ফ্যাটি লিভার হলে কি সমস্যা হয় - ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায় Fatty Liver 7

আজকাল আপনারা অনেকেই ফ্যাটি লিভার হলে কি সমস্যা হয়-
ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়
 এ বিষয়ে জানতে চান। যারা ফ্যাটি লিভার হলে কি সমস্যা হয় - বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চান তাদের জন্য আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ লেখাটি।

ফ্যাটি লিভার হলে কি সমস্যা হয়-ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়
ফ্যাটি লিভার হলে কি সমস্যা হয়-
ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়
ফ্যাটি লিভার হলে কি সমস্যা হয় এ বিষয়টি জানতে হলে আপনাকে এ লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। তাহলে আর দেরি না করে চলুন বন্ধুরা,  ফ্যাটি লিভার হলে কি সমস্যা হয় এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেই।

ফ্যাটি লিভার হলে কি সমস্যা হয় - ৭ টি সমস্যা

আমরা প্রথমেই জেনে নেব ফ্যাটি লিভার হলে কি সমস্যা হয়। একজন ব্যক্তির ফ্যাটি লিভার হলে যে যে সমস্যাগুলো হতে পারে –

১। খাবারে অরুচি হতে পারে এবং হজম শক্তি কমে যেতে পারে।
২। খাওয়ার সময় বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
৩। জ্বর হতে পারে , চোখ ও ত্বক হলুদ হতে পারে বা জন্ডিস রোগ হতে পারে।
৪। অনেক সময় পেট ব্যথা ও পেট ফুলে যেতে পারে।
৫। দেহের অঙ্গ -প্রত্যঙ্গ যেমন - হাত , পা, মুখ ফুলে যেতে পারে।
৬। হঠাৎ করে দেহের ওজন বেশি কমে যেতে পারে, 
৭। ফ্যাটি লিভার মারাত্মক পর্যায়ে গেলে লিভার সিরোসিস হয়ে রোগীর জীবন হুমকির মধ্যে পড়তে পারে।

ফ্যাটি লিভার কি - Fatty Liver

যকৃত বা লিভারে অতিরিক্ত চর্বি বা ফ্যাট জমা হলে সেটিকে ফ্যাটি লিভার বলে। এটি “হেপাটিক স্টেটোসিস“ নামেও পরিচিত। লিভারে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত চর্বি  জমা হলে তা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি করে। এটি বর্তমান বিশ্বের মারাত্মক রোগ ও একটি বড় সমস্যা। তাই ফ্যাটি লিভার হলে কি কি সমস্যা হয় - ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়  জেনে নিন।

 ফ্যাটি লিভার কত প্রকার ও কি কি

ফ্যাটি লিভার সাধারণত দুই ধরনের হতে পারে-
১। এলকোহলিক ফ্যাটি লিভার ও
২। নন-এলকোহলিক ফ্যাটিলিভার।

এলকোহলিক ফ্যাটি লিভারঃ যাদের নিয়মিত এলকোহল বা মদ জাতীয় পানীয় পান করার অভ্যাস আছে, সাধারণত তাদের এলকোহলিক ফ্যাটি লিভার হয়ে থাকে।

নন-এলকোহলিক ফ্যাটি লিভারঃ যারা অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করে , অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস আছে , প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ, অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ, প্রসেসড ফুড, কার্বোহাইড্রেট, মুখ রোচক জাংক ফুড ও অতিরিক্ত মশলা যুক্ত খাবার গ্রহণ করে তাদের নন-এলকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ হয়ে থাকে।

আরও পড়ুনঃ  পেটের চর্বি কমানোর উপায় চিকিৎসা ও প্রতিকার

এছাড়াও স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ গ্রহণ, ডায়াবেটিস রোগ , রক্তে কোলেস্টরেল বা নির্দিষ্ট বয়স পার হলে এমনকি বংশগত কারণেও ফ্যাটি লিভার হতে পারে। আবার যাদের উপরে উল্লেখিত কোন কারণ ছাড়াই ফ্যাটি লিভার হয়, তাদের পিওর ফ্যাটি লিভার ডিজিজ হয়েছে বলে ধরা হয়।

ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১, গ্রেড ২ এবং গ্রেড ৩ মানে কি

ফ্যাটি লিভার এর বিভিন্ন পর্যায়কে ক্যাটাগরিতে ভাগ করাই হল গ্রেড ১, গ্রেড ২ ও গ্রেড ৩। সনোলজিক্যালি আলট্রাসনোগ্রাম এর মাধ্যমে যখন ফ্যাটি লিভার পরীক্ষা করা হয়, তখন ফাইব্রোস্ক্যানের মাধ্যমে লিভারের সেল বা ইকোটেক্সচারের কালার দেখে গ্রেড ১, গ্রেড ২ ও গ্রেড ৩ নির্ণয় করা হয়, যা ফ্যাটি লিভার রোগের বিভিন্ন পর্যায় ধরা হয়ে থাকে।  



ফ্যাটি লিভার হলে কি সমস্যা হয় - Fatty Liver
ফ্যাটি লিভার হলে কি সমস্যা হয় - Fatty Liver
 আরও পড়ুনঃ  ক্রিয়েটিনিন কমানোর উপায়

 ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ঃ

আল্ট্রাসনোগ্রাম করার সময় লিভারের সেলগুলো  কিডনির কালারের সাথে তুলনা করলে যখন কিডনি থেকে একটু বেশি সাদা হয়, তখন এটিকে ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ ধরা হয়। ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ কে সাধারণ পর্যায় মনে করা হয় এবং এটি নিরাময়যোগ্য । চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ মেনে ডায়েট চার্ট বানিয়ে জীবন যাত্রার মান পরিবর্তন করলেই ৩ মাসের মধ্যে ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ নিরাময় করা সম্ভব। 

ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ , গ্রেড ৩ঃ

আলট্রাসনোগ্রাম করার সময় যদি ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ এর কালার থেকে একটু বেশি সাদা হয়, তখন এটিকে ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ বলা হয়। অনুরূপভাবে, ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ এর কালার থেকে আরও একটু বেশি সাদা হয়, তখন এটিকে ফ্যাটি লিভার গ্রেড ৩ বলে। সাধারণত ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ ও ফ্যাটি লিভার গ্রেড ৩ কে মারাত্মক পর্যায় ধরা হয়। তাই ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ ও গ্রেড ৩ রোগীর জীবন হুমকির মধ্যে পড়ে।

ফ্যাটি লিভার কি ভাল হয়ঃ

হ্যাঁ, ফ্যাটি লিভার ভাল হয়। শুরুতে পরীক্ষা-নীরিক্ষার মাধ্যমে ফ্যাটি লিভার ধরা পড়লে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শে খাদ্যাভ্যাস ও জীবন মান পরিবর্তন করলে এই ডিজিজ ভাল হতে পারে।

ফ্যাটি লিভার ঝুঁকিতে আছেন যারাঃ

১। টাইপ – ২ ডায়াবেটিস আছে যাদের।
২। মেনোপজ শুরু হয়েছে যেসব নারীদের।
৩। যারা স্থুল বা প্রয়োজনের চেয়ে মোটা দেহের অধিকারী।
৪। যাদের কলেস্টরেলের মাত্রা বেশি  বা যাদের পেটে অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি আছে।
৫। যারা দির্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ রোগে ভুগছেন।
৬। যারা অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করেন, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস , ধূমপান ও এলকোহল , মদ জাতীয় পানীয় পান করেন – এমন নারী-পুরুষ সবচেয়ে ফ্যাটি লিভার ঝুঁকিতে আছেন।

