ইউরিন ইনফেকশনের ঔষধের নাম | কারণ, লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা
আসসালামু আলাইকুম। বর্তমান সময়ে ইউরিন ইনফেকশন মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষেরও হতে পারে। তবে এন্টিবায়োটিক ছাড়া ঘরোয়া উপায়ে ইউরিন ইনফেকশনের চিকিৎসা করা যায়। একজন মানুষের যদি ইউরিন ইনফেকশন একবার হয় তো সে ক্ষেত্রে এটা বারবার হতে পারে। নানা কারণে ইউরিন ইনফেকশন হয় পুরুষদের। জেনে নেওয়া যাক ইউরিন ইনফেকশনের ঔষধের নাম, কারণ, লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা।
.jpg "ইউরিন ইনফেকশনের ঔষধের নাম | কারণ, লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা") |
| ইউরিন ইনফেকশনের ঔষধের নাম | কারণ, লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা |
নারী পুরুষ সকলের ইউরিন ইনফেকশন থেকে বাঁচতে হলে ইউটিআই - UTI ( Urinary Tract Infection) নিয়ে সতর্ক হতে হবে, তবেই আপনি ভালো থাকতে পারবেন। আসলে কিডনির মাধ্যমে তরল বর্জ্য ইউরেটার টিউব হয়ে প্রস্রাব বাইরে যায়। এই অঙ্গগুলিকে একত্রে বলা হয় ইউরিনারি ট্র্যাক্ট।
ইউরিন ইনফেকশনের ঔষধের নাম
সাধারণত প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হওয়াকে ইউরিন ইনফেকশন মনে করা হয়। ইউরিন ইনফেকশন বা মূত্রনালীর সংক্রমনের জন্য বেশ কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ পাওয়া যায়, তার মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী ওষুধ হল নাইট্রোফুরানটোইন ও সিপ্রোফ্লক্সাসিন।
নাইট্রোফুরানটোইন ( Nitrofurantoin ) হল একটি এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট, ক্যাপসুল বা পাউডার সাসপেনশন যা মৌখিকভাবে গ্রহণ করা হয়। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এটি কমপক্ষে তিন সপ্তাহের জন্য দিনে দুই থেকে চার বার সেবন করা উচিত। নাইট্রোফুরানটোইন ইউরিন ইনফেকশন বা মূত্রনালির সংক্রমনের বিরুদ্ধে কার্যকর ভাবে কাজ করে এবং অন্যদিকে সিপ্রোফ্লক্সাসিন অন্যান্য ট্র্যাক্ট সংক্রমণের জন্য ভালো কাজ করে। আশা করি আপনারা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা ইউরিন ইনফেকশনের ওষুধের নাম জানতে পেরেছেন।
পুরুষের ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণঃ
পুরুষের ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা দিলে কয়েকটি উপায় দেখে আপনি বুঝতে পারবেন। চলুন নিম্নে সেগুলো জেনে নেওয়া যাক-
- তলপেট ব্যথা হতে পারে।
- বারবার প্রস্রাব হতে পারে।
- প্রস্রাব করার সময় ব্যথা হয় খুব।
- জ্বালাপোড়া হতে পারে।
- ইউরিনে ব্লাড আসতে পারে।
ইউরিন ইনফেকশনের কারণঃ
বর্তমান সময়ে নারী-পুরুষ সবার ঐ ইউরিন ইনফেকশন হয়ে থাকে। নারীদের বেশিরভাগ ইউরিন ইনফেকশন হয়ে থাকে কারণ পুরুষদের তুলনায় নারীদের মূত্রনালী দৈর্ঘ্য অনেক ছোট হয়ে থাকে। পায়খানায় থাকা জীবাণু বিভিন্ন মূত্র তন্ত্রের প্রবেশ করে ইউরিন ইনফেকশন ঘটায়। আমাদের আর্টিকেলের এই পর্বের চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক ইউরিন ইনফেকশনের কারণগুলো-
- পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করার ফলে ইউরিন ইনফেকশন হয়ে থাকে পুরুষ ও মহিলাদের।
- প্রস্রাবের রাস্তায় কোনো কারণে বাধা থাকলে।
- মাসিকের পরে সেখান থেকে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- আবার প্রস্রাবের রাস্তায় যদি আপনি বাধার সৃষ্টি করেন তাহলে ইউরিন ইনফেকশন হতে পারে।
- প্রস্রাব না করে অনেকক্ষণ যারা আটকে রাখেন তাদের ইউরিন ইনফেকশন হতে পারে।
- অনিরাপদ সহবাস করার সময় যদি কারো যৌনাঙ্গের ব্যাকটেরিয়া থাকে তাহলে ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেকের।
