চর্ম এলার্জি দূর করার উপায়
চর্ম এলার্জি দূর করার উপায় খুঁজছেন? চর্ম এলার্জি আপনাকে অতিষ্ঠ করে তুলছে? সত্যিই আপনি যদি চর্ম এলার্জি দূর করার উপায় খুঁজেন, তাহলে আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। আশা করি চর্ম এলার্জি দূর করার উপায় খুব সহজেই পেয়ে যাবেন।
চর্ম এলার্জি দূর করার উপায় |
বর্তমানে ত্বকের বা স্কিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কমন সমস্যার নাম এলার্জি। ধুলাবালি, পোকামাকড়ের কামড় সহ বিভিন্ন কারণে স্কিনে এলার্জি দেখা দিতে পারে। এ ধরনের চর্ম এলার্জির ফলে স্কিন শুষ্ক হয়ে চুলকাতে শুরু করে। ত্বকের বা চর্মের এলার্জি দূর করার জন্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপকরণ রয়েছে, যেগুলো অত্যন্ত কার্যকরী। এগুলো যেমন দ্রুত কাজ করে, ঠিক তেমনি এর সাইড ইফেক্ট নেই বললেই চলে। তো চলুন বন্ধুরা চর্ম এলার্জি দূর করার উপায় গুলো বিস্তারিত জেনে নেই।
চর্ম এলার্জি দূর করার উপায়
চর্ম এলার্জি দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন এবং ফলপ্রসূ উপায়গুলো বিস্তারিত আপনাদের জন্য তুলে ধরা হলো।
১। এলোভেরা জেল
চর্ম এলার্জি দূর করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো এলোভেরা জেল। চর্ম বা ত্বকের চুলকানি, শুষ্কতার সমস্যা ও এলার্জির সমস্যায় এলোভেরা পাতার জেল কিংবা বাজারে পাওয়া যায় এলোভেরা জেল লাগিয়ে নিন। এলোভেরা জেলের ঔষধি গুণ খুব দ্রুত ত্বকের জ্বালা বা প্রদাহ এবং চুলকানি এলার্জি থেকে মুক্তি দেবে। তাছাড়া এলোভেরার শাঁস চুলকানি সংক্রমিত স্থানে সরাসরি লাগিয়ে দিন, এটি ত্বকের বা স্কিনের বিভিন্ন ইনফেকশন দ্রুত দূর করবে।
২। মধু
ত্বকের বা চর্ম এলার্জির সমস্যা থাকলে মধুকে আপনি খুব সহজেই কাজে লাগাতে পারেন। মধু পরিবেশে উপস্থিত এলার্জেনের সঙ্গে শরীরকে খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তা করে। এছাড়া মধুতে প্রদাহ বিরোধী বা এন্টিইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য চর্ম এলার্জির ফুসকুড়ি কমাতে সাহায্য করে।
৩। আপেল সিডার ভিনেগার
চর্ম এলার্জি দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে আরেকটি কার্যকরী উপায় হল আপেল সিডার ভিনেগার। তুলা দিয়ে বানানো বল আপেল সিডার ভিনেগারে ডুবিয়ে এলার্জি আক্রান্ত ত্বকে লাগিয়ে দিন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন, চর্ম এলার্জি বা চুলকানি কমে যাবে।
৪। ল্যাভেন্ডার এসেন্সিয়াল অয়েল
চর্ম এলার্জির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে গোসলের সময় পানিতে লেভেন্ডার এসেন্সিয়াল ওয়েল মিশিয়ে নিন। তারপর ভালোভাবে গোসল করে নিন। পাশাপাশি অবশ্যই রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে একবার করে লেভেন্ডার এসেন্সিয়াল ওয়েলের ভাপ নিন।
৫। নারকেল তেল ও কর্পূর মিশ্রণ
যদি আপনার চর্ম এলার্জি থাকে এবং সে জায়গায় যদি চুলকানি হয়, তাহলে সেখানে নারকেল তেল এবং কর্পূর ব্যবহার করতে পারেন। কর্পূর এবং নারকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে এলার্জির জায়গায় লাগিয়ে দিন, তাহলে আপনি দ্রুত আরাম পাবেন এবং চর্ম এলার্জি থেকে মুক্তি পাবেন। তার আগে ফিটকিরির পানি দিয়ে এলার্জি আক্রান্ত জায়গা ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে পারেন। এটি চর্ম এলার্জি দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে একটি।
আরো পড়ুন:
৬। অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েলে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন ই। অলিভ অয়েল স্কিনের প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এলার্জি সংক্রমিত স্থানে সামান্য অলিভ অয়েল লাগিয়ে ধীরে ধীরে মেসেজ করুন। ত্বকে ফুসকুড়ি থাকলে অলিভ অয়েলের সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। এভাবে চুলকানি কমানোর পাশাপাশি চর্ম এলার্জি দূর হবে।
