তিন কুল বাংলা উচ্চারণ জেনে নিন
তিন কুল বাংলা উচ্চারণ জেনে নিনআয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ-আয়াতুল কুরসি আরবি বিস্তারিত তিন কুল বাংলা উচ্চারণ, ৩ কুল সূরা, তিন কুল পড়ার নিয়ম বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চান? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন, আশা করি বিস্তারিত জানতে পারবেন।
তিন-কুল-বাংলা-উচ্চারণ। ছবি-এআই |
তিন কুল বাংলা উচ্চারণ বলতে আমরা সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস - এই তিন সূরাকে বুঝে থাকি। এই তিনটি সূরার প্রথমেই 'কুল' শব্দটি আছে বলে এগুলোকে একত্রে তিন কুল সূরা বলা হয়। এই সূরা তিনটি পবিত্র কোরআন শরীফের সর্বশেষ সূরা। এই সূরাগুলো অনেক তাৎপর্য ও ফজিলতপূর্ণ।
তিন কুল বাংলা উচ্চারণ
তিন কুল বাংলা উচ্চারণ বিষয়ের সূরা ইখলাস এ মহান আল্লাহর একত্ববাদ এবং আল্লাহ নিদ্রা, খাওয়া, সন্তান-সান্তনাদি মুক্ত প্রকাশ পেয়েছে। অন্যদিকে, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস আলাদা আলাদা সূরা হলেও একই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই দুই সুরা নাযিল হয়েছে। সূরা ফালাক এবং সূরা নাসকে একত্রে 'মু - আওয়িযাতান' বলে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিদিন নিয়মিত এই (৩ কুল সূরা) তিন কুল সূরা পাঠ করতেন এবং সাহাবীদেরকেও পাঠ করতে উৎসাহিত করতেন।
আরো পড়ুন
সকাল-সন্ধ্যায় অর্থাৎ ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর তিনবার এবং অন্য তিন ওয়াক্তে একবার করে নিয়মিত এই তিন কুল সূরা পাঠ করলে মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাকে আটটি বিশেষ নেয়ামতে ধন্য করবেন। নিম্নে তিন কুল বাংলা উচ্চারণসহ বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো -
১। সূরা ইখলাস
২। সূরা ফালাক
৩। সূরা নাস
১। সূরা ইখলাস
পবিত্র কোরআন শরীফের ১১৪ টি সূরার মধ্যে সূরা ইখলাস হলো ১১২ তম এবং ছোট্ট একটি সূরা। এটি একটি মাক্কী সূরা এবং এর রুকু সংখ্যা এক, আয়াত সংখ্যা চার। সূরা ইখলাস মহান আল্লাহর একত্ববাদের অনন্য বৈশিষ্ট্য এবং পরিচয় সমৃদ্ধ একটি সূরা। সূরা ইখলাস আকারে ছোট হলেও এর তাৎপর্য এবং বিশালতা এতই যে এটিকে কোরআনের এক তৃতীয়াংশ মনে করা হয়। অর্থাৎ কেউ সূরা ইখলাস তিনবার তেলাওয়াত করলে পুরো কোরআন শরীফের সাওয়াব পাওয়া যায়। সেজন্য এই সূরাটি তেলাওয়াত ও আমলের প্রবণতা মানুষের মধ্যে বেশি পরিলক্ষিত হয়।
সূরা ইখলাস আরবি উচ্চারণ
(بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ)
قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ - اللَّهُ الصَّمَدُ - لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ - وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ
সূরা ইখলাস বাংলা উচ্চারণ
(বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম)
কুল হুয়াল্লাহু আহাদ। আল্লাহুস সামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ। ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ। ( মাখরাজসহ বিশুদ্ধ উচ্চারণের জন্য অনুরোধ রইল)
সূরা ইখলাস বাংলা অর্থ
(পরম করুণাময় মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি)
( হে রাসুল সা.! আপনি ) বলুন, তিনি আল্লাহ এক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি। তাঁর সমতুল্য কেউই নেই।
২। সূরা ফালাক
পবিত্র আল কোরআনের ১১৪ টি সূরার মধ্যে সুরা ফালাক হলো ১১৩ তম সূরা। সূরা ফালাক একটি মাদানী সূরা, এর রুকু সংখ্যা এক এবং আয়াত সংখ্যা ৫। সূরা ফালাকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, এটি পাঠ করলে শয়তানের আক্রমণ এবং বিভিন্ন জাদুটোনাসহ সব ধরনের অনিষ্টতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এই সূরাটিতে মহান আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন অনিষ্ট থেকে তার নিকটআশ্রয় চাওয়ার কৌশল তুলে ধরেছেন।
সূরা ফালাক আরবি উচ্চারণ
(بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ)