- পুরুষ ও মহিলারা যারা যৌনাঙ্গ অপরিষ্কার ও বেশি বেশি ভিজা রাখেন তাদের ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
পুরুষের ইউরিন ইনফেকশনের কারণঃ
ইউরিন ইনফেকশনের জন্য ই. কলাই ছাড়া আরো কিছু ব্যাকটেরিয়া দায়ী হতে পারে। তবে তা খুবই কম ক্ষেত্রে ঘটে থাকে। শরীরে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ এবং বংশবিস্তারের সাথে সাথে কিছু বিষয় সম্পর্কিত যাদেরকে ইউরিন ইনফেকশনের কারণ হিসেবে দায়ী মনে করা হয়। চলুন আমাদের আর্টিকেলের আজকের পর্বে জেনে নেই পুরুষের ইউরিন ইনফেকশন এর কারণগুলো-
কম পানি পান করাঃ
প্রস্রাবের বেশিরভাগ অংশ হলো পানি যার মধ্যে কিডনির মাধ্যমে মিশ্রিত বজ্র পদার্থ থাকে। আপনি যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করেন তবে আপনার প্রস্রাবের মধ্যে বর্জ্যের ঘনত্ব বেড়ে যায়। আর সেজন্য অধিক বর্জ্য বিশিষ্ট প্রস্রাব মূলতন্ত্রের জীবনের সংক্রমনের জন্য সহায়তা করে থাকে।
পায়ুপথে যৌন মিলনঃ
ইউরিন ইনফেকশন যৌনবাহিত রোগ নয়। পায়ুপথে E.coli থাকে যা Anal sex সেক্স এর মাধ্যমে মুত্র নালীতে প্রবেশ করে যার কারণে ইউরিন ইনফেকশন হয়ে থাকে পুরুষ ও মহিলাদের।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনীহাঃ
আপনি যদি পরিষ্কার পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবিধির না মেনে চলেন তবে আপনার প্রস্রাব পায়খানা করার মাধ্যমে জীবাণু সহজেই মূত্রনালীতে প্রবেশের সুযোগ পায়। যার কারণে আপনার ইউরিন ইনফেকশনের সমস্যা বেড়ে যায়।
প্রস্রাবের বেগ চেপে রাখাঃ
মূত্রথলিতে প্রস্রাব জমা হওয়ার দীর্ঘ সময় পর পর্যন্ত প্রস্রাব চেপে রাখলে তা মূত্রথলিতে জীবাণু সংক্রমণের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যার কারণে পুরুষ ও মহিলাদের ইউরিন ইনফেকশন হয়।
যে কারনে পুরুষের ইউরিন এর সমস্যা হয়ঃ
পুরুষের চেয়ে মহিলাদের ইউরিনের ইনফেকশনের সমস্যা হয় মহিলাদের প্রস্রাব তার উন্মুক্ত থাকাই এই অসুখ চেপে ধরে তবে পুরুষের পোস্টেড গ্ল্যান্ড ফুল গেলে ইউরিন বের হতে চায় না এ কারণে ইউরিনে ব্যাকটেরিয়া জমতে থাকে। এমনকি জীবাণু তাদের নিজেদের সংখ্যা বাড়তে থাকে সেক্ষেত্রে কিছুদিনের মধ্যেই হয় ইউরিন ইনফেকশন। এছাড়াও ইনফেকশন যদি বেশিদিন থাকে তবে হতে পারে কিডনির অসুখ।
পুরুষের ইউরিন ইনফেকশনের ঘরোয়া চিকিৎসাঃ
ইউরিন ইনফেকশন এর হাত থেকে বাঁচতে আপনি একটি উপাদান ব্যবহার করতে পারেন। এই উপাদানটি আপনার বাড়ির আশেপাশে অনায়াসে পেয়ে যাবেন। এমনকি রোজ এই ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি কমবে। সেক্ষেত্রে আপনি তরমুজের বীজ ও শসার বীজ নিন এই দুই বিজ কমাতে পারে ইউরিন ইনফেকশনের সমস্যা।
আরো পড়ুন:
এছাড়া পুরুষের ইউরিন ইনফেকশন এর সমাধানে শতমূলী অত্যন্ত কার্যকর। এছাড়াও প্রস্রাবের রক্ত দেখা দিলে আপনি ছোট দুধ্বা ঘাস খেতে পারেন। এতে করে আপনার অনেকটাই ইউরিন ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করবে। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক ইউরিন ইনফেকশনের ঘরোয়া প্রতিকারগুলো সম্পর্কে-
ভিটামিন সিঃ
ইউরিন ইনফেকশন হলে অনেক ডাক্তার রোগীকে দৈনিক ৫০০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ভিটামিন সি মূত্রথলিকে ভালো রাখে এবং প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া ভাব কমাতে সহায়তা করে, ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতেও সাহায্য করে। তাই এর ইনফেকশন হলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার রাখুন আপনার প্রতিদিনের খাবারে।
