কৈলাস পর্বত কোথায় অবস্থিত বিস্তারিত জেনে নিন

কৈলাস পর্বত কোথায় অবস্থিত বিস্তারিত জেনে নিন চারটি বিশেষ ধর্ম হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন এবং বন ধর্মে কৈলাস পর্বত  অত্যন্ত পবিত্র একটি স্থান। ভারত, তিব্বত, নেপাল সহ অন্যান্য দেশ থেকে তীর্থ যাত্রীরা সারা বছর কৈলাস পর্বত কে পূজা করতে আসেন। এই পর্বতের চূড়ায় আজ পর্যন্ত কেউ পৌঁছাতে পারেনি এবং এখানে আরোহন করলে প্রতিমুহূর্তে আরোহনকারীর বয়স স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বেড়ে যায়।
কৈলাস-পর্বত-কোথায়-অবস্থিত
কৈলাস-পর্বত-কোথায়-অবস্থিত।
এমনকি কৈলাসের আঙিনায় পৌঁছে যাওয়া মানুষের শরীরে দ্রুত বার্ধক্যের ছাপ ফুটে ওঠে এবং অস্বাভাবিকভাবে নখ ও চুল বাড়তে থাকে। সনাতন ধর্ম মতে - যে পর্বতে মানুষ নয় দেবতাদের বাস, স্বর্গ এবং মর্তের মেলবন্ধনকারী যার শীর্ষপিঠ, সেই রহস্য ঘেরা কৈলাস পর্বত কোথায় অবস্থিত তাই আজকে আমরা এই লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরব।

কৈলাস পর্বত কোথায় অবস্থিত

কৈলাস পর্বত গণচীনের স্বায়ত্ত শাসিত তিব্বতের মঙ্গা-রিস অঞ্চলে অবস্থিত একটি পবিত্র পর্বত। এটি তিব্বতের হিমালয় পর্বতমালার একটি অংশ। কৈলাস পর্বত তিব্বতের রাজধানী লাসা শহর থেকে উত্তর পশ্চিমে ১৬০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। হিন্দু ধর্ম মতে, কৈলাস পর্বত ঐতিহ্যগত ভাবে শিবের বাসস্থান হিসেবে স্বীকৃত। তিনি সেখানে তার সহধর্মিনী দেবী পার্বতী এবং তাদের সন্তান গণেশ ও কার্তিক এর সাথে বসবাস করেন। কৈলাস পর্বতের ওপরে স্বর্গ আর নিচে মৃত্যুর স্থান বলে বিশ্বাস করা হয়।
 
গ্রানাইট ও চুনাপাথরে তৈরি এই পর্বতের পাদদেশে শুয়ে আছে রাক্ষসতাল হ্রদ ও মানস সরোবর হ্রদ , যা ২২ হাজার ২৮ ফুট উচ্চতা নিয়ে তিব্বতের পশ্চিম প্রান্তে পিরামিডের মত দাঁড়িয়ে আছে। কৈলাস পর্বতের মত রহস্যময় পর্বত সারা পৃথিবীতে আর একটিও নেই। কারণ এই পর্বত কে ঘিরে যুগ যুগ ধরে আবর্তিত হয়ে আসছে রহস্যের বেড়াজাল।

কৈলাস পর্বত রহস্য

কৈলাস পর্বত রহস্য কোন গবেষণা, কোন বিজ্ঞানী, শক্তিশালী স্যাটেলাইট - কোন কিছুই অমীমাংসিত সত্যকে আজও উদঘাটন করতে পারেনি। সনাতন ধর্ম মতে কৈলাস পর্বতে শুধুমাত্র দেবতাদের বাস। রহস্যময় পর্বতটি নিয়ে এমন কিছু বিস্ময়কর ঘটনা রয়েছে - স্থানীয় মানুষ ও তীর্থযাত্রীরা, যেগুলোর কোন যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা নাই বলেই তা অলৌকিক হিসেবে আজও প্রতিষ্ঠিত। কৈলাস পর্বত দিনের বিভিন্ন সময় রং পাল্টায়, একই সাথে বদলে যায় কৈলাসের ভূপ্রকৃতিও। কৈলাস পর্বতে পৌঁছানো মানুষের শরীরে দ্রুত বয়সের ছাপ লক্ষ্য করা যায় সাথে নখ ও চুল বাড়তে থাকে অস্বাভাবিকভাবে। কৈলাস পর্বতের গায়ে বরফ, দুটি হ্রদ ও পাথরের মেলবন্ধনে তৈরি হওয়া পবিত্র 'স্বস্তিকা' এবং 'ক্তঁ' চিহ্ন রহস্যকে আরো গভীর করে তোলে। চলুন, কৈলাস পর্বতের আরো কিছু রহস্য আমরা নিচে জেনে নিই।

