ বা পায়ের হঠাৎ বা দুর্বলতা বিশেষ করে শরীরের একপাশ।

যদি আপনি আপনার পরিচিত কেউ উপরের সতর্কতা চিহ্ন গুলির মধ্যে কোনটের অনুভব করেন তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। কখনো কখনো এই সতর্কতা চিহ্নমাত্র কয়েক মিনিট স্থায়ী হয় এবং তারপর চলে যায়।

স্ট্রোকের চিকিৎসাঃ

স্টোক শুরু হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে দেওয়া হলে নতুন চিকিৎসা কাজ করে। সমস্ত স্টোক রোগীদের জন্য লক্ষ্য হলো আরো মস্তিষ্কের ক্ষতি প্রতিরোধ করা যদি স্ট্রোক মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহে বাধার কারণে হয়ে থাকে তাহলে চিকিৎসার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক স্ট্রোকের চিকিৎসা গুলো-

  • রক্ত পাতলা করে এমন ওষুধ যার মধ্যে এন্টি কোয়াকলান্ড ওয়ারিং এবং এন্টি প্লটনের ঔষধ ( অ্যাস্পিরিন বা টিক্লোপিডিন ) এক্সপিরিন এবং টেকসই রিলিজ ডিপাইরিডামলের সংমিশ্রণ।
  • সার্জারিবা ঘাড়ের সংকীর্ণ রক্তনালী গুলির ভিতর অংশ খুলে দেয়।
  • TPI একটি প্লট বাস্টিং ড্রাগ যা রক্তপাতহীন স্ট্রোক শুরু হওয়ার তিন ঘন্টার মধ্যে ইনজেকশন দেওয়া হয়।

যদি রক্তপাতের কারণে স্ট্রোক হয় তাহলে চিকিৎসার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারেঃ

  • ওষুধ বা স্বাভাবিক রক্ত জমাট বাধা বজায় রাখে।
  • ভাঙ্গা রক্তনালী ঠিক করতে সার্জারি।
  • মস্তিষ্ক রক্ত অপসারণ বা মস্তিষ্কের উপর চাপ কমানোর সার্জারি।
  • ওষুধ যা মস্তিষ্কের ফোলা প্রতিরোধ বা বিপরীত করে।
  • চাপ কমাতে মস্তিষ্কের ফাঁপা অংশের একটি টিউব ঢুকানো।
  • ওষুধ যা স্বাভাবিক রক্ত জমাট বাধা বজায় রাখে।

স্ট্রোকের প্রতিকারঃ

স্টকের লক্ষণ ও পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে একটি শব্দ মাথায় রাখতে হবে সেটা হল ফাস্ট। এখানে মুখ বাঁকা হয়ে যাওয়া অথবা মুখের এক পাশ ড্রপ হওয়া হাত অবশ হয়ে যাওয়া অথবা হাতের শক্তি কমে যাওয়া কথা জড়িয়ে যাওয়া এবং যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া।

এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে বিছানায় বা মেঝেতে কাত করে শুইয়ে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে হবে না হলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। রোগীকে বাতাস করতে হবে অথবা আলো বাতাস চলাচল করে এমন স্থানে রাখতে হবে রোগের আশেপাশে ভিড় করে কান্নাকাটি করা যাবে না।

গায়ে থাকা কাপড় ঢিলেঢালা করে দিতে হবে রোগীর যেমনটাই বেল্ট স্কাপ আন্তঃ বাসের বাঁধন খুলে দিতে হবে যেমন রোগী শ্বাস নিতে পারে। এ সময় রোগী যদি জ্ঞান হারায় তবে তার মুখ খুলে দেখতে হবে কিছু আটকে আছে কিনা ভেজা কাপড় দিয়ে মুখে জমে থাকা লালা খাবারের অংশ বা বমি পরিষ্কার করে দিতে হবে। 

এ সময় রোগীকে পানি খাবার বা কোন ওষুধ খাওয়ানো যাবে না কারণ একক ধরনের স্ট্রোকের ঔষধ একক রকম। এছাড়াও আপনি চাইলে হাতে-কানে লতিতে বা হাতের আঙ্গুলে ফুটিয়ে রক্ত বের করার যে ভাইরাল রয়েছে সেটার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই এসব করলে স্ট্রোকের প্রতিকার তো হবে না বরং রক্তের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রক্তের সংক্রমক ব্যাধি হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে রোগীর শরীরে।

উপসংহারঃ স্ট্রোক কেন হয়, স্ট্রোকের কারণ লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার 

পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, রোগীর যদি স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা যায় তবে তাকে যত দ্রুত সম্ভব হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। স্টক পরবর্তী পুনর্বাসনের মাধ্যমে একজন ইস্টকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অক্ষম থেকে সক্ষম ও সুস্থ সুন্দর স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এতে করে পরিবার সমাজ ও দেশের অর্থ সামাজিক উন্নয়ন করা সম্ভব।

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আমাদের আজকের আর্টিকেলটি যারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য সহকারে পড়েছেন তাদেরকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তবে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। এবং এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url