বসন্ত কালে কি কি রোগ হয় জেনে নিন

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক আমাদের আজকের আর্টিকেল টি যদি আপনি পড়ে থাকেন তবে জানতে পারবেন বসন্ত কালে যে সব রোগ গুলো হয় সে সম্পর্কে। বসন্তকালে সাধারণত এলার্জি জাতীয় রোগের সংক্রমণ বেশি হয়। ছাড়াও বসন্তকালে হাম ও পক্স হয় তুলনামূলকভাবে বেশি।

বসন্ত কালে কি কি রোগ হয় জেনে নিন

বসন্তকালে সাধারণত এলার্জি জাতীয় রোগের সংক্রমণ বেশি হয়। বসন্ত ঋতুতে আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটে যার কারণে বিকেল থেকে সকাল পর্যন্ত ঠান্ডা ভাব থাকে। বসন্তকালে জল বসন্ত ও হাম রোগের পাদুর্ভাব বেশি হয়। বসন্তকালে অন্যান্য রোগের পাশাপাশি চোখের সমস্যাও দেখা দেয়।

বসন্তকালের রোগ সমূহ 

বসন্তকালে নানা রকম রোগ হয় সেগুলোর মধ্যে জল বসন্ত ও হাম রোগের পাদুর্ভাব বেশি হয়। বসন্তকালে বাতাসে ধূলিকণা ফুলের রেনু পাতা ওরা বেড়ে যায় যার কারণে এ সময় রোগের পাদুর্ভাব বাড়তে থাকে। শুষ্ক হাওয়ায় ধুলাবালি থেকেও এলার্জির সমস্যা হতে পারে অনেকের এর মধ্যে অন্যতম হলো হাঁচি, কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ চুলকানো ও চোখ লাল হয়ে যাওয়া। 

সেজন্য যাদের একটু অতি সংবেদনশীলতা বা অ্যালার্জির প্রবণতা আছে তাদের এই বসন্তকালের সাবধানে থাকা দরকার। এছাড়াও যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে তারা মুখে মাক্স বা রুমাল ব্যবহার করতে পারেন। আপনার যদি বসন্তকালে সরদি কাশি হয়ে থাকে তবে সেটা দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে এমনিতেই সেরে যায়। সেজন্য আপনাকে ওষুধ নয় বরং কিছু উপদেশ মেনে চলতে হবে এ কাশি থেকে রক্ষা পেতে হলে।

সাধারণত বসন্তকালে দুই ধরনের রোগ দেখা যায় এগুলো হলো জল বসন্ত আর গুটি বসন্ত। তবে সাধারণত এখন যে বসন্ত রোগে মানুষ আক্রান্ত হয় তা হলো জলবসন্ত। জল বসন্ত ও গুটি বসন্তের মধ্যে গুটি বসন্ত হচ্ছে সবচেয়ে মারাত্মক রোগ তবে ১৯৮০ সালে সারাদেশব্যাপী টিকার মাধ্যমে এ রোগটি বিশ্বব্যাপী বিলুপ্তি ঘোষণা করে। চলুন নিম্নে জেনে নেই বসন্তকালের রোগ সমূহ-

ভাইরাস জ্বর

আপনার যদি সর্দি কাশির সঙ্গে মাথা ব্যাথা এবং শরীর ব্যথা দেখা দেয় তবে আপনি ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। বসন্তড়ি তোদের কিছু কিছু টাইপ হয়ে যায় এবং প্যারাটাইফয়েড জ্বর দেখা দিতে পারে। প্রথমদিকে এজর এবং টাইফয়েড জ্বরের মধ্যে পার্থক্য বের করা মুশকিল হয়ে পড়ে জ্বরের ধরন ও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে বিষয়টি জানা যায়।

আপনি যদি ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হন তবে আপনাকে পুরোপুরি বিশ্রামে থাকতে হবে। এছাড়াও ভাইরাস জ্বরের আক্রান্ত রোগীকে সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে জ্বর ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর উপরে থাকলে রোগীকে ভিজা কোন কাপড় দিয়ে পুরো শরীর মুছে দিতে হবে। এছাড়াও রোগী যদি ভাই আক্রান্ত হয় তবে তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল পানিও খেতে দিতে হবে।

এ অবস্থায় প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধে এক থেকে চার দিনের মধ্যেই জ্বরের উপকার করতে থাকে যা পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায় জ্বর টি। এই নিয়মে যদি আপনার জ্বর না ভালো হয় তবে আপনি অবশ্যই একজন রেজিস্টার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 

মাম্পস 

মামস ভাইরাস হলো সৃষ্ট একটি তীব্র সংক্রমণ। মানুষের ভাইরাস হলে সাধারণত জ্বর এবং গাল তাছাড়া চোয়ালে বেদনাদায়ক ফুলে যায় এবং প্যারাটিড গ্রন্থি সামনে পিছনে এবং নিচের দিকে কানের লোভ ছড়িয়ে পড়ার দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। মামস ভাইরাস সাধারণত শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে দেখা যায় বেশি। 

নরো ভাইরাস রোগ 

এ ভাইরাসটি শরীরে উপস্থিত হলে আপনার ডায়রিয়া বমি বমি ভাব পেট ব্যথা মাথাব্যথা জ্বর ঠান্ডা লাগা এবং বেশিদেখা দেয় তাছাড়া শিশুদের মধ্যে বমি এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ডায়রিয়া হয়। 