কৈলাস পর্বত ভৌগোলিক অবস্থান রহস্য - কৈলাস পর্বত কোথায় অবস্থিত

পৃথিবীর উত্তরে উত্তর মেরু এবং দক্ষিণে দক্ষিণ মেরু, যার ঠিক মাঝখানে অবস্থান রয়েছে হিমালয় পর্বতের। আর হিমালয়ের কেন্দ্র হল কৈলাস পর্বত। বিজ্ঞানীদের মতে, এটাই পৃথিবীর কেন্দ্র। এখানে এমন একটি কেন্দ্র রয়েছে, যাকে বলা হয় অক্ষমুন্ডি। অক্ষমুন্ডী অর্থ হল পৃথিবীর নাভি বা স্বর্গীয় মেরু এবং ভৌগোলিক মেরু কেন্দ্র। এটি স্বর্গ এবং পৃথিবীর মধ্যে সংযোগের একটি বিন্দু, যেখানে দশটি দিক মিলিত হয়। কৈলাস পর্বত ১০০ টি ছোট পিরামিডের কেন্দ্র। এই পর্বতের গঠন একটি কম্পাসের চারটি বিন্দুর মত এবং এটি একটি নির্জন স্থানে অবস্থিত, যেখানে আর কোন বড় পর্বত নেই। এটি একটি ভৌগলিক অবস্থান রহস্য বলে ধারণা করা হয়।
কৈলাস-পর্বত-কোথায়-অবস্থিত
কৈলাস-পর্বত-কোথায়-অবস্থিত।

কৈলাস পর্বতের চূড়ায় আরোহণ রহস্য

হিন্দু ধর্ম:
কৈলাস পর্বতে আরোহণ নিষিদ্ধ। হিন্দু ধর্ম মতে, কৈলাস পর্বতে ভগবান শিব তার স্ত্রী পার্বতী সহ বসবাস করেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই পর্বতের মাহাত্ম্য বহুগুণ বেড়ে যায়। কৈলাস পর্বতে 'মানস সরবর হ্রদ' অবস্থিত। পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, এই পর্বতের হ্রদের কাছেই প্রাচীন ধন কুবের নগরী রয়েছে। একসময় পবিত্র এই হ্রদের অধিকার নিয়ে বৌদ্ধ এবং বন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে তুমুল বাক-বিতন্ডা শুরু হয়েছিল। তারপর একাদশ শতকে বৌদ্ধ ধর্মের বৌদ্ধ ভিক্ষু যোগী মিলারেপা এবং বন ধর্মের বনচুঙের মধ্যে শুরু হয়েছিল কালা জাদুর লড়াই। এই লড়াইয়ে যিনি জিতবেন তিনিই পাবেন মানস সরোবরের অধিকার। কিন্তু লড়াইয়ে কেউ কাউকে হারাতে পারল না। 

তখন ঠিক হয়েছিল যিনি আগে কৈলাস শৃঙ্গে পা রাখবেন তার দখলে থাকবে মানস সরোবর। এরপর দুজনেই কৈলাস পর্বতের পাদদেশে পৌঁছে গিয়েছিলেন। একসময় বনচুঙ পৌঁছে গিয়েছিলেন পর্বতের শৃঙ্গের কাছাকাছি কিন্তু তখনও ধ্যানমগ্ন হয়ে বসেছিলেন মিলারেপা। মিলারেপা চোখ খুলে দেখলেন কৈলাস শৃঙ্গের চূড়া ঘিরে রাখা কালো মেঘ ফেটে সূর্যের এক অস্বাভাবিক উজ্জ্বল রশ্মি এসে পড়েছে তার শরীরে। সেই সূর্যরশ্মি অনুসরণ করে বনচুঙের অনেক আগেই মিলারেপা কৈলাস শৃঙ্গে পৌঁছে গিয়েছিলেন। ফলে মিলারেপা মানস সরোবরের দখল নিয়েছিলেন। তবে কৈলাস পর্বত শৃঙ্গ থেকে নেমে এসে মিলারেপা বলেছিলেন, 'কেউ যেন কোনদিন এই শৃঙ্গে আরোহণের চেষ্টা না করে। 