৭। লবণ পানি
অনেক ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় স্কিনে এলার্জি দেখা দিতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাইনাস বা ঠান্ডা লাগা জনিত ওষুধ চর্ম এলার্জি সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই চর্ম এলার্জি বাড়ে এমন ওষুধ গ্রহণের সময় আপনাকে সতর্ক হতে হবে। প্রতিদিন সকালে পানিতে সামান্য পরিমাণ লবণ মিশিয়ে ড্রপারের সাহায্যে নাকে দিন। এটি নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে আপনাকে সহজেই।
৮। বেকিং সোডা
বেকিং সোডা ত্বকের বা স্কিনের pH ভারসাম্যহীনতাকে মোকাবেলা করতে পারে এবং আপনার ত্বকের বা চর্ম এলার্জি প্রশমিত করতে এনটিইনফ্লেমেটরী বা প্রদাহ বিরোধী হিসেবে কাজ করে। প্রথমে আপনি ১২ চামচ পানিতে ৪ চামচ বেকিং সোডা নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। চর্ম এলার্জির স্থানে ভালোভাবে লাগিয়ে ১০ মিনিট পর স্বাভাবিক পানিতে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন চর্ম এলার্জি অনেকটাই দূর হয়ে গেছে।
৯। ওট মিল
ওটমিলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি বা প্রদাহ বিরোধী উপাদান সহ বিভিন্নভাবে সক্রিয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে ,এগুলো এলার্জি জনিত স্কিনের প্রতিক্রিয়া ( বিশেষ করে চুলকানিকে ) প্রশমিত করতে সহায়ত করে।
১০। হলুদ
ভেষজ উপাদান হলুদ দারুণভাবে এলার্জির সমস্যায় কার্যকরী। তাই গরম ভাতের সাথে হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।
১১। তিতা জাতীয় খাবার
প্রতিদিনের খাবারে তিতা জাতীয় খাবার বাড়িয়ে তুলুন। তাই নিয়মিত খাবারের তালিকায় রাখুন নিমপাতা ভাজা ও করলা। সকালে খালি পেটে চিরতা পানি খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন, যা স্কিনের বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণসহ চর্ম এলার্জি প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
১২। ঠান্ডা এড়িয়ে চলুন
চর্ম এলার্জি থেকে বাঁচতে ঠান্ডা মেঝেতে খালি পায়ে হাঁটবেন না এবং গরমে মেঝেতেও শোবেন না। কোল্ড এলার্জির সমস্যায় যারা ভুগছেন, তারা গোসলের ক্ষেত্রে বেশি সময় নেবেন না। আর ফ্রিজের ঠান্ডা খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
১৩। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা
চর্ম এলার্জি দূর করার উপায় হিসেবে নির্মিত গোসল, পোশাকের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করুন। বাইরে বের হওয়ার সময় অবশ্যই মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন।
১৪। চর্ম এলার্জি সংক্রমিত রোগী থেকে দূরে থাকুন
চর্ম এলার্জি সংক্রমিত রোগীর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকায় ভালো। অনেক সময় চর্ম এলার্জি সংক্রমিত রোগীর কাপড়চোপড় এবং সংক্রমিত স্থান থেকে রস ত্বকে লেগে চর্ম এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
১৫। চর্ম এলার্জি চিকিৎসা
চর্ম এলার্জির চিকিৎসায় সাধারণত এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা হয়। এগুলো চর্ম এলার্জি দেখার দেওয়ার সাথে সাথে বা তার পূর্বেও সেবন করা যায়। দীর্ঘদিনের চর্ম এলার্জি থাকলে এজমা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই জন্ম এলার্জি প্রকট হলে চর্ম বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আরো পড়ুন: বেগুন খেলে এলার্জি হয় কেন
চর্ম এলার্জি:
