আউয়াবিন নামাজের ফজিলত - আওয়াবিন নামাজ সুন্নত না নফল

 আউয়াবিন নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে ওলামায়ে কেরামের মাঝে মতপার্থক্য বিদ্যমান। যাইহোক আউয়াবিন নামাজের ফজিলত সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য এই আর্টিকেলটিতে তুলে ধরা হবে।  চলুন দেখে নেয়া যাক, আউয়াবিন নামাজের ফজিলত সম্পর্কিত হাদিস সমূহ।

পেজ সূচিপত্র: আউয়াবিন নামাজের ফজিলত - আওয়াবিন নামাজ সুন্নত না নফল

উপস্থাপনা 

ছাওয়াবের উদ্দেশ্যে যেকোনো ইবাদত করার পূর্বে, সেই ইবাদত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া উচিত। কেননা অনেক প্রচলিত ইবাদত রয়েছে, কুরআন হাদিসে যেই এবাদত গুলোর কোন ভিত্তি নেই। তাই এবাদত করার পূর্বে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সালাতুল আওয়াবীন বা আওয়াবীন এর নামাজ হিসেবে পরিচিত একটি নামাজ রয়েছে। 

যা মাগরিবের পরে এবং এশার পূর্বে আদায় করা হয়। এখন প্রশ্ন হলো আউয়াবিন নামাজ করা যাবে কিনা? যাইহোক সে সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হবে। এর পাশাপাশি নিচে আওয়াবিন নামাজ সুন্নত না নফল এবং আওয়াবীন নামাজের আরবি নিয়ত উল্লেখ করা হবে। 

আউয়াবিন নামাজ পড়ার বিধান

আউয়াবিন নামাজ পড়া যাবে কিনা সেই ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মাঝে মতপার্থক্য থাকলেও বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে আউয়াবিন নামাজের ফজিলত সম্পর্কে বেশ কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়। যে সকল ওলামায়ে কেরাম আওয়াবীন নামাজ পড়া যাবে না বলে মন্তব্য পেশ করেন তাদের বক্তব্য হলো: আউয়াবিন নামাজের ফজিলত সম্পর্কিত হাদিস সমূহ সনদ মতনের দিক থেকে দুর্বল। তাই সেই দুর্বল হাদিস গুলোর উপরে ভিত্তি করে সালাতুল আউয়াবিন পড়া সমীচীন নয়। 

কেননা দুর্বল হাদিসের উপরের ভিত্তি করে কোন ধরনের আমল করা যাবে না। সহি হাদিসে যে সকল আমল সম্পর্কে বলা হয়েছে সেই আমলগুলো করাই বাঞ্ছনীয়। তাই ভিত্তিহীন কোন ইবাদত থেকে বিরত থাকা মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। যেহেতু, আউয়াবিন নামাজ সর্বজন স্বীকৃত কোন নফল ইবাদত নয় তাই তা পালন না করাই উত্তম। যে সকল ওলামায়ে কেরাম আওয়াবিন নামাজ পড়ার বিপক্ষে রয়েছেন তাদের বক্তব্য জানতে পারলেন। নিচে যে সকল ওলামায়ে কেরামের নামাজ পড়া বৈধ মনে করেন তাদের বক্তব্য তুলে ধরা হবে। 
পক্ষান্তরে যে সকল ওলামায়ে কেরাম মনে করেন যে, আওয়াবীনের নামাজ অন্যান্য নামাজের মতই গুরুত্বপূর্ণ নফল ইবাদত। তাদের বক্তব্য হলো: যেহেতু হাদিস সমূহে, আউয়াবিন নামাজের ফজিলত, বর্ণনা করা হয়েছে তাই তা পালন করা খুবই সাওয়াবের কাজ। যে সকল হাদিস, ধারাবাহিকতার দিক থেকে কিছুটা দুর্বল, সেই হাদিসগুলো যদি এবাদত সম্পর্কিত হয় তাহলে তা গ্রহণযোগ্য। 

যেহেতু হাদিসে আউয়াবিন নামাজের বিবরণ রয়েছে তাই অবশ্যই এটা পালন করা যাবে।তাই, আউয়াবিন নামাজ পড়ার বিপক্ষে যারা মতামত ব্যক্ত করেন তাদের মতামত সঠিক নয়। আর হাদিস কখনো দুর্বল হতে পারে না। সকল হাদিসই গুরুত্বপূর্ণ তবে কিছু কিছু হাদিসের ধারাবাহিকতা সঠিকভাবে রক্ষা না হয় সে হাদিসগুলোকে দুর্বল হাদিস মনে করা হয়। যাই হোক, নফল ইবাদত হিসেবে আউয়াবিন নামাজ পড়া যাবে। 

যে সকল ওলামায়ে কেরাম আউয়াবিন নামাজ পড়ার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং যে সকল ওলামায়ে কেরাম মনে করেন যে, আউয়াবিন নামাজ পড়া যাবে না উভয়ে ওলামায়ে কেরামের বক্তব্য উপরে তুলে ধরা হয়েছে। উপর উল্লেখিত বক্তব্য থেকে আপনি নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন যে, আউয়াবিন নামাজ পড়া যাবে কিনা। চাইলে আপনি, স্থানীয় ওলামায়ে কেরামের কাছেও ফতোয়া জেনে নিতে পারেন।