কারণ কৈলাস শৃঙ্গে বিশ্রাম নিচ্ছেন স্বয়ং ভগবান। দেবতাদের আবাসস্থলে মানুষ গিয়ে যেন কোন বিরক্ত না করে'। বৌদ্ধ ভিক্ষু যোগী মিলারেপা ই প্রথম যিনি কৈলাস পর্বতে ওঠেন এবং সেখান থেকে ফিরে আসতে পারেন। তাই আজ পর্যন্ত কোন পর্যটক, বিজ্ঞানী কিংবা স্যাটেলাইট কৈলাসের চূড়ায় পৌঁছানোর রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি এমনকি কৈলাসের চূড়ায়। এমনকি আরোহণের জন্য কোন সূত্রও আবিষ্কার করতে পারেনি।

কৈলাস পর্বতের ধর্মীয় বিশ্বাস ও সত্যতা রহস্য - কৈলাস পর্বত কোথায় অবস্থিত

হিন্দু ধর্ম:
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পুরান অনুযায়ী, কৈলাস পর্বতের চূড়ায় দেবাদিদেব মহাদেব শিবের নিভৃত আবাসস্থল। যেখানে বসে ভগবান শিব ধ্বংস, সংহার ও প্রলয় নিয়ন্ত্রণ করেন। গুগল আর্থের তোলা একটি ছবিতে আলো-ছায়ার খেলায় হাস্যরত শিবের মুখাবয়ব দেখে সনাতনী বিশ্বাস এটি সত্যতার এবং গভীরতম পবিত্রতার। একাধিক ধর্মগ্রন্থ যেমন শিব পুরাণ, স্কন্দ পুরাণ ও মৎস্য পুরাণ এ কৈলাস খন্ড নামক পৃথক পৃথক অধ্যায় রয়েছে। মহাকাব্য মহাভারত অনুসারে বলা হয় যে, পাণ্ডব ভাইরা তাদের স্ত্রী দ্রৌপদীর সাথে তাদের মুক্তির পথে কৈলাস পর্বতের চূড়ায় ট্র্যাক করেছিলেন। কারণ এটি দেবদের স্বর্গের প্রবেশদ্বার হিসাবে বিবেচিত হয়। 
মহাকাব্য রামায়ণের উত্তর কান্ড বিভাগে বলা হয়েছে যে, রাবণ শিবের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ হিসেবে কৈলাস পর্বতকে উপড়ে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন। তখন মহাদেব রাবণকে মাঝখানে আটকে তার ডান বুড়ো আঙ্গুলটি পাহাড়ের উপরে চেপেছিলেন। কৈলাস পর্বতে উপবিষ্ট থাকাকালীন মহাদেব শিবের এই প্রতিনিধিত্বকে রাবণানুগ্রহ নামেও উল্লেখ করা হয়। ইলোরার কৈলাস মন্দির এ এর প্রতিকৃতি খোদাই করা আছে। বিষ্ণু পুরাণ শিবকে পদ্মের অবস্থানে বসা পর্বতের সীমানার মধ্যে গভীর ধ্যানে নিযুক্ত এবং চিরস্থায়ী আনন্দের অবস্থায় সম্পূর্ণ রূপে নিমগ্ন হওয়ার কথা বলে।
বৌদ্ধ ধর্ম:
অন্যদিকে, বৌদ্ধদের কাছে কৈলাস পর্বত হল সৃষ্টির প্রাণকেন্দ্র। বজ্রায়ন শাখার বৌদ্ধরা কেউ কেউ মনে করেন, কৈলাসের শৃঙ্গে ধ্যানমগ্ন হয়ে আছেন ধ্যানের দেবতা হেরুক চক্রসম্ভার। তিব্বতীয় বৌদ্ধরা কাং রিনপোচে বিশ্বাস করে, যার অর্থ মূল্যবান তুষার পর্বত। একটি প্রাকৃতিক মন্ডল যা পৃথিবীতে বৌদ্ধ সৃষ্টিতত্ত্বের প্রতিনিধিত্ব করে।
বন ধর্ম:
আবার তিব্বতের বন ধর্মের অনুসারীরা মনে করেন, কৈলাস শৃঙ্গ তাদের আকাশ দেবতা সিপাই মেনের আবাস। জৈন ধর্মের অনুসারীদের কাছেও পবিত্র এই শৃঙ্গ। কারণ প্রথম তীর্থঙ্কর ঋষভ দেব নির্বাণ লাভ করেছিলেন এই কৈলাস পর্বতেই। বন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করে যে, পবিত্র কৈলাস পর্বতটি সেই জায়গা যেখানে বন ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা আকাশ থেকে অবতরণ করেছিলেন। 
জৈন ধর্ম:
জৈন ঐতিহ্যে এটা বিশ্বাস করা হয় যে ঋষভ নাথ নির্বাণ লাভ করার পর তার পুত্র সম্রাট ভরত সেখানে ২৪ জন তীর্থঙ্করের তিনটি এবং ২৪টি মন্দির বিনির্মাণ করেছিলেন এবং তাদের মূর্তিগুলো মূল্যবান পাথর দিয়ে খচিত হয়েছিল এবং এর নামকরণ সিংহনিষ্ধা করেছিলেন।
কৈলাস-পর্বত-রহস্য
কৈলাস-পর্বত-রহস্য। 