এলার্জিজনিত রোগ 

বসন্ত ঋতুতে ফুলের সমারোহ থাকায় প্রকৃতিতে আল্ল জনের মাত্রা খুব বেড়ে যায়। বসন্ত ঋতুতে গাছ গাছালি থেকে ফুলের পরাগরেণু বাতাসে ভেসে বেড়াই এজন্য এ সময় এলার্জি ক্রাই নোটিশ হ্যাপিবার এবং হাঁপানি রোগের আর্থিক্য দেখা যায়। গ্রামবাংলায় বসন্ত ঋতুতে এলার্জি এলভিউ লাটিস দেখা দেয় এই হাঁপানের মত এক ধরনের শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ।

জল বসন্তর লক্ষণ

জল বসন্ত রোগটি বাতাসের মাধ্যমে বেশি ছড়ায়। জন্মের পর থেকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত জল বসন্তের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। বড়দেরও হয়ে থাকে তবে খুব কম আর একবার কারো বসন্ত হয়ে গেলে দ্বিতীয় বার সাধারণত হয় না কারণ একবার আক্রান্ত হলে শরীরে এই ভাইরাসের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যায়।

বসন্ত রোগের প্রাথমিক অবস্থার চেয়ে সেরে ওঠার সময়টাই বেশি মারাত্মক হয়ে ওঠে।কারণ বাতাসের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায় এছাড়াও রোগীকে স্পর্শ রোগীর ব্যবহৃত জামাকাপড় বিছানার চাদর ও অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিসের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমেও এই ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। 

বসন্ত রোগ সেরে ওঠার সময় পানিবাহী দানাগুলো ফেটে গিয়ে ওই স্থানের চামড়া শুকিয়ে যায়। এই শুকনো চামড়া গুলোই বহন করে ভেরি সেলা জ্যস্টার ভাইরাস।

বসন্তকালের রোগ হলে করণীয়

বসন্ত রোগ হলে ভয়ের কোনো কারণ নেই, আপনার যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হয় তবে ১০ দিনের মধ্যে বসন্ত রোগ সেরে যায়। বসন্ত রোগ যদি মারাত্মক হয় তবু ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। বসন্ত রোগ ছোঁয়াচে রোগ বলে আক্রান্ত শিশুকে সুস্থ ব্যক্তিদের কাছ থেকে একেবারেই আলাদা করে রাখতে হবে এমন কোন কথা নেই।

কারণ সবার থেকে আলাদা করে রাখলে শিশু মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে শেষ দু তিন দিন যখন রোগী সেরে উঠেছে এই সময় গুলোতে আক্রান্ত শিশুকে সুস্থ শিশুদের থেকে আলাদা করে রাখাই ভালো। এছাড়াও এ সময় রোগীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে কেউ বিশেষভাবে যত্ন নিতে হবে। 

আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার যে জিনিসপত্র আলাদা রাখবেন এবং নিয়মিত তা পরিষ্কার করুন। তবে আক্রান্ত ব্যক্তি গোসলের পর গামছার ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে যাতে দানাগুলো ফেটে না যায়। সময়ের আগেই যদি দানাগুলো ফেটে যায় তবে সে স্থানের ঘা হয়ে যেতে পারে আক্রান্ত ব্যক্তির এছাড়াও ভাইরাস যুক্ত পানি শরীরের অন্যান্য স্থানে লেগে যাওয়ায় পানিবাহী দানা বেড়ে যেতে পারে। 

এছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তির দানাগুলো যখন শুকিয়ে যায় তখন সেখানে চুলকানি হয় তবে কষ্ট হলেও চুলকানো থেকে বিরত থাকতে হবে আক্রান্ত ব্যক্তিকে। চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করানো যেতে পারে।

বসন্তকালে রোগ হলে প্রতিরোধ করবেন যেভাবে

বসন্তকালে আপনার যদি গলা খুসখুস করে তবে আপনি পানিতে একটু লবণ দিয়ে কুলকুচি বা গারগাল করতে পারেন। এছাড়াও মুখে কোন লজেন্স লবঙ্গ বা আদা রাখলেও আপনি আরাম পাবেন।

বসন্তকালে প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কারণ প্রচুর পরিমাণে পানি খেলে আপনার কফ পাতলা হবে।

বসন্ত রোগ হলে আপনি গরম পানির ভাব নিতে পারেন।

বসন্ত কালে যদি কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, কাশির সময় রক্ত দেখতে পেলে, কাশতে কাশতে শরীর নীল হয়ে যায় অথবা প্রচন্ড জ্বর থাকে কথা বলতে কষ্ট হয় তবে দেরি না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

শেষ কথা

পরিশেষে আমি বলতে চাই যে প্রকৃতিতে শুরু হয়েছে ঋতুরাজ বসন্তকাল। প্রকৃতিতে সাড়া পড়ে গেছে তরুণীরা বাসন্তী রংয়ের শাড়ি পরে আর মাথায় গাঁদা ফুলের মালা গেঁথে উদযাপন করছে বসন্ত রিতুকে। বসন্তকালের যেমন প্রকৃতি সেজে ওঠে তেমনি এ সময় রোগ নানারকম রোগ ব্যাধি দেখা দেয়



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url