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ - مِن شَرِّ مَا خَلَقَ - وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ - وَمِن شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ - وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ
সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ
(বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম)
কুল আউজু বিরাব্বিল ফালাক। মিন শাররি মা খালাক। ওয়ামিন শাররি গাসিকিন ইজা ওয়াকাব্ব।ওয়ামিন শাররিন নাফ ফাসাতি ফিল উকাদ। ওয়ামিন শাররি হাসিদিন ইজা হাসাদ। (মাখরাজ সহ বিশুদ্ধ উচ্চারণের জন্য অনুরোধ রইল)
সূরা ফালাক বাংলা অর্থ
(পরম করুণাময় মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি)
( হে রাসুল সা.! আপনি ) বলুন, আমি প্রভাতের স্রষ্টার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি, তিনি যেসব সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে। গভীর রাতের অনিষ্ট থেকে। এবং গিরায় ফুৎকার দেওয়া নারীদের জাদু কারিণীদের অনিষ্ট থেকে। এবং হিংসুক যখন হিংসা করে তখন তাদের অনিষ্ট থেকে।
৩। সূরা নাস
পবিত্র আল কুরআনের ১১৪ টি সূরার মধ্যে সর্বশেষ সূরা হল সূরা নাস। সূরা নাসের প্রতিটি আয়াতের মাধ্যমে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব ধরনের জাদুটোনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়েছে। সূরা নাসে সর্বমোট ছয়টি আয়াত রয়েছে। প্রথম তিন আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা এবং পরের তিন আয়াতে জ্বীন ও মানুষরূপী শয়তানের কুমন্ত্রনা, জাদুটোনা থেকে আশ্রয় গ্রহণের দিক নির্দেশনা রয়েছে।
সূরা নাস আরবি উচ্চারণ
(بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ)
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ - مَلِكِ النَّاسِ - إِلَهِ النَّاسِ - مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ - الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ - مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ
সূরা নাস বাংলা উচ্চারণ
(বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম)
কুল আউযু বিরাব্বিন নাস। মালিকন নাস ইলাহিন নাস। মিন শাররিল ওয়াস ওয়াসিল খাননাস। আল্লাযি ইউ ওয়াস বিসু ফি সুদূরিন নাস, মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাস। ( মাখরাজসহ বিশুদ্ধ উচ্চারণ করার জন্য অনুরোধ রইল)
সূরা নাস বাংলা অর্থ
( পরম করুনাময় মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি )
( হে রাসুল সা.! আপনি ) বলুন, আমি মানুষের পালনকর্তার কাছে আশ্রয় চাই। মানুষের অধিপতির কাছে, মানুষের মা'বুদের কাছে। তার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্মগোপন করে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে। জ্বীনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।
তিন কুল পড়ার নিয়ম বিষয়ে আমরা ৭টি বিশুদ্ধ হাদিস জানতে পেরেছি। এখন আমরা তিন কুল বাংলা উচ্চারণ বিষয়ের তিন কুল সূরা পড়ার নিয়ম গুলো এবং হাদিসগুলো জেনে নেব।
১। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত,
'প্রতি রাতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিছানায় যাওয়ার আগে তিন কুল সূরা অর্থাৎ সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস তেলাওয়াত করে দু'হাত একত্র করে তাতে ফুঁক দিতেন এবং যতদূর সম্ভব সমস্ত শরীরে হাত বুলাতেন। এভাবে তিনি তিনবার করতেন'। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫০১৭ )
২। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, 'যে ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যায় তিন কুল সূরা পাঠ করবে সে সকল প্রকার বিপদ-আপদ হতে নিরাপদে থাকবে'। (তিরমিজি)
৩। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত,তিনি বলেন-
'আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন অসুস্থ হতেন, তখন তিন কুল পড়ে হাতে ফুঁক দিতেন এবং নিজের শরীরে হাত বুলাতেন। যখন তিনি অন্তিম শয্যায় শায়িত ছিলেন, তখন আমি তিন কুল পড়ে ফুঁক দিতাম এবং তাঁর হাতে হাত বুলাতাম'। (সহিহ বুখারী)