কৈলাস পর্বতের জল রহস্য - কৈলাস পর্বত কোথায় অবস্থিত

কৈলাস পর্বতে দুটি প্রধান হ্রদ রয়েছে। যথা: (১) রাক্ষসতাল হ্রদ এবং (২) মানস সরোবর হ্রদ।
(১) রাক্ষসতাল হ্রদ:
রাক্ষসতাল হ্রদ হল পৃথিবীর সর্বোচ্চ লোনা জলের হ্রদ এবং যার আকৃতি চাঁদের মত।
(২) মানস সরোবর হ্রদ:
মানস সরোবর হ্রদ বিশ্বের সবচেয়ে বিশুদ্ধ সুপেয় জলের হ্রদ এবং যার আকার সূর্যের মত। সনাতনী ধর্ম মতে, বিষ্ণুদেব পৃথিবী সৃষ্টির অনেক আগেই এই হ্রদের পরিকল্পনা করেছিলেন।
এই দুটি হ্রদ সৌর এবং চন্দ্রশক্তির প্রতিনিধিত্ব করে যা ইতিবাচক এবং নেতিবাচক শক্তির সাথে সম্পর্কিত দক্ষিণ দিক থেকে দেখলে এটিকে 'স্বস্তিক' প্রতীক মত দেখা যায়। এই হ্রদ দুটি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়েছিল, নাকি সেগুলো মানব সৃষ্ট তা এখনও রহস্যই রয়ে গেছে।

কৈলাস পর্বতের নদীর উৎপত্তি রহস্য

কৈলাস পর্বতের চারদিকে চারটি নদী - সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র, শতদ্রু ও করনালীর উৎপত্তি হয়। গঙ্গা, স্বরস্বতী সহ চীনের অন্যান্য নদী গুলো এই নদী থেকেই উৎপত্তি হয়েছে। কৈলাসের চারদিকে নদীগুলোর উৎপত্তিস্থলে বিভিন্ন পশু-প্রাণীর মুখাবয়ে রয়েছে। ধর্ম মতে, এই পশু-প্রাণীর মুখ থেকেই নদীগুলোর উৎপত্তি। কৈলাসের পূর্বে অশ্ব মুখ, পশ্চিমে হস্তিমুখ, উত্তরে সিংহ মুখ এবং দক্ষিণে ময়ূরের মুখ বর্তমান বিদ্যমান।

কৈলাস পর্বতের আধ্যাত্মিক যোগাযোগ রহস্য

একদল রাশিয়ান বিজ্ঞানীদের মতে, কৈলাস পর্বতে অক্ষ মুন্ডিতে অতিপ্রাকৃত শক্তি প্রবাহিত হয় এবং মানুষ সেই স্পিরিচুয়াল শক্তির সাথে যোগাযোগ করতে পারে। কথিত আছে, শুধুমাত্র পুণ্যবান আত্মা এখানে থাকতে পারে। রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা যখন তিব্বতের মন্দিরের ধর্মগুরুর সাথে দেখা করেছিলেন। তখন তারা বলেছিলেন কৈলাস পর্বতের চারপাশে একটি অতিপ্রাকৃত শক্তি প্রবাহ রয়েছে যেখানে সন্ন্যাসীরা এখনো আধ্যাত্মিক গুরুদের সাথে টেলিপ্যাথিক যোগাযোগ করে।

কৈলাস পর্বতের বার্ধক্য রহস্য

রহস্য ঘেরা কৈলাস পর্বতে এ পর্যন্ত যারাই ওঠার চেষ্টা করেছেন তাদের সঙ্গেই ঘটেছে অতিপ্রাকৃত ঘটনা। কিছুক্ষণ পরেই নাকি শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয়। অকাল বার্ধক্য তাদের শরীরে চলে আসে। এমনকি মাথার চুল ও হাতের নখ বাড়তে থাকে অতি দ্রুত। সাধারণভাবে মানুষের চুল, নখ যে হারে বাড়ে, পাহাড়ে অন্তত ১২ ঘণ্টা কাটালে নাকি এই বৃদ্ধির হার দ্বিগুণ হয়ে যায়। এসব অতিপ্রাকৃত ঘটনা এর সত্যতা যাচাই করতে কয়েকজন সাইবেরিয়ান পর্বতারোহী কৈলাস পর্বতে আরোহন করেছিলেন। তাদের বয়স সঙ্গে সঙ্গে নাকি কয়েক দশক বেড়ে গিয়েছিল। আজও এ ঘটনা রহস্যের মধ্যেই রয়ে গেছে। আশা করি, কৈলাস পর্বত কোথায় অবস্থিত জানতে ও বুঝতে পেরেছেন।

