জান্নাত কয়টি ও কি কি - ৮টি বেহেশতের নাম বিস্তারিত জেনে নিন
জান্নাত কয়টি ও কি কি - ৮টি বেহেশতের নাম জেনে নিন আস সালামু আলাইকুম। একজন মুসলিম হিসেবে জান্নাত কয়টি ও কি কি, ৮টি বেহেশতের নাম, ৮টি জান্নাতের নাম আমাদের সকলের জানা উচিত। আপনি যদি জান্নাত কয়টি ও কি কি, ৮টি বেহেশতের নাম জানতে চান তাহলে আজকের এই লেখাটি আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
জান্নাত কয়টি ও কি কি - ৮টি বেহেশতের নাম। ছবি-এআই |
জান্নাত এর শাব্দিক অর্থ বেহেশত, সুখনীড়, শান্তিনীড়, আবাসস্থল। জান্নাত বা বেহেশত মূলত একটি কিন্তু এর ৮টি দরজা রয়েছে, এজন্য ৮ টি জান্নাত বা ৮টি বেহেশত বলা হয়। তো চলুন বন্ধুরা জান্নাত এর ৮টি নাম বা ৮টি বেহেশতের নাম সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জেনে নেই।
জান্নাত কয়টি ও কি কি - জান্নাতের ৮টি দরজার নাম
মহান আল্লাহর সন্তুষ্ট লাভকারী ঈমানদার মুমিনরা জান্নাতের নিকটবর্তী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেহেশতের দরজা গুলো খুলে দেওয়া হবে, তখন ফেরেশতারা তাদের সাদর সম্ভাষণ জানাতে থাকবে। জান্নাত ৮টি - জান্নাতের ৮টি দরজার নাম গুলো নিচে বর্ণনা করা হলো-
৮টি বেহেস্তের নাম অর্থসহ - জান্নাতের ৮টি দরজার নাম অর্থসহ
১। বাবুস সালাত বাংলা অর্থ নামাজের দরজা।
২। বাবুল জিহাদ বাংলা অর্থ জিহাদের দরজা।
৩। বাবুল রাইয়ান বাংলা অর্থ পরিতৃপ্তি লাভের দরজা বা রোজার দরজা।
৪। বাবুস সাদাকা বাংলা অর্থ দানের দরজা।
৫। বাবুল ঈমান বাংলা অর্থ ঈমানের দরজা ।
৬। বাবুল কাজিমিন আল-গায়িজ ওয়াল আফিনা আনিন্নাস বাংলা অর্থ রাগ দমন ও মানুষের ভুল ক্ষমা করা লোকদের দরজা।
৭। বাবুর-রাজিয়িন বাংলা অর্থ সন্তুষ্টদের দরজা।
৮। বাবুত তাওবা বাংলা অর্থ ক্ষমা প্রার্থনার দরজা।
আরো পড়ুন:
১। বাবুস সালাত বাংলা অর্থ নামাজের দরজা
যেসব মু'মিনগণ নিজেদের নামাজের ব্যাপারে সচেতন, ঈমানের সহিত আন্তরিকভাবে একনিষ্ঠতার সঙ্গে সালাত আদায় করবেন, তাঁদের সম্মানে জান্নাতের বাবুস সালাত বা নামাজের দরজা নামকরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ নামাজ আদায়কারী মুত্তাকীগণ জান্নাতের এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবেন।
২। বাবুল জিহাদ বাংলা অর্থ জিহাদের দরজা
যেসব মুত্তাকীগণ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তাদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে লড়াই ও সংগ্রাম করে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন,তাঁদের সম্মানে জান্নাতের এই দরজার নামকরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যাঁরা সবকিছু দিয়ে জিহাদ করেছেন, একমাত্র তাঁরাই জান্নাতের এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবেন।
৩। বাবুল রাইয়ান বাংলা অর্থ পরিতৃপ্তি লাভের দরজা বা রোজার দরজা
একমাত্র রোজা পালনকারী বা সিয়াম পালনকারী মুত্তাকীগণ জান্নাতের এই বিশেষ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবেন। শুধুমাত্র রোজা পালনকারী মুমিনগণদের মর্যাদা স্বরূপ জান্নাতের এই প্রবেশদ্বার সংরক্ষিত। এ সম্পর্কে সহল ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত-
এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