আউয়াবিন নামাজের ফজিলত

আউয়াবিন নামাজের ফজিলত সম্পর্কিত যে সকল হাদিস রয়েছে, সেগুলো ধারাবাহিকভাবে নিচে তুলে ধরা হবে। সেই সাথে হাদিসগুলোর ব্যাপারে মুহাদ্দিসিনে কেরামদের যে সকল ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ রয়েছে সেগুলোও উল্লেখ করা হবে। তাই আপনি যদি, আউয়াবিন নামাজের ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে নিম্ন বর্ণিত তথ্য গুলো মনোযোগের সাথে পড়ুন।

আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেন, "যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে ছয় রাকাত নফল আদায় করে, মাঝখানে কোনো দুনিয়াবি কথা না বলে, তাহলে সেটা বারো বছরের ইবাদতের সমান গণ্য হবে।" (তিরমিজি) 

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: "মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে নফল নামাজ আদাকারীকে ফেরেশতা পরিবেষ্টন করে রাখেন। আর এটাই হচ্ছে আউয়াবিনের নামাজ" (কানজুল উম্মাল)
আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা:) বর্ণনা করেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন:  "মাগরিবের নামাজের পর যে ব্যক্তি ছয় রাকাআত নফল নামাজ পড়বে তার গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়।" (মাজমাউজ জাওয়াইদ)

এছাড়াও আরো বিভিন্ন হাদিসে আউয়াবিন নামাজ সম্পর্কে অনেক বিবরণ রয়েছে। আউয়াবিন নামাজ সংক্রান্ত আরো বিস্তারিত তথ্য যদি আপনি জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি করতে থাকুন। নিচে আউয়াবিন নামাজ  সংক্রান্ত আরো অনেক তথ্য তুলে ধরা হবে। 

আওয়াবিন নামাজ সুন্নত না নফল

আওয়াবিন নামাজ সুন্নত না নফল তা জানতে হলে আপনাকে আর্টিকেদের এই অংশটি পড়তে হবে।নিচে আওয়াবিন নামাজ সুন্নত না নফল সে ব্যাপারে আলোচনা তুলে ধরা হবে। আওয়াবিন নামাজ নফল কিনা সেই ব্যাপারেই যেহেতু ওলামায়ে কেরামের মাঝে মতপার্থক্য বিদ্যমান তাই এই নামাজ কখনই সুন্নত হতে পারে না। কোন কোন ওলামায়ে কেরাম এই নামাজ থেকে বেদাত বলে মনে করেন। আর যারা এই নামাজটিকে বেদাত হিসেবে মনে করেন না তাদের মতে, আওয়াবিন নামাজ হলো নফল নামাজ। যে মাগরিবের পরে এশার পূর্বে আদায় করতে হয়। 

আওয়াবিন নামাজ সুন্নত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। সর্বোচ্চ এই নামাজটি নফল নামাজ হতে পারে। আর নফল নামাজ হওয়ার কারণে আওয়াবিন নামাজ নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কিছু নেই। যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছা করে তাহলে সে তার আদায় করবে, পক্ষান্তরে যদি কোন ব্যক্তি তা আদায় না করে এতেওকোন সমস্যা নেই। 
কেননা নফল ইবাদত সবসময় ঐচ্ছিক। তবে সঠিকভাবে নফল ইবাদত পালন করলে অশেষ ছাওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়। আওয়াবিন নামাজের সাধারণ এই বিষয়গুলো নিয়ে সমাজে বা ব্যক্তি পর্যায়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া সমীচীন নয়। সাধারণ এ বিষয়গুলো সম্পর্কে সকলের উচিত নমনীয় মনোভাব পোষণ করা। 

আওয়াবীন নামাজের আরবি নিয়ত

আওয়াবীন নামাজের আরবি নিয়ত নিচে তুলে ধরা হবে। তবে আওয়াবীন নামাজের আরবি নিয়ত করা জরুরী নয়। নিয়ত মানে হলো মনে মনে সংকল্প করা। আপনি মনে মনে সংকল্প করলেই নিয়ত হয়ে যায়। যাই হোক এর পরেও যদি আপনি আওয়াবীন নামাজের আরবি নিয়ত জানতে চান তাহলে নিম্নবর নিতে হয়, আওয়াবীন নামাজের আরবি নিয়ত দেখে নিতে পারেন। 

আওয়াবীন নামাজের আরবি নিয়ত: 
نويت ان اصلي لله تعالى ركعتى صلواة النفل متوجها إلى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر

উপসংহার

আউয়াবিন নামাজ সম্পর্কে এই আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আউয়াবিন নামাজ পড়া যাবে কিনা বা আউয়াবিন নামাজ কিভাবে পড়বেন সে বিষয়গুলো সম্পর্কে উপরে দলিলসহ আলোচনা করা হয়েছে। 

তাই আপনি যদি উপর উল্লেখিত তথ্য গুলো মনোযোগের সাথে পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আওয়াবীন নামাজের যাবতীয় মাসালা মাসায়েল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। আশা করি গুরুত্বপূর্ণ এই আর্টিকেলটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে। যদি আপনার কাছে তথ্যবহুল এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে সকলের সাথে শেয়ার করবেন। ১৬৪১৩

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url