কৈলাস পর্বতে আলো রহস্য

দাবি করা হয়, কৈলাস পর্বতের আকাশে নাকি বহুবার সাত ধরনের আলো জ্বলতে থেকে দেখা গেছে। তবে নাসার বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এখানে চৌম্বক শক্তির কারণেই এমনটা হতে পারে ।এখানে চৌম্বকীয় শক্তি আকাশের সাথে মিলিত হয়ে বহুবার এমন রং তৈরি করতে পারে কিন্তু এর সত্যতা প্রমাণের কোন ব্যাখ্যা তারা দিতে পারেননি।

তুষার মানব ও কস্তুরী হরিণ রহস্য

কৈলাস পর্বতের লোকেরা বলেন, হিমালয়ে ইয়েতি মানব বাস করে। কেউ একে বাদাম ভালুক বলে, কেউ বন্য মানুষ আবার কেউবা তুষার মানব বলে। একটি জনপ্রিয় বিশ্বাস আছে যে, এটি মানুষকে শিকার করে খায়। কিছু বিজ্ঞানী একে নিয়ান্ডারথাল মানুষ বলে মনে করেন। বিশ্বজুড়ে ৩০ জনেরও বেশি বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, হিমালয়ের তুষারময় অঞ্চলে তুষার মানবের উপস্থিতি রয়েছে।

বিশ্বের বিরল হরিণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কস্তুরী হরিণ। এই হরিণ শুধুমাত্র উত্তর ভারত, উত্তর পাকিস্তান, চীন, তিব্বত, সাইবেরিয়া এবং মঙ্গলিয়ায় দেখা যায়। এই হরিণগুলোর কস্তুরী অত্যন্ত সুগন্ধি যুক্ত এবং ঔষধি গুণ সম্পন্ন, যা এর দেহের পিছনের নাভি গ্রন্থিতে একটি গোলাকার পদার্থের আকারে থাকে। বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল পশু পণ্য হল কস্তুরী হরিণের কস্তুরী। এই তুষার মানব ও বিরল কস্তুরী হরিণের জন্ম এক বিরাট রহস্য যা পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না।

তাছাড়া কৈলাস পর্বতে গেলে ওম ধ্বনিটি অবিরাম শুনতে পাওয়া যায়। অনেকেই মনে করেছেন একটি বিমান কাছাকাছি উঠছে কিন্তু মনোযোগ দিয়ে শুনে দেখছেন এই ধনীটি ওম ধ্বনির মত। অবশ্য বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি বরফ গলে যাওয়ার শব্দ হতে পারে। একই পর্বতে এত বৈচিত্রতা রহস্য বড়ই অদ্ভুত। পুণ্যবান কৈলাসের হাজারো রহস্য বলে শেষ করা যাবে না। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রূপ নতুন নতুন সব রহস্যের জন্ম দেয় কৈলাস। আর এসব রহস্যের ব্যাখ্যা এখনো অমীমাংসিত। রাশিয়াসহ বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীরা আজও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এই রহস্য গুলোর উদঘাটনের।

সর্বশেষ কথা - কৈলাস পর্বত কোথায় অবস্থিত

চীনের তিব্বতে অবস্থিত কৈলাস পর্বতকে ঘিরে অনেক পৌরাণিক কাহিনী ও কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। এই পর্বতকে চারটি ধর্ম - হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন এবং বন ধর্মাবলম্বীরা পবিত্র বলে মনে করেন। প্রাচীন গ্রন্থে কৈলাস পর্বতকে বিশ্বের কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অতিপ্রাকৃত হাজারো রহস্যে ঘেরা কৈলাস পর্বতকে হিন্দুরা তাদের চিরন্তন ধ্যানে মগ্ন শিবের আসন বলে বিশ্বাস করে। আশা করি, আজকের কৈলাস পর্বত কোথায় অবস্থিত শিরোনামের লেখাটি পড়ে আপনি বিস্তারিত জানতে ও বুঝতে পেরেছেন। লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url