"জান্নাতে আটটি দরজা রয়েছে সেগুলোর মধ্যে একটি দরজার নাম হল রাইয়ান। কিয়ামতের দিন এ বিশেষ দরজা দিয়ে শুধুমাত্র রোজা পালনকারীরা প্রবেশ করবেন। তারা ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা করা হবে, রোজা পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা উঠে দাঁড়াবে। তারা ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। তারা প্রবেশ করলে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। আর কারো প্রবেশ করার সুযোগ থাকবে না"। (বুখারী, হাদিস নং ১৮৯৬)।
৪। বাবুস সাদাকা বাংলা অর্থ দানের দরজা
মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যারা মানুষের প্রয়োজনে নিজেদের অর্থ সম্পদ দিয়ে মানুষকে সাহায্য করবে, দান সদকা করবে তাদের সম্মানে জান্নাতের এই দরজার নামকরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ দান-সদকাকারী মু'মিনদের জন্য জান্নাতের বাবুস সাদাকা দরজাটি নির্ধারিত।
জান্নাতের ৮টি দরজার নাম-৮টি বেহেশতের নাম। ছবি-এআই |
৫। বাবুল ঈমান বা বাবুস শাফাআত বাংলা অর্থ ঈমানের দরজা বা শাফাআত লাভকারী
কিয়ামতের দিন যেসব ঈমানদার মু'মিনগণ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুপারিশে বিনা হিসাবে জান্নাতে স্থান পাবেন, তাদের সম্মানে জান্নাতের এই দরজার নামকরণ করা হয়েছে। (মুসলিম, ঈমান অধ্যায়: হাদিস নং ৩৬৮)।
৬। বাবুল কাজিমিন আল-গায়িজ ওয়াল আফিনা আনিন্নাস বাংলা অর্থ রাগ দমন ও মানুষের ভুল ক্ষমা করা লোকদের দরজা
যেসব মু'মিনগণ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে লোকদের ভুলকে ক্ষমা করে এবং নিজের রাগকে দমন করে, একমাত্র তাদের সম্মানার্থে জান্নাতের এই দরজার নামকরণ করা হয়েছে। ( উমদাতুল কারী, ১৬/২৫৪)
৭। বাবুর-রাজিয়িন বাংলা অর্থ সন্তুষ্টদের দরজা
জান্নাতের এই দরজাকে কেউ কেউ বাবুল জিকির, বাবুল হজ, বাবুল ইলম ও বাবুল লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ -ও বলেন। যে সকল মুত্তাকীগণ সর্ব অবস্থায় আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট এবং আল্লাহও যাদের উপর সন্তুষ্ট তাদের সম্মানে জান্নাতের এ দরজার নামকরণ করা হয়েছে। ( তিরমিজি, হাদিস নং ৩৫৮১)
৮। বাবুত তাওবা বাংলা অর্থ ক্ষমা প্রার্থনার দরজা
নিজের ভুল কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে যে সকল মুমিন আল্লাহর কাছে তওবা করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন, সেই সকল মুমিনদের সম্মানার্থে জান্নাতের এই দরজার নামকরণ করা হয়েছে। একমাত্র তওবাকারীদের জন্য সব সময় এই দরজা খোলা থাকে। ( জামিউস সগির, হাদিস নং ৭৩২০)
জান্নাতের ৮টি দরজার ফজিলত-৮টি বেহেশতের নাম
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত - এক হাদীসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতের উপরোক্ত নামগুলো নির্দেশ করে বলেছেন -
"যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একই জাতীয় দুটি বস্তু ব্যয় করবে, তাকে জান্নাতের বিশেষ দরজার থেকে ডেকে বলা হবে, হে আল্লাহর বান্দা এটাই তোমার জন্য কল্যাণকর"।
"যে নিয়মিত সালাত আদায় করে, তাকে জান্নাতের বাবুস সালাত দরজা থেকে ডাকা হবে"।
" যে জিহাদ করে, তাকে জান্নাতের বাবুল জিহাদ দরজা থেকে ডাকা হবে
"যে সদকা করে, তাকে জান্নাতের বাবুস সদকা দরজা থেকে ডাকা হবে"।
" যে রোজা পালন করে, তাকে জান্নাতের বাবুর রাইয়ান দরজা থেকে ডাকা হবে"।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এতটুকু কথা শুনে হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু বলেন,
"হে আল্লাহর রাসূল সঃ, আল্লাহর কসম! যাকে জান্নাতের দরজা মধ্যে থেকে একটি দরজা দিয়ে ডাকা হবে তা তো কোন সমস্যা নেই। কিন্তু এমন কেউ কি থাকবে, যাকে জান্নাতের সবগুলো দরজা থেকে একসঙ্গে ডাকা হবে?"