চিকিৎসা শাস্ত্রে এলার্জি হল আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একটি বড় ত্রুটি। তাই আমাদের এলার্জিতে যেসব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে তা যদি এলার্জি রোগী না মেনে চলেন, তবে সেইসব খাবার খাওয়ার পর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে পালমুনারই রিমা তৈরি করতে শুরু করে। এই সমস্যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ভ্যাসোডাইলেসন।
তাই চর্ম এলার্জি সমস্যায় ভুগছেন এমন রোগীদের খাবারের ব্যাপারে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। সেই সঙ্গে লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনতে হবে। পাশাপাশি চর্ম এলার্জি সমস্যার পরিমাণ কমাতে বাইরে থেকে কিছু কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।
চর্ম এলার্জির কারণ
আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ক্ষতিকর জিনিস থেকে আমাদেরকে সুরক্ষা দেয়। তবে কখনো কখনো কিছু জিনিসকে এটি ভুলে ক্ষতিকর ভেবে বসে, যা আসলে ক্ষতিকর নয়।
তাই এসব জিনিসের বিরুদ্ধে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়ায় চর্ম এলার্জির লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন - ফুসকুড়ি, চামড়া লাল হয়ে যাওয়া এবং চুলকানি ইত্যাদি।
সাধারণত যেসব জিনিসের সংস্পর্শে আসলে আমাদের শরীরে চরম এলার্জি দেখা দেয় তার মধ্যে রয়েছে
- নির্দিষ্ট কিছু খাবার দাবার
- ধুলাবালি
- ঘাম
- গরম বা ঠান্ডা আবহাওয়া
- গৃহপালিত পশু পাখি
- সূর্য রশ্মি
- পরাগরেণু ও ফুলের রেনু
- ডাস্টমাইড
- মোল্ড বা যাত্রা
- কীটনাশক
- ডিটারজেন্ট ও বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ
- বিভিন্ন ওষুধ
- লেটেক্স বা বিশেষ ধরনের রাবারের তৈরি ক্লাবস ও কনডম
- স্ট্রেস বা মানসিক চাপ
এলার্জি জাতীয় খাবার
- বেগুন
- চিংড়ি
- গরুর মাংস
- ইলিশ মাছ
- পুটি মাছ
- বোয়াল মাছ
- বাদাম
- ডিম ও দুধ
একেকজন মানুষের একেক ধরনের খাবার বা জিনিসে এলার্জির থাকতে পারে। তাই কোন ধরনের সংস্পর্শে আসলে বা খাবার খেলে চর্ম এলার্জির লক্ষণ দেখা দিচ্ছে, সেই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। এটি খুঁজে বের করতে পারলে চর্ম এলার্জি নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
এলার্জির লক্ষণ সমূহ
আমাদের শরীর এলার্জির উপাদানের সংস্পর্শে আসার পর খুব কম সময়ের মধ্যে এর প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তার মধ্যে এলার্জির লক্ষণ গুলো হল -
- ত্বকে বা স্কিনে চুলকানি হওয়া
- ত্বকে ফুসকুড়ি হওয়া
- শরীরের কিছু অংশ চাকা চাকা হয়ে যাওয়া বা ফুলে যাওয়া
- ত্বক লাল বা ধূসর বর্ণ হওয়া
- ঠোঁট, জিহ্বা, চোখ ও মুখ ফুলে যাওয়া
- চোখে চুলকানি, চোখ থেকে পানি পড়া, লাল হওয়া ও ফুলে যাওয়া
- শুকনো কাশি, হাঁচি, গলায় ও নাকে চুলকানি, নাক বন্ধ হওয়া
- বুকে চাপ লাগা, শ্বাসকষ্ট ও শ্বাস নেওয়ার সময় শব্দ হওয়া
- বমি বমি ভাব, পেট ব্যথা, পেট কামড়ানো ও ডায়রিয়া ইত্যাদি
সর্বশেষ কথা: চর্ম এলার্জি দূর করার উপায়
চর্ম এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হল - যে বস্তুতে বা খাবারে এলার্জি রয়েছে তার সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। প্রিয় পাঠক, আশা করি আপনারা চর্ম এলার্জি দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
আপনি যদি চর্ম এলার্জি দূর করার উপায় আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন যেন তারাও উপকৃত হতে পারেন। চর্ম এলার্জি দূর করার উপায় নিয়ে আর বেশি কথা নয়। আজকের চর্ম এলার্জি দূর করার উপায় আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url