আরো পড়ুন
৪। 'মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ শেষে তিন কুল সূরা পাঠ করতে বলেছেন। ফজর ও মাগরিব নামাজ পড়ে সূরা ইখলাস সূরা ফালাক ও সূরা নাস তিনবার করে পাঠ করা সুন্নাত। অবশিষ্ট তিন ওয়া ক্ত ফরজ নামাজে একবার করে পাঠ করার কথা বলা হয়েছে'। (আবু দাউদ)
৫। তিন কুল পাঠ করলে মহান আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় বান্দাকে আটটি বিশেষ নেয়ামত দান করবেন সেগুলো হল -
(১) আল্লাহর ভালোবাসা এবং সন্তুষ্টি।
(২) জান্নাত।
(৩) গুনাহ থেকে মুক্তি।
(৪) দরিদ্রতা থেকে মুক্তি।
(৫) বালা-মুসিবত হতে মুক্তি।
(৬) জাদুটোনা হতে মুক্তি।
(৭) জ্বীন-শয়তানের কুমন্ত্রণা হতে মুক্তি।
(৮) যাবতীয় অনিষ্ঠতা থেকে মুক্তি।
তিন-কুল-পড়ার-নিয়ম। ছবি-এআই |
৬। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত,
'এক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তিকে সূরা ইখলাস বারবার পাঠ করতে শুনেন। সকাল হলে তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কাছে হাজির হন এবং ব্যাপারটি তাঁকে খুলে বলেন। আর ওই ব্যক্তি যেন উক্ত সুরার পাঠকে কম গুরুত্ব দিচ্ছিলেন। তখন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যার হাতে আমার প্রাণ ওই সত্তার কসম (আল্লাহ) নিশ্চয়ই এ সূরা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান'। ( সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬৬৪৩)
৭। সাহল ইবনে সাদ শায়েরী রাদিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন -
'এক ব্যক্তি হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর নিকট দরিদ্রতার অভিযোগ করল। মহানবী সাঃ বললেন, যখন তুমি ঘরে যাও, তখন সালাম দেবে এবং সূরা ইখলাস একবার পাঠ করবে। এই আমল করলে কিছুদিনের মধ্যে তার দরিদ্রতা দূর হয়ে যায়'। (সহিহ বুখারী)
তাই ঘুমানোর আগে তিন কুল পড়া আমাদের সবার জন্য সুন্নত। শরীর অসুস্থতা অনুভব করলে তিন কুল পাঠ করে শরীরে ফুঁক দিতে হবে এবং পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ শেষে তিন কুল পাঠ করতে হবে।
সূরা ফালাক ও সূরা নাসের শানে নুযুল
এক হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে,
'এক ইহুদি রমণীর সহযোগিতায় লাবিদ ইবনে আছেম নামক এক ব্যক্তি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর যাদু করেছিল, ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন'।
এই ঘটনা হযরত জিব্রাইল আঃ আগমন করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সংবাদ দিলেন যে, এক ইহুদি জাদু করেছে এবং যে জিনিসে জাদু করা হয়েছে, তা অমুক কূপের মধ্যে রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাঃ লোক পাঠিয়ে সেই জিনিস কূপ থেকে উদ্ধার করে আনালেন। সেই জিনিসে তিনি কয়েকটি গিরা দেখতে পেয়েছিলেন। তিনি সূরা ফালাক এবং সূরা নাস এই দুটি পড়ে ফুঁক দেয়ায় গিরাগুলো সঙ্গে সঙ্গে খুলে যায় এবং তিনি সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়ে শয্যা ত্যাগ করেন। ( মুসনাদে আহমদ )
আরো পড়ুন: ৩ কুল সূরা
সর্বশেষ কথা - তিন কুল বাংলা উচ্চারণ
তিন কুল বাংলা উচ্চারণ শিরোনামের লেখাটি পড়ে আপনারা তিন কুল সূরা বিষয়ে ভালোভাবে জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন। সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস এই তিনটি সূরার প্রথমে কুল শব্দটি থাকার কারণে এদেরকে একত্রে তিন কুল সূরা বলা হয়। তিন কুল সূরা পড়লে অনেক ফজিলত পাওয়া যায় এবং এগুলো পড়া সুন্নত। আমরা যেন তিন কুল সূরা বেশি বেশি আমল করতে পারি আল্লাহ যেন আমাদেরকে সেই তৌফিক দান করেন - আমিন।
আশা করি আজকের লেখাটি পড়ে আপনাদের ভালো লেগেছে এবং আপনারা উপকৃত হয়েছেন। আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে লেখাটি আপনার বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন যেন তারাও উপকৃত হতে পারেন। লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url