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
"অবশ্যই। আর আমি আশা করি, তুমিই হবে তাদের একজন"। ( বুখারী, হাদিস নং ১৮৯৭)
জান্নাত কয়টি ও কি কি - জান্নাতের ৮টি দরজার নাম
পৃথিবীতে যারা মহান আল্লাহর ইবাদত পালন করে আদেশ-নিষেধ মেনে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবেন, একমাত্র তারাই জান্নাতে প্রবেশাধিকার পাবেন। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
"আর মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে উত্তম আবাস - চিরস্থায়ী জান্নাত। এর দরজাগুলো তাদের জন্য খোলা থাকবে। তারা সেখানে বসবে হেলান দিয়ে। সেখানে তারা নানারকম ফলমূল ও পানীয় চাইবে"। ( সূরা: সা'দ, আয়াত নং ৪৯-৫১)
জান্নাত সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,
"যখন তারা জান্নাতের কাছে পৌঁছাবে, তাদের জন্য জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হবে এবং জান্নাতের রক্ষীগণ তাদের বলবে - 'তোমাদের প্রতি সালাম। তোমরা সুখী হও এবং জান্নাতে প্রবেশ করো স্থায়ীভাবে সেখানে বসবাসের জন্য'।" ( সূরা: জুমার, আয়াত নং ৭২)
পবিত্র আল কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
"নিশ্চয়ই মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে সফলতা। প্রাচীর বেষ্টিত বাগান ও আঙ্গুর, আর সমবয়স্ক উদ্ ভিন্ন যৌবনা তরুণী এবং পরিপূর্ণ পানপাত্র, সেখানে তারা শুনবে না অসার অর্থহীন আর মিথ্যে কথা"। (সূরা নাবা ৭৮, আয়াত: ৩০-৩৫)
জান্নাত কয়টি ও কি কি - ৮টি বেহেশতের নাম
জান্নাত সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন,
ان الابرار لفي نعيم
অর্থ: নেককারগন বেহেশতে যাবে।
কোন কোন ইসলামী বিশারদগণ জান্নাতের ৮ (আট) টি দরজাকে নিম্নলিখিত ভাবে বর্ণনা করেছেন -
১. জান্নাত।
২. জান্নাতুল ফেরদাউস।
৩. জান্নাতুন নাঈম।
৪. দারুস্ সালাম ।
৫. জান্নাতুল খুলদ ।
৬. জান্নাতুল আলীয়া।
৭. জান্নাতুল আদন।
৮. জান্নাতুল মাওয়া।
আরো পড়ুন:
সর্বশেষ কথা - জান্নাত কয়টি ও কি কি - ৮টি বেহেশতের নাম
জান্নাত একটি কিন্তু এর ৮টি বিশেষ দরজা থাকার জন্য অনেকেই ৮টি বেহেশত বলে থাকেন। প্রত্যেক মু'মিন ব্যক্তি নিজ নিজ আমল অনুযায়ী আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পর সেই দরজাগুলো দিয়ে চিরস্থায়ী ভাবে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। একজন মুসলমান হিসেবে প্রত্যেক ব্যক্তি জান্নাতে যাওয়ার আশা রাখতে পারি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল দোষ ত্রুটি ক্ষমা করে যেন প্রত্যেক মুসলমানকেই জান্নাতে প্রবেশের অধিকার দেন - আমিন।
প্রিয় পাঠক আজকের জান্নাত কয়টি ও কি কি - ৮টি বেহেশতের নাম আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত ভাবে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। লেখাটির মধ্যে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং ভুল ত্রুটি থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানালে চির কৃতজ্ঞ থাকতাম। জান্নাত কয়টি ও কি কি লেখাটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন যেন তারাও উপকৃত হতে পারেন। এতক্ষণ জান্নাত কয়টি ও কি কি - ৮টি বেহেশতের নাম লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url