বেকিং সোডাঃ
ইউরিন ইনফেকশন কিডনিতে ছড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে তাই যত দ্রুত ইউরিন ইনফেকশন সারিয়ে তোলা উচিত। আপনি যদি ইউরিন ইনফেকশন খুব তাড়াতাড়ি সারাতে চান তবে বেকিং সোডা ব্যবহার করতে পারেন। কারণ ইউরিন ইনফেকশন সারাতে বেকিং সোডা সাহায্য করতে পারে।
এক থেকে দুই চামচ বেকিং পাউডার এক কাপ পানিতে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই পানি প্রতিদিন একবার করে খেলে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমে এবং ইউরিন ইনফেকশন খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়।
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুনঃ
আপনি যদি ইউরিন ইনফেকশন এর সমস্যায় ভুগে থাকেন তবে আপনাকে প্রতিদিন কমপক্ষে আট গ্লাস পানি পান উচিত। কারণ কিছুক্ষণ পর পর একগ্লাস করে পানি খেলে অল্প সময়ের মধ্যে ইউরিন ইনফেকশন ভালো হয়ে যায়। বিশেষ করে যাদের প্রস্রাবে হলুদ ভাব দেখা দেয় তারা প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়া শুরু করুন।
আর যাদের প্রায় এই সমস্যা হয় তারা সবসময়ই একটু বেশি পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। সাধারণত একজন সুস্থ মানুষের চার থেকে পাঁচ ঘন্টা পর পর প্রস্রাব হওয়া উচিত। প্রস্রাব এর চাইতে বেশি দেরিতে হলে বারবার পানি খেতে থাকুন।
আনারসঃ
আনারসে আছে বেবিলাইন নামক একটি উপকারী অ্যানজাইম। যা আপনার শরীরে ইউরিন ইনফেকশন ভালো করে দেয় খুব দ্রুত। গবেষণায় দেখা গেছে যে ইউরিন ইনফেকশনে আক্রান্ত রোগীদেরকে সাধারণত এন্টিবায়োটিক দেওয়া হয় এবং তা ইউরিন ইনফেকশন ভালো করে দেয় খুব তাড়াতাড়ি। সেজন্য যারা বর্তমানে ইউরিন ইনফেকশনে ভুগছেন তারা প্রতিদিন এক কাপ আনারস এর রস খেতে পারেন এতে করে আপনি ইনফেকশন থেকে মুক্তি পাবেন।
দুধ ও হলুদঃ
এক গ্লাস দুধের সাথে এক চামচ হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে খেলে খুব দ্রুত ইউরিন ইনফেকশনের সমস্যা সেরে যায়। কারণ হলুদ আন্টি ইনফ্লামেটরি তাই ইনফেকশন কমিয়ে দেয়।
শেষ কথাঃ ইউরিন ইনফেকশনের ঔষধের নাম | কারণ, লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা
পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, যদি সমস্যা খুবই কম থাকে তাহলে ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে সুস্থ হওয়া সম্ভব। তবে যদি বেশি সমস্যা হয় তবে একদিনের বেশি থাকে বা কিছুদিন পরপরই এমন হয় তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে আপনাকে।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থেকে ধৈর্য সহকারে আমাদের ইউরিন ইনফেকশনের ঔষধের নাম | কারণ, লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তবে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। এছাড়াও আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি এর ভেতরে কোন ভুল ত্রুটি দেখতে পান তবে আপনার মূল্যবান কমেন্টের মাধ্যমে অবশ্যই আমাদের জানাবেন যাতে করে আমরা সেই ভুলগুলো সংশোধন করতে পারি।এবং এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থেকে ধৈর্য সহকারে আমাদের ইউরিন ইনফেকশনের ঔষধের নাম | কারণ, লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তবে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। এছাড়াও আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি এর ভেতরে কোন ভুল ত্রুটি দেখতে পান তবে আপনার মূল্যবান কমেন্টের মাধ্যমে অবশ্যই আমাদের জানাবেন যাতে করে আমরা সেই ভুলগুলো সংশোধন করতে পারি।এবং এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url