আরও পড়ুনঃ ফ্যাটি লিভার 

রিলেটেড সার্চ: ফ্যাটি লিভার হলে কি সমস্যা হয় | ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায় | ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ এর লক্ষণ | ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ এর চিকিৎসা | ফ্যাটি লিভার হলে কি ভালো হয় | ফ্যাটি লিভার হলে কি খাওয়া উচিত | Fatty Liver

ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়

ফ্যাটি লিভার থেকে সহজেই মুক্তির উপায় হল যেগুলো খাবার ফ্যাটি লিভার কমায় সেগুলো খেতে হবে এবং যেগুলো ফ্যাটি লিভার বাড়ায় সেগুলো বর্জন করতে হবে। নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাস ই পারে এই ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি দিতে। কারণ এই রোগের কোন চিকিৎসা বা ঔষধ নেই বললেই চলে।

ফ্যাটি লিভার হলে কি কি খাবেন

ফ্যাটি লিভার হলে যা কিছু খাওয়া যাবে তা নিচে  দেওয়া হল –

১। সবুজ শাক সবজি, সবুজ শাক, লেটুস পাতা।
২। ডাল ও ডাল জাতীয় খাবার ছোলা, মটরশুঁটি , সূর্যমুখীর বীজ ইত্যাদি  বিশেষ উপকারী।
৩। সামুদ্রিক মাছের মধ্যে ইলিশ, রূপচাঁদা, টুনা , স্যামন ফিস, সারডিন ফিস – এই গুলোতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড আছে, যা ফ্যাটি লিভার রোগীর জন্য খুবই উপকারী। বিশেষজ্ঞরা সপ্তাহে তিনদিন মাছ খেতে বলেন।
৪। ওটমিল, লাল আটা বা যবের রুটি খেতে হবে।
৫। বাদাম, কাজু বাদাম উপকারী।
৬। কাঁচা হলুদ ও কাঁচা রসুন পরিমাণ মত খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৭। দৈনিক পর্যাপ্ত পানি পান করুন ।

ফ্যাটি লিভার হলে কি কি খাবেন না

ফ্যাটি লিভার হলে যা যা খাওয়া যাবে না তা নিচে দেওয়া হল –
১। ফ্যাটি লিভার এর সবচেয়ে বড় শত্রু সাদা  চিনি,
২। যেকোনো বোতল জাত জুস, পানীয় ও ডেজার্ট খাওয়া যাবেনা।
৩। ভাজা পোড়া, চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ও যেকোনো ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলুন।
৪। অতিরিক্ত লবণ বা লবণ যুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার নিষেধ।
৫। শর্করাযুক্ত সাদা ভাত, নান, পরোটা , নুডলস ও পাস্তা খাওয়া যাবেনা।
 ৬। রেড মিট বিশেষ করে গরুর মাংস ও খাসির মাংস নিষেধ।
৭। এলকোহল, মদ ও ধূমপান সম্পূর্ণ নিষেধ।

সর্বশেষ কথাঃ ফ্যাটি লিভার হলে কি সমস্যা হয়

ফ্যাটি লিভার বিশ্বব্যাপী একটি মারাত্মক রোগ ও একটি বড় সমস্যা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে শিশুরাও ফ্যাটি লিভার রোগের ঝুঁকিতে পড়ছে। আমাদের দেশে সাধারণত নন এলকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা সবার চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপরও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ,খাদ্যাভ্যাস , ব্যায়াম ও সচেতনতা থাকলে ফ্যাটি লিভার রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আশা করি , আমার এই লেখাটি ভাল লেগেছে। প্রিয় বন্ধুরা, ফ্যাটি লিভার হলে কি সমস্যা হয় এ বিষয়ে আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন ।    
এইরকম তথ্যবহুল লেখা পড়তে হলে আমাদের সাথেই থাকুন এবং বন্ধুদেরকে শেয়ার করে জানিয়ে দিতে পারেন। লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।। 


 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url